পঞ্চগড় কীভাবে কাদিয়ানী আস্তানায় পরিণত হল?

মুনশী নাঈম:

গত কয়েক বছর ধরেই ঢাকার বকশীবাজারের পরিবর্তে পঞ্চগড়ে বাৎসরিক ধর্মীয় সমাবেশ করে আসছে কাদিয়ানীরা। শুক্রবার থেকে তাদের তিনদিনব্যাপী সালানা জলসা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এটা ছিল আহমদিয়াদের ৯৮তম জলসা। কিন্তু স্থানীয় মুসলমানদের প্রতিবাদের জেরে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে জলসা এ বছরের জন্য স্থগিত করে পুলিশ।

কিন্তু কথা হলো, পঞ্চগড় কীভাবে কাদিয়ানী আস্তানায় পরিণত হল?

স্থানীয় আলেমরা বলছেন, পঞ্চগড়ে আগে জায়গার দাম অন্য জেলার তুলনায় অনেক কম ছিল। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তারা সেখানে জমি কিনে বসতি গড়তে শুরু করে। ঢাকায় বকশীবাজারের জায়গা ছোট হওয়ায় পঞ্চগড়ে তাদের নিজস্ব জমিতে নিয়ে যায় বার্ষিক জলসার আয়োজন। তাদের ভাষ্যমতে, অন্য সব সময়ের চেয়ে এবারের জলসা অনেক বড় হতো।

যেভাবে পঞ্চগড়ে এল তারা

স্বাধীনতাপূর্ব বাংলাদেশে জেলাটিতে জনসংখ্যা কম ছিল, অনেক জায়গা ফাঁকা পড়ে থাকতো। আবার এ অঞ্চলে জায়গার দামও ছিল কম। ফলে এই অঞ্চলটি তাদের বসবাসে আকৃষ্ট করে। তৎকালীন সময়ে নোয়াখালী, নরসিংদী, সিলেট, ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ পঞ্চগড়ে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম শায়খুল হাদীস আল্লামা মুখলিছুর রহমান কাছেমীর ভাষ্যমতে, ‘১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় মাত্র গুটি কয়েক কাদিয়ানি ছিল। পাকিস্তান আমলে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান হাতে আগত কাদিয়ানী আমলাদের সাহায্যে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে আরম্ভ করে। আইয়ুব খানের শাসনামলে তার ব্যক্তিগত উপদেষ্টা ছিল মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর দৌহিত্র এম. এম. আহমদ। এম. এম. আহমদ আইয়ুব খানকে দিয়ে পঞ্চগড়ের সীমান্তবর্তী এলাকায় কাদিয়ানীদের জন্য দু-শ একর জমি বরাদ্ধ করিয়েছিল। সেখানে এখন আহমদ নগর নাম দিয়ে কাদিয়ানীদের বিরাট কলোনী গড়ে উঠেছে। পাকিস্তান আমলে জনৈক কাদিয়ানী অফিসাররের চেষ্টা তদবীরের ফলে চুয়াডাঙ্গায় ও কাদিয়ানীদের এক বিরাট এলাকা গড়ে ঊঠে। অনেকের ধারনা, বর্তমানে ব্রাহ্মনবাড়িয়ার চেয়ে চুয়াডাঙ্গায় কাদিয়ানীরা সংখ্যায় বেশী রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ও সমগ্র বাংলাদেশে কাদিয়ানীদের সংখ্যা কয়েক হাজারের বেশী ছিল না। আর বর্তমানে তাদের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে গেছে। আমাদের প্রশ্ন, এসব কাদিয়ানী কোত্থেকে এসেছে? এরা কি পাকিস্তান থেকে মাইগ্রেশন করে বাংলাদেশে এসেছে? মোটেই না। এদেশের কোন হিন্দু,খৃষ্টান কিংবা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী কি কাদিয়ানী ধর্ম গ্রহণ করেছে বলে কেউ বলতে পারে? তারা মুসলমান ব্যাতীত অন্য কেন ধর্মাবলম্বীদের নিকট তাদের ধর্মমত প্রচার করে না, আর ঐ সব ধর্মাবলম্বীদের কেউ তাদের ধর্ম গ্রহণও করে না। সুতরাং বলতে হবে, আজ বাংলাদেশে লক্ষাধিক কাদিয়ানী রয়েছে, এরা সকলেই এদেশের মুসলমান। নানা কলা কৌশল ও লোভ প্রলোভনের মাধ্যমে তাদেরকে ধর্মচ্যুত করে কাদিয়ানী ধর্মমতের জালে আবদ্ধ করে কাফির বানিয়েছে। কাদিয়ানী ধর্মমতালম্বীদের তৎপরতা যে কি ভয়াবহ রূপ ধারণা করছে তা কল্পনা ও করা যায় না।’

পঞ্চগড় নূরুন আলা নূর কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ্য মাওলানা আবদুর রহমান ফাতেহকে বলেন, ‘পঞ্চগড়ে জমির দাম কম ছিল। অনেক জায়গা ফাঁকা ছিল। তাই কাদিয়ানীরা জায়গা কিনে এখানে কলোনী গড়ে তোলে। তবে পঞ্চগড়ের ফুলবাড়ী, শালসিঁড়ি ও আহমদীয়া নগরে কাদিয়ানীদের বসবাস বেশি।’

সংখ্যায় কম হলেও তাদের প্রভাবের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সংখ্যায় কম হলেও তাদের হাতে শক্তি বেশি। কারণ, তাদের সঙ্গে প্রশাসন ও উচ্চ মহলের সহযোগিতা আছে। প্রশাসনের প্রহরাতেই তাদের জলসাগুলো হয়।’

তবে এত বছর তাদের সাধারণ বসবাস থাকলেও গত কয়েক বছর আগে তারা তাদের কার্যক্রম গতিশীল করার জন্য তারা পঞ্চগড়ে ৪০ একর জমি কেনে। ঢাকার বখশিবাজার থেকে তাদের বার্ষিক জলসা নিয়ে আসে পঞ্চগড়ে। কাদিয়ানীদের বরাতে বিবিসি বাংলায় বলা হয়েছে, ‘ঢাকায় বকশীবাজারে আমাদের জায়গাটা ছোট। জানযটে যাতায়াতে মানুষের কষ্ট হয়। এখানে আমাদের নিজস্ব একটা জায়গা কেনা হয়েছে। সেখানে আমরা জলসার জায়গা করেছি, যাতে মানুষজন একে একটু খোলামেলা পরিবেশে তিনদিন জলসা করবে। এবার আমাদের অনেক বড় আয়োজন ছিল।’

আগের সংবাদকৃষি উন্নয়নে তুরস্কের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চাই : আফগানিস্তানের কৃষিমন্ত্রী
পরবর্তি সংবাদইন্দোনেশিয়ায় ভূমিধসে নিহত ১৫, নিখোঁজ বহু