উপমহাদেশে মুসলিম সভ্যতার গল্প

মূল : শায়েখ আলি তানতাবি

ভাষান্তর : মুহাম্মদ মাসুম মুনতাসির:

আন্দালুস (স্পেন) ছিল একসময় আমাদের জান্নাত। আমরা দু’কোটি মুসলমান বাস করতাম সেথায়। এখনও সেখানের প্রাসাদে সেঁটে আছে আমাদের সুলতানদের স্মৃতিচিহ্ন আর সেখানের মাটিতে মিশে আছে আমাদের শহীদদের রক্তবিন্দু! সেখানে আমরা ফেলে এসেছি কর্ডোভার সুরম্য মসজিদ ও অনিন্দ্যসুন্দর লাল প্রাসাদ আলহামরা। সেখানে আমরা রেখে এসেছি অনেক গবেষণাগার ও বিদ্যাপীঠ, যা শত শত বিবেককে আলোকিত করেছে! শত-সহস্র হৃদয়কে সত্যের জন্য উন্মুখ করেছে এবং ভবিষ্যতেও মানুষের প্রতিভা ও অন্তরে আলো ফেরি করে বেড়াবে।

ভারত উপমহাদেশেও ছিল ইসলামের সেই হারানো সোনালী উদ্যান, যা ছিল শুধু আমাদের। আমরাই ছিলাম এর সুলতান। এখানে আমরা শাসন করেছি হাজার বছর। এখানে আমরা চল্লিশ কোটি মুসলমান বাস করতাম। এ ভূমির প্রতিটি ইঞ্চি আমাদের পবিত্র রক্তে সিঞ্চিত। এখানে উন্নত সভ্যতার বিকাশ করেছি আমরা। জ্ঞান-বিজ্ঞান, ন্যায়-নিষ্ঠা, সততা ও সাহসিকতার দ্বারা আমরাই এর প্রতিটি প্রান্ত ও দিগন্ত নকশা করেছি এবং নকশীকাঁথার মাঠে ফুল ফুটিয়েছি। এখানে আমাদের হাতে গড়া ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো সৌন্দর্য ও সৌকর্যে আলহামরাকেও হার মানায়। এর উদাহরণ হিসেবে তাজমহলই যথেষ্ট, যা পৃথিবীর সবচে দামি ও চমৎকার এক স্থাপনা।

উপমহাদেশ বিজয়

হিন্দুস্তানে আমাদের শাসনকাল চার যুগে বিভক্ত ছিল :  আরব্য বিজয়ের যুগ, আফগানি বিজয়ের যুগ, দাসদের শাসনামল, মুঘল শাসনামল।

আরব্য বিজয়ের যুগ

সর্বপ্রথম হিন্দুস্তানের আকাশে ইসলামের বিজয়-কেতন উড্ডীন করেছেন মুহাম্মদ বিন কাসিম আস সাকাফি। একজন নবীন সেনাপতি। যিনি তায়েফে তার পরিবার-পরিজন রেখে এবং মাতৃভূমি ছেড়ে চাচা হাজ্জাজ বিন ইউসুফের অশ্বারোহী বাহিনীতে যোগ দেন।

হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ছিল চৌকস সমরাভিজ্ঞ ও কৌশলী সেনাপ্রধান। সে ইরানের শাসনভার টিকিয়ে রেখেছিল এবং প্রাচ্য ও সিন্ধু জয় করেছিল। সে তিনজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ সেনাপতিকে তিনটি যুদ্ধকবলিত অঞ্চলে পাঠিয়েছিল। তাবারিস্তানে ও জুরজানে পাঠিয়েছিলেন মুহাল্লাব বিন আবু সুফরাহকে। যিনি সেখানকার গৃহযুদ্ধের আগুন একেবারেই নিভিয়ে দিয়েছিলেন, যে আগুন জ্বালিয়েছিল খারেজি সম্প্রদায়। মহাবীর কুতাইবা বিন মুসলিমকে পাঠিয়েছিলেন সমরকন্দ, বোখারা ও তুর্কিস্তান জয় করতে আর ভ্রাতুষ্পুত্র বীর শার্দুল মুহাম্মদ বিন কাসিমকে প্রেরণ করেছিলেন সিন্ধু অঞ্চলে। তখন মুহাম্মদ ছিলেন স্নাতকডিগ্রী পড়ুয়া একজন ছাত্রের সমবয়েসি।

