তসলিমার নারীবাদ : অধিকার আন্দোলন নাকি পশ্চিমা অনুকরণ

খালিদ মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহ:

বাংলাদেশের সামাজিক পটভূমিতে তসলিমা নাসরিন নব্বইয়ের দশকে যতটা আলোচিত ছিলেন বহুলাংশে তার হ্রাস ঘটেছে। তবে সম্পূর্ণরূপে স্তিমিত যে হয়নি, তার সরল প্রমাণ হলো, বাংলাদেশ প্রতিদিন সহ কিছু কিছু গণমাধ্যমে তার কলাম প্রায়ই ছাপছে । তিনি নিজেও লিখছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে । তসলিমা নাসরিন সহ হাতেগোনা যে কয়জন লেখক এককালে নারীবাদ ও মানবতাবাদ নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন তুলেছিলেন , তাদের মানস চিন্তার আতুড়ঘরে বিরাজমান ছিল পশ্চিমা চিন্তাধারা । তবে অদ্ভূত ব্যাপার হলো, বিগত কয়েক দশকে, পশ্চিমের সামাজিক পটভূমিতে, নারীবাদী চিন্তাধারার যে অচলাবস্থা ও বিপর্যয় সামনে উঠে এসেছে, তার ভিত্তিতে চিন্তাধারার নবায়ন ঘটছে পশ্চিমে । এবং নারীবাদের ফলিত বাস্তবতা নিয়ে সমালোচনাও করছেন অনেকে । হেইঞ্জ কিরচফ heinz kirchoff হাযারাতুল ইসলাম ‘ নামক পত্রিকায় ‘নারীর কর্মসংস্থান ‘ বিষয়ক একটি রচনা লিখেছেন । তিনি বলেন, ‘একজন নারীকে সন্তান লালন-পালন , পরিবারের পর্যবেক্ষণ ও গৃহস্থালি কাজ করতে হয় ; এ কাজগুলো এতোটা কষ্টের যে , একজন নারীকে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়। এর বাইরে নারীকে আরো কাজ চাপিয়ে দেওয়া একধরনের অমানবিকতা। গত শতকে শিশুশ্রম আমাদের সমাজে যেমন ঘৃণ্য ছিল, আজকের বাস্তবতায় নারীশ্রম তেমনি ঘৃণিত ।’( ১)

তসলিমার নারীবাদ প্রশ্নে প্রাথমিকভাবে জ্য পল সার্ত্রের আলোচনা প্রাসঙ্গিক । কারণ, তসলিমা সহ নারীবাদীদের চিন্তার মৌলিক সূত্র আমরা সার্ত্রের অস্তিত্ববাদে নিহিত দেখি । উনিশ শতকে জার্মান দার্শনিক ফ্রেডরিক নিটশে ‘নয়ালিজম’ বা ধ্বংসবাদের ধারণা দেন । তিনি মনে করতেন, পৃথিবীর সবকিছুই অর্থহীন, মহাজাগতিক যাত্রায় মানুষের কোন লক্ষ্য নেই । নিটশে পশ্চিমের মানস জগতে যে হতাশাবাদের জন্ম দিয়েছিলেন, তা উপশমের ধারাবাহিক প্রচেষ্টার অবিচ্ছেদ্য অংশ সার্ত্রে ও তার ভাবনা কেন্দ্রীক । নিটশে যখন মানুষের অস্তিত্বকে অর্থহীন ও নেতিবাচকতায় পর্যবসিত করেছিলেন, সার্ত্রে তখন বললেন, মানুষের অস্তিত্ব অনিবার্য । আর এ অস্তিত্ব আছে বলেই আমরা জীবনের অর্থ খুঁজি।

তবে বিবেচ্য বিষয় হলো, সার্ত্রে ছিলেন নাস্তিক, আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস করতেন না, ইহজাগতিকতার পরে মানুষের চরম পরিণতি বা পরকালীন ধারণার সাথে সার্ত্রের কোন সম্পর্ক ছিল না । এজন্য ইসলাম সহ প্রচলিত ধর্মসমূহতে মানবজীবনের যে অর্থ ও সফলতার কথা ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে, সার্ত্রে তা অগ্রাহ্য করেছেন । মানবজীবনের অর্থ অনুসন্ধানের দায়িত্ব তিনি মানুষের হাতে তুলে দিয়েছেন । সার্ত্রে বলেন, যদিও মৃত্যু পরবর্তী কালে মানুষের কোন অর্থ নেই, তথাপি, প্রত্যাহিক যাপনে মানুষকে কিছু অর্থ খুঁজতে হয় । করণীয় ও বর্জনীয়ের হিসাব কষতে হয় তাকে । জীবনের অর্থ, করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়ের যে ধারণা সার্ত্রে দিয়েছেন তসলিমা নাসরিনের মানসপট বোঝার জন্য তা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ।

