টানা চতুর্থবারের মতো দেশের ক্ষমতার চেয়ারে বসেছে আওয়ামী লীগ। গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দলটি আবারো ক্ষমতায় আসে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতে কেমন প্রভাব ফেলবে আওয়ামী লীগের টানা এই ক্ষমতায় আরোহনের বিষয়টি। দেশের বোদ্ধা আলেমরাইবা বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন? এ বিষয়ে কথা বলেছিলাম দেশের দুই আলেমের সঙ্গে।
বুদ্ধিজীবী আলেম মাওলানা মুসা আল হাফিজের মতে, যেকোনো দেশে ক্ষমতা এবং শাসনের ধারাবাহিকতা এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এর সঙ্গে নিয়মতান্ত্রিকতার যেমন একটি সম্পর্ক আছে, তেমনি স্থিতিশীলতারও একটি বিষয় আছে। তবে এই ধারাবাহিকতার ক্ষেত্রে জনগণের সচেতন আকাঙ্ক্ষা এবং সমর্থনের প্রতিফলন থাকতে হবে। যদি এর বিপরীত হয় তাহলে ক্ষমতায় এক ধরনের ব্যক্তি কেন্দ্রিক, গোষ্ঠী কেন্দ্রিক স্বৈরতন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে টানা চতুর্থবারের মতো আমরা এই সরকার দেখতে পাচ্ছি। সরকারের এই ধারাবাহিকতাকে আমরা কিভাবে মূল্যায়ন করবো সেটা নির্ভর করে, এটা জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে হচ্ছে কিনা, তাদের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে হচ্ছে কিনা। কারন সেটা না থাকলে ক্ষমতাসীনদের জনগণের কাছে জবাবদিহিতার কোনো বাধ্যবাধকতা থাকে না। জনগণ যখন কোন সরকারকে নির্বাচন করে তখন সে সরকার জনগণের কাছে কাজের জবাবদিহিতার জন্য বাধ্য থাকে। জনগণের যদি সরকার নির্বাচনের সুযোগ না থাকে তখন এই জবাবদিহিতার বাধ্যবাধকতা থাকে না। ফলে সরকার পথ হারায়, দেশ পথ হারায়।
‘আমরা যদি গত নির্বাচনের কথা বলি, তাহলে এই বিষয়টি তো নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতেই জনগণের বৃহত্তর একটি অংশ অনুপস্থিত ছিল। জনগণ যেভাবেই হোক এই নির্বাচনে উপস্থিত হয়নি এবং তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেনি। যার ফলে আমরা একেবারে সাদা দৃষ্টিতে সরকারের এই ক্ষমতা গ্রহণকে অভিনন্দিত করতে পারছি না। কেননা এখানে বৃহত্তর জনগণ নির্বাচন বিমুখ ছিল বলেই দেখা যাচ্ছে। আমরা মনে করি, যতক্ষণ একটি সরকার সুস্থ থাকে, ততক্ষণ সরকার এবং রাষ্ট্রের মাঝে একটি পার্থক্য থাকে। রাষ্ট্রীয় এবং সাংবিধানিক যে প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে সেগুলো যদি সরকারের কুক্ষিগত না হয়, সরকার তখন রাষ্ট্রের কাছে দায়বদ্ধ থাকে। এখন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যদি সরকারের সুরক্ষায় নিজেদেরকে আত্মনিবেদন করে এবং তারা যদি সরকার এবং রাষ্ট্রের মাঝে একটি রেখা না রাখে তাহলে এমন পরিস্থিতিকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় কোন যথার্থ পরিস্থিতি হিসেবে মূল্যায়ন করা যায় না, বলা যায় না।’ -যুক্ত করেন তিনি
বুদ্ধিজীবী এই আলেম বলেন, বাংলাদেশের বিরোধীরা অভিযোগ করছে, ‘রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে বা রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকার কুক্ষিগত করেছে।’ তাদের এই অভিযোগ যদি সত্য হয়ে থাকে এবং এর ভিত্তিতে যদি সরকার নির্বাচিত হয়ে থাকে তাহলে নিশ্চয়ই পরিস্থিতিটা আমাদের দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি এলার্মিং বিষয়। গুরুতর একটা সমস্যা।
তিনি মত দেন, আমরা আশা করব যে সরকার এখন ক্ষমতায় এসেছে তারা আমাদেরকে সুশাসন উপহার দিবে এবং জনগণের কাছে দায়বদ্ধতাকে বাড়াবে। আসলে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য ছাড়া দেশের সত্যিকারের উন্নয়ন হয় না। বিরোধীদের আওয়াজও শোনা দরকার। বিরোধীদের দাবির প্রতি নমনীয় হওয়া দরকার। এর ফলে একটা স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ দেশে তৈরি হয়। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে আমরা একটা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে না গিয়ে স্থিতিশীল অগ্রগতি লাভ করতে পারি। এক্ষেত্রে সরকারকে একগেমি পরিহার করে বিরোধী জনমতের আওয়াজকে শোনা এবং তার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা দরকার।
এদিকে খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী বলেন, সরকার টানা চতুর্থ বারের মতো যে ক্ষমতায় এসেছে এটি জনগণের মতের ভিত্তিতে হয়নি। নির্বাচনকে দেশের সিংহভাগ জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাই আমরা দাবি জানাচ্ছি, এই নির্বাচন বাতিল করে জনগণের রায়ের ভিত্তিতে তাদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিয়ে সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। তখন যদি আওয়ামী লীগ দেশের ক্ষমতায় আসে আমরা তাদেরকে অভিনন্দন জানাবো। কিন্তু এখন যেভাবে তারা ক্ষমতায় এসেছে এটি দেশের জন্য একটি অশনি সংকেত।