একূল ওকূল

সাব্বির জাদিদ:

তারাবির নামাজের পর ডিমঅলা ঘুঘুর বাসার মতো নীরব হয়ে যায় গ্রামটি। করোনা মহামারির কারণে এ বছর গতবারের সেই শহুরে হাফেজ ছেলেটি আসেনি বলে স্থানীয় ইমাম সূরা তারাবি পড়াচ্ছেন। আর তাতেই গেলবারের আধাঘণ্টা আগেই সুনসান হয়ে যাচ্ছে কোরআনের ধ্বনি এবং নীরবতার কাঁথায় মুড়ি দিচ্ছে পুরো গ্রাম। দিনকে দিন নামাজি এবং রোজাদারের সংখ্যা বাড়ছে বলেই চায়ের দোকানগুলো এ মাসে আর জমছে না। লোকেরা সেহরিতে দ্রুত ওঠার তাগিদে রাত জামের মতো পেকে ওঠার আগেই ঘুমের আয়োজন করছে। কিন্তু এক প্রহর কেটে গেলেও ঘুম আসে না গ্রামের এক কোণে নদীর পাড়ে কুঁড়ের মতো ছনে ছাওয়া ঘরে শুয়ে থাকা আবদুর রহমানের। পাশেই মা মরা অসুস্থ মেয়েটা ঘুমে কাদা। গলদা চিংড়ির মতো কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে আছে হাঁটুর ভেতর হাত গুঁজে। একটু পরপর মেহগনি গাছের মাথায় বাতাস সড়সড় শব্দ তুলছে আর আতঙ্কে বুক ধড়ফড় করে উঠছে আবদুর রহমানের। তারাবির নামাজের সময় সে আবদুল্লাহর ফলের গুদামে ঢুকে বাইশটা তরমুজ নষ্ট করে এসেছে। খুব সাবধানে কাজটা করলেও তার মনে হচ্ছে গুদামে ঢোকা অথবা বেরোবার মুখে কেউ না কেউ দেখেছে তাকে। তার সন্দেহ যদি সত্য হয়–আবদুল্লাহ নির্ঘাত লোকজন নিয়ে তাকে আক্রমণ করতে আসবে।

এইসব সন্দেহ-সংশয়, ভয়-আতঙ্কের ভেতরও ফাতেমার কপালে আলতো করে চুমু খায় আবদুর রহমান। মেয়ের শীর্ণ মুখে ভেসে ওঠা সবুজ শিরা অন্ধকারেও যেন দেখতে পায় সে। এবারের বৈশাখ মাসের রোজায় শক্তপোক্ত মানুষেরাই যেখানে কাহিল হয়ে পড়ছে, সেখানে এগারো বছরের ফাতেমা এক প্রকার জোর করেই সবগুলো রোজা রেখেছে। এখনো বারোটি রোজা বাকি। সেগুলো রাখার শক্তি আর নেই ওর। তৃতীয় রোজার বিকেলে তন্বীদের বাড়ি খেলতে গিয়েছিল ও। দেখেছিল তন্বীর মা বারান্দায় বসে নানা প্রকার ফল কাটছে। ফালি ফালি করে কাটা লাল টুকটুকে তরমুজ দেখে ওর রোজাদার শুষ্ক গলা ভিজে উঠেছিল। এ সময় এক থোকা পাকা আঙুর খেতে খেতে বারান্দা থেকে নেমে এসেছিল তন্বী। তরমুজ, আঙুর সহ বাহারি ফলের পটভূমিকায় ফাতেমার রোজা ভাঙার উপক্রম হয়েছিল। সেদিন আর খেলা হয়নি ওর। বাড়ি এসে বাবার কাছে বায়না ধরেছিল ইফতারে লাল টুকটুকে তরমুজ আর হলুদাভ আঙুর খাওয়ার। মেয়ের আব্দারে অজান্তে বুক পকেটে হাত উঠে গিয়েছিল ভ্যানচালক আবদুর রহমানের। বহুদিন হয় সে এসব ফলমূল চেখে দেখেনি। তবে এসবের দাম যে খুবই চড়া, অজানা নয় তার। পরদিন হাসানবাগ বাজারের একমাত্র ফলের দোকানে তরমুজ কিনতে গিয়ে আক্ষরিক অর্থেই ব্যাক্কল হয়ে গিয়েছিল আবদুর রহমান। আলু বেগুনের মতো তরমুজও কেজি দরে বিক্রি করছে রোজা উপলক্ষে দাড়ি রেখে দেয়া আবদুল্লাহ। তাও আবার পঞ্চাশ টাকা কেজি। কী যুগ আইল, তরমুজও কিনতে হবে কেজি দরে, এই নিয়ে ক্রেতাদের ভেতর অসন্তোষ। নিরুপায় জনতাকে তবু কিনতে হচ্ছে হঠাৎ সোনার হরিণ হয়ে ওঠা তরমুজ। কারণ, কাঠফাটা রোদে দিনভর রোজা রেখে ইফতারে এই ফল তাদের বুকের শুষ্ক মাটি ভেজায়। কিছুক্ষণ আমতা আমতা করে ছোট সাইজের একটা তরমুজ ওজন দিতে বলে আবদুর রহমান। অতটুকু তরমুজের একশ পঁচিশ টাকা দাম শুনে কিনতে না পারার অক্ষমতায় চোখের সামনে মেয়ের শুকনো মুখটা ভেসে ওঠে তার। এ সময় কেউ একজন সচেতন মানুষ চিৎকার করে বলে, সবই সিন্ডিকেট। রোজাদার নিয়ে ব্যবসা। শালার মুসলমানের দেশ!