এই তিন বীর সেনানির সৈন্যবাহিনী ছিল এমন, যারা বাস-রেলগাড়ি চিনত না, তাঁরা পায়ে হেঁটে চলত। তাঁরা আকাশপথে কোনদিন বিমান দেখেনি, তাঁরা উটের পিঠে চড়ত। কিন্তু তাঁদের ছিল অভিনব কিছু সৃষ্টির দীপ্ত ঈমান, পাহাড় টলিয়ে দেয়ার মত উচ্চ সাহস এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরবদের অন্তরে বীরত্বের যে বীজ রোপণ করেছিলেন তার ঝলক! তাইতো তাঁরা গোটা পৃথিবীর এক পঞ্চমাংশ খুব সহজেই দখল করতে পেরেছিল! তাইতো মুহাম্মদ বিন কাসিমের মত আঠার বছর বয়সী সেনাপতির হাতে পৃথিবী সিন্ধু বিজয়ের উপাখ্যান রচনা হতে দেখেছিল!

আফগানি বিজয়ের যুগ

হিজরী চতুর্থ শতাব্দীতে হিন্দুস্তানে পুনরায় ইসলামের বিজয়-নিশান ওড়ে সুলতান মাহমুদ গজনবীর হাত ধরে। যিনি কাবুল থেকে দক্ষিণে আফগানিস্তানের গজনী প্রদেশের শাসক ছিলেন। তাই হিন্দুস্তানে আসতে তাদেরকে নিশুতি রাতে খায়বারের ভয়ঙ্কর সরু ও সঙ্কীর্ণ পথ পাড়ি দিতে হয়েছিল, যে পথের দুর্গমতা ও ভয়াবহতার কারণে অরণ্যের বাঘও চলাচল করতে ভয় পায়!

এর বহুকাল পরে এ পথেই হিন্দ আসেন সুলতান শিহাবউদ্দিন ঘুরী। তিনি বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলো জয় করেন এবং সুলতান মাহমুদ গজনবির অপূর্ণ কাজগুলো সম্পূর্ণ করেন। পুরো উত্তরাঞ্চল বিজয় করেন। এমনকি তার সৈন্যদল রাজধানী দিল্লিতেও পৌঁছে। সেখানে তারা ইসলামের প্রচার-প্রসারের জন্য এক আলোকস্তম্ভ প্রজ্বলিত করেন, ফলে দিল্লি শহর কুফরের আঁধার কাটিয়ে ঈমানি আলোয় উদ্ভাসিত হয় এবং অন্ধত্বের পর দৃষ্টি ফিরে পায়। ইসলামের কেন্দ্রভূমি মক্কা থেকে ভেসে আসা কালিমার ধ্বনি হিন্দের আকাশে বাতাসে গুঞ্জরিত হয়। দেবতা ও প্রতিমার আখরা হিন্দের হৃদয় হতে মহাসত্যের মুয়াজ্জিন আওয়াজ তুলেন – হে পৌত্তলিকেরা! শুনে রাখ, তোমাদের দেবতারা পরাজিত হয়েছে! তোমাদের মূর্তিগুলো ভেঙ্গে গেছে! শুনে রাখ, আল্লাহ হলেন এক; অদ্বিতীয়। তিনি ছাড়া কেউ নাই। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল।

অবশেষে ভারত উপমহাদেশে ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠা হয়। রাজধানী হয় দিল্লি। তখন একদিকে বীর সেনাপতি কুতুবউদ্দিন আইবেক অসির ঝলকানিতে একের পর এক শহর জয় করতে থাকেন আর অন্যদিকে শায়েখ মঈনুদ্দিন চিশতী র. তাঁর দাওয়াতের মাধ্যমে মানবহৃদয়ে ঈমান-প্রদীপ জ্বালাতে থাকেন। ফলে দলে দলে মানুষ ইসলামের নিরাপদ আশ্রয়ে মাথা গুঁজতে থাকে। এভাবেই ইসলামের বিজয়ের ধারা অব্যাহত ও চিরায়ত হয়ে যায় যে, নিশ্চিন্তে বলা যায় ইসলাম এ স্বর্ণোদ্যানে শেষ যামানা পর্যন্ত টিকে থাকবে ইনশাআল্লাহ!

দাসদের শাসনামল

ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠার পর দিল্লির শাসনভার অর্পিত হয় কুতুবউদ্দিন আইবেকের উপর। যিনি দিল্লি বিজয়ী রণসৈনিক ছিলেন। তার মাধ্যমেই দাসদের শাসনামলের সূচনা হয়। তিনি ছিলেন ন্যায়পরায়ণ বাদশা। তিনি সেই কুতুব মিনারের স্থপতি, যার গৌরবের সামনে দিল্লি আগত সকল পর্যটকই মুহূর্তখানিক দাঁড়িয়ে থাকে। মামলুক সালতানাতের অন্যতম সুলতান ছিলেন- শামসুদ্দিন ইলতুতমিশ ও গিয়াসউদ্দিন বলবন।

