ম্যালকম এক্স থেকে লিন্ডা সুরসুর: ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে অধিকার আন্দোলন

 

আব্দুল্লাহ আল মাহী

বিশ্বায়নের যুগে প্রতিটি বস্তু তার নিজস্ব গন্ডিকে অতিক্রম করে। একক বলতে কিছু থাকে না। ব্যাপারটা এমন না যে, আমি অধিকার দিতে চাচ্ছি না তবুও অধিকারে চলে যাচ্ছে। বরং অধিকারে প্রযুক্ত হওয়ার জন্য ব্যক্তির সদিচ্ছাই আসল ও জরুরি। তাই, ষাট-সত্তর বছর আগে ঘটে যাওয়া ম্যালকম এক্সের আন্দোলন যেমন আমাদের নাড়া দিতে সক্ষম ঠিক তেমনিভাবে লিবারেল মুসলিম(?) একটিভিস্ট লিন্ডা সুরসুরের এক্টিভিটিও আমাদের সমাজে প্রভাব বিস্তার করতে প্রস্তুত৷ পাশাপাশি আমাদের এ ব্যাপারেও দৃষ্টি দেয়া জরুরি, অঞ্চল ভেদে আন্দোলনের রূপরেখা কেমন হওয়া চাই৷ এবং এসব নিয়ে ইসলামের মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গি কী?

 

 

বর্ণবৈষম্যের মোকাবেলায় এক্সের বৈশ্বিক প্রভাবের সুবাদে তার আন্দোলন নিয়ে আলাপ করা নেহায়েত জরুরি। অর্থাৎ, তিনি তার আফ্রো-অ্যামেরিকান ঐক্য আন্দোলনকে যুক্তরাষ্ট্রের সীমা থেকে বের করে সার্বজনীন অধিকার আন্দোলনের ইশতেহারে পরিনত করতে পেরেছেন। ম্যালকম এক্সকে একবার জিগ্যেস করা হয়েছিল, আপনার এই কালোদের অধিকার আন্দোলনে কোন “সাদা” শামিল হতে চাইলে সে সুযোগ রয়েছে কি না! উত্তরে ম্যালকম বলেন, কেন নয়! অবশ্যই তার শামিল হবার হক আছে৷

 

 

ম্যালকম এক্সের পাশেই যেহেতু লিন্ডা সুরসুরের আলাপ করব তাই বলে রাখি, লিন্ডার লিবারেল মানসিকতাকে ইসলামের নামে ব্যবহার করার কারণে মুসলিম ব্যাক্তি ও সমাজের মানসে এর ব্যাপক মন্দ প্রভাব পড়ছে। সুস্থ্য ও খোদা প্রদত্ত প্রাকৃতিক রুচি হারিয়ে অসুস্থ ও অনুর্বর মস্তিষ্ক নিয়ে গড়ে উঠছে নতুন প্রজন্ম। লিন্ডার LGBT এর সাপোর্ট, ইন্টারফেইথের প্রতি আহ্বান, ইসলামকে আঞ্চলিকতার দোহাই দিয়ে পরিবর্তন-পরিবর্ধন কিছুতেই সমর্থন করার মতো না। যেকোন মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে তাকে সোচ্চার পাওয়া যায় ঠিক। তার কণ্ঠ খুব উচু। প্রশংসনীয়। কিন্তু তার পয়েন্ট অব ভিউ আপত্তিকর। বিভ্রান্তিকর। অস্বস্তিকর। অসমর্থিত। সবচে বড় সমস্যা হচ্ছে, তার এসব কার্যক্রম সে যেই বিবেচনাতেই করুক না কেন সামজের কাছে তার ইসলামিক পরিচয়ের সুবাদে সমাজ ইসলামের অসমর্থিত এসবকে “ইসলাম” বলে মনে করছে। লিন্ডা যখন কোন কালোর পক্ষে অধিকার আদায়ের দাবি করে তখনও তার মুসলিম পরিচয় বহন করে। আবার সে যখন লেসবিয়ান-গে-বাইসেক্সুয়াল-ট্রান্সজেনারেশন এর হক নিয়ে কথা বলে তখনও তার মুসলিম পরিচয় থাকে। কিন্তু জ্ঞানহীন ও মূর্খ সমাজ আসলে বুঝতেই পারে না, বরং জানেই না, ইসলাম LGBT এর ব্যাপারে কি বলে? ফলে, এদের থেকে লিন্ডা বাহবা কুড়ায়। আর এই LGBT নিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করা হলে সে বলে, আমেরিকান মুসলিমের একটা ভিন্ন পরিচয় আছে। ভিন্ন সমাজ আছে। তাদের সাথে অন্য অঞ্চলের ইসলামকে তিনি এমন ভাবে গুলিয়ে ফেলতে চাচ্ছেন। যেন ইসলামের মৌলিক দিকগুলো অঞ্চল ভেদে ভিন্নতর হয়!