আবদুর রহমান সিন্ডিকেট বোঝে না। শুধু এটুকু বোঝে–একশ পঁচিশ টাকা দিয়ে তরমুজ কেনার ক্ষমতা তার নেই। সচেতন মানুষটাকে ঘিরে জমে ওঠা ভিড়ের সুযোগে সে আস্তে করে সরে আসে দোকানের সামনে থেকে। ভাগ্যিস লোকটা এই সময় এসেছিল। নয়তো ওজন দেয়া তরমুজ কিনতে না পারায় লোকের সামনে তাকে বিরাট লজ্জায় পড়তে হতো।

একুট ফাঁকে এসে মেয়েটার জন্য অদ্ভুত এক বেদনা মোচড় দিয়ে ওঠে আবদুর রহমানের। রোজা মুখে মেয়েটা তরমুজের আশায় বসে আছে ঘরের দাওয়ায়। শূন্য হাতে সে কীভাবে বাড়ি যাবে!

বাজারের ওমাথা থেকে উদ্দেশ্যহীন একটা চক্কর দিয়ে এসে আবদুর রহমান আবার দাঁড়ায় ফলের দোকানের সামনে। এবার সে আঙুরের কেজি জিজ্ঞেস করতে গেলে পাশ থেকে একজন খেঁকিয়ে ওঠে, আরে মিয়া আঙুর কি খাওয়ার উপায় আছে! রোজার আগে যে আঙুর ছিল একশ সত্তর টাকা, এখন তার দাম চায় সাড়ে তিনশ। সবই সিন্ডিকেট। রোজাদার নিয়ে ব্যবসা। এই নাকি মুসলমানের দেশ! মুসলমান ব্যবসায়ীর দেশ!

এইবার সিন্ডিকেট শব্দের মানে অনুভব করতে পারে আবদুর রহমান। নিজের মতো করে সে এর অনুবাদ দাঁড় করায়–রোজাদারের ওপর জুলুম করে জিনিসের দাম বাড়ানোকে সিন্ডিকেট বলে। এক কেজি আঙুরের দাম সাড়ে তিনশ টাকা শুনে মাথাটা চক্কর দিয়ে ওঠে আবদুর রহমান। সে দিশেহারা চোখে আবদুল্লাহর দিকে তাকালে তার সামনের দৃশ্য কেমন ধোঁয়া ধোঁয়া হয়ে ওঠে। সে ভিন্নবেশী এক আবদুল্লাহকে দেখে ভয় পেয়ে যায়। পরক্ষণে মাথার চক্কর থেমে গেলে সে সামলে নেয় নিজেকে। একশ গ্রাম আঙুর কিনে সে ফিরে আসে বাড়িতে, মেয়ের কাছে। বুদ্ধিমতী ফাতেমা আঙুর পেয়ে চেপে যায় তরমুজের প্রসঙ্গ। বাবার সামর্থ্যের সীমা ও খুব ভালো করেই চেনে। কিন্তু বুকের খচখচানি দূর হয় না বাবার। একখানা তরমুজ কেনার আশায় সে গোপনে টাকা জমাতে থাকে।

বৈশাখের প্রখর তাপ উপেক্ষা করে রোজা মুখে সে সকাল বিকাল দুইবেলা ভ্যান নিয়ে রাস্তায় বের হয়। যাত্রীর আশায় চাতকের মতো চেয়ে থাকে পথের দিকে। সে অবাক হয়ে খেয়াল করে, গত কয়েক বছরে মানুষের হঠাৎ পয়সা বেড়ে গেছে। ঘরে ঘরে এখন ভ্যানচালকদের পেটে লাথি মারা মোটারসাইকেল শোভা পাচ্ছে।