খিলজী শাসন

খিলজী শাসনের অনন্য রাজাধিরাজ আলাউদ্দিন খিলজী। তিনি মানুষের মাঝে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করেন। রাজ্যকে সুশৃঙ্খলভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন। নিরাপত্তার চাদরে বিছিয়ে দেন। হিন্দুস্তান দখল করতে করতে এর গভীরে প্রবেশ করেন।

 

তুঘলকি শাসন

তুঘলক শাসকদের মধ্যে ন্যায়পরায়ণ বাদশা ছিলেন ফিরোজ শাহ তুঘলক। এরপরে লোদী বংশের শাসন। এছাড়াও আহমেদাবাদ বা জৌনপুরেও সুলতান ছিল, লোকেরা তাদেরকে খুলাফায়ে রাশেদীন বলে ডাকত। তাদের মধ্যে অন্যতম মুজাফফর হালিম গুজরাটি।

আধ্যাত্মিক জগতের বাদশাদের রাজত্ব

সবচে অবাক করা বিষয় হল, হিন্দুস্তানের শাসকদের চেয়ে আলেম-উলামা ও আউলিয়া-সুফিদের রাজত্ব ছিল আরো বড়। সে রাজ্যের তারাই ছিলেন শাহেনশাহ। যে কথাই আমাদের প্রিয় ব্যক্তিত্ব আবুল হাসান আলী নদভী রহ. বলেছেন যে, শামসুদ্দিন ইলতুতমিশ-যিনি গোটা হিন্দুস্তানের বাদশা ছিলেন এবং পাশ্ববর্তী ছোট ছোট রাজ্যের রাজারাও তার বশ্যতা স্বীকার করেছিল- তার মতো সুলতানও শায়েখ বখতিয়ার কাকী র.-এর দরবারে প্রবেশের জন্য অনুমতির অপেক্ষায় থাকতেন। অনুমতি মিললে প্রজারা বাদশাকে যেভাবে সালাম করে, সেভাবে সালাম করতেন। যতক্ষণ থাকতেন শায়েখের পা মর্দনসহ অন্যান্য খেদমত করতেন এবং অঝোরে কাঁদতেন। এজন্য শায়েখ তাকে অনেক দোয়া দিতেন।

আলাউদ্দিন খিলজি অনেক বড় বাদশাহ হওয়া সত্ত্বেও নিজামুদ্দিন বাদাউনির সাথে সাক্ষাতের অনুমতি প্রার্থনা করেন, কিন্তু শায়েখ তাকে অনুমতি দেননি।

যখন শিহাবউদ্দিন দেউলাবাদি অসুস্থ হয়ে মৃত্যুশয্যায়, তখন ইবরাহিম মাশরিকী তার সেবা-শুশ্রুষা করেন এবং শায়েখের পরিবর্তে নিজের জীবনকে বদলা হিসাবে গ্রহণ করার দোয়া করেন। এমনকি নিজামুদ্দিন বাদাউনির খানকা সবসময় উৎসুক দর্শক ও রাজবংশের অতিথি দ্বারা ভরপুর থাকত। মোটকথা, আধ্যাত্মিক ঊর্ধ্বজগতের সুলতানরা ইহজগতের সুলতান চেয়েও বেশি প্রতাপশালী ছিলেন।

হে মুসলিম নেতৃবৃন্দ! তাঁদের এ সম্মান ও প্রতিপত্তির কারণ, তারা লোভ-লালসা, কামনা-বাসনার চাদর থেকে মুক্ত ছিলেন। তাঁরা রাজাদের তোষামোদ করা থেকে বিরত ছিলেন। ফলে বাদশাহরা তাঁদের দুয়ারে এসে দৌড়ঝাঁপ করেছে। তাঁরা অন্তর থেকে দুনিয়ার ভালোবাসা বের করে দিয়েছিলেন, পরিণামে দুনিয়া এসে তাঁদের পায়ে মাথা গুঁজেছে।

মুঘল শাসন

হিজরী ৯৩৩ সাল। কাবুল থেকে তৈমুর লঙ-পৌত্র বাবর আসেন হিন্দে। তিনি মাত্র ১২ হাজার মুঘল মুসলিম নিয়ে ইবরাহিম লোদীর এক লক্ষ সৈন্যকে টুকরো টুকরো করে দেন এবং মুঘল শাসনামলের গোড়াপত্তন করেন, যা ভারত উপমহাদেশের সবচে দীর্ঘস্থায়ী শাসনামল।