সার্ত্রে একজন ব্যক্তির ভালো-মন্দ বা করণীয়-বর্জনীয়ের নির্বাচন ক্ষমতা মানুষের কাধে চাপিয়ে দিয়ে বলেন,

১ . তুমি যা করতে চাও তা করার ক্ষমতা তোমার থাকতে হবে ।
২ . তুমি যা করেছ তা যদি স্বাধীন ভাবে সম্পন্ন হয় তবে তা জায়েজ ও অনুমোদিত । কারণ, তোমার নির্বাচন ক্ষমতার বাইরে কোন কাজকে হারাম বা নিষিদ্ধ করার নির্ণায়ক নেই। (২)

এসব কথার একটি নির্ভুল ফলাফল হচ্ছে, একজন স্বাধীন ও ক্ষমতাবান ব্যক্তি যা কিছু করবে তাই বৈধ । সার্ত্রে তার বক্তব্যের শেষে, স্থানে স্থানে, ফিওদর দস্তয়েভস্কির বিখ্যাত উক্তি তুলে ধরেছেন, আমরা যদি পৃথিবী থেকে ঈশ্বরকে বর্জন করি , সব কাজই আমাদের জন্য বৈধ ও হালাল ।

সার্ত্রে বিয়েতে বিশ্বাসী ছিলেন না, নারী সঙ্গী হিসেবে আমৃত্যু তার পাশে ছিল ‘ বিউভয়’ । তারা উভয়েই বহুগামিতায় অভ্যস্ত ছিলেন । যখন, যার সাথে ইচ্ছা হয় শয়ন করতেন । এক জীবনে তসলিমা নাসরিন অনেকের সাথে সম্পর্ক গড়েছেন , জৈবিক চাহিদা মিটিয়েছেন অনেকের দ্বারা । প্রথম জীবনে রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র সাথে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হলেও এখন তিনি বিবাহের চরম বিরোধী । তিনি বলেন, নারী তো সেদিন-ই পরাধীন হয়ে যায় যেদিন বিবাহ করে। সবচে’ বড় ব্যাপার হলো – এসব প্রথাবিরুদ্ধ অনুষঙ্গগুলো তিনি তার রচনাবলীতেও স্থান দিয়েছেন। এসব তার কেন্দ্রীয় চিন্তা-ভাবনার বাস্তবায়নের প্রতি স্বচ্ছ ইঙ্গিত বহন করে । যে চিন্তাধারায় মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধকে বিধ্বস্ত করে ‘স্বাধীন ইচ্ছার ‘ কথা ঘোষণা করা হয়, তা অবশ্যই বিপজ্জনক । এ বিপদ পশ্চিমের পরিবার ব্যবস্থাকে ক্ষয়িষ্ণু করেছে, তসলিমা নাসরিন নিজেও পারিবারিক শৃঙ্খলায় ফিরে আসতে ব্যর্থ হয়েছেন।

সার্ত্রে ও তসলিমা নাসরিনদের স্বাধীন ইচ্ছার প্রকল্প যেই সমাজ ব্যবস্থার প্রতি-ক্রিয়াশীল রুপ , তা চিহ্নিত করা অত্যন্ত জরুরি ।এজন্য পশ্চিমের সামাজিক ইতিহাসে যতো ধর্ম ও মতাদর্শের বিকাশ ঘটেছিল, সেসবের অনুসন্ধান করতে হবে, নারীদের সেখানে কোন চিত্রে রূপায়িত করা হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে হবে ।