কয়েক দিনের পরিশ্রমে আবদুর রহমান একটা মাঝারি সাইজের তরমুজ কেনার মতো পয়সা জমাতে সক্ষম হয়। আর সেদিনই সে ফাতেমাকে ভ্যানে তুলে রওনা হয় বাজারে। দরদামের পর কাঙ্খিত বস্তুটা যখন সে কন্যার কোলের ভেতর রাখে, খুশিতে দুই চোখ নক্ষত্রের মতো জ্বলে ওঠে ফাতেমার। সে এমনভাবে তরমুজখানা বুকের ভেতর আগলে নেয়, আবদুর রহমানের মনে হয়, কন্যা তার আচমকা যেন জননী হয়ে উঠেছে, আর তরমুজ তার সন্তান।

ইফতারিতে বহু সাধনার সেই সোনার হরিণ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে বাবা মেয়ে দুজনই। বমি এবং পাতলা পায়খানার ঘায়ে কাবু হয়ে বিছানা নেয় তারা। পড়শীরা এসে মন্তব্য করে–এ হলো বিষের ক্রিয়া। আজকাল অনেক ব্যবসায়ী নাকি ইনজেকশন পুশ করে কাঁচা তরমুজ লাল করে।

ক্রুদ্ধ আবদুর রহমান ‘শুয়োরের বাচ্চা’ বলে একটা গালি দেয় আবদুল্লাহকে। অবশিষ্ট তরমুজ ভাগাড়ে ছুঁড়ে ফেলতে ফেলতে সে চিৎকার করে–দোজখেও তোদের জাগা হবিনে! তার মন চায় প্রকাশ্যে আবদুল্লাহর দোকানটা লণ্ডভণ্ড করে দিতে। অক্ষমতার বেদনায়, পড়শীরা চলে গেলে, কন্যার মাথার কাছে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে সে।

নদী থেকে ডাহুকের ডাক ভেসে এলে ঘোর ভাঙে আবদুর রহমানের। তার মনে হয়, কোথাও কিছু একটা ঘটে চলেছে। ওই ডাহুকের ডাক ছাপিয়ে অশুভ কোনো শক্তি যেন ক্রমেই এগিয়ে আসছে। কম্পিত ঠোঁটে ঘুমন্ত মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে বিছানা ছাড়ে সে। পুরনো চৌকির মচমচ শব্দ রাতের নীরবতায় ভয়ঙ্করভাবে বেজে ওঠে। অন্ধকার হাতড়ে নামতে গিয়ে তাকের ওপর থেকে ফাতেমার মাটির পুতুলটি পড়ে গেলে সে চমকে ওঠে। পুতুলটাকে মেয়ের মাথার কাছে রেখে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সে আল্লাহর কাছে দোয়া করে। আল্লাহ! আমার মেয়েটাক তুমি বাঁচাও।

আবদুর রহমানের প্রার্থনা-ধ্বনি মিশে যায় আগমনকারীদের পায়ের শব্দে। নিজেকে তার জালবন্দি মাছের মতো মনে হয়, যা ক্রমেই তার পৃথিবীটাকে ছোট করে দিচ্ছে। হঠাৎ কেউ একজন বাইরে থেকে খেঁকিয়ে ওঠে, বাড়ি আছিস রহমান!

বুকের ভেতরটা ধ্বক করে ওঠে আবদুর রহমানের। কণ্ঠটা তার চেনা চেনা লাগে বটে, কিন্তু আতঙ্কে সে চিনে উঠতে পারে না। ভয়ে সে দ্রুত বলে ওঠে–কিডা ডাকে?

বারা আয়। দেখলেই চিনবি।

মেয়ের মুখে-চুলে স্নেহের হাত বুলিয়ে দরজা খুলতেই টর্চের চোখ ঝলসানো আলো আবদুর রহমানকে অন্ধ বানিয়ে দেয়। এ সময় ঘুমজড়ানো কণ্ঠে ফাতেমা বলে, কী হলো বাজান!

আবদুর রহমান গলার স্বর নামিয়ে স্বাভাবিক কণ্ঠে বলে, তুই ঘুমা, কিডা যেন আমাক খোঁজ করছে। বলতে বলতে সে বাইরে বেরিয়ে আসে এবং শেষ মুহূর্তে মনোবল ধরে রেখে সে তেজী গলায় বলে, লাইট নিভান। চোখের উপর লাইট ধরে আছেন ক্যান!

অন্ধকার চোখসওয়া হয়ে গেলে আবদুর রহমান দেখতে পায়, পাঁচজন লোক লাঠি হাতে তার উঠোনে উঠে এসেছে ডাকাতের মতো। ওদের মধ্যে ফল ব্যবসায়ী আবদুল্লাহও আছে।

আবদুল্লাহ দাড়িতে হাত বুলিয়ে বলে, তোর সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে গেছি আবদুর রহমান। সামান্য এক ভ্যানচালক হয়ে তুই আমার ফলের গুদামে ঢুকে দাও দিয়ে তরমুজ কুপায়ে আসছিস!

