‘ইসলামি অঙ্গনে অপেশাদার রাজনীতির অবসান হোক’

(মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামি ইসলামি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন পাকিস্তান আমল থেকেই। হাফেজ্জি হুজুরের ছায়ায় খেলাফত আন্দোলন করেছেন। শুরু থেকেই আছেন ইসলামি ঐক্যজোটে। মুফতি আমিনী রহ. এর মহাসচিব ছিলেন অনেকদিন। সর্বশেষ তিনি ইসলামি ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে সমৃদ্ধ ছিল তার অভিজ্ঞতা ঝুলি। তিনি ছিলেন অসাধারণ বিশ্লেষণ এবং দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী। ৮ মার্চ, ২০১৯ তারিখে মাওলানা এহসান সিরাজের সঙ্গে একান্ত আলাপে সেই অভিজ্ঞতাগুলোই অকপটে তুলে ধরেছেন । নির্মোহ দৃষ্টিতে বিচার করেছেন বর্তমান ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকাণ্ড। আলাপটি অনুলিখন করেছেন রাকিবুল হাসান।)

এহসান সিরাজ : স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে আপনারা নেজামে ইসলাম পার্টি নির্মাণ করেছিলেন। তখনকার নেজামে ইসলাম পার্টি এবং বর্তমান ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোন জায়গাটায় তফাৎ?

আবদুল লতিফ নেজামি : ১৯৫২ সালে নিখিল ভারত জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের নেতৃবৃন্দ মুসলিম লীগের সঙ্গ ত্যাগ করে ‘নেজামে ইসলাম পাটি’ নামে পৃথক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এই লক্ষ্যে ১৯৫২ সালের ১৮, ১৯ ও ২০ মার্চ বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলার হয়বতনগরে দলটির কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অধিবেশনেই মাওলানা আতহার আলী রহ. কে সভাপতি, মাওলানা সৈয়দ মুসলেহ উদ্দিন রহ. কে সাধারণ সম্পাদক এবং মাওলানা আশরাফ আলী ধর্মন্ডলীকে সহকারী সম্পাদক নির্বাচিত করে ‘নেজামে ইসলাম পার্টি’র কার্যক্রম শুরু হয়। এটা একটা রাজনৈতিক দল ছিল আলেমদের নেতৃত্বে। তখন মুসলিমদের স্বার্থ নিয়ে কাজ করা রাজনৈতিক দল তেমন ছিল না। মুসলিম লীগ, আওয়ামী মুসলিম লীগ ছিল। জামায়াতে ইসলামি ১৯৫৬ সালের আগ পর্যন্ত মিশনারি কার্যক্রম চালিয়েছে। এর আগে তারা রাজনীতিতে আসেনি।

আলেমদের দল হলেও ‘নেজামে ইসলাম পার্টি’ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিলো। পার্টিতে ৩৬ জন এমপি ছিলেন। এর মধ্যে আলেম ছিলেন মাত্র ৮ জন। বাকিসব জেনারেল শিক্ষিত, ইসলামি মনস্ক। যেমন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী মোহাম্মদ আলী, পাকিস্তান গণপরিষদের স্পিকার এম এ ওহাব খান, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মৌলভী ফরিদ আহমদ চৌধুরী ও নুরুল হক চৌধুরী, সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের মন্ত্রী আশরাফ উদ্দিন চৌধুরী, নাসির উদ্দিন চৌধুরী, সৈয়দ মোয়াজ্জম হোসাইন খানের মতো লোকদেরকেও দলে নিয়েছিলেন মাওলানা আতহার আলী রহ.।

এই তুলনায় বর্তমান ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলোর সংকীর্ণতা অনেক বেশি। প্রথমত, ইসলামি দলগুলোর মধ্যে জেনারেল শিক্ষিতদের প্রবেশাধিকার নেই বললেই চলে। জামায়াতে ইসলাম অন্য ধারার, তাদের কথা এখানে বলছি না। দ্বিতীয়ত, দলগুলোর সীমানা কওমি পরিমণ্ডলেই সীমাবদ্ধ। এতে আলিয়া মাদরাসারও অংশগ্রহণ নেই। এ দুই মিলিয়ে সংকীর্ণতাটা খুব প্রকট। নেজামে ইসলামের সাথে বর্তমান দলগুলোর তফাৎ এখানেই। মাওলানা আতহারি রহ. ছিলেন দূরদর্শী এবং বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ আলেম। তিনি এই সংকীর্ণতা প্রশ্রয় দেননি।

