জার্নি উইথ বাহাদুর শাহ

হাসান ইনাম

রায়সাহ বাজার সিগন্যালে দাঁড়াতেই যেন একটা পাথর নেমে গেল যাত্রীদের বুক থেকে। কাঁধের নিচে কাঁধ আর পিঠের কাছে বুক ঠেকিয়েও স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো সবাই। অসহনীয় গরমে ঘেমে একাকার অবস্থা। মনে হয় হাশরের মাঠের মতো সূর্য নেমে এসেছে মাথার উপর। তখন পর্যন্ত টুকুর টুকুর করে আগাচ্ছিল বাস৷ এরপর এসে থেমে গেলো বিশাল যানজটের মিছিলে। তবুও যে যার মতো নিশ্চিন্ত হলো৷ কেউ কেউ ঘুমিয়ে পড়লো মাথা এলিয়ে দিয়ে। কেউবা পানি খেলো। একদম দরোজার কাছে বসে থাকা মেয়েটা ভাবলো রাতে ভালো ঘুম না হওয়ার কারণে এসব জিনিস হচ্ছে ওর সাথে৷ মেয়েটার দুই আসন পিছনে বসে থাকা মাঝবয়সী ভদ্রলোক আর তার পিছনে ডানদিকে বসা যুবকও একই কথা ভাবলো। তাদের তিনজনেরই গতরাতে ভালো ঘুম হয়নি। ড্রাইভারের ঠিক পিছনে বসে থাকা যুবক ভাবলো সে স্বপ্ন দেখছে। ইদানীং হুটহাট ঘুমিয়ে যাচ্ছে আর বিচিত্র সব স্বপ্ন দেখছে। এটাও হয়তো তেমন৷ সে অবাক হলো, কারণ এবারের স্বপ্নের পুরোটাই পুঙ্খানুপুঙ্খ তার মনে পড়ছে। বিড়বিড় করে কিছুটা নিজেও আওড়াচ্ছে সে। পিছনের সারির কয়েকজন ভাবলো এটা বড় কোনো ম্যাজিশিয়ানের কারসাজি। তারা একে অপরের সঙ্গে ফিসফিস করে এই বিষয়ে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছে। এমন ঘটনা ম্যাজিক ছাড়া হওয়া সম্ভব না। একটা মানুষ কথা বলতে বলতে হুট করে হাপিশ হয়ে গেলো!

তবে বিষয়টা রিয়েল না হয়ে ম্যাজিক হওয়াতে তারা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো৷ তাদের মধ্যে একজন সোস্যাল মিডিয়াতে খুব সরব। মুঠোফোনে সে তখন নোটপ্যাড খুঁজছে। আরেকটু রঙচঙ লাগিয়ে বিষয়টা আজ সন্ধ্যায় বলবে ফেইসবুকে। সন্ধ্যায় রিচ ভালো হয়।

মাঝখান-দিকের দুটো মেয়ে একদম গুটিসুটি মেরে বসে ছিল। এখন খুব হাসছে। ওদের ধারণা হয়েছিল এটা সরকারি কোনও কৌশল। ওরা সহোদরা। ওদের এক ভাইকে এমন ফাঁদে ফেলে গ্রেফতার করা হয়েছে। এমন আরো অনেককিছুই ভাবছে বাসের যাত্রীরা৷ সে যাইহোক, মোটকথা এখন সবাই স্বস্তিতে।

বিচিত্র বসার আসন এই বাসে। আকারেও খুব ছোট। ঠিক বাস হিসেবে চালিয়ে দেওয়া যায় না। বড়জোর মিনিবাস বলা যেতে পারে। যাত্রাবাড়ী টু সদরঘাট চলাচল করা এই মিনিবাসটিকে আমরা রায়সাহ বাজারের জ্যামে রেখে একটু পিছনে যেতে চাই। মিনিট পঞ্চাশ আগে। যখন বাসে উঠছিল যাত্রীরা।