এইডা আপনে কী কন আবদুল্লাহ ভাই! আমার ঘাড়ে কয়টা কাল্লা যে আপনের তরমুজ কুপাতে যাব! গোপনে ঢোক গিলে ভয় হজম করা গলায় বলে আবদুর রহমান।

মিছে কথা কবি না। আমার চাকর তোরে নিজ চোখে দেখছে। তোর কারণে আজকের তারাবির নামাজটাও আমি মন দিয়ে পড়তে পারি নাই। তুই কি জানিস, আমার কত বড় ক্ষতি করছিস!

সাথের একজন ক্রুদ্ধ গলায় বলে, এইডা তো শুধু টাকা পয়সার ক্ষতি না আবদুল্লাহ ভাই। হারামিটা আপনের গুদামে ঢুকছে… এইডা আপনের সম্মানেরও ক্ষতি। পারমিশন দেন, ওর মাথাডা তরমুজের মতো দুই ভাগ করে ফেলি।

না, গম্ভীর গলায় বলে আবদুল্লাহ, ও আমার সম্পদের ক্ষতি করছে, আমিও ওর সম্পদের ক্ষতি করব। ওর ঘরটারে ভেঙে খানখান করে দেব। দেখি ও কোথায় ঘুমায়!।

দিশেহারা কণ্ঠে আবদুর রহমান বলে, দোহাই আপনের, এই কাজডা আপনে কইরেন না। ঘরে আমার ছোট্ট মাইয়া আছে। ঘর ভাঙলে ওরে নিয়ে আমি কোনে ঘুমাব! আমার মাইয়ার রুজার দোহাই।

জাহান্নামে যেয়ে ঘুমা গা! এই মানিক, এই তাইজুল, ওর ঘরটারে মাটির সাথে মিশায়ে দে। খেঁকিয়ে ওঠে আবদুল্লাহর কণ্ঠ। বলতে দেরি ছুটতে দেরি হয় না আবদুল্লাহর চ্যালাদের। তারা লাঠি হাতে আবদুর রহমানের ঘরের দিকে এগিয়ে গেলে কান্নায় ভেঙে পড়ে আবদুর রহমান। সে চিৎকার করে বলতে থাকে, তুমরা কে কোনে আছ, ওরা আমার ঘর ভাঙে ফেলছে, আমার মাইয়াডারে মারে ফেলছে।

সেদিন তরমুজের বিষ-সংক্রান্ত জ্ঞানগর্ভ তথ্য দেবার জন্য প্রতিবেশীরা ছুটে এলেও আজ আর তাদের কাউকে দেখা যায় না। আবদুর রহমান লেঠেলদের হাতে ধরে পায়ে ধরে; কিন্তু ওদের গতি রোধ করতে পারে না। ওদের লাঠির প্রথম ঘাইটা ঘরের বেড়ায় পড়তে গেলে আবদুর রহমান লাঠির সামনে নিজেকে সমর্পণ করে দেয়। মুহূর্তে তার চোখের সামনে পৃথিবীটা দুলে ওঠে। রক্তের ভেতর ডুবে যেতে যেতে সে দেখে, ক্রূর হাসি হাসতে হাসতে তার দিকে এগিয়ে আসছে আবদুল্লাহ। সেদিন, আপনাদের মনে থাকবার কথা, আঙুর কিনতে গিয়ে মাথা চক্কর দিয়ে উঠলে ভিন্ন এক আবদুল্লাহর ছবি ভেসে উঠেছিল আবদুর রহমানের চোখে, আজও সেই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটে। টাখনু ছোঁয়া সাদা জোব্বা আর পাগড়ি পরিহিত ভীনদেশি আবদুল্লাহ যেন সাদাকালো ক্যানভাসের ভেতর থেকে ফুটে বেরিয়ে আসে। তার মুখজুড়ে লেগে থাকা মুচকি হাসি আমের বোলের সৌরভ ছড়ায়। ভিন্ন সময় আর ভিন্ন সমাজের প্রেক্ষপটে আরব বণিক আবদুল্লাহকে প্রথম দেখে মুগ্ধ হয়েছিল আবদুর রহমান, অবশ্য সে সময়টাতে তার নাম ছিল রজত, রজত দাস। তখন রজত ও তার সমগোত্রীয়দের ঘোর দুর্যোগের কাল। সেরেফ জন্মসূত্রে শূদ্র হওয়ায় এবং নামের শেষে দাস পদবি যুক্ত হওয়ায় সে প্রখর রৌদ্রতাপে পায়ে খড়ম পরতে পারে না। মাথায় দিতে পারে না ছাতার ছায়া। একদিন শখের বশে পুরনো ধুতি কাঁধের ওপর চাদর বানিয়ে চাপিয়েছিল। গৌতম সেনের চোখে পড়তেই তা অনলে ভস্ম করতে হয়েছিল। গৌতম যে তার মনিব। আশপাশের সাত গাঁ নিয়ে গৌতম সেনের তালুক। আর রজত তার ভৃত্য। মনিবের সম্মুখে শূদ্র বংশীয় ভৃত্যের কাঁধে চাদর তোলা নরক-গমনতূল্য পাপ। সেদিন খুব মন খারাপ হয়েছিল রজত দাসের। অবশ্য মন খারাপের ঘটনা হরহামেশাই ঘটে তার জীবনে। মনিবের নয়নধাঁধানো বাড়ির পাশে রজত দাসের এক টুপরো ছাপরা। ষষ্ঠপ্রহর মনিব সেবায় কাটিয়ে গভীর রজনীতে সে নির্দিষ্ট ছাপরায় নিদ্রা যায়। মনিব চায়নি বলে তার সংসার পর্যন্ত হয়নি। অথচ মিষ্টি একটা বধূ আর কন্যার কত স্বপ্ন রজতের।