পশ্চিমে সর্বাধিক প্রচলিত ধর্ম হচ্ছে -খৃষ্টধর্ম । তবে আমরা নারী বিষয়ক বাইবেলীয় ধ্যান-ধারণার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেব পরবর্তী কালের ধর্মীয় ও সামাজিক অবস্থার উপর । কারণ, বিদ্যমান সমাজ ব্যবস্থার বিপর্যয় থেকে উৎসারিত হয়েছে এসব মতাদর্শ । অষ্টম শতকের সূচনাকাল থেকে চতুর্দশ শতকের শেষ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল মধ্যযুগীয় ধর্মীয় ইতিহাসের বসন্তকাল । এ সময়টিতে মোটাদাগে একটি প্রবণতা লক্ষ্যণীয় যে , স্পেনে মুসলমানদের রাজত্ব চলাকালে কবিতা ও কল্পনাধর্মী উপন্যাস সামাজিক অবস্থাকে আলোকজ্জ্বল আভায় উদ্ভাসিত করলেও খৃষ্টজগতে নারী জাতি ছিল নিগ্রহের শিকার।

‘ক্রাইসষ্টম’ উচ্চমার্গের একজন সাধু-পুরুষ হিসেবে স্বীকৃত ছিলেন, তিনি নারী জাতিকে একটি অনিবার্য অমঙ্গল, একটি স্বাভাবিক প্রলোভন, কাম্য অনর্থ, পারিবারিক বিপদ, মারাত্মক আকর্ষণ এবং চিত্রিত পাপ বলে ঘোষনা করেছেন।

‘টারটুলিন’ বলতেন , নারী জাতি শয়তানের দ্বার, নিষিদ্ধ বৃক্ষের মোহন উন্মুক্তকারী , ঐশী আইন প্রত্যাখানকারী , খোদার প্রতিবিম্ব – মানুষের ধ্বংসকারী ।’ (৩)

নারী বিষয়ে সে যুগের ধর্মীয় মানস উদ্ধার করার জন্য ব্যাপক উপাত্তের উপস্থিতি রয়েছে। এখানে দুটিই উদ্ধৃত করা হলো। একটি সামাজিক আবহ অনুধাবন করার জন্য প্রাথমিক ভাবে এতটুকুই যথেষ্ট মনে করছি। যদিও দৃঢ় অবস্থানের জন্য আরো বেশি উপাত্তের প্রয়োজন। এতটুকু থেকে অবশ্যই ধারণা করা যায় যে , সার্ত্রে ছিলেন এ আবহের আবশ্যিক ফসল। তবে বিশেষভাবে তসলিমা নাসরিনের নারী ভাবনাকে সামনে আনতে হলে ‘ ভারতীয় ধর্ম-দর্শন ‘ পর্যালোচনা সমানভাবে জরুরি। কারণ, তসলিমা নাসরিন পশ্চিমা প্রভাবিত হলেও সে এ অঞ্চলের মানুষ, এখানে তার বেড়ে ওঠা। এতদঅঞ্চলের ধর্মীয় সামাজিক পরিস্থিতি তার মানস জগতকে আন্দোলিত করবে, এটি অতি সহজাত। এ অঞ্চলের একজন উচ্চ শ্রেণীর ব্রাহ্মণের জন্য যথেচ্ছা স্ত্রী গ্রহণের অনুমোদন স্বীকৃত। এছাড়াও রয়েছে বিধবা বিবাহ আইনের কঠোরতা. সতিদাহ প্রথার মতো অমানবিকতা। রাজা রামমোহন রায় ও ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের সংস্কারের পরও এ অমানবিকতার উপস্থিতি কমবেশি ছিল। এ প্রেক্ষাপট থেকে তসলিমা নাসরিনের মানসপট বিশ্লেষণ সহজ হয়। মুসলিম সমাজে তসলিমা নাসরিনের বেড়ে ওঠার প্রসঙ্গ এখানে অযথার্থ। কারণ, শুধুমাত্র মুসলিম সমাজে বেড়ে ওঠাই কাউকে ইসলামি আদর্শের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে না, এজন্য জরুরি ইসলামি শিক্ষার সাথে গভীর সম্পর্ক , যা কোন কালেই তসলিমা নাসরিনের হয়ে উঠেনি।