এহসান সিরাজ : চরমোনাই পীর সাহেবের ‘ইসলামি আন্দোলন’ কী এই সংকীর্ণতার বাইরে? সেখানে তো বোধহয় এই সংকীর্ণতা কিছুটা ভাঙা হয়েছে।

আবদুল লতিফ নেজামি : ইসলামি আন্দোলনের একটি ভালো দিক হলো—তারা তাদের রাজনৈতিক নেতা, এমপি তাদের মুরিদদের থেকেই নির্বাচন করে। মুরিদদের নিয়েই তাদের যতসব কার্যক্রম। কিন্তু এটার খারাপ একটা দিকও আছে। ভোটের রাজনীতিতে মুরিদ দিয়ে জয় পাওয়া যায় না। কারণ, অধিকাংশ মুরিদই তাদের পীর সাহেবকে ভোট দেয় না। দুএকটা উদাহরণ দেই।

১৯৫৪ সালে নেজামে ইসলাম পার্টি যুক্তফ্রন্টের হয়ে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়। বিজয়ী হয়ে দলের অনেকে মন্ত্রিত্ব লাভের সুবাদে গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারণী ভূমিকা পালন করে। এ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের হয়ে যারাই দাঁড়িয়েছে, তারাই পাশ করেছে। কিন্তু সৈয়দ মুসলেহ উদ্দীন রহ. পাশ করতে পারেননি। নবীনগরে তার মুরিদের অভাব ছিলো না। কিন্তু তার মুরিদরা তাকে ভোট দেয়নি। ফলে তার ভূমিধ্বস হয়েছিলো।

আরেকটা ঘটনা ১৯৯৪ সালের। তখন মাগুরা উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেসময় ইসলামি ঐক্যজোটের ব্যানারে নির্বাচন করছে সব দল। খেলাফতে মজলিস, ইসলামি আন্দোলন, নেজামে ইসলাম পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। পরামর্শ সভায় আলোচনা উঠলো কাকে মগুরায় দাঁড় করানো যায়। চরমোনাই পীর সাহেব রহ. বললেন, মগুরায় আমাদের ৫০ হাজার মুরিদ আছে। জোটের পক্ষ থেকে ইসলামি আন্দোলনের কাউকে নমিনেশন দেয়া হোক। সুতরাং নমিনেশন দেয়া হলো চরমোনাই পীর সাহেবের দল থেকেই। আমি তখন জোটের সদস্য সচিব। সাতদিন মাগুরা থেকে ক্যাম্পিং করেছি। কিন্তু ভোটের পর দেখা গেলো ভোট পেয়েছি মাত্র ৩ হাজার। মুরিদ ৫০ হাজার, ভোট মাত্র ৩ হাজার।

তাই ভোটের রাজনীতিতে মুরিদ দিয়ে কিছু হয় না। ডাক দিলে জমায়েত করা যায়, ভোটে জেতা যায় না। তবে চরমোনাই পীর যদি তাদের মুরিদদের পলিটিক্যালি মোটিভেট করতে পারেন, তাহলে কাজ হতে পারে।

এহসান সিরাজ: চরমোনাই পীর কি তাদের কল্যানে এই পরিবর্তনটা করবেন? মুরিদ বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসবেন?

আবদুল লতিফ নেজামি: বেরিয়ে আসা উচিত। বেরিয়ে এলে তাদেরই কল্যান। তবে আরেকটা কাজও করতে পারে তারা। সেটা হলো—সব ইসলামি রাজনৈতিক দল মিলে একটা জোট করা। এই জোট করতে পারলে কিছুটা প্রভাব বিস্তার করা যাবে।

এহসান সিরাজ: জোট করলে মাগুরার উপনির্বাচনের মতো হেরে যাবার আশঙ্কাও তো থাকে। কারণ তখনও তো ভোট দিবে মুরিদরা।