একদিন কর্মসূত্রে মনিবের সাথে আম্রতলীর বাজারে যেতে হয় রজতকে। সেবারই প্রথম দেখা আরব বণিক আবদুল্লাহর সাথে। মাসটা ছিল চৈত্রের। সূর্যদেব যেন গলিত অনল ঢেলে দিচ্ছে বাঙলা মুলুকের মৃত্তিকায়। অনল বিছানো পথে অশ্বারোহী মনিবের পিছু পিছু ছুটছে নগ্নপদী রজত। সূর্যের নয়ন-ঝলসানো আলোয় চকচক করছে রজতের কালো কুচকুচে ঘেমো শরীর।

প্রথমবারের মতো আম্রতলীর বাজারে এসে হতভম্ব হয়ে যায় রজত দাস। বাংলা মুলুকের উদরের ভেতর যেন ভিনদেশ প্রবেশ করেছে। জীবনভর ধুতি লুঙ্গি পরিহিত পুরুষলোক দেখা রজত দাস লম্বা জোব্বা, পাগড়িধারী বণিক আর তাদের সারি সারি আরবি ঘোড়া দেখে বিস্মিত হয়। অশ্বের বল্গা ধরে সে চারপাশে তাকায় আর মনিবের পিছু পিছু হাঁটতে থাকে। রৌদ্রদগ্ধ পথের পরিশ্রম আর জলের তেষ্টা সে ক্ষণকালের জন্য বিস্মৃত হয়। ভৃত্যের এই আঁকুপাঁকু চাউনি আর নয়নের মুগ্ধতা বিরক্ত করে গৌতম সেনকে। পথ চলতে গিয়ে তোমার ভৃত্যদের চারপাশে তাকাতে দেবে না, এতে তারা বিদ্রোহী হয়ে উঠতে পারে–বাবার অন্তিম উপদেশ মনে পড়ে যায় গৌতম সেনের। ক্রুদ্ধ দৃষ্টি হেনে তিনি সজোরে চড় কষে দেন রজতের চোয়ালে। তার কৃষ্ণকায় গণ্ডে মনিবের পঞ্চআঙুলের ছাপ বসে যায়। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব রজত দাস ব্যথার বেদনা সামলে হা করে মনিবের দিকে তাকিয়ে থাকে। মনিব দন্ত চিবিয়ে বলেন, শুকরপুত্র, দৃষ্টি নত রেখে পথ চলতে পারিস না! এরপর অনেক সময় নিয়ে তিনি কোমরে বাঁধা থলে থেকে জল ঢেলে হস্ত ধৌত করেন। ওদিকে রজত দাস মনিবের হস্ত থেকে ঝরে পড়া জলের ধারার দিকে করুণ চোখে তাকিয়ে থাকে। এক শূদ্রের গণ্ডে লেগে থাকা সমুদয় অশুচিত্ব মনিবের হস্ত থেকে ধুয়ে মুছে সাফ করে দিচ্ছে ওই জল। রজত যেন ওই জলের ভেতর নিজের অভিশপ্ত জীবনের গ্লানি দেখতে পায়।

গৌতম সেনের অভিজাত পোশাক, সঙ্গের অশ্ব ও ভৃত্য আকৃষ্ট করে বণিকদের। তারা এক মূল্যবান খদ্দের পাওয়ার আশায় হাত ইশারায় নিজ নিজ পসরার দিকে ডাকতে থাকে গৌতম সেনকে। গৌতম সেন বিচক্ষণ ক্রেতা। তিনি দূর থেকেই সব বণিকের মুখমণ্ডল পড়ে নিয়েছেন। ফলে সকলের ডাক উপেক্ষা করে তিনি এক তরুণ সৌম্যকান্তির অশ্ব-বণিকের কাছে উপস্থিত হন। রজত দাস খেয়াল করে, অশ্বের দরদামের ফাঁকে বণিকটি বড় করুণ চোখে তার দিকে তাকাচ্ছে। তার ঘর্মান্ত শরীর, তামাটে নগ্ন পা আর তৃষ্ণার্ত চেহারা কি এই আরব বণিকের হৃদয়ে দরদ জাগাচ্ছে? একটু পরেই খোলাসা হয় তার করুণ চাউনির রহস্য। কয়েক কদম এগিয়ে এসে এক পেয়ালা জল সে রজতের দিকে বাড়িয়ে ধরে। আরবি আর ভাঙা ভাঙা বাংলার মিশেলে যা বলে, তার অর্থ, তোমাকে খুব তৃষ্ণার্ত দেখাচ্ছে। পানিটুকু খেয়ে ফেল।

