মুইনুল ইসলামের একগুচ্ছ কবিতা

শিশু ইসমাইল, তার পিতা ও বিধাতা

ধরণীতে পা’ রেখেছে নওল কিশোর এক, মৃদু
পদভারে দুলে ওঠে সাহারার ‘ইজখির’ ঘাস।
যখন এসেছে ফিরে, বৃদ্ধের দেহে ফের বসন্ত ঋতু,
তখন মায়ের কোলে ছড়ায় সে স্নেহের সুবাস।
গুণগুণ ছড়া কাটে, মরুচারী মেষের রাখাল,
সপ্রশ্ন মন তার, চোখে ভরা পৃথিবীর অপার বিস্ময়,
জনকের ছায়া ধরে হেঁটে চলে সোনালি সকাল,
ভোরের সূর্যের হয় সন্ধ্যায় বিমল বিলয়।
বসুধার এই প্রেম ধরে ফেলে বিধাতার সর্বভেদী চোখ,
চলে আসে নির্দেশ আত্মজার জীবনোৎসর্গের।
যেহেতু বিধান তাঁর পালনের নেই কোনও শোক,
পিতা-পুত্র হৃদাগারে তাঁর তরে প্রেম ধরে ঢের।
তারপর ইতিহাস থেমে যাওয়া যে ঘটনা দেখল মানুষ,
স্বর্গেও উড়ল শেষে উৎসবের রঙিন ফানুস।

প্রিয়তমা

ভুলি না তোমায় তাই মনে পড়ে কি না,
ঘটা করে সে হিসেব রাখি না, রাখি না।
যখন প্রভাত বেলা নিদ্রাতুর সত্তার গহনে
মৃদু কার টোকা পড়ে, কি জানি সে কিসের দহনে
জেগে ওঠে আধমরা আমার শরীর,
হাওয়া লাগে এ হৃদয়ে অতি চেনা আপন নদীর।
যখন দর্শিত হয় হলুদাভ ডিমের কুসুম
নীল পেয়ালায়, ডাকে পায়রারা বাকুম বাকুম,
রোদ হয়ে এ হৃদয়ে ধরা দাও তুমি,
বয়ে চলো হয়ে মনে হাওয়া মৌসুমী।
যখন সাগরে ডোবে নিষ্প্রভ আলোর গোলক,
বিলায় চাঁদের রঙ পৃথিবীরে কোমল আলোক,
চেতনার চোখ জুড়ে শুধু তুমি, তোমার অজুদ,
জাগরে নিদ্রায় তুমি মজুদ, মজুদ।

নতুন

নীলাভ মুক্তা শুভ্র ডানার তলে,
ফটিক স্বচ্ছ জীবনের মিঠা জলে,
সফরীর লোভে চটুল নৃত্য নাচে,
একটি হৃদয় তব ভালবাসা যাচে।

নব পরিচয় নব প্রেম উন্মেষ,
পায় যেন খুঁজে জীবনের উদ্দেশ,
দোঁহে মিলে যেন হয় এক দেহে লীন,
নিসর্গে বাজে অপার সুখের বীণ।

জীবনের পথ ফুলেল ফরাশ নয়,
পেতে পার কভু কাঁটার পরিচয়,
কণ্টকও যেন গোলাপের হাসি হাসে,
বসুমতি যেন ভালবাসা ভালবাসে।

মায়া

কেন এত মায়া দিয়ে পৃথিবীটা গড়া?
কেন মমতায় ঘিরে থাকে আমাদের মন?
কেন প্রেমের আবেশ ছাড়া কাটে না জীবন?
মানুষের ছোট মনে যদি এত প্রেম,
বিধাতার কাছে তবে কত প্রেম আছে?
প্রথিবীটা বিধাতার প্রেমের প্রকাশ
ক্ষুধিত হৃদয় তার প্রেম খেয়ে বাঁচে।

আমি তো পড়েছি এক প্রেমে

আমি তো পড়েছি এক প্রেমে,
যে প্রেমে বাঙময় হয়ে ওঠে মূক অক্ষর,
বুকের ভেতর বাজে রিনঝিন চুড়ির আওয়াজ,
শব্দ দেখায় তার শরীরের নানা কারুকাজ।
যে প্রেম ভুলিয়ে দেয় তোমার নুপুর,
একসাথে কাটানোর অলস দুপুর,
তবুও তো সেই প্রেম ভালোবাসো তুমি,
পরিণতি দেখে তার, তোমার ললাট ছোঁয় ভূমি।

কবি
শিক্ষক, জামিয়াতুস সুন্নাহ
বাহাদুরপুর, শিবচর, মাদারীপুর

আগের সংবাদসুলাইমান সাদী’র কবিতা
পরবর্তি সংবাদশাহাদাৎ তৈয়বের কবিতা