কেমন ছিলেন মুফতি নূর আহমদ

যুবাইর ইসহাক

মুফতি নূর আহমদ ছিলেন দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার মুহাদ্দিস ও প্রধান মুফতি। তিনি মুফতি আযম ফয়জুল্লাহ ও মুফতি আহমাদুল হকের সাহচর্য পেয়েছেন। হাটহাজারী মাদরাসায় শিক্ষকতা করেছেন দীর্ঘ ৩৮ বছর। একটি কর্মব্যস্ত জীবন শেষে গত ৩১ মার্চ শুক্রবার ভোররাতে মহান প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে পরপারে পাড়ি জমান।

জন্ম

মুফতি নূর আহমদ চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার চেছুরিয়া গ্রামের চৌধুরীপাড়ায় ১৯৩৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আবদুস সামাদ ও মাতা আরেফা খাতুন।

লেখাপড়া 

মুফতি নূর আহমদ চার বছর বয়সে মাওলানা আবদুল মালেক রহ. -এর কাছে লেখাপড়ার হাতেখড়ি করেন। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্তের পর ১৩৭১ হিজরিতে হাটহাজারী মাদরাসায় ‘কানয’ জামাতে ভর্তি হন। হাটহাজারীতে তিনি ‘কানয’ জামাত থেকে ‘দাওরায়ে হাদীস’ পর্যন্ত লেখাপড়া করে। সেসময় মুফতি আযম ফয়জুল্লাহ, মুফতি আযমে সানি আহমদুল হকসহ প্রসিদ্ধ ও জ্ঞানী আলেমের কাছ থেকে ইলম অর্জন করেন। ১৯৬০ সালে হাটহাজারী মাদরাসা থেকে তার দাওরায়ে হাদীস সমাপ্ত হয়।

কর্মজীবন

দাওরা ও তাফসির সমাপ্ত করে হাটহাজারী মাদরাসায় খেতমতের মধ্য দিয়ে তার কর্মজীবন শুরু হয়। কর্মজীবনের পাশাপাশি তখন তিনি ইফতার তামরিনও করতেন।
১৯৬৪ সালে মুফতি ফয়জুল্লাহ নির্দেশে মাহমুদিয়া মদিনাতুল উলূম বাথুয়া মাদরাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত ২০ বছর বাথুয়া মাদরাসায় শিক্ষকতা করেছেন। ১৯৮৪ সালে পুনরায় হাটহাজারী মাদরাসায় মুফতি ও মুহাদ্দিস পদে নিয়োগ হন। সে থেকে পরবর্তী ৩৮ বছর হাটহাজারীতে শিক্ষক হিসেবে ছিলেন। এ সময় তিনি ফতোয়া বিভাগের প্রধান মুফতি, শিক্ষাসচিব, কোষাধ্যক্ষসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।

রচনা

মুফতি নূর আহমদ বিভিন্ন মাসয়ালার সমাধানের উপর অনেক ফতোয়া লিখেছেন। তাছাড়া সমকালীন অনেক ভ্রান্ত মতবাদ ও ধর্মীয় বিভিন্ন প্রসঙ্গে প্রায় ত্রিশটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। উর্দু ভাষায় ছয়খণ্ডে সংকলিত ফতোয়া সমগ্র ‘আশরাফুল ফতাওয়া’ তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।

পরিবার

মুফতি নূর আহমদ মাহমুদিয়া মদিনাতুল উলূম বাথুয়া মাদরাসায় শিক্ষক থাকাকালীন হাটহাজারী মাদরাসার সাবেক মুহতামিম মাওলানা হামেদ রহ.-এর মেয়ের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের পরিবারে ৪ ছেলে ও ৫ মেয়ে জন্ম গ্রহণ করেন।

কেমন ছিলেন তিনি

মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী বলেন, ‘হুজুর সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত শব্দ বলা সম্ভব নয়। তিনি সাধাসিধে দরবেশী জীবন যাপন করেছেন। জ্ঞানে তার গভীরতা ছিল। ব্যক্তি জীবনে ছিলেন অত্যন্ত একনিষ্ঠ।’

মুফতি নূর আহমদের ছেলে মাওলানা মঞ্জুর আহমদ জানান, ‘আব্বা প্রচুর ব্যস্ততার ভেতরেও পরিবারকে সময় দিতেন। ছেলেমেয়েদের শাসনের প্রয়োজন হলে হেকমতে বুঝাতেন। তিনি সরল মানুষ ছিলেন, মনে হিংসা-বিদ্বেষ ছিল না। সবসময় আত্মীয়স্জবনের খোঁজ নিতেন। ছুটিতে গ্রামে গেলে সহজে সবার সঙ্গে মিশতেন।
সাধারণত তার তাহাজ্জুত ছুটতো না। শেষের তিন বছর খুব অসুস্থ ছিলেন। এই অসুস্থতার ভেতরও তাহাজ্জুদ ও সুন্নতের প্রতি যত্মবান ছিলেন তিনি।’

হাটহাজারী মাদরাসার ইফতার ছাত্র মাওলানা আবদুর রহমান জানান, ‘হুজুর শেষদিকে এসে খুব বেশি ক্লাস নিতে পারেন নি। আমরা তার রুমে গিয়ে দরস করতাম। তিনি বাহরুল উলুম নামে প্রসিদ্ধ ছিলেন। উর্দুতে দরস দিতেন। তার দরস কেবল কিতাবে সীমাবদ্ধ থাকতো না। বরং পাশাপাশি অনেক প্রসঙ্গিত আলোচনা করতেন। আমল আখলাকের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতেন।’

মুফতি নূর আহমদ অসংখ্য ছাত্র ও ভক্ত রেখে গেছেন। শুক্রবার বাদ আসর হাটহাজারী মাদরাসার মাঠে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে জানাজা শেষে তার লাশ হাটহাজারী মাদরাসার কবরস্থান ‘মাকবারায়ে জামেয়ায়’ দাফন করা হয়।

আগের সংবাদহুমকির মুখে মুসলমানদের প্রথম পাঠশালা : হারিয়ে যাচ্ছে মক্তবের ঐতিহ্য
পরবর্তি সংবাদযেমন ছিলেন অধ্যাপক মাওলানা জোবায়ের আহমদ চৌধুরী