এমন বিস্ময়কর ঘটনা রজতের সাথে কোনদিন ঘটেনি, হয়তো ঘটবেও না আর। জন্মের পর থেকেই সে দেখে এসেছে, তাদের খাওয়াপরা, চলাফেরা সবকিছুই আলাদা। উচ্চবর্ণের মানুষেরা ওদের করস্পর্শ জল খায় না। কোনো ব্রাহ্মণ কিংবা কায়স্থের আঙ্গিনায় ওদের পদস্পর্শ পড়লে জায়গাটা গোবর-জলে না ধুয়ে তারা স্বস্তি পায় না। পথে-প্রান্তরে ওদেরকে চলতে হয় খুব সাবধানে, যেন ওদের শরীরের ছায়া কোনো ব্রাহ্মণের পা স্পর্শ না করে। সেই রজতের সামনে যখন ভিনদেশি এক মুসলিম বণিক নিজের খাওয়া জলের পেয়ালা এগিয়ে দেয়, এক মুহূর্তের জন্য তাকে তৃষ্ণা ভুলে যেতে হয়। কতক্ষণ সে হতভম্ব হয়ে পেয়ালার দিকে তাকিয়ে থাকে, টের পায় না। ঘোর ভাঙে তখন, যখন গৌতম সেন ধাক্কা দিয়ে পেয়ালাটা ফেলে দেন ধুলোয়।
এটা কী করলেন? বণিকের চেহারায় বিরক্তি।

একজন সম্ভ্রান্তের পেয়ালায় এদের জল খাওয়া বারণ।

কিন্তু এই নিয়ম আমি মানি না।

আপনি অন্যের সাথে এই নিয়ম ভঙ্গ করতে পারেন। মালিকের সম্মুখে ভৃত্যের সাথে এই অধর্ম করতে পারেন না।

তরুণ বণিক আর কথা বাড়ায় না। দরদামের পর সে একটি শুভ্র অশ্ব গৌতম সেনের কাছে বিক্রি করে। মূল্য বুঝে নেবার আগে বণিকটি জানায়, জাহাজ থেকে নামবার সময় অশ্বের ডান পায়ে সামান্য ক্ষত হয়েছে। ইনশাআল্লাহ, শিগগিরই সেরে উঠবে। আর এজন্য সে মূল্য কম রেখেছে।

মনিবের আদেশে রজত এগিয়ে এসে ক্ষত পর্যবেক্ষণ করে। খুবই সামান্য এক কাটা দাগ, না বললে হয়তো চোখেই পড়ত না, এবং এটা অশ্বের জন্য এমন কোনো খুঁত নয় যার কারণে মূল্য হ্রাস পেতে পারে; বণিকটি তবু স্বেচ্ছায় পণ্যের খুঁত বলে দেয়ায় রজত দ্বিতীয়বারের মতো মুগ্ধ হয়। সে বুকভর্তি মুগ্ধতা নিয়ে ক্রীত অশ্বের বল্গা ধরে মনিবের পদাঙ্ক অনুসরণ করে। আম্রতলীরবাজার ত্যাগ করতে করতে সে কিশোরদের মেলা দেখবার মতো বারবার ঘাড় ঘুরিয়ে বণিকটিকে দেখে। তার নয়নে খেলা করে এক অপার্থিব বিস্ময়।

রজনীতে নিদ্রা না গিয়ে রজত দাস গোপনে পুনরায় আম্রতলীর বাজারে আসে। সে লোকমুখে শুনেছিল, আরবের এই বণিক দল এক মাস এখানে থাকবে। বাজারের পাশেই তারা তাঁবু পেতেছে। ক্রয়বিক্রয় ছাড়াও নাকি তাদের অন্য উদ্দেশ্য আছে। কী সেই উদ্দেশ্য–রজত অবশ্য জানতে পারেনি।