যাত্রাবাড়ী টনি টাওয়ারের সামনে জড়ো হয়ে আছে অনেক মানুষ। কিছুটা এলেমেলো। কয়েকজন সিরিয়ালে দাঁড়িয়েছে৷ সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থাকা লোকগুলোর ধারণা বাস এলে কেবল তারাই উঠবে এবং সবার আগে। আর সিরিয়ালের আগে জটলা পাকিয়ে লোকগুলোও অপেক্ষা করছে বাস আসার। বাস এলেই হুড়মুড়িয়ে উঠে যাবে বাসে। এবং তাদেরও ধারণা তারাই উঠবে সবার আগে। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকা এই মেনিমুখো দলকে সহবস্থানে আনতেই বোধহয় তিনি এলেন। বাহাদুর শাহ এলেন। যাত্রীরা সবাই অপেক্ষা করছিল যে বাসের জন্য, যে বাসটিকে আমরা রায়সাহ বাজারের জ্যামে রেখেছি সেই বাসটির নামও বাহাদুর শাহ। কিন্তু এই ব্যস্ততার শহরে যান্ত্রিক কোলাহলের মধ্যেই তিনি এলেন। বাস আসবার আগেই। রক্তমাংসের বাহাদুর শাহ। একটা মিহি আতরের ঘ্রাণ ঢুকলো সবার নাকের ভিতর। সম্মোহিত হয়ে গেলো যাত্রীরা। স্বতন্ত্রভাবে প্রত্যেকেই খুঁজতে লাগলো ঘ্রাণের উৎস। একটা সবুজ আচকান পরে তিনি এসে দাঁড়ালেন দুই শ্রেণির অপেক্ষমান বাসযাত্রীর মাঝখানে৷ যেন-বা এক বিপ্লবী নেতা। ঘুচিয়ে দিতে এসেছেন শ্রেণী-বৈষম্য। হাতে তসবিহ ছিলো তার। সূর্যের আলোতে ঝলমল করছিল তসবির দানা। যারা তার দিকে তাকাচ্ছিল তাদের চোখ ঝলসে যাচ্ছিল। সবুজ আচকানের ভিতর পাথরের কাজ করা। সূর্যের আলো প্রতিবিম্বিত হচ্ছিল সেইসব নাম না জানা অচেনা পাথর থেকে। তখন যাত্রীরা ভেবে নিয়েছিল হয়তো কোনও দরবেশ হয়ে থাকবে৷ অতিউৎসাহী কয়েকজন আশেপাশে ক্যামেরা খুঁজছিল৷ আর নিজের বেশভূষা ঠিক করতে উদ্যত হচ্ছিল। তাদের মনে হয়েছিল তারা শুটিং ইউনিটের মধ্যে ঢুকে গিয়েছে। তাদের একজন মনে মনে চলচিত্রের নামও ভেবে নিয়েছিল মনে মনে। ‘শেষ সম্রাট’। আরেকজন চিন্তা করেছিল আরেকটু বিস্তারিত। চলচ্চিত্রের গল্পটা এমন–‘হঠাৎ শহরে এসে হাজির হয়েছেন এক মোঘল সম্রাট। তিনি খুঁজে বেড়াচ্ছেন খুব মূল্যবান কিছু। নিজেকে সম্রাট বলেই পরিচয় দিচ্ছেন। কেউ বিশ্বাস করছে, কেউ করছে না। কেউ কথা বলছে, কেউ বলছে না। তিনি খুঁজছেন অসমাপ্ত কোনও জিনিস বা বিষয়। যেটা তিনি সমাপ্ত করে যেতে পারেননি।’

ভাবতে ভাবতেই যাত্রীরা উঠে পড়লো বাসে। সবাই উঠতে পারলো না। যারা উঠলো তারাও নিজেদের ইচ্ছায় উঠলো বলে মনে হলো না। আতরের ঘ্রাণ নিজেদের ভাসিয়ে দিয়ে একে একে উঠে পড়লো কিছুসংখ্যক যাত্রী। দূর থেকে এক শরবতওয়ালা সাক্ষী হয়ে থাকলো এই অবিশ্বাস্য ঘটনার। একদম চুপচাপ, হুড়োহুড়ি না করে একজনের পিছনে একজন উঠছে বাসে। এমন ঘটনা রাজধানীতে আগে ঘটেনি কখনও।

দরবেশ গোছের লোকটি বসলেন মাঝখানের সারিতে। উনার পাশে বসলো দুটো মেয়ে। চেহারা প্রায় একই। বাস ছেড়ে দেওয়ার চার মিনিট পর কথা শুরু করলেন তিনি। প্রথমেই বললে–‘উমর দরাজ মাঙ্গঁকে লায়েথে চার দিন/দো জ্যাম মে কাট গায়ে, দো বাসকো ইন্তেজার মেঁ।’