 

 

তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি তো লিবারেল ইস্যু নিয়ে কাজ করছেন আমেরিকায়। তো এই উভয় পরিচয়, অর্থাৎ লিবারেল এবং প্র্যাকটিসিং মুসলিম এই দুয়ের সমন্বয় কি সম্ভব?

 

 

লিন্ডা উত্তর করেছিল৷ হুম, আমি নিজেই এর উদাহরণ। আমেরিকাতে আমি লিবারেল এবং প্র্যাকটিসিং মুসলিম এর জীবন্ত উদাহরণ। এটার কারণ, এ নয়- আমি আমেরিকান। এর কারণ হচ্ছে, আমি যা বিশ্বাস করি তাই করি। আর এটাই ইসলামের ভিত্তি। যা আমি পালন করে থাকি।

 

 

অধিকার আন্দোলনে লিন্ডার মুসলিম পরিচয়ের ব্যবহার নিয়ে আওয়াজ তোলার সময় এসেছে।

 

 

 

 

০১—অধিকার আন্দোলন কোন সংকটের মুখে এসে করা হয়?

 

 

আমরা ভেবে থাকি, মৌলিক অধিকার হারালেই মানুষ আন্দলোন করে থাকে। আর মৌলিক অধিকার বলতে বুঝি, বস্তুগত ব্যাপারে আমাদের সংকট। যেমন, অন্নবস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা। কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে দেখা যায়, ব্যক্তিগত পর্যায়ে এসব অধিকারে কোন রকম ক্ষুন্নতা না আসলেও তারা আন্দোলন করে যাচ্ছেন। ফিলিস্তিনে ইসরাইলের আগ্রাসনে দূর দেশ থেকে সোচ্চার হচ্ছেন। মাঠে নেমে নেমে অধিকার দাবি করছেন। অথচ এক্ষেত্রে দূর দেশের আন্দোলনকারীর তাদের অধিকার বাস্তবায়ন হলে বা না হলে আপাতদৃষ্টিতে কোনই লাভ-ক্ষতি নাই। বিশ্বায়নের শত ত্রুটির মাঝেও অধিকার আন্দোলনে বৈশ্বিক আওয়াজের এই বিষয়টি বিবেচনায় রাখা উচিত। এটাকে ইসলামে বলে, ‘যখন কোন মুসলিমের চোখে আঘাত লাগে তখন সারা শরিরে আঘাত লাগে।’ রসুলের এই হাদিসের লাযেমি বা অত্যাবশকীয় বিষয় হচ্ছে, বৈশ্বিকভাবে একে অপরের সাথে সংযুক্ত থাকা। যে কারও বিপদে এগিয়ে যাওয়া। ম্যালকম এক্স তার আন্দোলনকে বৈশ্বিক প্রবণতা দিয়েছিলেন। যদিও যোগ্য উত্তরসূরী না থাকায় বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। কিন্তু রূপরেখা তৈরি করে দিয়েছেন।

 

 

০২— অধিকার আন্দোলন কারা করবে?