একটু খুঁজতেই রজত দাস বণিকদের তাঁবুর সন্ধান পেয়ে যায়। বাজার ভেঙেছে বেশ আগেই। বণিকেরা নিদ্রা যাওয়ার আগে সেদিনের শেষ উপাসনা সারছিল। এক আম্রবৃক্ষের তলায় দাঁড়িয়ে রজত অবাক দৃষ্টিতে সারিবদ্ধ বণিক দলের প্রার্থনা দেখে। সারি থেকে একটু সামনে দাঁড়িয়েছে সেই তরুণ বণিক, রজতকে যে জলের পেয়ালা এগিয়ে দিয়েছিল। তরুণ বণিকটি বড় মায়াবী সুরে কী যেন আবৃত্তি করছে। আবৃত্তি শেষ হলে সবাই একসাথে কোমর ভেঙে নিচু হয়। এরপর তারা নিতম্ব উঁচু করে মাটিতে কপাল ঠেকায়। অনেকক্ষণ উঁকিঝুঁকি মেরেও বণিকদের সামনে কোনো পুত্তুলি খুঁজে পায় না রজত। সম্মুখে কোনো পুত্তুলি নেই–এ আবার কেমন উপাসনা! কার উদ্দেশ্যেইবা এই বিনীত পেন্নাম! বিড়বিড় করে ও।

এই শূদ্রপুত্র, তুমি এখানে কী মতলব করছ? স্কন্ধের ওপর কেউ যেন ছুঁড়ে মারে কথামালা।

রজত দাস চমকে উঠে পেছন ফেরে। লোকটি জানায়, তার নাম অর্জুন। বাড়ি সুতাকাঠি গাঁয়ে। আরব বণিকদের মাঝে সে দোভাষীর কাজ করে মুদ্রার বিনিময়ে।

ওই যে সবার সম্মুখে বসে প্রার্থনা করিছে যে লোক, ওর সহিত সাক্ষাৎ করিবার বড় সাধ। পারিবে তুমি?

ওর নাম আবদুল্লাহ। অনেক বড় বণিক। এবার দুইশ অশ্ব এনেছে আরব মুলুক থেকে। চলো যাই ওর কাছে।

ততক্ষণে প্রার্থনা শেষ হয়েছে বণিকদের। প্রথম দর্শনেই রজতকে চিনে ফেলে আবদুল্লাহ। এই, তুমি সে নও? তোমার জন্য দুঃখ, মনিবের কারণে তোমাকে পানি খাওয়াতে পারিনি।

দুঃখ পাইবেক না। ঠিকানায় ফিরে হামি এক ঠিলা জল পান করেছি। এখন আর কোনোই তৃষ্ণা নেই হামার। হস্ত কচলে বলে রজত।

তৃষ্ণা নেই। ক্ষুধা তো আছে। এসো, আমাদের সাথে খাবে।

না না। বাবুদের সাথে হামাদের খাওয়া বারণ।

আমরা বাবু নই, মানুষ। তোমাদের মতোই মানুষ। এসো তো! রজতের হাত ধরে টান মারে আবদুল্লাহ।

রজতের তখন সারা শরীর কাঁটা দিয়ে ওঠে। এক বনেদি বাবু তার শরীর স্পর্শ করল! রাজ্যের দ্বিধা আর ভীতি নিয়ে সে বণিক দলের তাঁবুতে প্রবেশ করে। জীবনে প্রথমবারের মতো বকরির ঝলসানো মাংস খেয়ে আনন্দে আর বেদনায় তার নয়ন বেয়ে জল গড়ায়। আহা! মাংসের এত স্বোয়াদ–আজকের দিনটা না এলে রজতের কখনো জানা হতো না।

এরপর থেকে আবদুল্লাহ অনল আর রজত পতঙ্গে পরিণত হয়। অনলের আকর্ষণে পতঙ্গ প্রতি রাতে ছুটে আসে তাঁবুতে। আবদুল্লাহর সাথে তার ভারি বন্ধুত্ব হয়ে যায়। একদিন রজত জিজ্ঞেস করে, সেদিন হামার মনিবের কাছে অশ্বের ক্ষতের কথা না বলিলেও পারিতে। কেন বলেছিল?

ওটাই আমাদের বাণিজ্যের সততা। আমাদের নবি বলেছেন, যে ধোঁকা দেয়, সে আমার উম্মত নয়। তিনি আরো বলেছেন, সত্যবাদী, আমানতদার ব্যবসায়ীর পরকাল হবে নবি-সিদ্দিক-শহিদের সাথে।

নবি!

তার নাম মুহাম্মদ। তিনি আমাদের দেশে জন্মেছিলেন। আমাদের মধ্যেও দাস আর মনিবের ভেদাভেদ ছিল। এখন যেমন তোমাদের ভেতর আছে। তিনি সেই ভেদাভেদ ঘুচিয়ে দিয়েছেন।

তোমাদের ভেতর দাস আর মনিবের ভেদাভেদ নেহি? বিস্ময়ে ডাবের মতো বড় বড় হয়ে যায় রজতের চক্ষু।

নেহি।

হামি কি তোমাদের মতো হতে পারিব?