বাবরের পর জ্যেষ্ঠপুত্র হুমায়ুন সিংহাসনে আরোহণ করেন। পরে এমন একজন উচ্চাভিলাষী লোক দিল্লি দখল করেন, যিনি রাজবংশের কেউ ছিলেন না। কিন্তু শাসকের মত সাহস ছিল তার বুকে, তাই খুব সহজেই রাজ্য ছিনিয়ে নেন এবং দুর্লভ ও বিরল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি প্রশাসনিক অধিদপ্তর ও অর্থ মন্ত্রণালয় এবং সেনা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করেন। এসব কাজ তিনিই প্রথম করেছিলেন। সেই বিস্ময়কর ব্যক্তিটি হলেন- শেরশাহ সুরি।

দীন-এ-ইলাহি

পরবর্তীতে হুমায়ুন পুনরায় দিল্লি করায়ত্ত করেন। তার মৃত্যুর পর পুত্র আকবর সিংহাসনে বসে। সে গোটা হিন্দুস্তান দখল করে। তার হুকুমত অনেক দীর্ঘ হয়। কিন্তু সে শেষ জীবনে আল্লাহকে অস্বীকার করে এবং মানুষকে তার প্রণীত নতুন ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করে। ইসলামী নিশান মুছে দেয় এবং বিভিন্ন শিআর বাতিল করে। কিন্তু তার সাথে ছিল বিশাল সেনাবাহিনী ও প্রভাবশালী রাজপুত শাসকেরা এবং গোটা ভারত তার অধীনস্থ ছিল। তাই তার বিপক্ষে কে দাঁড়াবে? কে ইসলামের বিজয় ছিনিয়ে আনবে? কে রুখবে তার ষড়যন্ত্র ও প্রোপাগান্ডা?

কিন্তু অবাক করা ব্যাপার, এ কাজে দাঁড়িয়ে গেলেন শীর্ণকায়, দরিদ্র, অখ্যাত, সহায়-সহযোগীহীন একজন শায়েখ। যার ঈমান ছিল দীপ্ত। তিনি ছিলেন বিশালাত্মা ও সাহসী। দুনিয়াকে ছোট মনে করতেন, ফলে ধন-সম্পদ, পদমর্যাদাকে নিজের কাছে ভিড়তে দেননি। জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করতেন, তাই আল্লাহর জন্য পৃথিবীর কোথায় কীভাবে মৃত্যু হবে- তার পরোয়া করেননি। তিনি শায়খ আহমদ সরহিন্দ মুজাদ্দেদে আলফে সানী।

তিনি আকবরের বিপক্ষে সর্বগ্রাসী আক্রমণ ও সর্বাত্মক আন্দোলনের প্রস্তুতি নেন। এটা কোন সেনাঅভ্যুত্থান ছিল না। এটা ছিল চিন্তাগত আন্দোলন ও চেতনার বিপ্লব। কারণ তিনি রাজত্বের লোভী ছিলেন না, এর আশাও মনে পুষতেন না; বরং তিনি ছিলেন যুগশ্রেষ্ঠ সমাজসংস্কারক।

তাজমহল বা মমতাজ মহল

সম্রাট আকবর মারা গেলে সিংহাসনে বসেন জাহাঙ্গীর। জাহাঙ্গীরের পর রাজত্ব আসে শাহজাহানের হাতে এবং তার প্রত্যেক পুত্র উপমহাদেশের একেকটি অঞ্চলের গভর্নরের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। সেই সূত্রে কনিষ্ঠপুত্র আওরঙ্গজেবও দাকানের গভর্নর হন।

বাদশা শাহজাহানের একজন স্ত্রী ছিলেন, যিনি সৌন্দর্যে ছিলেন অতুলনীয়া। শাহজাহান তাকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন, যে ভালোবাসার দৃষ্টান্ত মেলা ভার। তিনি হলেন মমতাজ মহল। খুব অল্প বয়সেই তিনি মারা যান। সম্রাট এতে ভেঙ্গে পড়েন। শোকে কাতর হয়ে যান। তাই তিনি তার শোকস্তুতি গাইলেন, কিন্তু কোন কবিতার পংক্তি দিয়ে নয়। তিনি তার স্মৃতিকে চিরস্থায়ী করে রাখলেন, কিন্তু কোনো ছবি বা মূর্তি দিয়ে নয়। বরং তিনি তার স্মৃতিকে চিরন্তন করে রাখলেন শ্বেত পাথরের এমন একটি স্থাপনার মাধ্যমে, কোন কবি যারচে সুন্দর কবিতা আবৃত্তি করতে পারেনি! কোন সঙ্গীতশিল্পী যারচে সুমিষ্ট সুরে গান পরিবেশন করতে পারেনি! কোন চিত্রশিল্পী রঙিন আলপনায় এরচে সুন্দর চিত্র আঁকতে পারেনি! এটা একাধারে কবিতা, গান, জলছবি -সবই। এটা স্থাপত্য শিল্পের এক বড় সওগাত। এটাই আজকের তাজমহল।