 

অধিকার আন্দোলন তারাই করবে যারা ভাববে তাদের অধিকার ক্ষুন্ন হচ্ছে। কিন্তু অধিকার কী, তা স্পষ্ট হওয়া জরুরি। অধিকার বিষয়টা ব্যক্তির বিচারে একটা তূলনামূলক ব্যাপারই বটে। অর্থাৎ একজনের কাছে যা অধিকার অপরের কাছে তা অধিকার নাও হতে পারে। কিন্তু এমন একটি অথরিটি আছে, যে এর সীমা পরিসীমা নির্ধারণ করে দিচ্ছে। অধিকারের আংশিক ও সামগ্রিক আলাপ করছে। কিন্তু সেগুলো কী— এরজন্য প্রয়োজন মৌলিক ভিন্ন আরেকটি প্রবন্ধ। ম্যলকম এক্স এমনই একজন। যিনি সোচ্চার হয়েছেন অধিকার নিয়ে। ধরলাম, ম্যালকমের নিজস্ব আন্দোলন তখনই শেষ করে দেয়া উচিত ছিল যখন সে বর্ণবাদী আক্রমণের আর শিকার হচ্ছে না। কিন্তু না, তিনি অধিকার আদায়ে আমৃত্যু সোচ্চার ছিলেন।

 

 

০৩— অধিকার আন্দোলনে সক্রিয়তা কী?

 

অধিকার আন্দোলনের সক্রিয়তা হচ্ছে, সততা। একাগ্রতা। ধারাবাহিকতা। এসব গুণের উপস্থিতিই ম্যালকম এক্সকে ন্যাশন অব ইসলাম ছাড়তে বাধ্য করেছিল।

 

 

০৪— অধিকার আন্দোলনে ইসলামী রূপরেখা

 

ইসলামে ওই ব্যক্তিকে সাহসী বলা হয়েছে, যে অত্যাচারী শাসকের সম্মুখে অধিকার আদায়ের ব্যাপারে সোচ্চার হয়। হক্ব কথা উচ্চারণ করে। ইসলামে সীমারেখা নির্দিষ্ট করে দেয়া আছে। কে কতটুকু অতিক্রম করতে পারবে সেক্ষেত্রে ইসলাম সুস্পষ্টবাদী। ইতিহাস সাক্ষী, ইসলামী সালতানাতে শাসকরা কতটা জবাবদিহিতার মাঝে থাকতেন। বরং শাসকের ব্যাপারে বলা হচ্ছে, নেতৃবৃন্দ হচ্ছেন স্বজাতির ‘খাদেম’। সেবক। সেবকের মতোই তাকে সবার অবস্থার খেয়াল রাখা জরুরি।

 

 

ইসলাম অরাজকতাকে ‘না’ বলে। অধিকার আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও ইসলাম কিছুতেই সমর্থন করে না। এক্ষেত্রে মূলনীতি হচ্ছে, আমার সামর্থ্য কতটুকু, এটা বিবেচনায় রাখা। এরপর অধিকার আদায়ে সোচ্চার হওয়া। এটা সাধারণ মূলনীতি। কিন্তু কেউ যদি নিজ দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়ে জালিমের বিরুদ্ধে মুষ্টিবদ্ধ হয়ে অগ্রসর হয় তাহলে সেক্ষেত্রে ইসলাম তাকেও সমর্থন করে। কিন্তু ইসলামের এই নিষেধ এবং সমর্থনের মাঝের রেখাটি হচ্ছে, ব্যক্তি বা দলের আন্দোলন পরবর্তী সংকট মোকাবেলার সামর্থ্য বিবেচনা। বিষয়টি বিবেচনায় রাখা জরুরি।

 

 

০৫— ম্যালকম এক্স; অধিকার আন্দোলনে তাঁর এজেন্ডা, চিন্তাভাবনা, প্রয়োগ, ফলাফল।

 

