‘মিরপুরে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল’ : ভালো নেই খাদেম-মুয়াজ্জিনরা

রাকিবুল হাসান নাঈম:

এসি বন্ধ করতে দেরী হবার কারণে মসজিদের খাদেমকে নির্যাতন করেছে মসজিদের সভাপতি। ঘটনাটি ঘটেছে মিরপুর ২ নং কাঠালবাগ বাইতুল জান্নাত জামে মসজিদে। দুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, খাদেম আবদুল মতিনকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করছে মসজিদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল কাদের। খাদেম রুম থেকে বের হয়ে যেতে চাইলে সভাপতি তাকে ধরে এনে গলা চেপে ধরেন। কখনও দেন কিল, ঘুষি, থাপ্পর।

ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর প্রতিবাদ জানাচ্ছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। তারা বলছেন, যুগ যুগ ধরে চলে আসা সভাপতিদের স্বেচ্ছাচারী মনোভাবের ফল এই ঘটনা। চোখের আড়ালে দেশজুড়ে এমন হাজার হাজার ঘটনা ঘটে চলছে। কিন্তু মুআজ্জিন-খাদেমদের দেখার কেউ নেই।

তাদের চাকরি সভাপতিদের হাতে জিম্মি

এ প্রসঙ্গে কথা হয় মিরপুর দারুল উলুম ঢাকার প্রিন্সিপাল, মিরপুর ১৩ সেন্ট্রাল জামে মসজিদের খতিব, মুফতী রেজাউল হক মুহাম্মদের সঙ্গে। তিনি মিরপুরের ঘটনাটিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা মানতে নারাজ। তিনি ফাতেহকে বলেন, দেশের আনাচে-কানাচে এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে চলেছে। প্রায় মসজিদের খাদেম-মুআজ্জিনরা এ ঘটনার শিকার। তারা মসজিদের সভাপতি-মুতাওয়াল্লির হাতে সামান্য সামান্য বিষয়ে নির্যাতিত হয়। তাদের চাকরি সভাপতিদের হাতে জিম্মি।’

বাইরের দেশের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে তিনি বলেন, ‘আমি বাইরের দেশে ইমামতি করেছি। দেখেছি, তারা ইমাম এবং খাদেমদের কতটা সম্মান দেয়। আমি নামাজ পড়িয়ে বের হলে তারা আমাকে বলতো,জাজাকাল্লাহ। তাদের মধ্যে কতটা কৃতজ্ঞতাবোধ এবং সম্মান! এই সম্মানটা আমাদের দেশের মানুষ দিতে পারে না। তারা ইমাম-মুআজ্জিন-খাদেমদের চাকর মনে করে। ফলে তাদের সেবাকে তারা মূল্যায়ন করে না। অথচ হাদিসে মুআজ্জিনের সম্মান ঘোষণা করা হয়েছে অনেক উচ্চ সম্মান।’

সভাপতি-মুতাওয়াল্লিদের মনোভাব না পরিবর্তন হলে এর বিহিত সম্ভব না বলেও মনে করেন তিনি।

মসজিদ পরিচালনার জন্য গাইডলাইন নেই

মিরপুরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ইমাম সমিতি। সমিতির সভাপতি হাফেজ মাওলানা লুৎফর রহমান ফাতেহকে বলেন, ‘বাংলাদেশে মসজিদকে ঘিরে এত বিশাল আয়োজন, অথচ মসজিদ পরিচালিত হয় যাদের মাধ্যমে, সেসব ইমাম-মুআজ্জিন-খাদেমরা সবচে বেশি অবহেলিত। এ দেশে মসজিদ আছে ৪ লাখের বেশী। ৪ লাখ মসজিদে খাদেম-মুআজ্জিন হবে কমেও দশ লাখের বেশী। কোনো কোনো মসজিদে দু’তিনজন খাদেম থাকে। এত বিশাল একটা জনগোষ্ঠী অবহেলার শিকার, এটা আমাদের জন্যই লজ্জার।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ইমাম সমিতির সভাপতি হিসেবে আমার কাছে অনেক অভিযোগ আসে। বিভিন্ন মসজিদে খাদেম-মুআজ্জিনরা সভাপতি-মুতাওয়াল্লিদের নির্যাতনের শিকার হন। কখনও মৌখিক, কখনও শারীরীক। খাদেম-মুআজ্জিনের ক্ষেত্রে পান থেকে চুন খসলেই হিসাব-নিকাশ শুরু হয়ে যায়। তাদেরকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে থাকে কর্তৃপক্ষ। অথচ এমনও জানি, অনেক সভাপতি-মুতাওয়াল্লি বছরের পর বছর মসজিদের টাকার হিসাব দেন না।

মাওলানা লুৎফর রহমান বলেন, দেশের শহরাঞ্চলে মসজিদগুলোর ইমামদের বেতন ৭ থেকে ১৫ হাজার টাকা বা কমবেশি। খাদেম-মুয়াজ্জিনদের বেতন ৪ থেকে ৮ হাজার টাকা। আর গ্রাম্য এলাকার মসজিদগুলোর ইমামদের বেতন ৩ থেকে ৬ হাজার টাকা এবং খাদেম-মুয়াজ্জিনদের বেতন ২ থেকে ৪ হাজার টাকা। গ্রামে অনেক সময় দেখা যায় ইমাম এবং মুয়াজ্জিনের কাজ একই ব্যক্তি করছেন। মসজিদ পরিচ্ছন্ন করার কাজও করছেন ইমাম। এই স্বল্প টাকায় তারা সমাজের জন্য যে সেবাটা দিয়ে যান, তার মূল্যায়ন কেউ করে না। তারা কাজ করেন সমাজের হয়ে। কিন্তু সভাপতি-মুতাওয়াল্লিরা তাদেরকে নিজেদের সম্পত্তি মনে যাচ্ছেতাই আচরণ করেন। সব ঘটনা প্রকাশ পায় না। কিছু কিছু প্রকাশ পায়। কখনও তাদেরকে বিনা নোটিশে বরখাস্ত করা হয়। এতে বিপাকে পড়েন স্বল্প আয়ের এই মানুষেরা।

সবশেষে বাংলাদেশ ইমাম সমিতির সভাপতি বলেন, দেশে যেকোনো প্রতিষ্ঠান চালাতে সরকারের নির্দিষ্ট গাইডলাইন আছে কিন্তু মসজিদ পরিচালনার জন্য কোন গাইডলাইন নেই। দেশের ছোট-বড় সব মসজিদের তালিকা করে শ্রেণিভেদে ইমাম-মুআজ্জিন-খাদেমদের বেতন কাঠামো তৈরি করা সময়ের দাবি। সরকারেরর কাছে আমরা বিভিন্ন সময় এ দাবি জানিয়েছি।

আগের সংবাদনিষিদ্ধের পর এবার বন্ধ হল পিএফআই’র ওয়েবসাইট-ফেসবুক–টুইটার
পরবর্তি সংবাদআজানের সময় পূজামণ্ডপে বাদ্যযন্ত্রের শব্দ সহনীয় রাখার নির্দেশ