এটি এমন একটি চমৎকার নির্মাণশৈলী, যার অভিনবত্বে পৃথিবী আজও হতবিহ্বল এবং আজীবন হতেই থাকবে। পৃথিবীব্যাপী দক্ষ কারিগররা যত স্থাপনা নির্মাণ করেছে, নিঃসন্দেহে এটা তারমাঝে সবচে শ্রেষ্ঠ স্থাপনা। প্রকৌশলীরা যত ডিজাইন করেছে, এর মতো সুচারু, শৈল্পিক এবং জাদুময়তা-পূর্ণ ডিজাইন কেউ উপহার দিতে পারেনি। এটা এমন এক সমাধিসৌধ, যেটাকে একবার হলেও দেখার জন্য এবং এর গল্প শোনার জন্য প্রতিদিন সুদূর আমেরিকা থেকে দিল্লির নিকটবর্তী আগ্রায় আসা পর্যটকরাও এখানে ভিড় জমায়!

এই প্রিয় প্রেয়সী স্ত্রীর মৃত্যুতে সম্রাট শাহজাহানের হৃদয় কাচের আয়নার মতো বিচূর্ণ হয়ে যায়। তিনি দুনিয়া থেকে বিরাগ হয়ে পড়েন, কেননা এই সম্রাজ্ঞীই ছিল তার পৃথিবী। তার কাছে হিন্দুস্থানের রাজত্ব তুচ্ছ হয়ে যায়, কারণ মমতাজ মহল ছিল তার কাছে রাজত্বের চেয়ে বড় কিছু। তিনি অতীতের অলিগলিতে তাঁর স্মৃতি খুঁজে বেড়াতে থাকেন, যেন জীবনের অবশিষ্ট দিনগুলি তার স্মৃতি বুকে নিয়ে বেঁচে থাকতে পারেন। তার চুলের মাতাল করা সুবাস নিতে পারেন। তার রূপ-মাধূর্যে ক্ষণে ক্ষণে অভিভূত হতে পারেন। চুপিচুপি তার খোশালাপ শুনতে পারেন। তার নিঃশ্বাসের উত্তাপ গ্রহণ করতে পারেন।

কিন্তু কিছুদিন বাদে তাজমহলকে ভালোবাসাই সম্রাট জাহাঙ্গীরের জন্য মমতাজ মহলের ভালবাসায় পরিণত হল। তিনি তাজমহলের নিরুত্তাপে মমতাজ মহলের উত্তাপ, তাজমহলের স্থিরতায় তার চঞ্চলতা, এর নির্বাকতায় তার গুনগুনানি অনুভব করতে লাগলেন। তিনি রাজত্ব থেকে একবারেই বিমুখ হয়ে গেলেন এবং শাসনকার্যে শিথিলতা প্রদর্শন করলেন। তখন তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র সুযোগ বুঝে রাজ্য দখল করে নেয়। ফলে তিনি শুধু নামেমাত্র সম্রাট হয়ে যান এবং এই বড় পুত্রই শাসনকার্য পরিচালনা করতে থাকেন। যার ফলে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে তার ভাইরা দিল্লি ছুটে আসেন- বাংলা থেকে সুজা, গুজরাট থেকে মুরাদ বখশ, দাকান থেকে আওরঙ্গজেব। তারা পরস্পরে ভ্রাতৃঘাতি যুদ্ধে লিপ্ত হন। যুদ্ধে আওরঙ্গজেব বিজয়ী হন এবং একাই শাসনভার গ্রহণ করেন। তিনি তাঁর পিতার জন্য প্রাসাদে একটি সুসজ্জিত কামরার ব্যবস্থা করেন। সেখানে তার চাহিদা মাফিক খাবার-দাবার, পোশাক-আশাক, চাকর-নকর ও দাস-দাসী নিয়োগ করেন। তিনি পিতার খাটের পাশে একটা আয়নাঘর তৈরি করে দেন, যার মাধ্যমে খাটে শুয়ে শুয়েই দূর থেকে তাজমহল দেখা যেত। এটাই ছিল তখন তাঁর জন্য দুনিয়ার ভোগ-বিলাসের অবশিষ্ট অংশ। এ আয়নাঘরটি এমন এক স্থাপনা শিল্প, পর্যটক মাত্রই এটা দেখে বিস্ময়াভিভূত হন।

