|| তাসনিফ আবীদ ||
গত অক্টোবরে হঠাৎই দেশের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়া’র আভ্যন্তরীণ কিছু অস্থিরতার খবর বাইরে আসে। এরপর থেকেই দেশের শিক্ষাঙ্গণে তৈরি হয় উদ্বেগ ও হতাশা। যুগ যুগ ধরে ঐতিহ্য ধরে চলে আসা এই প্রতিষ্ঠানের অস্থিরতা সহসাই যেন সমাধান করা হয়; সে দাবিও তোলা হয়। কিন্তু এ পর্যন্ত কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও সমস্যা সমাধানের কোনো অগ্রতির খবর দিতে পারছে না কোনো পক্ষ।
অস্থিরতার শুরুটা অনেকটা এরকম, অভ্যন্তরীণ জটিলতার কারণে পটিয়া মাদরাসায় অক্টোবরে দৃশ্যমান হয় দু’টি পক্ষ। একটি পক্ষ মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামজার প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করছিল। আরেকটি পক্ষ বিষয়টিকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত আখ্যা দিয়ে উড়িয়ে দিচ্ছিল। এর প্রেক্ষিত শূরা বৈঠকের দাবি ওঠে।
এক পর্যায়ে মুহতামিমের অবর্তমানে ডাকা হয় জরুরি শূরা বৈঠক। পরে অবশ্য বৈঠকটি স্থগিত করা হয় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান পৃষ্ঠপোষকের নির্দেশে। ঘোষণা করা হয় নতুন শূরা বৈঠকের তারিখ। কিন্তু সেই শূরা বৈঠকের আগেই গত ২৮ অক্টোবর রাতে অস্থিরতায় চরম আকার ধারণ করে। পটিয়া মাদরাসার ইতিহাসে যুক্ত হয় অপ্রত্যাশিত অধ্যায়। সারা রাতের অস্থিরতা শেষে ভোরে অনেকটা এককাপড়ে মুহতামিম মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামযার কাছ থেকে অব্যাহতি পত্র রেখে তাকে বের করে দেয় একটি পক্ষ। এরপর থেকে ‘পটিয়া ইস্যু’ আরো চরম আকারে পৌঁছে।
জামিয়া পটিয়া ত্যাগের পর মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামজা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত মাদরাসা বন্ধ ঘোষণার একটি নোটিশ প্রকাশ করেন অনলাইনে। সেই নোটিশ প্রত্যাখ্যান করে সব দরস স্বাভাবিকভাবে চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন ভেতরে থাকে শিক্ষকদের একটি পক্ষ। এরপর মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামজার হাতে পটিয়া মাদরাসার ইহতিমামের দায়িত্বভার তুলে দেওয়ার জন্য মাদরাসার বাইরে অবস্থান কর্মসূচী পালন করে অনেকে। পাশাপাশি মাদরাসায় প্রবেশেরও চেষ্টা করা হয়। কিন্তু শেষমেশ তারা ব্যর্থ হয়।
এর প্রেক্ষিতে দু’দফা সংবাদ সম্মেলন করে পটিয়া মাদরাসার ভেতরে থাকা শিক্ষক ও ছাত্রদের একটি পক্ষ। তারা ফের মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামযার প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে। পরবর্তীতে পটিয়া মাদরাসা সার্বিক বিষয় সমাধানের জন্য আদালতে রিট দাখিল করেন মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামযা। কিন্তু এরপরও বিষয়টির কোনো সমাধান হয়নি।
পরবর্তীতে পটিয়ার অভ্যন্তরে না জানা আরো কিছু বিষয় অস্থিরতা তৈরি করে। যার ফলে মাদরাসা থেকে বের হয়ে যেতে হয় প্রতিষ্ঠানটির সদরে মুহতামিম ও প্রবীণ শিক্ষক মাওলানা আমিনুল হককে। এছাড়া আরো কয়েকজন শিক্ষকের অব্যাহতির খবরও বাইরে আসে।
দীর্ঘ এই সমস্যা সমাধানের জন্য এখনো কোনো পক্ষই কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে সার্বিক বিষয়ে কথা বলার জন্য উভয় পক্ষের সঙ্গেই কথা বলার চেষ্টা করে ফাতেহ টোয়েন্টিফোর। কিন্তু কেউ বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে আগ্রহী নয়। তারা একপক্ষ অপরপক্ষকে দায়ী করে নানা অভিযোগ করলে নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে তথ্য দিতে চাননি। তবে মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামযার প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করা পক্ষের একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছা প্রকাশ করে বলেন, মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামজা যেহেতু দাবি করছেন তিনি খুব যোগ্য মানুষ এবং এখানে তার ওপর জুলুম করা হয়েছে; তাহলে এখানে তার আসার আর কী দরকার? এতো যোগ্য মানুষ নিজে তার মতো করে কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলুক বা অন্যকোনো প্রতিষ্ঠানে যাক। আমাদের কোনো ছাত্র-শিক্ষকই তাকে আর চায় না।
এদিকে, মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামযা বিষয়টি নিয়ে কথা না বললেও নির্বাচনের পরিস্থিতি শেষ হলে তিনি ফের পটিয়া ইস্যু সমাধানের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেবেন বলে জানা যায়।
অপরদিকে, দেশের ধর্মপ্রাণ মহল মনে করছেন, সামনে পটিয়া মাদরাসার শিক্ষার্থীদের ইত্তেহাদ ও হাইয়াতুল উলিয়া পরীক্ষা। সহসাই যদি বিষয়টির সমাধান না হয় এবং পরীক্ষা ঘনিয়ে এলে যদি বিষয় ফের চূড়ান্ত আকার ধারণ করে তাহলে শিক্ষার্থী ও প্রতিষ্ঠান উভয়টিই আরো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই যেভাবেই হোক বিষয়গুলো সমাধানের দিকে এগুনোই কাম্য।