|| তাসনিফ আবীদ ||
আল হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কাওমিয়া অধীনে কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসের সনদকে সরকারী স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে ৫ বছরেরও বেশি সময় আগে। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে অন্যতম একটি চাওয়া ছিল, এর মাধ্যমে কওমি ছাত্ররা উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশের বাইরে পড়তে যাবে। নিজেদের উজ্জ্বল ক্যারিয়ার গড়বে। কিন্তু প্রায় অর্ধ যুগের কাছাকাছি এই সময়ে কওমি সনদের মাধ্যমে বিদেশে পড়াশোনার আকাঙ্খা স্বপ্নই রয়েছে গেছে। কিন্তু এর পেছনে কারণ কী? এই সুফল পেতে হলে কোন প্রক্রিয়াই এগুতে হবে আল হাইয়াতুল উলিয়াকে? এ বিষয়ে কথা বলেছিলাম মালয়েশিয়ার I N C E I F University থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি সম্পন্ন করা গবেষক তরুণ আলেমেদ্বীন মুফতি ইউসুফ সুলতানের সঙ্গে।
তার মতে, সরকারের কাছ থেকে কওমি সনদের স্বীকৃতি অর্জনের পর এটিকে দ্বিতীয় ধাপে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব ছিল আল হাইয়াতুল উলিয়ার ওপরেই। কেননা স্বীকৃতির গ্যাজেট এই সংস্থার নামেই ইস্যূ করা। বাংলাদেশের কওমি মাদরাসাগুলোর সর্বোচ্চ অথরিটি স্বীকৃতি অর্জনের পর পরবর্তী ধাপগুলো সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে না পারায় এই জটিলতা রয়ে গেছে।
তিনি বলেন, স্বীকৃতি গ্রহণের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) কাছে এটিকে ফরমালাইজ করার দরকার ছিল। এর জন্য হাইয়াতুল উলিয়া আলাদা একটা ডিপার্টমেন্ট করতে পারতো; যে ডিপার্টমেন্টে একজন বা দুইজন হোক; তাদের কাজই হবে স্বীকৃতিটাকে এগিয়ে নেওয়া। শিক্ষামন্ত্রণালয় এবং ইউজিসির সঙ্গে কোলাবরেট করে এটাকে এগিয়ে নেওয়া। যেন ন্যাশনাল এবং ইন্টারন্যাশনাল যত এডুকেশনাল ডাটাবেজ আছে, সেখানে কওমি মাদ্রাসাগুলোর জন্য একটা রিকগনেশন তৈরি হয়। আমাদের জানামতে এই বিষয়টি ওয়াইডলি মিসিং হয়েছে। অথবা যেভাবে হওয়ার দরকার ছিল সেভাবে হয়নি। দু’টোর একটা হবে।
তিনি বলেন, দ্বিতীয় স্টেপটা যদি হয়ে যায় তাহলে বাংলাদেশের ইউনিভার্সিটিগুলোতে হাইয়াতুল উলিয়ার সনদ কার্যকর হতে কোন বাধা থাকবে না। বিশেষ করে পাবলিক ইউনিভার্সিটিগুলোতে। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে কেউ যদি চায় হায়াতুল উলিয়ার সনদ গ্রহণ করবে না এটা তাদের নিজস্ব বিষয়। এটা হতে পারে। কিন্তু ইন জেনারেল আর কোন বাধা থাকবে না। পাবলিক ইউনিভার্সিটিগুলোতে কওমি মাদ্রাসার ছাত্ররা সহজে সুযোগ পাবে।
‘এটা যদি হয়ে যায় এরপরে থার্ড স্টেপে বিভিন্ন দেশে কওমি মাদ্রাসার যেসব ফারেগিনরা বিভিন্নভাবে উচ্চ শিক্ষার জন্য আছেন; তারা ওইসব দেশে উদ্যোগ নিয়ে সেখানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা কিভাবে সুযোগ করে দেওয়া যায় সেই বিষয়ে কাজ করতে পারবে।’ -বলেন, মুফতি ইউসুফ সুলতান
তরুণ এই গবেষক জানান, মালয়েশিয়ায় আমরা কয়েকজন মিলে বেশ কয়েকবার বসেছি। কিছু ডকুমেন্ট প্রস্তুত করেছি। কিন্তু হাইয়াতুল উলিয়ার মাধ্যমে দ্বিতীয় স্টেপটা সম্পন্ন না হওয়ায় এটা আমাদের জন্য একটা বিগ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বলা যায় প্রায় অসম্ভবের মতো। আজকে যদি ‘এডুকেশন মালয়েশিয়া গ্লোবাল সার্ভিসেস (ইএমজিএস)’ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানের ডাটাবেজ থেকে আল হাইয়াতুল উলিয়া সার্চ করে তাহলে এরকম কোনো প্রতিষ্ঠান এখানে নিবন্ধিত নাই বলে দেখতে পাবে। সেজন্য এই সার্টিফিকেটটি দিয়ে যে এখানে এসে কোনো ইউনিভার্সিটিতে সুযোগ নেবে এরকম কোন সুযোগ তৈরি করা যাচ্ছে না। তবে কেউ কেউ ইনফরমালভাবে সুযোগ তৈরি করতে পারছে। সেটা ইন্ডিভিজুয়াল লেভেলে রিকগনেশন। এটা এখানের কোনো প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্বপ্রণোদিত হয়ে আল হাইয়াতুলিয়ার সনদের সার্বিক মান যাচাই করে সবকিছু সম্পন্ন করে কাউকে মাস্টার্সের মানে ভর্তি করতে পারে। এরকম কয়েকটি ঘটনাও আমরা দেখেছি। কিন্তু সেগুলো একেবারেই গৌণ।