ইসলাম নারীদের সামাজিক অধিকার দেয়নি – একথা যেমন অবাস্তব, তেমনি নারীর শিক্ষা-দীক্ষা , মর্যাদা ও মানবিক ক্ষেত্রে ইসলামের অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করাও অজ্ঞতা। রাসুল সা. ইসলামি জীবন ব্যবস্থায় নারীদেরকে এমনসব অধিকার প্রদান করেছেন , যা প্রাক-ইসলামি যুগে ছিল অকল্পনীয়। ইসলাম প্রদত্ত এসব অধিকার, সুযোগ-সুবিধা কালের অগ্রগতির সাথে পূর্ণ মূল্যায়িত হবে । সমুদয় আইন সংক্রান্ত ক্ষমতা ও ভূমিকা পালনে ইসলাম নারীদেরকে পুরুষের সঙ্গে নিখুঁত ভাবে সাম্যের উপর প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিবাহের ক্ষেত্রে ইসলাম যেভাবে সর্বোচ্চ সংখ্যার সীমা নিরূপণ করেছে, তদ্রুপ, সকলের প্রতি নিরপেক্ষ আচরণকে আবশ্যিক করে দিয়েছে। ফলে বহু বিবাহ প্রথার মধ্যে নিপুণ ভারসাম্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হলো, কুরআনের যে আয়াতে সর্বোচ্চ চারটি বিবাহের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, তার পরের আয়াতেই এর তাৎপর্যকে স্বাভাবিক মাত্রায় স্থাপন করা হয়েছে। কুরআনে বলা হয়েছে, কিন্তু, তোমরা যদি তাদের সকলের সাথে ন্যায় ও সমতার আচরণ করতে না পারো, তবে তোমরা একটি মাত্র বিবাহ করবে।

নারী জাতির জন্য পর্দা অবরোধ মূলক কোন ব্যবস্থা নয়, বরং চুড়ান্ত সন্মান। যার দৃষ্টান্ত পৃথিবীর সামাজিক ইতিহাসে বিরল। এ কথা শুধু আমরা কেন, পশ্চিমের লোকেরাও বলে । ভন হ্যামার বলতেন , নারীদের অন্তঃপুর হলো পবিত্র স্থান; অপরিচিতদের সেখানে প্রবেশ নিষিদ্ধ । এজন্য নয় যে, রমনী জাতি অবিশ্বাস্য । বরং প্রথা ও সমাজব্যবস্থা যে পবিত্রতা তাদের প্রতি আরোপ করেছে, সেজন্য। গোটা মুসলিম সমাজে নারীদের প্রতি যে মাত্রায় সম্মান দেখানো হয়েছে, তা বিশদ ভাবে প্রমাণ সাপেক্ষ। “(৪)

এভাবে নারী বিষয়ক ইসলামি ধারণাগুলোকে শব্দে শব্দে ব্যাখ্যা করলে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব-ই যাহির হবে , এজন্য নির্মিত হবে অগণিত শব্দের জগত, শব্দের বুননে সুশোভিত হবে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা। নিতান্ত হালের গবেষণা সমূহের মধ্যে সৈয়দ আমীর আলীর ‘the sprite of Islam ‘ এর পাঠ ও বিবেচনা প্রাসঙ্গিক । তাছাড়া ড . মুস্তাফা সিবাঈ তার ‘ আল মারআতু বাইনাল ফিকহি ওয়াল কানুন’ বইয়ে পশ্চিমের নারীবাদী ব্যবস্থার অন্তঃসার শূন্যতা তুলে ধরেছেন । বিদ্যমান সমাজের বিবেচনা অনেককেই ভুল পাঠের সম্মুখীন করে। একটি সমাজ কাঠামোতে অবিচার যখন ব্যাপকতা লাভ করে, তার দায় তখন সীমাবদ্ধ থাকবে সে সমাজের লোকায়ত ধারণার সাথে। সুতরাং, কোন মুসলিম সমাজে নারীর প্রতি অবহেলা প্রদর্শিত হলে সে দায় সমাজের , ইসলামি আদর্শের নয় । ইসলামি আদর্শকে এ দায়ে অভিযুক্ত করা তখনই সম্ভব, যখন সমাজ আদর্শ ভিত্তিক হবে। এজন্যই সমাজকে ইসলামি আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত করা ভূমিকা মূলক কাজ।

