
আব্দুল্লাহ আফফান।।
অক্ষরকে চিত্তাকর্ষক-নান্দনিক সাজে ফুটিয়ে তোলাই ক্যালিগ্রাফি। আরবি, ফারসি, অটোমান এবং উর্দুভাষায় ইসলামি ক্যালিগ্রাফির দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। আল্লাহ তায়ালার ‘সিফাতি’ নাম, কুরআনের আয়াত ও হাদিস ইসলামি ক্যালিগ্রাফিতে ব্যবহৃত হয়। ইসলামি ক্যালিগ্রাফি শিল্পীর সৌন্দর্যবোধকে ধর্মীয় নান্দনিকতায় বিকশিত করে।
সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা ইসলামি ক্যালিগ্রাফিতে আগ্রহী হচ্ছে। দিন দিন এই আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে। ইসলামি ক্যালিগ্রাফি নিয়ে ফাতেহ টোয়েন্টিফোরের সাথে কথা বলেন ক্যালিগ্রাফি শিল্পী ও শৈল্পিক কওমী’র সহপ্রতিষ্ঠাতা আহসান হাবিব রাফি।
প্রশ্ন: কওমি শিক্ষার্থীরা ক্যালিগ্রাফিতে আগ্রহী হচ্ছে। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
আহসান হাবিব রাফি: কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশ ক্যালিগ্রাফি শিখতে আগ্রহী হচ্ছে, বিষয়টি আনন্দদায়ক। আমাদের ক্যালিগ্রাফি শিখার শুরুর দিকে প্রচুর সমস্যায় পড়তে হয়েছে। তখন মাদরাসার শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্যালিগ্রাফি নিয়ে আগ্রহ ছিল খুবই সীমিত। এখন অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। মাদরাসার শিক্ষার্থীরা নিজের স্বকীয়তা বজায় রেখে সৃজনশীল কাজ করছে। নিজের মেধা জাতির কাছে তুলে ধরছে। তারা কওমি অঙ্গনকে জাতির সামনে তুলে ধরছে।
পাশাপাশি সাধারণ মানুষদেরকে কওমি শিক্ষার্থীদের শৈল্পিক মেধার সাথে পরিচিত করে তোলার জন্য আমরা আউডডোর আর্টক্যাম্প এবং শিল্পকলা ও জাদুঘরসহ বিভিন্ন গ্যালারিগুলোতে ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী করছি।
প্রশ্ন: বর্তমানে ক্যালিগ্রাফিতে আগ্রহ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ কী?
আহসান হাবিব রাফি: শিল্পের প্রতি মানুষের স্বভাবজাত দুর্বলতা রয়েছে। আগে ক্যালিগ্রাফি শেখাটা খুব একটা সহজ ছিল না। আবার দ্বীনি পরিবেশও ছিল না। ছেলে-মেয়ে একসাথে শিখতে হতো। অনেকে এসব কারণে ক্যালিগ্রাফি শিখতে চাইলেও তারা এসব থেকে দূরে থাকত। এখন এমন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, যেখানে দ্বীনি পরিবেশে ক্যালিগ্রাফি শেখানো হয়। পাশাপাশি অনেকের ক্যারিয়ারের অগ্রগতি দেখে তারা সাহস পাচ্ছে। এটাকে খুব জটিলভাবে দেখছে না। আবার মসজিদ-মাদরাসায় খেদমত বা যেকোন কাজের পাশাপাশি ক্যালিগ্রাফির কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। এসব কারণেই কওমি শিক্ষার্থীরা ক্যালিগ্রাফি শিখতে আগ্রহী হচ্ছে।
প্রশ্ন: দ্বীনি পরিবেশে ক্যালিগ্রাফি শেখা কি সম্ভব?
আহসান হাবিব রাফি: ক্যালিগ্রাফি জগতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আগে ক্যালিগ্রাফি শেখার মাধ্যম খুব বেশি ছিল না। ছেলে-মেয়ে একসাথে ক্যালিগ্রাফি শিখত। এখন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, ছেলে-মেয়েদের ভিন্ন ভিন্ন ভাবে শেখায়। ছেলেদের সরাসরি শেখায়। মেয়েদের অনলাইনে শেখায়। এতে পর্দার সমস্যা হয় না। তারমধ্যে আপাতত যেসব নাম মাথায় আসছে- আল আহনাফ, আত তামহিদ, মাদরাসাতুল খুতুতিল আরাবিয়া।
প্রশ্ন: ক্যালিগ্রাফি চর্চা করতে গিয়ে কী পড়ালেখার ব্যাঘাত ঘটে?
আহসান হাবিব রাফি: মাদরাসার পড়ালেখা চালিয়ে ক্যালিগ্রাফি শেখা বা প্রাকটিস করা সম্ভব। ক্যালিগ্রাফি পড়ালেখার অন্তরায় নয়। আমরা বিভিন্ন সময় কোর্স করাই। আউটডোর ইভেন্ট করি। সেক্ষেত্রে মাদরাসার ছুটির সময়টা মাথায় রেখেই এসব আয়োজন করি। এখন পর্যন্ত এমন কোন ঘটনা শুনিনি, ক্যালিগ্রাফি করার কারণে মাদরাসা থেকে বের করে দিয়েছে বা পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছে। বরং যারা আসে তাদের পড়ালেখার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। এ বিষয়ে আমাদের ভিন্ন ক্লাস থাকে।
প্রশ্ন: কওমি শিক্ষার্থীরা কি ক্যালিগ্রাফিকে ক্যারিয়ার হিসেবে গ্রহণ করতে পারে?
আহসান হাবিব রাফি: ক্যালিগ্রাফি একটি শিল্প। এটাকে ক্যারিয়ার হিসেবে চিন্তা না করে শিল্প হিসেবেই চিন্তা করা উচিত। তবে এটি যে ক্যারিয়ার নয়, এমন না। যেকোনো শৈল্পিক বিষয়ে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য, এতে প্রচুর সময় দেয়া লাগে, শ্রম দেয়া লাগে। ক্যালিগ্রাফিও এর ব্যতিক্রম নয়। একটা-দুইটা কোর্স করেই টাকা কামানো শুরু করবে, এমনটা ভাবা উচিত না। শৈল্পিক মন নিয়েই ক্যালিগ্রাফিতে আসুক। শিল্পকে শিল্পর মতোই দেখুক। নিজেকে সমৃদ্ধ করুক। তাহলেই কেবল মাদরাসার শিক্ষকতা বা অন্য যেকোন পেশার পাশাপাশি ক্যালিগ্রাফি থেকেও দারুন সম্মানজনক আর্থিক সমৃদ্ধি সম্ভব।