আবদুল লতিফ নেজামি: তখন তো আর একক নির্বাচন করবে না। জোটে শরীক প্রতিটি দলেরই কিছু না কিছু সমর্থক আছে। এক জায়গায় একজন হারতে পারে। কিন্তু আরেক জায়গায় জিতবে। আর সবাই মিলে যদি জোয়ার সৃষ্টি করা যায়, মানুষ সেই জোয়ারে শামিল হবেই। যেমন ইসলামি ঐক্যজোট শুরুর দিকে জোয়ার এনেছিলো। জোট যদি এখনও থাকতো, আরও অনেকদূর এগিয়ে যেতো। আর মানুষও এখন পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় সন্তুষ্ট নেই। ধনীরা দিন দিন ধনী হচ্ছে ; গরীবরা দিন দিন গরীব হচ্ছে। মানুষ যখন দেখবে আলেম সমাজের সবাই একসাথে কাজ করছে, তারা অবশ্যই আশার আলো দেখবে। তারাও আলেমদের সঙ্গে মিলিত হবে।

এহসান সিরাজ: ইসলামি ঐক্যজোট কি ইসলামি দাবি পেশ করার জন্য তৈরী হয়েছিল নাকি রাজনীতি করার জন্য?

আবদুল লতিফ নেজামি: রাজনীতি করার জন্য। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এ জোট গঠন হয়েছিল। জোটের প্রথম এমপি ছিলেন মাওলানা ওবায়দুল হক। ১৯৯৬ সালের নিবাচনে জোট থেকে এমপি হয়েছিল গোলাম সারওয়ার।

এহসান সিরাজ : ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পর কি ইসলামি ঐক্যজোট নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছিল?

আবদুল লতিফ নেজামি: ৯৬ এর নির্বাচনের পর ইসলামি ঐক্যজোটে আমরা শক্তভাবে দশদফা কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করি। তারপর এই দশদফা নিয়ে দেখা করি বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার ক্যান্টমেন্টের বাড়িতে। চরমোনাই পীর সাহেব আমাদের সঙ্গে যাননি। দফাগুলো দেখে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘এত কঠিন ইসলাম আমরা মানতে পারবো না।’

এরপর ১৯৯৯ সালে চারদলীয় জোটে শরীক হওয়ার ডাক আসে। তখনও চারদলীয় জোটে চরমোনাই পীর সাহেব যাননি।

এহসান সিরাজ: ইসলামি ঐক্যজোট যখন চারদলীয় জোটে অংশগ্রহণ করে, চরমোনাই পীর সাহেব সেখানে যাননি। পীর সাহেবের এই সিদ্ধান্তটা সঠিক ছিল?

আবদুল লতিফ নেজামি: আসলে ইসলামি ঐক্যজোট যখন চারদলীয় জোটে অংশগ্রহণ করে, তখন পরিকল্পিতভাবে মজলিসে শূরায় পরামর্শ করে অংশগ্রহণ করা হয়নি। বরং এমনিতেই করা হয়েছিল। মাওলানা মুহিউদ্দিন খান সাহেবের ভূমিকা ছিল এখানে সবচে বেশি। তখন চরমোনাই পীর অংশগ্রহণ করেননি। তার সিদ্ধান্তকে ভুল বলা যাবে না। আমিও তো অনেকদিন অংশগ্রহণ করিনি চারদলীয় জোটে।

চারদলীয় জোটে গিয়েও ইসলামি দলগুলো ততটা উপকৃত হতে পারেনি, জামায়াত যতটা উপকৃত হয়েছে। জোটের শক্তি কাজে লাগিয়ে জামায়াত নিজেদের সংহত করেছে। কিন্তু ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলো জোটে ছিল, সভায়-সমাবেশে বক্তৃতা দিত। তবে জোটের শক্তি ও প্রভাব কাজে লাগিয়ে নিজেদের সংহত করেনি। এখনও যারা বিভিন্ন দলের সঙ্গে, তারাও করছে না।

এহসান সিরাজ: আপনি কেন প্রথমে চারদলীয় জোটে যাননি?

আবদুল লতিফ নেজামি: যাইনি—কারণ কেনো শর্ত ছাড়া নিজেদের বিলিয়ে দিয়ে জোটে যেতে চাইনি। আমি স্বপ্ন দেখেছি ইসলামি রাজনীতির অঙ্গনে একটা বিপ্লব সৃষ্টি করবো। আজ হোক কিংবা কাল। একটু একটু করেই সেটা করতে হবে।

এহসান সিরাজ : তাহলে পরে আবার যোগ দিলেন কেন?

