রাকিবুল হাসান নাঈম:
টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শেষ হয়েছে। রোববার (১৫ জানুয়ারি) সকাল ১০টা ২০ মিনিটে আখেরি মোনাজতের মাধ্যমে ইজতেমার এ পর্ব শেষ হয়। আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন কাকরাইলের সুরা সদস্য ক্বারি মোহাম্মদ জোবায়ের। ইজতেমা ময়দানের বিদেশি নিবাসের পূর্বপাশে বিশেষভাবে স্থাপিত মোনাজাত মঞ্চ থেকে মোনাজাত করা হয়।
মুরুব্বিরা জানিয়েছেন, প্রথম পর্বের ইজতেমা বেশ ভালোভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। দুই বছর পর অনুষ্ঠিত হলো ইজতেমা। ফলে মুসল্লিদের চাপও ছিল বেশি। বিদেশি মেহমানও এসেছেন বেশি। জামাতও বের হয়েছে অনেক। সব মিলিয়ে সফল একটি ইজতেমা বলা চলে প্রথম পর্বের ইজতেমাকে।
কত জামাত, কত বিদেশী মেহমান
ইজতেমা নিয়ে কথা হয় বিশ্ব ইজতেমার মুয়াজ্জিন ও কাকরাইলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য মুফতি আমানুল হকের সঙ্গে। তিনি ফাতেহকে বলেন, এবারের ইজতেমায় অন্যবারের তুলনায় অনেক বেশি মুসল্লিদের সমাগম ছিল। জুমার দৃশ্য দেখলেই সেটা বুঝা যায়। এছাড়াও অন্য সময় ইজতেমার মাঠেই মুসল্লিরা অবস্থান করতো। সর্বোচ্চ নদীর পশ্চিম পাশে থাকতো মুসল্লিরা। কিন্তু এবার উত্তরার খালি প্লটেও সামিয়ানা টানিয়ে মুসল্লিরা থেকেছে। এর থেকেও বুঝা যায়, এবার মুসল্লিদের উপস্থিতি ছিল অনেক বেশি।
তিনি বলেন, এবার বিশ্ব ইজতেমা থেকে বের হয়েছে ২৭৭৪টি জামাত। এর মধ্যে বিদেশি ২৯৪টি এবং মাস্তুরাত (মহিলা) জামাত ১৬টি। দেশে তিন চিল্লার জামাত বের হয়েছে ১৫৬টি, ১ চিল্লার জামাত বের হয়েছে ২২৭৫টি। অন্যান্য জামাত ৪৯টি। দেশি জামাত মোট ২৪৮০টি। এই সংখ্যাটা আরও বাড়তো। কিন্তু বিশ্ব ইজতেমার আগে আমদের জেলাভিত্তিক ইজতেমা হয়। সেখান থেকেও অনেক জামাত বের হয়েছে আগেই। তাই এ বছর যা হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ।
আলমি শুরার ইজতেমায় কতজন বিদেশি মেহমান এসেছেন? মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘পাসপোর্ট ইস্যু করে যারা দেশে এসেছেন ৬৬ দেশের ৬ হাজার ৯৩১ জন মেহমান। বিশ্ব ইজতেমায় বিদেশি মুসল্লিদের নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও সেবা প্রদানের লক্ষে এবারই প্রথম ইজতেমায় কাজ করছে টুরিস্ট পুলিশ। বিদেশ থেকে আগত মুসল্লিদের অনেকের পাসপোর্ট হারিয়ে যাওয়া, সিম না পাওয়া এবং মানিব্যাগ হারিয়ে যাওয়ার সমস্যা তারা আন্তরিকভাবে সমাধান করেছেন।‘
তবে জানা গেছে, এ বছর আলেমদের কোনো সালের জামাত বের হয়নি। সরকারি একটি সংস্থার তথ্যমতে, এবার ৬৮ দেশ থেকে বিদেশী মেহমানের সংখ্যা ছিল ৫৫২৬ জন।
শতাধিক যৌতুকবিহীন বিয়ে