কথাটা বাড়ি খেলো ঠিক সামনে বসে থাকা এক যুবকের কানে। ঘাড় ঘুরিয়ে বললো, ‘আরে, সুন্দর বলেছেন তো আঙ্কেল! বাহাদুর শাহ এই আমলে জন্মালে এমনই লিখতেন। হা হা হা।’ এই যুবকের পরিচয় দেওয়া প্রয়োজন। গল্পের স্বার্থেই তার স্বল্প পরিচয় দিচ্ছি আমরা। সে ইতিহাসের ছাত্র৷ এই গল্পে শুধু তাকেই দেখা যাবে সবুজ আচকান চাপানো দরবেশের সাথে কথা বলতে। তার এবং দরবেশের কথার শ্রোতা হবে বাসযাত্রীরা। তবে গল্পের শেষটাতে এই যুবকের পরিস্থিতি কেমন হবে সেটা আমরা বলতে পারছি না। একদম শুরুতে যাত্রীদের স্বস্তিনামার যে বর্ণনা দিয়েছি সেখানেও এই যুবকের কথা নেই।

‘মূল কবিতাটা জানো তো?’–মৃদুস্বরে বললেন আচকান পরিহিত প্রৌঢ় আগন্তুক। আমাদের গল্পের ইতিহাসের ছাত্রের সাথে তাঁর আলাপের শুরু হলো। মীরহাজারীবাগ আসার পর বাস আটকালো জ্যামে। চার রাস্তার মোড়ে একটা কবুতরের ছবি৷ যুবক কবুতরের দিকে তাকিয়ে, কবিতা বিষয়ক আলোচনার মাঝখানে বললো, ‘শান্তির কবুতর শুধু ছবিতেই দেখা যায়। দেশে আর শান্তি নাই।’

সামনের দিক থেকে কেউ একজন বলে উঠলো ‘শান্তি থাকবো কেমনে? কোনদিক দিয়া শান্তি আনবার চান আপনেরা? আছেন তো শুধু সরকারের বদনাম করার লাইগা। নাই নাই, কিছু নাই।’

মুহূর্তের জন্য একটু চাপা পড়লো যুবকের গলার স্বর। এই সাধারণ একটা কথার সাথে সরকার-পক্ষীয় কেউ তার সাথে গায়ে পড়ে ঝগড়া লাগাবে সেটা সে ভেবে রাখেনি।

বাস জুড়ে পিনপতন নীরবতা। ‘উন্নতির মূলা ঝুলায়া কয়দিন চলন যায় মিয়া ভাই? থলির বিলাই বাইর হইবোই। পাবলিকরে কতদিন বলদ বানাই রাখবেন?’–প্রশ্নের উত্তরে প্রশ্ন ছুড়লো কেউ একজন। কোত্থেকে প্রশ্নটা ছুড়লো কেউ ফিরে তাকানোর প্রয়োজনও বোধ করলো না। এইসব আলোচনা, প্রশ্নের উত্তরে প্রশ্নের মারপিঠ কোথায় গিয়ে ঠেকে সেটা সবারই জানা।

‘বলদ কারা বানাইতেছে? সরকারের এত বড় পোরজেক্ট, পদ্মায় বিরিজ বানাইতেছে। নিজেগো টাকায় এত্ত বড় বিরিজ। কোনও আমলে ভাইবাও দেখছে কেউ? এইডা কেমনে বন্ধ করা যায় হেইডা নিয়ে উইঠা পইড়া লাগছে এহন পাবলিক। কয়, মাথা লাগবো বিরিজে। গুজবের মাইরে বাপ…’–সামনের দিকের লোকটি আরো জোর গলায় বললো এবার। গুজবের কথা শুনে হেসে ফেললো সবাই। সরকার, বিরোধীদল কিছুই থাকলো না আর। মুহূর্তেই ফুরফুরে হয়ে উঠলো বাসের পরিবেশ। কিন্তু সেটা ক্ষণিকের জন্যই।

আবার মুখ খুললেন সবুজ আচকান পরিহিত আগন্তুক। ‘গুজব খুবই ভয়ংকর জিনিস। খুবই, খুবই…’–মিহি আওয়াজে বললেন তিনি। খুব সাধারণ কথাগুলো মন্ত্রের মতো মনে হলো বাসযাত্রীদের কানে। নিচ দিক তাকিয়ে তিনি বললেন, ‘তবে এই সরকারের পতনের জন্য একটা গুজব দরকার। এইসব ফালতু মাথা কাটার গুজব নয়। শক্ত আর তথ্যবহুল গুজব।’