Gnagstar—Preacher—Revolutionary ধারাবাহিক এই তিন পরিচয়ের মধ্য দিয়ে ম্যালকম এক্সের জীবনেরও রেভ্যুলেশন হয়েছে। তার জীবনের বিপ্লবাত্মক অংশের গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে— আফ্রো-আমেরিকানদের অধিকার আন্দোলন। গ্যাংস্টার পরিচয়ে জেল জীবনে তার পরিচয় হয় ‘ন্যাশন অব ইসলাম’ দলের প্রধানের সাথে। জেল থেকে বের হয়ে এই দলকেই সমর্থন করতেন ম্যালকম। তিনি হয়ে যান একজন প্রিচার-ধর্মের প্রচারক। কিন্তু এই সংগঠন প্রধানের নারী কেলেঙ্কারির কারণে তার ব্যাক্তিত্ব ও মনে আঁচড় লাগে। এসময় খুব চিন্তা ফিকির ও পড়াশোনা করে ম্যালকম সুন্নি মুসলিমে কনভার্ট হয়ে যান। সময়টা ১৯৬৪ সাল। এরপর হজ্জ করেন। এবং আফ্রিকার দেশগুলো ভ্রমণ করে আফ্রিকান ইউনিটি পর্যবেক্ষণ করেন তিনি। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে এসে আমেরিকার কালোদের জন্য Organization of Afro-American Unity প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক প্রস্তাবনা একটি নতুন জাতি গঠনের উৎস হওয়ার দাবি রাখে। প্রথম প্রস্তাবনা—

 

Restoration: “In order to release ourselves from the oppression of our enslavers then, it is absolutely necessary for the Afro-American to restore communication with Africa.”

 

 

অস্তিত্ব পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া— দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে হবে। এবং নিজেদের মূল; আফ্রিকার সাথে সম্পর্ক ও যোগাযোগ নতুন করে তৈরি করতে হবে।

 

 

দ্বিতীয় প্রস্তাবনা—

 

Reorientation: “We can learn much about Africa by reading informative books and by listening to the experiences of those who have traveled there.”

 

 

অস্তিত্ব পুনর্বাসন প্রক্রিয়া—নিজেদের শেকড়ের পরিচয় খুঁজে পাবার জন্য আফ্রিকার তথ্যবহুল বইপত্র পড়া এবং অভিজ্ঞ কারও থেকে সেখানকার সম্পর্কে ভালোমতো জেনে নেওয়া।

 

 

তৃতীয় প্রস্তাবনা—

 

Education: “The Organization of Afro-American Unity will devise original educational methods and procedures which will liberate the minds of our children. We will … encourage qualified Afro-Americans to write and publish the textbooks needed to liberate our minds … educating them [our children] at home.”

 

 

শিক্ষাদিক্ষা— এই সংগঠন সত্যিকারভাবে মৌলিক শিক্ষাক্রম ও পদ্ধতি প্রনয়ণ করবে। যা শিশুদের মস্তিষ্ককে উদার ও উন্মুক্ত রাখবে। লেখালেখি এবং প্রতিষ্ঠানের প্রকাশনার কাজে কিছু নির্বাচিত ব্যাক্তিকে নিযুক্ত করা। এটা আমাদের স্বাধীন ও উন্মুক্ত মানসিকতা তৈরিতে সহায়ক। প্রয়োজনে তাদেরকে বাড়িতে ভিন্নভাবে শিক্ষা দিতে হবে।

 

 

 

চতুর্থ প্রস্তাবনা—

 

Economic Security: “After the Emancipation Proclamation … it was realized that the Afro-American constituted the largest homogeneous ethnic group with a common origin and common group experience in the United States and, if allowed to exercise economic or political freedom, would in a short period of time own this country. We must establish a technician bank. We must do this so that the newly independent nations of Africa can turn to us who are their brothers for the technicians they will need now and in the future.”