বিশ্ব ইজতেমার বিশেষ একটি আকর্ষণ হলো যৌতুকবিহীন গণবিয়ে। এবারও ইজতেমার দ্বিতীয় দিন শনিবার বাদ আছর যৌতুকবিহীন গণবিয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ্ব ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়কারী মাওলানা জহির ইবনে মুসলিম ফাতেহকে বলেন, কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর এবার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়েছে যৌতুকবিহীন গণবিয়ে। ময়দানের পশ্চিম-উত্তর দিকে দোয়া মঞ্চ থেকে এ বিয়ে পড়ান ভারতের মাওলানা মো. জোহায়রুল হাসান। বিনা যৌতুকে মোহরে ফাতেমি প্রদানের মাধ্যমে শতাধিক বিয়ে সম্পন্ন হয়। বয়ান শেষে বর-কনের অভিভাবকদের সম্মতিতে বরের উপস্থিতিতে এ বিয়ে পড়ানো হয়। বিয়ে শেষে উপস্থিত দম্পতিদের স্বজন ও মুসল্লিদের মধ্যে খুরমা খেজুর বিতরণ করা হয়।
৮ মুসল্লির ইন্তেকাল
বিশ্ব ইজতেমা মাঠে তিন দিনে ৮ মুসল্লি মারা গেছেন। গত শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) বাদ ফজর ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হওয়ার পর রোববার (১৫ জানুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত এসব মুসল্লি মারা যান।
মৃত মুসল্লিরা হলেন: সিলেট জেলার জয়ন্তপুর থানার হেমুবটপাড়া এলাকার মো. ফজলুল হকের ছেলে মো. নুরুল হক (৬৩), গাজীপুর শহরের ভুরুলিয়া এলাকার বাসিন্দা আবু তৈয়ব ওরফে আবু তালেব (৯০), ঢাকার যাত্রবাড়ী থানার উত্তরপাড়া এলাকার বাসিন্দা বিল্লাল হোসেনের ছেলে মো. আক্কাস আলী (৫০), ঢাকার বংশালের কাজী আলাউদ্দিন রোড়ের বাসিন্দা ছমির উদ্দিনের ছেলে আনিসুর রহমান (৭১), খুলনার ডুমুরিয়া থানার মলমলিয়া গ্রামের মোবারক হোসেনের ছেলে মোফাজ্জল হোসেন (৭০), চট্টগ্রামের রাউজান সদরের আব্দুর রশিদের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক (৭০), ঢাকার বাসিন্দা ছমির উদ্দিন (৭২) ও নরসিংদীর মনোহরদী থানার মাছিমপুর এলকার রহমতুল্লাহর ছেলে মো হাবিবুর রহমান হবি (৬৯)।
বিশ্ব ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়কারী মাওলানা জহির ইবনে মুসলিম ফাতেহকে বলেন, এদের মধ্যে বার্ধক্যজনিত কারণে বৃহস্পতিবার মারা যান নুরুল হক ও আবু তালেব। শুক্রবার ইজতেমার প্রথম দিনে মারা যান হাজী মোহাম্মদ হাবিবউল্লাহ হবি, মোফাজ্জল হোসেন খান। এছাড়া ইজতেমার দ্বিতীয় দিনে আক্কাছ আলী সিকদার, আব্দুল রাজ্জাক ও হাবিবুর রহমান হবি মারা যান।
ইজতেমা আয়োজক কমিটির মুরুব্বি প্রকৌশলী মাহফুজ হান্নান ফাতেহকে জানান, বেশ নির্বিঘ্নে এবারের ইজতেমা সম্পন্ন হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। জেলাভিত্তিক ইজতেমা হবার পরও এবারের বিশ্ব ইজতেমায় মুসল্লিদের আগমন ছিল রেকর্ডসংখ্যক। সরকার, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সেবাদাতা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় এটা সম্ভব হয়েছে। সবার প্রতি শুকরিয়া।