সম্রাট আলমগীর শিশুকালে শায়েখ সরহিন্দ-পুত্র মাসুম সরহিন্দের নিকট লালিত-পালিত হন। তিনি ভাইদের মধ্যে বড় ছিলেন না এবং তিনি রাজত্বের অধিকারী হওয়ার কোন আশাও ছিল না। তবুও শায়েখ তার লালন-পালনে যত্নবান হন এবং কোন ত্রুটি করেন না।

তিনি মাদ্রাসার অভ্যন্তরীণ পরিবেশে বেড়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের মতো প্রতিপালিত হন। উলামা-মাশায়েখ আর ছাত্র-উস্তাদদের মাঝে বেড়ে ওঠেন। তিনি বিশুদ্ধভাবে কুরআন পড়া শিখেন। ফিকহে হানাফীর পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। সুন্দর হস্তাক্ষর রপ্ত করেন এবং সমসাময়িক বিষয়েও ব্যাপক জ্ঞানার্জন করেন। পাশাপাশি অশ্বারোহণ এবং যুদ্ধপরিচালনার প্রশিক্ষণ নেন।

বাদশা আলমগীর যখন সিংহাসনে বসেন, তখন ১৬৫৮ সাল। পাঠক হয়ত মনে করে থাকবেন, ফিকহের কিতাবাদি ও নকশবন্দি তরিকার আধ্যাত্মিক সাধনার মাঝে প্রতিপালিত এই সম্রাট হয়ত কিছুদিনের মধ্যেই নির্জনতা অবলম্বন করবেন এবং কোন মাদ্রাসা বা খানকায় ইলম ও আমলের চর্চায় ব্যাপৃত হয়ে পড়বেন। দুনিয়াবী বিষয়-আশয় ত্যাগ করে বৈরাগ্য গ্রহণ করবেন। না, হে মুসলিমবিশ্বের কর্ণধারগণ! এটা ইসলামের আদর্শ নয়! এটা ইসলামের নীতি নয়! বরং মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা, জুলুমের অপসারণ করা, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী কাফেরদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নেয়া -এর সবই মসজিদের কোণে দাঁড়িয়ে হাজার রাকাত নফল নামাজের চেয়ে উত্তম। কিছুক্ষণের জন্য ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠা ৪০ বছর নফল ইবাদতের চেয়েও শ্রেয়। তাই তিনি সিংহাসন লাভের প্রথম দিন থেকেই যুদ্ধের বর্ম পরিধান করেন। খোলা তরবারি হাতে নিজেই ছুটে যান জিহাদের ময়দানে।

তিনি বিদ্রোহীদের শায়েস্তা করেন, উদ্ধতদের কচুকাটা করেন এবং বিভিন্ন রাজ্য জয় করে ইনসাফ ও নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা উপাখ্যান রচনা করেন। তিনি অবিরাম যুদ্ধ করে যান। একটা শেষ তো আরেকটা শুরু। এক দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেন তো এরপর আরেক দেশের শাসনব্যবস্থায় হাত দেন। এভাবে তার রাজত্বের পরিসীমা হিমালয়ের পাদদেশ থেকে দক্ষিণে সিফে বাহার পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে। যদি তিনি রাজধানী থেকে পনেরো শ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণাঞ্চলের সীমান্তে গিয়ে শাহাদাতের অমৃত সুরা পান না করতেন, তবে গোটা হিন্দুস্থানই তাঁর করায়ত্তে এসে যেত।

তিনি ছিলেন একজন ব্যতিক্রমী বাদশাহ। কারণ, স্বভাবতই যে বাদশা যুদ্ধবিগ্রহে লিপ্ত হতেন। ঘোড়ার পিঠে চড়ে চড়েই, রক্তসায়রে ভেসে ভেসেই তার জীবন ফুরিয়ে যেত। রাজ্যের অভ্যন্তরীণ বিষয় সংশোধন করার সময় পেতেন না। মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দেখার সুযোগ পেতেন না। কিন্তু তিনি এ দুয়ের মাঝে এমন সমন্বয় সাধন করেছিলেন, যা খুব কম সম্রাটই করতে পেরেছেন।

তিনি গোটা রাজ্যের প্রজা সাধারণদের সর্ববিষয়কে ঈগলের মত গভীর দৃষ্টিতে দেখতেন। ঠিক সেভাবেই তিনি বিশৃঙ্খলাপ্রবণদেরকে সিংহের মতো থাবায় প্রতিহত করেন। ফলে ফিতনা-ফাসাদের স্লোগান চিরতরে রুদ্ধ হয়ে গেছে। বিপ্লবের আস্ফালন চুপসে গেছে। তিনি তাঁর প্রপিতামহ বাদশা আকবরের দ্বীনে এলাহীর কুসংস্কারগুলো একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দেন এবং হিন্দু রাজাদের কর্তৃক যে সমস্ত অন্যায় কর-রাজস্ব মানুষদেরকে আচ্ছন্ন করেছিল, সেরকম ৮০ ধরনের অবৈধ কর রহিত করেন। তিনি কর আদায়ের একটি সুষ্ঠু নীতি প্রচলন করেছিলেন এবং রাজা-প্রজা সকলের উপর করারোপ করেছিলেন। তিনিই প্রথম বাদশা, যিনি হিন্দু রাজাদের থেকেও কর নিয়েছেন। যদি তাঁর গাম্ভীর্যতা ও সততা না থাকত, তবে অবশ্যই তারা বিদ্রোহ করে বসত।

