|| তাসনিফ আবীদ ||
বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা ও কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের প্রয়াত সভাপতি আল্লামা শাহ আহমদ শফি রহ. এর ঐতিহাসিক উদ্যোগের মাধ্যমে বহুল প্রত্যাশিত ‘স্বীকৃতি’ ঘরে তোলে কওমি মাদরাসা। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিস (তাকমিল)-এর সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি)-এর সমমান প্রদান করা হয়।
কিন্তু কওমি মাদরাসার শিক্ষানদের স্বীকৃতি প্রদানের অর্ধযুগ পার হলেও এর কোনো বাস্তবায়ন এখনও দেখা যাচ্ছে না। কেননা স্বীকৃতি গ্রহণের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইসলামিক আরবি বিশ্ববিদ্যালয় বা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) কাছে এটিকে ফরমালাইজ করার দরকার ছিল। যা এখনো করা হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বীকৃতি গ্রহণের পর হাইয়াতুল উলিয়ার শরিক ৬ বোর্ডের দায়িত্বশীলদের সমন্বয়ে একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়; যাদের কাজ ছিল স্বীকৃতিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন ও ইসলামিক আরবি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট সরকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা।
তবে হাইয়াতুল উলিয়ার শরিক ৬ বোর্ডের দায়িত্বশীলসহ অনেকেরই অভিযোগ বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) কওমি মাদরাসার এই স্বীকৃতিকে মেনে নিতে পারছে না। তাই কওমি মাদরাসার শিক্ষানদের স্বীকৃতিকে এগিয়ে নেওয়া জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে।
তাদের এই অভিযোগের বাস্তবতা সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) এর উপ-পরিচালক দেওয়ান গোলাম সারোয়ারের কাছে।
তিনি বলেন, কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি মেনে নেওয়া বা না মেনে নেওয়ার এখতেয়ার ইউজিসি’র নেই। তাছাড়া কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি নিয়ে আমাদের কোনোকিছু করারও সুযোগ নেই।
‘কওমি মাদরাসার স্বীকৃতির বিষয়টি যেহেতু সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে সরাসরি সেখানে আমাদের বাধা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ইউজিসি হলো দেশের সকল সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা। মূলত সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এই সংস্থাটি সমন্বয়সাধন করে থাকে। কওমি মাদরাসা বিষয়ে আমাদের কোনো কাজ নেই।’ –বলেন ইউজিসি’র এই উপ-পরিচালক
তিনি জানান, কওমি মাদরাসার স্বীকৃতির সঙ্গে যদি কোনো সম্পর্ক থেকে থাকে তাহলে সেটা ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের। তাদের সঙ্গে সমন্বয় করেই স্বীকৃতি এগিয়ে নেওয়ার কথা।
ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারাও কওমি স্বীকৃতি বিষয়ে তেমন কিছু তথ্য দিতে পারেনি। তাছাড়া কওমি স্বীকৃতি নিয়ে ইউজিসি’র কোনো আপত্তি আছে কী না তাও তাদের জানা নেই।
এদিকে কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ ধারণা করছেন, নিজেদের ব্যর্থতার কারণেই স্বীকৃতির সুফল ঘরে তুলে পারেনি কওমি সংশ্লিষ্টরা। এর পেছনে কার্যকরী উদ্যোগের কমতি, দায়িত্বশীলদের সময় উপযোগী সিদ্ধান্তের অভাবকেই দায়ী হিসেবে দেখছেন অনেকে। কেননা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যেখানে স্ব-উদ্যোগী হয়ে এই স্বীকৃতি প্রদান করেছেন, সেখানে এর সুফল ঘরে তুলতে না পারা নিজেদের ব্যর্থতা ছাড়া কিছু নয়।