পুত্রের প্রতি, সুশীল কবিতা

মুহিম মাহফুজ:

পুত্রের প্রতি

বাতি বন্ধ হলে ছেলে আমার চমকে ওঠে
অন্ধকার সয়ে নিতে এখনো শেখেনি- শুরুতে এরকম হয়
অন্ধকারের বিপরীতে চোখ খোলা রেখে সারারাত জেগে থাকে-
ঘুম আসে না

তিন মাস তেরো দিনে
পৃথিবীর তাবৎ অন্ধকার
কীভাবে আয়ত্তে নেবে?
আহা, ছেলে আমার!

পূর্বপুরুষেরা কখনো ঘামের দামে আঁধার কেনেনি
রক্তের ধারায় সেসব যুদ্ধের ইতিহাস এখনো বাহিত হয়
রক্তের সিলসিলা দিক চিনতে ভুল করে না, জেনো

নবাগত সন্তান পৃথিবীর নিয়মে একদিন
সন্ধান করে নেবে প্রাচীন পদচ্ছাপ
হেঁটে হেঁটে অতিক্রম করা পথের প্রান্ত

সেদিনের জন্য আজ
তুলে রেখে গেলাম
আমাদের পদযাত্রার
বিবর্ণ বিবরণ-

ছেলে আমার, যুগান্তরেও জারি রেখো রক্তের ধারা
উত্তর পুরুষের জন্য ইতিহাসের অধিক
আর কী সম্ভ্রম রেখে যেতে পারে
বিগত দিনের শহীদ সন্তানেরা?

দিনে দিনে, জানি, শিখে নেবে আঁধারের সখ্য
বাতি বন্ধ হলেও নির্ভয়ে ঘুমোতে পারবে রাতের প্রহর

জেনো, সেসব দিনরাত্রীর গান গীত হয়েছিলো আমাদেরও কণ্ঠে
আমাদের চোখ অতিক্রম করে গেছে সময়ের সাজানো সড়ক
কিন্তু পৃথিবীর বাজার-
এক অমোঘ মন্ত্র জপে জপে আমরা এড়িয়ে গেছি

ছেলে আমার, পৃথিবীর জন্য কিছু হেকমত শিখে রেখো
মুখস্থ রেখো একশত চৌদ্দটি কবিতার
ছয় হাজার ছয় শত ছেষট্টি পঙক্তি

পূর্বপুরুষের এ সম্ভ্রম
তোমাকেই দিয়ে গেলাম।

সুশীল কবিতা

বুদ্ধিজীবী বিষয়ক একটি সুশীল কবিতা লেখার জন্য
প্রতিদিন আমি মেহনত করি
তারাবির পর বিছানায় না গিয়ে লেখার টেবিলে বসে থাকি
সারা রাত কসরত করে
ঠিক তাহাজ্জুদের টাইমে কিছু সুশীল লাইন
ইলহামের মতো আমার কাছে আসে
এদিকে মসজিদ থেকে ঘোষণা আসতে থাকে-
উঠুন, সেহরি খান। রোজা রাখুন
আমি সেসব শেষরাত্রীর লাইন লিখে রেখে সেহরির তরকারি গরম করি
মাটির পাত্রে পরম তৃপ্তি নিয়ে আহার
তারপর ফজরের নামাজ শেষে ক্লান্ত হয়ে ঘুমোতে যাই

সকালে ঘুম ভাঙলে দেখি
বুদ্ধিজীবী বিষয়ক কবিতায় কয়েকটি ভাড়াটে গুন্ডা
আর কিছু মার্সেনারির নাম লেখা

পরের রাতে আমি সেসব শব্দ কাটাকুটি করি
তারপর কবিতাটি আবার সুশীল করে তুলি
আরো অধিকতর সুশীল করতে সারারাত জেগে থেকে কোশেশ করি
তাহাজ্জুদের টাইমে রোজকার মতো সেহরির দাওয়াত আসে-
উঠুন, সেহরি খান
আমি রোজা রেখে রাতজাগা ক্লান্তি নিয়ে ঘুমোই

সকালে যখন ঘুম ভাঙে
আমি অবাক হয়ে দেখি
সুশীল কবিতাটি নিজস্ব নিয়মে হয়ে গেছে
এক-চোখ-অন্ধ দালালদের আমলনামা

এভাবে প্রতিদিন রাত জেগে লেখা কবিতা
প্রতিদিন সকালে পাল্টে যেতে থাকে
আমি ইয়াজুজ মাজুজের মতো প্রতিদিন বিভ্রান্ত হতে থাকি
আমার প্রতিদিনের রোজা আগের দিনের চেয়ে কষ্টকর হতে থাকে

রোজা রেখে এসব কষ্ট আমি আর নিতে পারি না
কোনো এক শুক্রবারে জুমার নামাজের পর
সুরা কাহাফের তেলাওয়াত শেষে
কবিতাটির নিচে সাক্ষর করে দিই- মুহিম মাহফুজ
তারিখ- ষোলো চার দুই হাজার একুশ।

আগের সংবাদপ্রেমের চিঠি
পরবর্তি সংবাদআমরাই তো, চলে যেতে চাই