তিনি পুরাতন ও চলাচলে অনুপযুক্ত রাস্তাঘাট নতুন করে সংস্কার করেন। অনেক নতুন নতুন সড়ক নির্মাণ করেন, যেগুলোর দৈর্ঘ্য ছিল শেরশাহ সুরির গ্রান্ড ট্রাংক রোডের মতো, যা পাড়ি দিতে মুসাফিরের তিন মাস সময় লাগত, যার দু’পাশে সারি সারি গাছ এবং বিভিন্ন মসজিদ ও সরাইখানা ছিল। তিনি হিন্দুস্থানের বিভিন্ন অঞ্চলে মসজিদ নির্মাণ করেন এবং মসজিদে ইমাম ও মকতবে শিক্ষকদের নিয়োগ দেন। তিনিই প্রথম বৃদ্ধাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন এবং মানসিক রোগীদের জন্য নিরাময়কেন্দ্র আর অসুস্থদের জন্য হাসপাতাল নির্মাণ করেন।

তিনি সর্বসাধারণের মাঝে ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠা করেন। ফলে কোন ব্যক্তি আদালতের ফয়সালা মেনে নেয়াকে বড় কিছু মনে করত না। তিনিই প্রথম বাদশাহ, যিনি বিচার বিভাগের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করেন। প্রধান আদালতে ফয়সালা তিনি নিজেই করতেন। মানব সংবিধান অনুযায়ী নয়; বরং বিন্দুবিসর্গসহ হানাফী মাযহাবের বিধান অনুযায়ী। তিনি প্রতিটি গ্রামে-গঞ্জে বিচারক নির্ধারণ করেন। তাঁর পূর্বের রাজা-বাদশাদের বিভিন্ন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ছিল, তিনি সেগুলো নিশ্চিহ্ন করেন এবং নিজেকে রাষ্ট্রীয় আইনের আওতায় নিয়ে আসেন।

তিনি আলেম-উলামাদেরকে নিজের পাশেই রাখতেন। তাঁদেরকে নিজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিতেন। তিনি তাঁদের জন্য অনেক মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন এবং তাঁদের জন্য রাষ্ট্রীয় ভাতার ব্যবস্থা করেন। তিনি এমন দুটি বিষয় ব্যবস্থা করেন, যা তাঁর পূর্বে কোন মুসলিম বাদশাহ করতে পারেনি।

এক. যে আলেম শিক্ষাদান বা লেখালেখির কাজ করতেন, তাঁদেরকে তিনি বেতন দিতেন। তাহলে বিভিন্ন ইফতা বিভাগের মাসআলার সমাধানের বিনিময় কি কিছু নেই? যারা এসব কাজ করত না, তাদেরকে রাষ্ট্রীয় ভাতা বা উপঢৌকন দিতেন না। যাতে আলেমদের মাঝে দুইটি বিষয়ের সমন্বয় না ঘটে- অন্যায়ভাবে সম্পদ নেয়া এবং ইলম গোপন করা। যার ফলে তারা অলস হয়ে পড়বে।

দুই. তিনি একটি কিতাবে শরয়ী আহকাম সংকলন করেন এবং বিভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করেন। যা তাঁর আদেশে, তাঁর তত্ত্বাবধানে একদল আলেমের দ্বারা সংকলিত হয়। এটি এক কালজয়ী কিতাব, যার নাম ফতওয়ায়ে আলমগীরী। তবে এটি ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া নামে প্রসিদ্ধ। এ বিষয়ে জ্ঞাত সকল উলামায়ে কেরাম জানেন যে, এটি ফিকহি কিতাবসমূহের মধ্যে একটি প্রসিদ্ধ কিতাব, যা সুবিন্যাস্ত ও সুলেখ্য।