‘সরকারের পতন’ শব্দটা কানে ঢোকার পর শিরশির করে উঠলো সবার ঘাড়ের নিচে। মনে হলো একটা লোমশ জান্তব হাত সুড়সুড়ি দিচ্ছে পিঠে৷ একটু পরেই খপ করে থাবা বসাবে। তখন থেকেই অস্বস্তির শুরু যাত্রীবাহী মিনিবাসে।

কিছুটা সরকার-বান্ধব কথা যে লোকটি বলছিল সেও চুপ হয়ে গেলো একদম। শুধুমাত্র মুখ খুললো সেই যুবকটি। যে কিনা ইতিহাসের ছাত্র।

‘সিপাহি বিদ্রোহের ঘটনা আপনি পড়েছেন নিশ্চয়ই। একটা গুজবকে কেন্দ্র করে সিপাহীরা বিদ্রোহ করেছিল। তারপর গোটা ভারতবর্ষে ছড়িয়েও পড়েছিল বিদ্রোহ। কিন্তু কিচ্ছুটি হয়নি। ইংরেজ সরকার নির্মমভাবে নিধন করেছিল সেই বিদ্রোহ।’–বললো যুবক।

‘আমার কিছুই করার ছিলো না তখন। আমার সব শেষ হয়ে গিয়েছিল। আমি তখন বৃদ্ধ। ইশ… আর দশটি বছর আগেও যদি ওরা আসতো লাল কেল্লায়…।’–আগন্তুকের গলায় আক্ষেপের সুর।

‘মানে? আবোলতাবোল কী বলছেন আঙ্কেল? ইতিহাসটা বোধহয় পুরোপুরি জানেন না।’

‘খালক-ই খুদা, মুল- ই বাদশাহ, হুকুম-ই সিপাহি’ শ্লোগানে তখন প্রকম্পিত দিল্লির আকাশ। আমি…’

‘ওয়েট, ওয়েট। আপনি এমনভাবে বলছেন যেন আপনি সিপাহি বিদ্রোহ দেখেছেন। হাহা, আপনি অনেক মজার মানুষ তো।’

‘সিপাহিদের কিছু বলতেও পারছিলাম না। এগারোই মে হঠাৎ করে ওরা দিল্লি দখল করে নেয়। ওইদিনই আসে লাল কেল্লায়। ওরা আমার কোনও কথা শুনেনি। শুনলে এভাবে শেষ হয়ে যেতো না বিদ্রোহটা।’

‘হা হা হা। আপনি দেখি আসলেই মজার মানুষ। আপনার নাতি-নাতনিরা নিশ্চয় খুব ভক্ত আপনার। বানিয়ে বানিয়ে ভালো গল্প বলতে পারেন। আবার ইতিহাসের ফ্লেভার মিশিয়ে। হা হা হা ‘

‘ওদের জন্য খুব কষ্টে কেটেছে আমার জীবনের শেষ দিনগুলো। অবশ্য এটাই তো হওয়ার ছিল। ইংরেজদের কাছ থেকে তো কম সুবিধা গ্রহণ করিনি। হাহ…’

‘ওয়াও। তো আঙ্কেল আপনি এমন কে ছিলেন যে ইংরেজদের কাছ থেকে সুবিধা পেতেন?’

‘আমি বাহাদুর শাহ। বাহাদুর শাহ জাফর।’

‘মানে!?’

পুরো বাস চুপ হয়ে গেছে আরো আগেই। অস্ফুট স্বরে ‘মানে’ নামক শব্দটা বের হলো যুবকের কণ্ঠনালী দিয়ে।

‘এক অসমাপ্ত বিদ্রোহ হাতে নিয়ে হাঁটছি। ইংরেজরা দিল্লি দখল করে নেয়। আমি নিরুপায় হয়ে ২১ সেপ্টেম্বর আত্মসমর্পণ করি। ইংরেজ সৈন্যরা আমার মীর্জা মোগল, মীর্জা খিজির সুলতান, মীর্জা আবু বকরসহ সব শাহজাদাকে হত্যা করে। আমার বহু আমির-ওমারাকে ফাঁসিতে চড়ায়। আমাকে বিচারের নামে প্রহসনের আদালতে দাঁড় করানো হয়। হাজির করা হয় বানোয়াট সাক্ষী। বিচারকরা রায় দেন, দিল্লির সাবেক সম্রাট ১০ মে থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ সংঘটনের দায়ে অপরাধী। তাঁর শাস্তি চরম অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত। কিন্তু তাঁর বার্ধক্যের কথা বিবেচনা করে প্রাণ দণ্ডাদেশ না নিয়ে নির্বাসনে পাঠানোর সুপারিশ করা হলো।’