 

 

অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া— আফ্রো-আমেরিকানদের স্বতন্ত্র অর্থনীতির ওপর ম্যালকম জোড় দেন। এবং টেকনিশিয়ান ব্যাংক নির্মানের জোড় তাগাদা দেন। যেন সদ্য স্বাধীন হওয়া আফ্রিকান দেশগুলো এই ব্যাংকের দিকে ঝোঁকে। তিনি বলেন, কালোদের কর্ম স্বাধীনতা থাকলে এই রাষ্ট্রের ভার আমরা আফ্রো-আমেরিকানরা নিতাম।

 

 

পঞ্চম প্রস্তাবনা—

 

Self Defense: “In order to enslave a people and keep them subjugated, their right to self defense must be denied. We encourage the Afro-Americans to defend themselves against the wanton attacks of the racist aggressors whose sole aim is to deny us the guarantee of the United Nations Charter of Human Rights and of the Constitution of the United States.”

 

 

আত্মরক্ষা— নিজেদের নিরাপত্তায় নিজেরা প্রস্তুত থাকা। যেকোন বর্ণবাদী আক্রমণে নিজেদের রক্ষা করার কৌশল শেখা।

 

 

ম্যালকম এক্স এর এসব প্রস্তাবনার ভেতরে রাষ্ট্রের বীজ লুকিয়ে আছে। পুরো পৃথিবীর যেখানেই বর্ণবাদের সৃষ্টি হয় সেখানেই দেখা যাবে এসব বিষয়ের চর্চার অনুপস্থিতি সংকটের সবচেয়ে বড় কারণ। ফলাফলের বিবেচনা করলে ম্যালকম এক্স ছিলেন আফ্রো-আমেরিকানদের অধিকার আন্দোলনের একজন পথিকৃৎ। তাই, অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে ম্যালকম তাদের স্পিরিচুয়ালি কাজে দেন। তারা তার রেখে যাওয়া কাজ থেকে উদ্বুদ্ধ হয়। আর তাঁর অধিকার আন্দোলন বৈশ্বিক প্রবণতা পাওয়ায় ব্যাপারটা এখন প্রতিটি হৃদকম্প সম্পন্ন ব্যক্তির অধিকার আদায়ের সাথে সম্পৃক্ত। এফবিআই এর ডাইরেক্টর জে. এডগার হোভার বলেন, ম্যালকমের এই আন্দোলন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি। পরবর্তীতে, সে কারণেই এই সংগঠন ব্যান্ড করে দেয়া হয়।

 

 

ম্যালকম এক্স কে প্রশ্ন করা হয়েছিল— আপনি তো খুব সঙ্গীন মুহূর্তে আছেন। জীবনের ভয় নেই?

 

উত্তরে তিনি বলেন, আমি একজন মৃত ব্যক্তি, আমার মৃত্যু ভয় নেই।

 

 

০৬— লিন্ডা সুরসুর; ইসলামী দৃষ্টিকোন থেকে তার অধিকার আন্দোলন।

 

ব্যক্তিকে পরিমাপ করতে গিয়ে সব সময় খেয়াল রাখতে হবে, তার কৃত কাজ কি তার নাকি অন্য কারও। লিন্ডা সুরসুরের ব্যপারটা ঠিক এমনই। আপাতদৃষ্টিতে তার কাজগুলোকে আমরা যেমন দেখছি ওভাবেই যদি বিচার করি তাহলে বলতে হয়, অনৈসলামিক বিষয়কে ইসলামের পোশাক পরিয়ে প্রমোট করাটা তার বিশ্বাস থেকেই আসছে। অজ্ঞানতা এখানে গ্রহণযোগ্য কি গ্রহণযোগ্য নয় সেটা লিন্ডার জবাবদিহিতার ওপর ছেড়ে দিতে হবে।

 

 