‘তবে কোনো ফর্মালিটি ছাড়া এখানের পুরো ইউনিভার্সিটি লেভেলে যে কেউ এখানে এপ্লাই করতে পারতো যদি শিক্ষামন্ত্রণালয় অথবা ইউজিসি দাওরার সনদকে ফরমালাইজ করতো। তাহলে এখানে এসে পড়াশোনার জন্য ছাত্রদেরকে এত কাঠগড় পোড়াতে হতো না।’ –জানান তরুণ এই আলেম
তিনি যোগ করেন, এখনো যদি আল হাইয়াতুল উলিয়া আলাদা একটি ডিপার্টমেন্ট করে স্বীকৃতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করে তাহলে অসম্ভব কিছু নয়। এই ডিপার্টমেন্ট সার্বিক ডকুমেন্টগুলো ফর্মালাইজ করে আমাদেরকে দিবে। আমরা সেগুলো বিভিন্ন জায়গায় সাবমিট করব। তাহলে দেখা যাবে একটি সুফল আসবে। এখানে ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালায়েশিয়ায় এই লেভেলের সার্টিফিকেটগুলো অনুমোদন পাওয়ার ঘটনা আগেও ঘটেছে। যেমন, দারুল উলুম দেওবন্দকে আলাদা অনুমতি দিয়েছে বলে আমরা জানি। এছাড়া আফ্রিকার একটি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিয়েছে। এরপর আমি যেখান থেকে পিএইচডি করেছি, INCEIF University এর প্রেসিডেন্ট, সিইও এবং ডিন’র সঙ্গে আমি বিভিন্ন সময় কথা বলেছি। মতবিনিময় করেছি। কিন্তু আল হাইয়াতুল উলিয়াকে রিপ্রেজেন্ট করার জন্য আমাদের যে ডকুমেন্টগুলো প্রয়োজন সেগুলো যেহেতু আমাদের হাতে নেই তাই আমরা এই আলোচনাগুলো সামনে এগোতে পারছি না। সহজে যদি বলি, তারা এ বিষয়ে আগ্রহী। কিন্তু আমরা আমাদের ডকুমেন্টসের অভাবে এর থেকে সুফল ভোগ করতে পারছি না।
আল হাইয়াতুল উলিয়া যদি দ্বিতীয় স্টেপের সার্বিক বিষয় সম্পন্ন করে তাহলে বিশ্বের কোন কোন দেশে কওমি ছাত্রদের লেখাপড়ার সুযোগ হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তখন অনেক দেশেই পড়ালেখার জন্য যাওয়া যাবে। তবে কওমি ছাত্রদের মুসলিম দেশগুলোকে বেছে নিতে হবে। এর মধ্যে প্রথমে এরাবিক ভার্সনে যেসব দেশে লেখাপড়া হয় যেমন সৌদি আরব, মিশর, কাতার, আরব আমিরাত; এসব দেশ লেখাপড়ার বেছে নেওয়া যেতে পারে।
তিনি বলেন, পরবর্তী ধাপে যেসব মুসলিম দেশে ইংলিশ মাধ্যমে লেখাপড়া হয় সেসব দেশে যাওয়া যেতে পারে। এর মধ্যে কাতার, আরব আমিরাত থাকতে পারে কেননা ওইখানে আরবির পাশাপাশি ইংলিশ মাধ্যমও আছে। এছাড়া আমি যেহেতু মালয়েশিয়ায় আছি, আমার জানামতে এখানে এলে কওমি ছাত্রদের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। তারা মালয়েশিয়াকে বেছে নিতে পারবে। এছাড়া এ তালিকায় তুরস্কও থাকতে পারে।
‘আমি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি, আল হাইয়াতুল উলিয়া যদি সেকেন্ড স্টেপটা পরিপূর্ণ করে এবং বাইরের দেশগুলোতে কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের লেখাপড়ার জন্য যদি আমাদের মত যারা আছে তাদেরকে নিয়ে একটি কমিটি করে। এরপর যেকোনো একটি দেশকে টার্গেট করে যদি হাইয়াতুল উলিয়ার সনদকে প্রপারলি গ্রহণ করানো যায়, এরপর এই ডকুমেন্টস দিয়ে অন্যান্য দেশেও নক করা যাবে ইনশাআল্লাহ। এক্ষেত্রে মালয়েশিয়াকে প্রথম টার্গেট করা যেতে পারে। এখানে গ্রহণ হয়ে গেলে তুরস্কসহ অনেক দেশেই সহজে সাবমিট করা যাবে’ -সবশেষে যোগ করেন তিনি