বাহাদুর শাহ থামলেন এবার। কেউ কোনো কথা বলছে না। নিজে নিজেই শুরু করলেন আবার–‘রেঙ্গুনে পাঠানো হয় আমাকে। ব্রিটিশ বাহিনীর ক্যাপ্টেন নেলসন ডেভিসের বাসভবনের ছোট গ্যারেজে আমি ও পরিবার-পরিজনের সদস্যরা বন্দীজীবন শুরু করি। দিল্লির শাহেনশাহি বিছানা থেকে চলে আসি একটা পাটের দড়ির খাটিয়ায়। স্বদেশের ভূমিতে জায়গা হয়নি আমার।’

আবারো থামেন তিনি। এবার আমতা আমতা করে ঠোঁট নাড়ে ইতিহাসের ছাত্র। বলে, ‘এই দুঃখেই আপনি লিখেছিলেন, মরনে কে বাদ ইশক মেরা বা আসর হুয়া উড়নে লাগি হ্যায় খাক মেরি ক্যোয়ি ইয়ার মে; কিৎনা বদনসিব জাফর দাফনকে লিয়ে দুগজ জামিন ভি মিলানা চুকি ক্যোয়ি ইয়ার মে।’

নিজের কবিতা শুনে কিছুটা উজ্জ্বল হয় বাহাদুর শাহের মুখ। বলেন, ‘একটা শক্ত গুজবের অপেক্ষায় আছি। তীব্র একটা বিদ্রোহ হবে আবার। ওদের মসনদ কেড়ে নেবোই নেবো…।’

যুবক বুঝতে পারে যা হচ্ছে সবই ভুল। সময়ের ভিতর একটা বড়সড় গণ্ডগোল বেঁধে গিয়েছে। রেঙ্গুনের সবুজ গিলাফের নিচ থেকে উঠে এসেছেন বাহাদুর শাহ। তবুও সে তর্কে লেগে যায়। বুঝাতে চেষ্টা করে বাহাদুর শাহকে। ‘এটা দুইহাজার ঊনিশ। এখন আর ভারতবর্ষ অখণ্ড নেই। ভারত, পাকিস্তান আর বাংলাদেশ। তিনটে দেশ। আপনি আছেন বাংলাদেশে। এখানের ক্ষমতায় এদেশীয় শাসকগোষ্ঠী। এখন আর এদেশে বিদেশি প্রভূত্ব চলে না।’

বাস টুকুর টুকুর করে তখন রায়সাহ বাজারের জ্যামে এসে থেমেছে।

হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় যুবকের। এমনটাই মনে করে প্রথমে সে। পুরো বাসের সবাই এদিক ওদিক তাকায়। যেখানে বসে ছিল বাহাদুর শাহ সেখানে একটা কাপড়ের গাট্টি। পাশেই বসে আছে মালিক। বসে বসে ঝিমাচ্ছে।

তারমানে স্বপ্ন দেখছিল সে।

সবুজ আচকানের বাহাদুর শাহের সাথে স্বপ্নযোগে তর্ক করায় আনন্দিত হয় যুবক। বাস থেকে নেমে চোখে পানি দিতে হবে। আবার হুট করেই মনে হয়, না না, সত্যিই এতক্ষণ কথা বলেছে সে৷ পুরো বাসের সবাই হালকা করে নিশ্বাস ছাড়ে। যে যার মতোন উত্তর খুঁজে। নিজের মতোন ভেবে নেয়। আমাদের গল্পের এই যুবক ভাবে, ভূতপ্রেত কিছু হবে। রাজনীতি সচেতন ভূত। জ্বলজ্যান্ত কোনো মানুষের কি আর সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস আছে নাকি!

শহরে এডিস মশার মতো ভূতপ্রেতও বেড়ে যাচ্ছে বলে চিন্তা হয় তার। দেশটার যে কী হবে!

আগের সংবাদতাওহিদ ও খতমে নবুওয়তের সাক্ষী ইসলামের মৌলিক রোকন : হজের খুতবা
পরবর্তি সংবাদইসরাইলি সেনাদের গুলিতে নিহত ৪ ফিলিস্তিনি