আবদুল লতিফ নেজামি: আসলে যোগ দেয়াটাও তত ক্রিয়াশীল ছিল না। দেখলাম—জোটে না গেলে নতুন আরেকটি দল করতে হয় আমার। তাই নতুন দল না করে সবার সঙ্গেই আবার যুক্ত হলাম।

এহসান সিরাজ : ইসলামি ঐক্যজোটের টাইমলাইনে ছিলেন শায়খুল হাদীস এবং মুফতি আমিনি রহ.। তারা জোটের অন্যদের কেমন মূল্যায়ন করতেন?

আবদুল লতিফ নেজামি: ভালোই মূল্যায়ন করতেন। চারদলীয় জোটে লিয়াঁজো কমিটি গঠন করা হয়েছিলো। ইসলামি ঐক্যজোট থেকে আমার নাম নিজে প্রস্তাব করেছিলেন শায়খুল হাদীস রহ.।

এহসান সিরাজ: বর্তমানে ইসলামিক রাজনৈতিক দলগুলো তাদের রাজনীতিতে সফল?

আবদুল লতিফ নেজামি: না।

এহসান সিরাজ: কেন সফল হচ্ছে না।

আবদুল লতিফ নেজামি: আগে তো রাজনীতি করতে হবে। তারপর সফলতার প্রশ্ন আসবে। ইসলামি দলগুলো তো রাজনীতি করে না। মৌসুম এলে ভোটে অংশ নেয় কেবল। মাঝেমধ্যে বিবৃতি দেয়, কনফারেন্স করে, এতটুকুই। রাজনীতির আলাদা একটা কাঠামো আছে, প্রাতিষ্ঠানিকতা আছে। এখানে নিয়মিত সময় দিতে হয়। পেশাদার হতে হয়। রাজনীতিতে আমাদের পেশাদারি মনোভাব নেই। যে যেখানে আছে, সেখান থেকে হয়তো সপ্তাহে একবার অফিসে আসে। দেখে যায়। কখনও মিছিলে অংশ নেয়।

ইসলামি ঐক্যজোটে আমি শায়খুল হাদীস রহ. এর সহকারী সেক্রেটারী ছিলাম। তখন দেখতাম—মিটিংয়ে একটা সভা করার তারিখ নির্ধারণ করা যেতো না। কারণ, শায়খুল হাদিস সাহেব ছয়টা মাদরাসায় দরস দেন, চরমোনাই পীর সাহেবের পুরো দেশে প্রোগ্রাম থাকে। সব শেষ করে কখন কার সময় হবে, এই নিয়ে বিপত্তি বাঁধতো। একবার প্রেস ক্লাবে প্রেস কনফারেন্স করবো জোটের পক্ষ থেকে। এ সময় তারিখ ঠিক করেও কয়েকবার তারিখ বদলাতে হয়েছে।

রাজনীতিতে আমরা পেশাদার হতে পারছি না, এর দুটো বড় কারণ আছে।

এক—আমরা যারা ইসলামি রাজনীতি করি, অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল। সাধারণ একটা সভা করতে হলেও চাঁদা তুলে অর্থের যোগান দিতে হয়। তাই এখানে আমাদের পেশাদার হতে হলে, ঝুঁকি নিতে হবে। কিন্তু জামায়াতে ইসলাম এই জায়গায় সফল। কারণ, তারা প্রত্যেকেই নিয়মিত চাঁদা দেয়। তাদের ব্যবস্থাপনা আছে। ফলে তারা রাজনীতিকেই পেশা হিসেবে নিতে পারছে। বেতন পাচ্ছে। আমাদের ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলোতে এই ঐতিহ্যটা এখনো গড়ে উঠেনি।

দুই—ইসলামি রাজনীতি যারা করে, তারা প্রত্যেকেই মাদরাসার সঙ্গে যুক্ত। মাদরাসাগুলো চলে সব ধরণের মানুষের অনুদানে। সুতরাং এখন যদি মাদরাসার মুহতামিম পেশাদার রাজনীতি শুরু করেন, এখানে বিরাট একটা ধাক্কা পড়বে। তাই কেউ রিস্ক নিতে চায় না। মাদরাসা-মসজিদ নিয়ে থাকে, সুযোগ হলে মিটিং-মিছিল করে। বক্তব্য-বিবৃতি দেয়। এই অপেশাদার রাজনীতির অবসান হওয়া উচিত।