আচ্ছা, লিন্ডা করেছেটা কী— নারী সমকামীতা, পুরুষ সমকামীতা, উভকামীতার মতো অকাট্য হারাম বিষয়গুলোর প্রচারণা চালায় লিনডা। অর্থাৎ এদের অধিকার দাবি করে সে। লিন্ডা একজন ফিলিস্তিনি সংগ্রামের একটিভিস্ট। কালোদের নিয়েও তার সোচ্চার আওয়াজ আছে। ইসলামোফোবিয়ার নিরসন কল্পে তার বক্তব্য আওয়াজ তোলে। কিন্তু লিন্ডার এসব ইসলামী পোশাকের ওপর যখন সমকামীদের পতাকা আড়াআড়ি ভাবে ঝোলানো থাকে তখন তাকে নিয়ে কথা বলতেই হয়। তবে তার চরিত্র নিয়ে নয়, অবশ্যই তার কাজ নিয়ে। আসলে, লিনডা মনেই করে না, এটা অধিকার আন্দোলন নয়। পশ্চিমা অনুকরণে LGBT কে-ও বলা হচ্ছে অধিকার আন্দোলন। হ্যাঁ, হিজড়া সম্প্রদায় নিয়ে কাজ করা জরুরি। তাদের যৌনজীবন নিয়েও আলাপ জরুরি। আর এই জরুরত বিশৃঙ্খলা এড়াতেই। কিন্তু লিন্ডা বিষয়টাকে লিবারেলিজমের দৃষ্টি দিয়ে দেখছে। যেখানে ‘মন চাইলে করতে পারো’র মতো দৃষ্টি ভঙ্গি আছে। এখানে যদি মৌলিক উসূল এটা রাখা হয়, কারও কোন ক্ষতি না করে মন চাইলে যা কিছু করতে পারো, তাহলেই কি সব নিষিদ্ধ বিষয় জায়েজ হয়ে যাবে? না, কখনোই না। অযৌক্তিক। কারণ, ক্ষতির বিষয়টাকে সময়ের সীমানায় কতটুকু স্থান দিবেন। পাঁচদিন। দশদিন। একশো দিন। ক্ষতি হবে না, হচ্ছে না, বলতে পারব না। অবশ্যই নিষিদ্ধ বিষয়ের প্রয়োগে ক্ষতি আছে। তবে সেটা কখনো তাৎক্ষণিক, কখনো দীর্ঘকাল পরে। বিশ্বায়নের যুগে, তাই লিন্ডার এসব চিন্তাগত ব্যাপার থেকে এখনই মুসলিম যুবসমাজকে সতর্ক করতে হবে। কারণ, বুদ্ধিবৃত্তিক দাসত্বের নির্মম সত্য হচ্ছে, গায়েগতরে মুসলিম ট্যাগ নিয়ে ঘুরে বেরালেও মন ও মননে ব্যক্তি কৃচ্ছ দাস ব্যতিত কিছুই নয়।

 

 

০৭— ওদের আন্দোলন, আমরা বাংলাদেশিরা কী পেতে পারি!

 

বাংলাদেশি শব্দের প্রয়োগ নিজেদের জাতীয়তাবাদী বোঝাতে ব্যবহার করা হয়নি। আমরা যে অঞ্চলে বাস করি সেখানের মানুষকে বোঝাতে ব্যবহার করা হচ্ছে।

 

 

চিন্তাগত দিক থেকে ওদের আন্দোলন আমাদের সাহায্য করবে। আগেই দেখেছি, একটা আন্দোলন কীভাবে বৈশ্বিক প্রবণতা লাভ করে। বর্ণবাদের আলাপে তাই বাংলাদেশও সরব হয় মাঝেমধ্যে। কারণ, বাংলাদেশের ফুটবলার জামাল ভূঁইয়া বর্ণবাদের শিকার হয়েছিলেন। তখন দু’চার কলম যারা লিখেছিলেন সেটাও এই বৈশ্বিক প্রভাবের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ, যে কারও সমস্যাকে তার একার ভেবে পুরোপুরি এড়িয়ে যাওয়া অনুচিত। আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী আমাদের সোচ্চার হওয়া জরুরি। এগুলো হচ্ছে শরিয়তে ইসলামিয়্যাহ এর মাকসাদ ও হিকমত—উদ্দেশ্য ও প্রাজ্ঞিক কাজ।

 

 