সঙ্গত কারণেই তসলিমা নাসরিনের ‘নারী ভাবনা ‘কে বাংলাদেশের মুসলিম সমাজ ইতিবাচক ভাবে নেয়নি। কারণ, যেই সংকট উদ্ভব ও বিকাশ লাভ করেছে পশ্চিমে , বিদ্যমান সমাজ ব্যবস্থাকে করেছে বিপর্যস্ত তার দায়ভার প্রাচ্য বহন করবে না। ক্যাথলিক চার্চের সংকটকে ব্যাপকভাবে ধর্মীয় সংকট হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার প্রবণতা একপ্রকার আগ্রাসন । সে আগ্রাসনের নির্ভুল শিকার আজকের মুসলিম সমাজ ও তার বিশেষায়িত শ্রেণী । আধুনিক ইউরোপের সামাজিক ইতিহাস ও তার সুদীর্ঘ পথ-পরিক্রমার সকল অভিজ্ঞতা তাদের সমাজের পরিপার্শ্বিকতার ফসল। রেনেসাঁ পরবর্তী উদারনীতিবাদ, মার্কসবাদ, অস্তিত্ববাদ , ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদ সহ মানবতা সংশ্লিষ্ট ধারণাগুলোর সূতিকাগারে রয়েছে তাদের জীবন-ব্যবস্থাগত সংকট। তাদের সামাজিক ও ধর্মীয় ইতিহাসে এমন কোন মতাদর্শের উপস্থিতি ঘুণাক্ষরেও পাওয়া যাবে না, যা নারী মুক্তির কথা বলেছে, মানবতার ব্যাপক কল্যাণ সাধন করেছে। কিন্তু, সে সংকট মুসলমানদের মোকাবেলা করতে হয়নি কোন কালেই। বরং , ইসলাম নারী মুক্তির ইতিহাস সৃষ্টি করেছে, মানবতার যুগান্তকারী নযীর স্থাপন করেছে। সুতরাং, যে রোগে আমি ও আমার সমাজ বিপদ সংকুল হয়নি, সে রোগের দাওয়াই গ্রহণ করা আমার মূর্খতা ও ব্যর্থতা। বরং , ক্ষেত্র বিশেষে তা বিপজ্জনক হতে পারে।

আধুনিক কালে সমস্যার এ কেন্দ্রীয় ধারণা সামনে ছিল না বলে অনেক মতাদর্শকে যেমন ইসলামি করণের প্রবনতা দেখা গেছে, তেমনি ইসলামি জীবনব্যবস্থার উপর প্রশ্ন ছুড়তে উদ্যত হয়েছে কিছু শ্রেণী। বিবর্তনবাদের চরম বিকাশের যুগে ইসলামকে এর সাথে শ্লেষ করার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে , অপব্যাখ্যা ও ধূর্ততার আশ্রয় নিয়ে। এসবের পেছনে দুটি কেন্দ্রীয় সমস্যাকে চিহ্নিত করা যায় :

১ . জাতি সত্ত্বার স্বকীয় বিশ্বাস ও কর্মধারা সম্পর্কে অনবহিত থাকা। কারণ, কোন বিষয়ে মানুষের জ্ঞানশূণ্যতা তাকে অবিশ্বাস ও বিরোধিতার দিকে ঠেলে দেয়। আরবী প্রবাদ আছে, ‘ অজানা বিষয়ের প্রতি মানুষের বিদ্ধেষ লালন করার প্রবনতা তার সহজাত।’

২ . পশ্চিমা সংস্কৃতির উন্মত্ত আগ্রাসন প্রাচ্যকে দীর্ঘকাল যাবত দুর্বল করে রেখেছিল। ফলে তারা চিন্তা ও বিশ্বাসগত স্বকীয়তা ভুলে প্রশ্নহীন ভাবে পশ্চিমের অনুকরণ করতে থাকে। দিনশেষে, আলো আঁধারির প্রদোষে , কল্পনার আরশিতে যে চেহারা প্রতিফলিত হয় , তা পশ্চিমের। নির্বাসিতা লেখিকা তসলিমা নাসরিন যে আয়নায় চেহারা প্রদর্শনী করেন, তা পশ্চিমের । প্রাচ্যের নয় ।

তথ্যসূত্র :
১ . আল মারআতুবাইনাল ফিকহি ওয়াল কানুন, ড মোস্তফা আস সিবাঈ। পৃ . ১৯৭
২ . Man Marxism and Islam, ali shariati, page – 44
৩ . The sprite of Islam, sayeed amir ali , page,- 133
৪ . প্রাগুক্ত, ১৩৪ পৃ .

 

আগের সংবাদবাংলা ইসলামি গান ও জাতীয় কবির অবদান
পরবর্তি সংবাদবরিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বেড়ে ১০