|| তাসনিফ আবীদ ||
অনেক চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে ‘কওমি শিক্ষা সনদ’ সরকারি স্বীকৃতি লাভ করে ২০১৮ সালে। এই সনদ নিয়ে তখন থেকেই কওমি শিক্ষার্থীদের মাঝে নানা আগ্রহ উদ্দীপনা ছিল। দেশে সরকারি-বেসরকারি ইউনিভার্সিটিতে উচ্চশিক্ষার সুযোগ, সরকারি-আধা সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ এবং বহুল প্রতীক্ষিত দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার পথ সুগমসহ নানা আশা-প্রত্যাশা সামনে আসে তাদের। কিন্তু সেই আশার গুড়ে যেন বালি। স্বীকৃতির প্রায় অর্ধযুগ পার হলেও এখনও অনেকটা অধরাই রয়ে গেছে এর সুফল। প্রশ্ন বাড়ছে এর সুফল আধৌ পাওয়া যাবে কি না? তা নিয়ে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কওমি স্বীকৃতির সার্বিক বিষয় যদি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যায় তাহলে এর মাধ্যমে দেশ-বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির পথ সুগম হওয়া কঠিন কিছু না। এর জন্য দরকার কার্যকরী উদ্যোগ।
কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি প্রদান করা হয় কওমি মাদরাসাগুলোর সর্বোচ্চ অথরিটি আল হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কাওমিয়ার মাধ্যমে। সে হিসেবে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণের দায়িত্ব বা দায়ভার এই সংস্থার ওপরই বর্তায়। কিন্তু এই সংস্থা সেই দায়িত্বগুলো কীভাবে সম্পাদন করছে? এখনও কেন এই সনদের পুরোপুরি কার্যকারিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না? কোথায় গিয়ে আটছে আছে লাখো কওমি শিক্ষার্থীর স্বপ্নীল আশা-আকাঙ্খা? এসব বিষয়ে কথা বলেছিলাম হাইয়াতুল উলিয়ার সদস্য বোর্ডগুলোর দায়িত্বশীলদের সঙ্গে।
এ প্রসঙ্গে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক জানান, ‘কওমি স্বীকৃতির বড় একটা কার্যকারিতা হলো সামাজিকভাবে কওমি মাদরাসার শিক্ষা যে একটা পূর্ণাঙ্গ শিক্ষাব্যবস্থা তা প্রতিষ্ঠিত হওয়া। তবে শিক্ষার্থীরা যেন এ সনদের মাধ্যমে বিদেশে উচ্চশিক্ষাসহ নানা সুফল পেতে পারে সেজন্য প্রক্রিয়া চলছে। আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি এই স্বীকৃতির কার্যকারিতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবে।’
জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের মহাসচিব মুফতি মুহাম্মদ আলীর কাছে জানতে চেয়েছিলাম সুফল পাওয়ার জন্য আপনারা কীভাবে কাজ করছেন? তিনি বলেন, স্বীকৃতি পুরোপুরি বাস্তবায়নের জন্য একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি নিজস্ব ফর্মুলায় তাদের কাজগুলো এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সেই কমিটিতে আমিও আছি। আশা করছি স্বীকৃতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের যে আশা-আকাঙ্খা আছে তা পূরণ হবে ইনশাআল্লাহ।
সাব-কমিটি কীভাবে কাজ করছে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি কিছু বলেন নি।
এদিকে সাব-কমিটি যেভাবে কাজ করছে, এভাবে কাজ এগুলে কবে নাগাদ শিক্ষার্থীরা সুফল হাতে পাবে জানতে চাইলে হাইয়ার আরেক সদস্য বোর্ড আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তা’লীম বাংলাদেশ’র মহাসচিব মাওলানা আব্দুল বছীর জানান, কবে নাগাদ এর পুরোপুরি সুফল পাওয়া যাবে তা বলা যাচ্ছে না। প্রক্রিয়া চলছে। আমাদের প্রতিনিধি দল সরকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। সরকার বলেছে, বিষয়টি দেখছে। কিন্তু সরকার উদ্যোগী না হলে তো আমাদের তেমন কিছু করার থাকে না। এটা তো আমাদের হাতে নেই। আমরা আশা করছি, নির্বাচনের পর সরকার বিষয়টির দিকে ভালোভাবে নজর দিবে।
তার মতে, স্বীকৃতির সুফল যে একেবারেই আসেনি তেমনটি নয়। এই সনদের মাধ্যমে মডেল মসজিদে চাকরি হচ্ছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনে আবেদন করা যাচ্ছে। ভালোভাবে উদ্যোগ নিয়ে কেউ কেউ এই সনদের মাধ্যমে দেশের বাইরেও পড়তে যাচ্ছে। তবে ব্যাপকভাবে যেন দেশের বাইরে পড়তে যাওয়া যায়, সেজন্য সনদ নিয়ে আরো কিছু কাজ করতে হবে সরকারীভাবে।
অপরদিকে তানযীমুল মাদারিসিদ দ্বীনিয়া বাংলাদেশ’র মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমাদ বলেন, আমার জানাতে মতে স্বীকৃতির সুফল পাওয়া ও এর সার্বিক উন্নয়নের জন্য যেভাবে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সেভাবে নেওয়া হচ্ছে না। এমনকি বেশ কয়েকবার পদক্ষেপ নেওয়া হলেও এর কোনো বাস্তবায়ন হয়নি।
কার্যকরী পদেক্ষপ নিতে বাধা কোথায়? জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর কারণ আমাদের মাঝে মতভেদ।সরকারের কাছে যেভাবে গেলে স্বীকৃতির সুফল ছাত্ররা পাবে সেভাবে সরকারের কাছে যেতে সিনিয়র অনেকেই আগ্রহী নয়। যদি শিক্ষামন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সার্বিক বিষয়গুলো সমন্বয় করা যায় তাহলে এই স্বীকৃতির মাধ্যমে দেশের বাইরে পড়াশোনাসহ ছাত্রদের চাহাতগুলো পূরণ হবে বলে আশাবাদী।
এদিকে এ বিষয়ে হাইয়াতুল উলিয়ার সদস্য অন্য দুই বোর্ড আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশ ও বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া গওহরডাঙ্গা বাংলাদেশ’র দায়িত্বশীলদের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।