বইমেলায় ইসলামি প্রকাশনী: গতবারের তুলনায় দ্বিগুণ বিক্রি

রাকিবুল হাসান নাঈম:

ঢাকার বাতাসে এখন নতুন বইয়ের ঘ্রাণ আর মলাট উলটানোর শব্দ। দেশের সবচেয়ে বড় বইয়ের মেলা এখন বাংলা একাডেমি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সপ্তাহ খানেক পরই বইমেলার পর্দা উঠবে। এবারের বইমেলায় গত বইমেলার তুলনায় দ্বিগুণ বই বিক্রি হয়েছে ইসলামী প্রকাশনীর স্টলগুলোতে। প্রকাশনা কর্তৃপক্ষ বলছেন, গতবারের তুলনায় এবারের বিক্রিবাট্টা বেশ ভালো। সেটা দ্বিগুণেরও বেশি।

অমর একুশে এ গ্রন্থমেলায় প্রায় ছয়শটি স্টল থাকলেও ইসলামি প্রকাশনীগুলোর মধ্যে স্টল বরাদ্দ পেয়েছে মাত্র আটটি প্রকাশনী। স্টল বরাদ্দ পাওয়া ইসলামি প্রকাশনাগুলো হলো: রাহনুমা প্রকাশনী, সিয়ান পাবলিকেশন, হুদহুদ প্রকাশন, সন্দ্বীপন প্রকাশন, সত্যায়ন প্রকাশন, বইঘর, বিশ্বকল্যান পাবলিকেশন্স এবং বাড কম্প্রিন্ট এন্ড পাবলিকেশন্স।

কথা হয় সন্দ্বীপন প্রকাশনের কর্ণধার রুকনুদ্দিনের সঙ্গে। বইমেলার বেচাবিক্রি সম্পর্কে জানতে চাইলে ফাতেহকে তিনি বলেন, ‘এবার বেশ ভালো বই বিক্রি হচ্ছে।’ ভালো বলতে দ্বিগুণ হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দ্বিগুণের চেয়ে বেশি হবে।’

এবারের মেলায় সন্দ্বীপনের নতুন দুটি বই ‘প্রাচ্যবাদের ইতিকথা’ এবং ‘ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স’ বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও বিক্রি হচ্ছে ‘বিপদ যখন নেয়ামত’ এবং ‘হিজাব আমার পরিচয়’ বই দুটি। মেলার শেষ শুক্রবারে ‘প্রোপাগান্ডা’ এবং ‘মিশন ইসলাম’ নামে আরও দুটি বই প্রকাশ পাবে। তবে সন্দ্বীপনের শিশুতোষ বইগুলো বেশ ভালো যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

গতবারের তুলনায় এবার দ্বিগুণের বেশি বিক্রি হয়েছে সত্যায়নের বইও। এবার প্রকাশনীটি থেকে আরিফ আজাদের ‘কুরআনে থেকে নেওয়া জীবনের পাঠ’ বইটি প্রকাশিত হয়েছে। ফলে তাদের বিক্রিও বেড়েছে আশাতীত। প্রকাশনী সূত্রে জানা গেছে, এবার মেলায় তাদের বিক্রির তালিকায় বেশ ভালো অবস্থানে আছে ‘পরিমিত খাবার গ্রহণ’ ‘থামুন, পথ দেখাবে কুরআন’ এবং ‘ইসলামি জীবন ব্যবস্থার মূলনীতি’ বইটি।

বইমেলায় ইসলামী বই গতবারের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি বিক্রির বিষয়টি স্বীকার করেছেন হুদহুদ প্রকাশনের কর্ণধার দিলাওয়ার হোসাইনও। তিনি ফাতেহকে বলেন, ‘এবারের বেচাবিক্রি বেশ ভালো। বলা যায়, দ্বিগুণের চেয়ে বেশি গতবারের তুলনায়।’ কারা বেশি বই কিনছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের নিয়মিত পাঠক যারা, তারা অনলাইন কিংবা বাংলাবাজার থেকেই বেশি বই কেনেন। বইমেলায় যারা বই কিনছেন, তাদের অধিকাংশই সাধারণ মানুষ। মাদরাসা পড়ুয়া না। তারা সোৎসাহে বই কিনছেন। এতে আমাদের পাঠকমহল বড় হচ্ছে।’ তাদের মোটিভেশনাল বইগুলো সবচে বেশি বিক্রি হয় বলে জানান তিনি।

রাহনুমা কর্তৃপক্ষ জানায়, এবারের মেলায় তাদের বইও বেশ ভালো যাচ্ছে। মেলার শেষ শুক্রবার রাহনুমা থেকে প্রকাশিত হবে ‘ভিন্ন চোখে’ এবং ‘নারী নাস্তিক মিডিয়াও সংস্কৃতি’ নামে কবি মুহিব খানের দুটি বই। এছাড়াও প্রকাশিত হবে ৮ খণ্ডে রচিত ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভীর বই ‘আশারায়ে মুবাশশারা’, সাবের চৌধুরীর অনূদিত বই ‘অটুট পাথর’। আনাস চৌধুরীর অনূদিত বই ‘কুরআন অনুধাবন’।

কয়েকটি ইসলামি প্রকাশনীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা মেলায় স্টল বরাদ্দ না পেলেও বিভিন্ন স্টলকে পরিবেশক রেখে বই বিক্রি করছে। তাদের বইও কন্টেন্ট ভেদে ভালো বিক্রি হচ্ছে।

এবারের মেলায় বই দ্বিগুণ কেন বিক্রি হলো, জানতে চাইলে সন্দ্বীপন প্রকাশনের কর্ণধার বলেন, ‘আমি মনে করি, এটা কন্টেন্টের জোর। আমাদের ইসলামি লেখকরা দারুণ দারুণ সব কন্টেন্ট লিখছেন। যেগুলো মানুষকে খোরাক দিচ্ছে। যেগুলো মানুষকে কিছু শেখাচ্ছে, কিছু ভাবাচ্ছে। ফলে মানুষ এসব বই কিনে মনে করে নিজের উপকার হচ্ছে। ফলে স্বাভাবিক নিয়মেই বইয়ের বিক্রি বেড়ে যাচ্ছে। মানুষকে যদি আমরা তেমন ভালো কন্টেন্ট দিতে না পারতাম, তাহলে বই এত বিক্রি হতো না।’

আগের সংবাদবেফাকে পরীক্ষার্থী বেড়েছে প্রায় ৫০ হাজার
পরবর্তি সংবাদবাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানাল রাশিয়া