|| তাসনিফ আবীদ ||
দেশে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক পদ্বতিতে গবেষণা শুরু করছে দেশের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামিয়া শারইয়্যা মালিবাগ-এর ইফতা বিভাগ। ‘দেরিতে হলেও দেশের কোনো প্রতিষ্ঠান এমন উদ্যোগ নিয়েছে’ জেনে ইসলামি শিক্ষাপ্রেমীদের মনে আশা জেগেছে। তাছাড়া কওমি তরুণরা বিষয়টি নিয়ে বেশ প্রশংসা করছে।
রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী এই ইলমি মারকাজের প্রয়োজনীয় এই উদ্যোগের আদ্যোপান্ত জানতে চেয়েছিলাম প্রতিষ্ঠানটির প্রধান সহকারী মুফতি ও ইসলামি অর্থনীতিবিদ মুফতি আব্দুল্লাহ মাসুমের কাছে।
তিনি জানান, দারুল ইফতায় নানা বিষয়ে গবেষণা প্রবন্ধ তৈরির প্রচলন আছে। উচ্চতর পড়াশোনায় বিশ্বব্যাপী এটি একটি স্বীকৃত রীতি। আমাদের মালিবাগ জামিয়ার দারুল ইফতায় প্রায় প্রতি বছর এ ধরনের প্রবন্ধ রচিত হয়েছে। এর একটি সংকলনও প্রকাশিত হয়েছে। তবে আমাদের দেশের অধিকাংশ দারুল ইফতার প্রবন্ধ রচনাগুলো হয়ে থাকে ট্রাডিশনাল পদ্ধতিতে। গবেষণা প্রবন্ধ রচনার আন্তর্জাতিক যে মেথডোলজি আছে, এর সাথে আমাদের শিক্ষার্থীরা একেবারেই পরিচিত নন বললেই চলে।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের গবেষণা প্রবন্ধকে আন্তর্জাতিক মান দিতে আমরা বেশ কয়েক বছর যাবৎ চেষ্টা করছি-আমাদের বিভাগের গবেষণা প্রবন্ধগুলো স্বীকৃত রিসার্চ মেথড অনুযায়ী প্রস্তুত করতে। এবার আলহামদুলিল্লাহ গবেষণা রচনার জন্য রীতিমত একটি দীর্ঘ স্যান্ডার্ড রচনা করা হয়েছে। যাতে আধুনিক রিসার্চ মেথড এপ্লাই করা হয়েছে। সুপারভাইজর হিসাবে ইন্টারর্নাল ও এক্সটার্নাল উভয় সুপারভাইজর রাখা হয়েছে।
আধুনিক রিসার্চ মেথড অনুযায়ী গবেষণা প্রবন্ধ তৈরি পরবর্তী পদক্ষেপগুলো কী হতে পারে? জানতে চাইলে মুফতি আব্দুল্লাহ মাসুম বলেন, প্রথমে প্রবন্ধগুলো নিয়ে নির্ধারিত সময়ে রিসার্চের ওপর একটি সেমিনার করার ইচ্ছা আছে। তাছাড়া আমার বেশকিছু গবেষণা প্রবন্ধ আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষার্থীদের আধুনিক পদ্ধতিতে তৈরি গবেষণা প্রবন্ধগুলোও বাংলা, আরবি এবং ইংরেজি দেশ ও বিদেশের জার্নালে প্রকাশের উদ্যোগ নেবো।
‘এসবের ফলে তালিবুল ইলমরা কোন ধরনের ফায়দা পেতে পারে বা তাদের জীবনে এর কেমন প্রভাব পড়বে’ –প্রশ্ন করলে তিনি জানান, প্রথমত, আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের তৈরি গবেষণা প্রবন্ধগুলো একটি আন্তর্জাতিক মান পাবে। দ্বিতীয়ত, শিক্ষার্থীদের মনে একটি সাহস তৈরি হবে। পাশাপাশি সে যখন কর্মজীবনে যাবে তখন এটি তার জন্য অনেক বড় একটি পুঁজি হবে। তৃতীয়ত, আমাদের শিক্ষার্থীরা যখন আন্তর্জাতিক কোনো সেমিনারে অংশগ্রহণ করতে যায়, তখন তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয় তাদের কোনো গবেষণা প্রবন্ধ আছে কীনা? তখন তারা এগুলো পেশ করতে পারবে। আমাদের তালিবুল ইলমদের কাজগুলো বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে। আসলে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, আমাদের পড়াশোনা যেন আমাদের মাঝেই সীমাবদ্ধ না থাকে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে হবে।
দেশে প্রথমবারের মতো এমন উদ্যোগ নেওয়ার ফলে কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী হতে হচ্ছে কীনা? জানতে চাইলে এই গবেষক আলেম বলেন, আমাদের দেশের দাওরায়ে হাদিস বা তাকমিল বিভাগ মাস্টার্সের সমমান। সেই হিসেবে তাকমিলেই শিক্ষার্থীরা গবেষণা প্রবন্ধের সার্বিক নিয়মকানুনসহ প্রবন্ধ তৈরি করার কথা। আর রিসার্চ মেথডোলজি অনার্সের আগেই শেখানো হয়। কিন্তু আমাদের তালিবুল ইলমরা এসবের সঙ্গে একেবারেই পরিচিত নন। তাই তাদেরকে সবকিছু আমাদেরকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে শেখাতে হয়েছে। আমরা নিজেরা তাদেরকে নির্ধারিত কিছু নীতিমালা তৈরি করে দিতে হয়েছে; যা মেনে প্রবন্ধ তৈরি করলে সেগুলো আন্তর্জাতিক মানের হবে। ইন্টারর্নাল ও এক্সটার্নাল সুপারভাইজর রাখা হয়েছে। এসবে ফলে বেশ চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়েই যেতে হচ্ছে।
‘তবে আমাদের যেহেতু এটা প্রথম উদ্যোগ তাই কিছুটা বেগ পোহাতে হয়েছে। সামনে এই কাজগুলো আরো ভালো হবে, সুন্দর হবে, গুছালো হবে।’ –আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি
তিনি যোগ করেন, আমাদের তালিবুল ইলমরা যদি মেশকাত ও দাওরায় রিসার্চ মেথডোলজি অনুযায়ী রিসার্চ পেপার তৈরির সুযোগ পেতো তাহলে তাখাসসুসে এসে তাদের কাজগুলো আরো ভালো হতো। তাদের দিয়ে আমরাও আরো চমৎকার কাজ বের করে আনতে পারতাম। আশাকরি কওমি মাদরাসা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে ভাববেন এবং উদ্যোগ নেবেন।
‘দেশের অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো যদি মালিবাগ জামিয়ার মতো তাদের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আন্তর্জাতিক পদ্বতিতে গবেষণা শুরু করতে চায় তাহলে আপনাদের পক্ষ থেকে কোনো পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়ে সহযোগিতা করবেন কীনা?’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমনটি হলে তো আমরা যারপরনাই আনন্দিত হবো। আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের ইলমি গবেষণা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে; এটা তো গর্বের বিষয়। আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে সার্বিক পরামর্শ ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করে পাশে থাকবো ইনশাআল্লাহ।