বাংলাদেশে হালাল সার্টিফিকেশন পদ্ধতি, জটিলতা যেখানে

|| তাসনিফ আবীদ ||

বিশ্বে ক্রমবর্ধমান মুসলিম জনসংখ্যার কারণে গত কয়েক বছরে ব্যবধানে হালাল পণ্যের চাহিদা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জরিপ মতে, এই মুহুর্তে বিশ্বে হালাল পণ্যের বাজার প্রায় তিনশো কোটি মার্কিন ডলারের মত।

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হওয়ায় বিশাল এই বাজারে পণ্য আমদানি রপ্তানির বিপুল সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের। তবে আন্তর্জাতিক এ বাজারে নিজেদেরকে মেলে ধরতে পণ্যের থাকতে হবে হালাল সনদের স্বীকৃতি। কেননা তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরবসহ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট অনেক দেশে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে হালাল সনদ থাকা বাধ্যতামূলক।

বিষয়টি মাথায় রেখে ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক পণ্য উৎপাদন, আমদানি, রপ্তানি ও বাজারজাতকরণের সুবিধার্থে ‘হালাল সনদ নীতিমালা-২০২৩’ নামে একটি নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করেছে বাংলাদেশ সরকার। পণ্যের হালাল স্বীকৃতির সার্বিক বিষয়টি দেখভাল করবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। প্রতিষ্ঠানটি প্রাথমিকভাবে খাদ্যদ্রব্য, ভোগ্যপণ্য, ওষুধ এবং প্রসাধনসামগ্রী নিয়ে কাজ করবে ।

কিন্তু ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মত একটি প্রতিষ্ঠান; পণ্যের মান যাচাইয়ের জ‌ন্য যাদের কোন নিজস্ব পরীক্ষাগার নেই, তাদের জন্য হালাল সার্টিফিকেশন কার্যক্রম কতটা চ্যালেঞ্জিং হবে? এ বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম মালয়েশিয়ায় অধ্যায়নরত বাংলাদেশী শিক্ষার্থী আবু হামিদ আজীজের কাছে। যিনি ইতোপূর্বে ‘CHALLENGES IN THE DEVELOPMENT OF HALALCERTIFICATION SYSTEM IN BANGLADESH’ শিরোনামে বাংলাদেশে পণ্যের হালাল সার্টিফিকেশন পদ্ধতি বিষয়ে দীর্ঘ একটি গবেষণা সম্পন্ন করেছেন।

ফাতেহ টুয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি জানান, বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হওয়ায় এখানে হালাল পণ্যের যেমন বিশাল চাহিদা রয়েছে, তেমনি বিদেশে রপ্তানিরও ব্যাপক সুযোগ রয়েছে, বিশেষ করে মুসলিম প্রধান দেশগুলোতে। সেই মোতাবেক পণ্যের হালাল সনদ নিয়ে কাজও করছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। কিন্তু লোকবলের অভাব, প্রযুক্তির নানা ঘাটতি এবং বেশ কিছু জটিলতার কারণে গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টিকে নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি নানা চ্যালেঞ্জ এর মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে।

‘২০০৭ সাল থেকেই হালাল সনদ দিয়ে আসছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। কিন্তু আমরা গবেষণাপত্র তৈরির সময় জানতে পারি, দীর্ঘ এই সময় পরেও পণ্যের মান যাচাইয়ের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিজস্ব কোন পরীক্ষাগার নেই। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।’ —তথ্য দেন তিনি

‘এ পর্যন্ত ১৯২টি পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে হালাল সনদ দিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। হালাল পণ্য তৈরি ও বিপণনের অনুমোদন পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৬২টি প্রতিষ্ঠান দুইশোর বেশি পণ্য বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে।’ —ত‌থ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, পণ্য রপ্তানির এ বাজারকে আরো বৃদ্ধি করতে এবং টিকিয়ে রাখতে হলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে আরো সমৃদ্ধ হতে হবে।

‘পণ্যের মান যাচাই নিজস্ব ল্যাব তৈরি, লোকবল বৃদ্ধিসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে সময়ের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জটিলতায় পড়তে হবে বাংলাদেশের রপ্তানি করা হালাল পন্যকে।’ —যোগ করেন তিনি

তিনি মত দেন, হালাল সার্টিফিকেশন পদ্ধতি বিষয়ে মালয়েশিয়ায় প্রচলিত ব্যবস্থাকে সামনে রেখে কাজ করতে পারে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

এদিকে ‘হালাল সনদ নীতিমালা-২০২৩’ বাস্তবায়নের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন’র হালাল সনদ বিভাগ নামে আলাদা একটি ডিপার্টমেন্ট তৈরি করা হয়েছে। বিভাগটির পরিচালক পদে রয়েছেন মো. আব্দুর রাজ্জাক, উপ-পরিচালক পদে রয়েছেন ড. মাওলানা আবু ছালেহ পাটোয়ারী এবং সহকারী পরিচালক পদে রয়েছেন মো. জাহাঙ্গীর আলম। এই তিনজনের মাধ্যমেই বর্তমানে হালাল সনদ বিভাগ পরিচালিত হচ্ছে।

বিভাগটির উপ-পরিচালক ড. মাওলানা আবু ছালেহ পাটোয়ারীর কথায়ও নিজস্ব পরীক্ষাগার না থাকা এবং লোকবলের ঘাটতির কারণে কিছু সঙ্কটের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তবে তিনি দেশে প্রথমবারের মতো হালাল নীতিমালা প্রণয়নের কারণে সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে মুসলিম দেশুগুলোর অনেকে হালাল সনদ চায়। তাই বাংলাদেশ থেকে যারা সেসব দেশে হালাল পণ্য রপ্তানি করতে চায়, তাদের জন্য এই নীতিমালা করা হয়েছে।

পণ্যে হালাল সনদ প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো দেশ বা সংস্থার নীতিমালা ইসলামিক ফাউন্ডেশন অনুসরণ করছে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, হালাল পণ্য আমদানি-রপ্তানির জন্য ওআইসি’র বেশকিছু নীতিমালা রয়েছে। আমরা সেগুলোকে সামনে রাখছি।

‘তাছাড়া তুরস্ক এবং মালয়েশিয়ার হালাল সনদ ব্যবস্থাপনা যেহেতু ইতোমধ্যেই প্রশংসা কুড়িয়েছে সেজন্য সেগুলোকেও আমরা বিবেচনায় রেখেছি।’ —যোগ করেন তিনি

আগের সংবাদহজ নিবন্ধনের সময় বাড়লো ১৮ দিন
পরবর্তি সংবাদসৌদিতে আরও একটি সোনার খনির সন্ধান পাওয়া গেছে