কেন পারবে না! আমাদের দুয়ার সবার জন্য উন্মুক্ত।

এইসব কথোপকথের ভেতরে আচমকা বল্লম হাতে দৈত্যের মতো তাঁবুতে উপস্থিত হন গৌতম সেন। তার ভৃত্য ম্লেচ্ছদের তাঁবুতে আসে, আমিষ ভক্ষণ করে–মৃত্যুতুল্য পাপ। এই পাপিষ্ঠের পেট এফোঁড়ওফোঁড় না করে তিনি জল স্পর্শ করবেন না। মনিবের ওই রুদ্রমূর্তি দেখে পরাণ পাখি দেহ ছেড়ে ওষ্ঠে চলে আসে রজতের। সেই বিপদের মুহূর্তে রজতের পাশে দাঁড়ায় আবদুল্লাহ। একটা মোটাতাজা অশ্বের বিনিময়ে সে মালিকের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে রজতকে। রজত বিস্ফারিত চোখে চেয়ে থাকে আবদুল্লাহর দিকে। এই ভিনদেশির কাছে এক দাসের জীবনের এত মূল্য!

একদিন ফেরার সময় হয় আবদুল্লাহদের। রজত আশ্রুসজল চোখে বন্ধুর হাত ধরে আর্দ্র কণ্ঠে বলে, হামি তোমাদের মতো হইতে চাই। হামাক তুম মুসলমান বানাও।

আবদুল্লাহ বুকে টেনে নেয় রজতকে। ওর নাম রেখে দেয় আবদুর রহমান। আম্রতলীর পাশে চন্দ্রনাথ গ্রামের অধিকাংশ মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছিল। আবদুল্লাহ চন্দ্রনাথে আবদুর রহমানের জন্য ঘর তুলে দেয়। দুই বছর পর আরব মুলুকে বসে পরিচিত বণিক মারফত বন্ধুর খবর জানতে পারে আবদুল্লাহ। আবদুর রহমান এক মুসলিম নারীকে বিয়ে করেছে। ওদের গৃহে এসেছে এক কন্যা সন্তান। আবদুর রহমান কন্যার নাম রেখেছে ফাতেমা।

বাজান! ও বাজান! তুমার মাথাত তো রক্ত! তুমি চোখ খোলো বাজান। ওরা তুমারে এমন করে মারল!

বাজান তখন সংজ্ঞাহীন। হইচই শুনে ঘর থেকে ছুটে এসে বাবার রক্তাক্ত মাথাটা কোলের ওপর তুলে নিয়েছে ফাতেমা। তরমুজের বিষক্রিয়া এখনো ছেড়ে যায়নি ওকে। ওর চোখ ভর্তি পানি। বুক ভর্তি কষ্ট। মন ভর্তি ঘৃণা, ওদের জন্য।

ওই আরব বণিকটা কি চলে গেছে, মা? হঠাৎ বিড়বিড় করে আবদুর রহমান।

আরব বণিক–এসব তুমি কী বলছ, বাজান?

ঠিকই বলছি। সেদিন ওই-ই তো আমাক গৌতম সেনের হাত থেকে বাঁচাইছিল।

হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে ফাতেমা–বাজান, তুমি কি পাগল হয়ে গেলে! সেদিন যার কাছ থেকে তরমুজ কিনছিলে, সেই লোকটা আসছিল। ওরা আমাগের ঘর ভাঙে দিয়ে গেছে। এখুন আমরা কোনে থাকব বাজান? বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়ে ও।

আবদুর রহমান ঘাড় উঁচু করে সেজদার মতো লুটিয়ে পড়া ঘরের চালা দেখে। পৃথিবীর সমস্ত অন্ধকার যেন থমকে আছে তার লুণ্ঠিত ঘরটার ওপর। দুই জীবনের মোহনায় মিশে সব মনে পড়ে আবদুর রহমানের। রমজান মাস, মাইয়ার রোজা, আঙুর, সিন্ডিকেট, তরমুজ, বমি, অপর দিকে বাড়িয়ে ধরা পানির পেয়ালা, পণ্যের ত্রুটি প্রকাশ, দাসমুক্তি, গৃহনির্মাণ, আলিঙ্গন, বন্ধুত্ব–সব তার মনে পড়ে। একদা যে লোকটার ব্যবসার সততা আর চরিত্র-মাধুর্য দেখে শূদ্র থেকে মুসলমান হয়েছিল সে, এতকাল পর সেই একই মানুষের অসততা আর হিংস্রতা দেখে পুনরায় শূদ্র হয়ে যেতে ইচ্ছে করে তার।

আগের সংবাদমাদানীনগর মাদরাসা : শব্দরা যেখানে শব্দ করে হাসে
পরবর্তি সংবাদএখন অনেক রাত