এছাড়াও তিনি ফার্সি ভাষায় হাদিসের অনুবাদ ও ব্যাখ্যাগ্রন্থ রচনা করেন এবং আরবদের নিকট সাহিত্যে মানোত্তীর্ণ চিত্তাকর্ষক চিঠিপত্র লেখেন। তিনি নিজ হাতে কুরআন শরীফ লিখে জীবিকা নির্বাহের জন্য বিক্রি করতেন, কারণ তিনি বায়তুল মাল থেকে এবং অন্যায়ভাবে জনগণ থেকে সম্পদ গ্রহণ করতেন না। তিনি সিংহাসনে বসার পর পুরো কুরআন মুখস্থ করেছিলেন। তিনি কবি এবং গীতিকারও ছিলেন। কিন্তু তিনি এর চর্চা করতেন না বরং অপছন্দ করতেন। তিনি কবি এবং গায়কদের বিভিন্ন উপঢৌকন ও হাদিয়া দেয়া বন্ধ করে দেন। কারণ, যে জাতি ভূমির প্রতিটি ইঞ্চিতে মর্যাদার প্রাসাদ নির্মাণ করে, সে জাতির জন্য তিনি এদের প্রয়োজন বোধ করতেন না।

তিনি ওয়াক্ত শুরু হওয়ার সাথে সাথেই জামাতে ফরয নামায আদায় করতেন। কখনও এর ব্যতিক্রম করতেন না এবং জুমআর নামায পড়তেন দিল্লির বড় মসজিদে। যদি কখনও কোন কাজে শহরের বাহিরে থাকতেন, তবে বৃহস্পতিবার চলে আসতেন। জুমার নামায পড়ার জন্য। নামায শেষে যেথা ইচ্ছা যাত্রা করতেন।

পাঠক তুমি ভারতবর্ষের গ্রীষ্মের উষ্ণতা কি তুমি একটুও অনুভব করতে পারো? তিনি সেই তীব্র গরমেও রমজানের রোজা রাখতেন। তিনি রাত জেগে তারাবি পড়তেন এবং রমযানের শেষ দশকে মসজিদে ইতেকাফে বসতেন। প্রতি সোম-বৃহস্পতি ও শুক্রবার রোজা রাখতেন। পবিত্র অবস্থায় ওজুর সাথে থাকতেন এবং সবসময় আল্লাহর জিকির করতেন এবং হারামাইন শরীফের খাদেমদেরকে উপহার-উপঢৌকন দিতেন।

তিনি ছিলেন দৃঢ় সংকল্প ও সুউচ্চ মানসিকতার প্রতীক। তিনি যুদ্ধবিদ্যা এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় অসম্ভব পারদর্শী ছিলেন। কীভাবে তিনি এত কাজ করেছেন? কীভাবে তিনি এত শত ইবাদত করতেন, আবার মানুষের মাঝে বিচার-সালিশ করতেন, ইলমি বিষয়ে বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা করতেন, কুরআন শরীফ নিজ হস্তাক্ষরে লিখতেন, কুরআনের হরফগুলো মুখস্থ করতেন, বিপুলা পৃথিবী পরিভ্রমণ করতেন এবং একের পর এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে নিজেকে উৎসর্গ করতেন??

হ্যাঁ, এসবই সম্ভব হয়েছে, কারণ তিনি সময়কে বিন্যাস করতেন, নিয়ম মেনে পরিপাটি জীবন যাপন করতেন। তাই তিনি নিজের জন্য কিছু সময় রাখতেন। পরিবারকে সময় দিতেন। প্রভুর ইবাদতে সময় ব্যয় করতেন এবং রাষ্ট্রপরিচালনা, যুদ্ধ-জিহাদ ও গণমানুষের জন্য কিছু সময় নির্ধারিত রাখতেন।

তিনি পুরো হিন্দুস্তান শাসন করেছেন টানা ৫০ বছর। তিনি ছিলেন সমসাময়িক বিশ্বের সবচে বড় সম্রাট। তাঁর হাতে ছিল অঢেল ধনভাণ্ডার। তবুও তিনি সাদাসিধে এবং দারিদ্র্যময় জীবনযাপন করতেন। কখনও তাঁর হাত ও চোখ হারামের দিকে প্রসারিত হয়নি। কখনও তাঁর পেটে হারাম প্রবেশ করেনি এবং এজন্য তিনি কখনও চেষ্টাও করেননি। এমনকি তিনি রমযান মাসেও নিজ হাতে লেখা কুরআনের কপি বিক্রি করা টাকায় সামান্য কয়েক টুকরো রুটি খেয়ে থাকতেন।

আল্লাহ তাআলা তাঁর কবরকে জান্নাতি নুরে নুরান্বিত করুন এবং আমাদেরকে তাঁর মতো একজন শাসক উপহার দান করুন! আমিন!

আগের সংবাদসম্পাদকীয়
পরবর্তি সংবাদপশ্চিমা কল্পনায় জালালুদ্দিন রুমি : বিকার ও বিকৃতি