একটা মজার ঘটনা বলি। মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর বাবা ছিলেন মাওলানা হারুন বাবুনগরী। পাকিস্তান আমলে তিনি কোন এক নির্বাচনে দাঁড়াতে চাচ্ছিলেন। মাদরাসার শিক্ষকরা তাকে বললেন, আপনি নির্বাচন করলে তো মাদরাসায় মানুষ অনুদান দিবে না। মাদরাসা চলবে না। হারুন বাবুনগরি তখন সবাইকে বিস্মিত করে দিয়ে বললেন, ‘মাদরাসাটা পুড়িয়ে দিতে কত লাকড়ি এবং কেরোসিন লাগবে?’ সবাই তো হতভম্ব। সবার চোখের জিজ্ঞাসা দেখে তিনি বললেন, ‘ইকামাতে দ্বীনের জন্য রাজনীতি। এটা যদি মাদরাসার জন্য না করা যায়, তবে মাদরাসাকে পুড়িয়ে দেই।’

এহসান সিরাজ : ইসলামি দলগুলো সাধারণ মানুষকে কি উৎসাহিত এবং আশাবাদী করতে পারছে?

আবদুল লতিফ নেজামি: না, পারছে না। কারণ, রাজনীতিতে বক্তব্য দিতে মানুষের স্বার্থের অনুকূলে। ইসলামি দলগুলো ইসলামের অধিকারগুলোই মানুষকে জানাতে পারছে না। যেমন, অন্যান্য দল নারীদের অধিকার নিয়ে কথা বলে। অথচ ইসলাম নারীদেরকে সবচে বেশি মর্যাদা ও অধিকার দিয়েছে। কিন্তু আমরা কি নারীদেরকে তাদের অধিকারের কথাগুলো জানাতে পেরেছি? কিংবা জানাতে যাই কখনও? যদি শুধু নারীদেরকে ইসলামের অধিকারের বিষয়গুলো জানাতে পারতাম, তাহলেও বিরাট বড় সমর্থন তৈরী হতো। তেমনিভাবে অন্যান্য দল শ্রমিকদের নিয়ে কথা বলে। অথচ ইসলাম শ্রমিকদের সবচে বেশি অধিকার দিয়েছে। কিন্তু আমরা কি তাদেরকে তাদের অধিকার জানাতে পেরেছি?

মানুষকে আমরা মোটিভেট করতে পারছি না। ফলে সমাজেও আলেমদের কোনো অবস্থান নেই। ধর্মীয় কারণে সবাই হয়তো সম্মান করে। কিন্তু সমস্যা সমাধানে তাদেরকে কখনও কেউ ডাকে না। সমাজে তাদের সেই অবস্থান থাকলে, অবশ্যই ডাকতো।

এহসান সিরাজ: আপনার নামের শেষে নেজামি শব্দটা ‘নেজামে ইসলাম পার্টি’ থেকে এসেছে?

আবদুল লতিফ নেজামি: এর একটা গল্প আছে। নামটি দিয়েছিলেন শায়খুল হাদীস রহ.। তখন সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদ গঠন হচ্ছে। সভায় অনেকের নাম আবদুল লতিফ ছিল। যেমন—মুসলিম লীগের আবদুল লতিফ পাহলোয়ান, জমিয়াতুল মুদাররিসিনের মাওলানা আবদুল লতিফ, ইসলামি আন্দোলনের আবদুল লতিফ চৌধুরী, কৃষক শ্রমিক পার্টির আবদুল লতিফ মজুমদার। শায়খুল হাদিস সাহেব বললেন, এখানে তো অনেক লতিফ। উনি যেহেতু নেজামে ইসলাম পার্টির, তার নাম নেজামি হোক। এই হলো আমার নামের গল্প।

আগের সংবাদঈদে সাতদিন কঠোরভাবে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ
পরবর্তি সংবাদসৌদিতে ‘লকডাউন’ অমান্য করলে কঠোর শাস্তির ঘোষণা