০৮— দেশ-সমাজ-কাল-রুচি বিবেচনায় বাংলাদেশের আন্দোলনগুলো; এক ঝলক—এক পলক

 

 

শিরোনামটা বেশ বড়ো হয়ে গেল। এক দুইটা মৌলিক কথা থাকুক এখানে।

 

 

০১. আমাদের দেশীয় আন্দোলনগুলো জনতার আন্দোলন হতে পারছে না।

 

 

০২. আমাদের দেশীয় আন্দোলন মৌলিক অধিকার আন্দোলনের রূপরেখা নিতে পারে না। দাবিগুলো হয় সাময়িক বিষয়াদীর ওপর।

 

 

০৩. আমাদের অধিকার আন্দোলন পক্ষ-বিপক্ষ বিবেচনায়। তাই সামগ্রিকতা রক্ষা হয় না।

 

 

০৪. আমাদের অধিকার আন্দোলন এমন একটি বিষয়ে হয় না যেক্ষেত্রে সকলেই এক মত। হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলে, বিভক্ত হয়ে গোষ্ঠীতে গোষ্ঠীতে আন্দোলন পরিচালিত হয়।

 

 

০৫. মৌলিক অধিকার নিয়ে আমাদের আন্দলোনগুলো আমাদের কালচার ও সংস্কৃতি অনুযায়ী হয় না। অনুকরণ নির্ভর আন্দোলন সফলতা অর্জনের মুখ দেখে না। কারণ, আমার ক্ষুধা ভাতে মেটে, আমাকে আমেরিকান চিজ দিলে হবে না। সেজন্য আমাদের পরিশ্রম হয়, সফলতা আসে না।

 

 

০৬. আমরা সাংস্কৃতিক শব্দের ব্যখ্যায় বিভক্ত। অথচ আন্দোলন পরিচালিতই হবে এই শব্দের প্রায়োগিক অবস্থান থেকে। কালচারাল অবস্থান অপরিচ্ছন্ন রেখে আন্দোলন করলে অধিকার আদায়ের পরিবর্তে অধিকার ক্ষুন্নের আন্দোলনে নামা হয় মূলত। তাই, এসব বিষয়ে বিশ্লেষণাত্বক আলাপ আলোচনা জারি রাখার পাশাপাশি সর্বক্ষেত্রে এর প্রায়োগিক দক্ষতা প্রদর্শন জরুরি মনে করছি আমরা।

 

 

উপরিউক্ত বিষয়ে আলী রাযি. এর বক্তব্যকে আমরা মূলনীতি হিশেবে বিবেচনা করতে পারি। তিনি বলেন, “হকিকতকে ব্যক্তির আলোকে বিবেচনা করবে না; বরং হকিকতের আলোকে ব্যক্তিকে নিরুপণ করবে৷”

 

 

বিদায় হজের ভাষণে নবীজি—

 

হে মানুষ সকল! তোমাদের ব্যাপারে তোমাদের নারীদের হক (অধিকার) রয়েছে, ঠিক তাদের ব্যাপারেও তোমাদের হক (অধিকার) রয়েছে।

 

 

তোমরা তাদেরকে আল্লাহর আমানত হিশেবে নিজেদের সাথী বানিয়েছ এবং আল্লাহর কালিমা দিয়ে তাদেরকে তোমাদের জন্য হালাল করে নিয়েছ। কাজেই, নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো এবং তাদের জন্য কল্যাণ কামনা করো।

 

 

রাসুলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমগ্র মানবতাকে আহ্বান করেন। এটাকে আমাদের মূলনীতি হিশেবে গ্রহণ করতে হবে—

 

 

হে জনতা, তোমাদের একের জীবন ও সম্পদ অপরের জন্য নিষিদ্ধ। তোমাদের রবের নিকট পৌঁছে যাওয়া পর্যন্ত এ বিধান মেনে চলবে। তোমাদের এই মাস এই শহর এবং তোমাদের এই দিন যেমন পবিত্র ঠিক তেমনি।

 

 

আল্লাহ তাআলা বলছেন, আমি তোমাদেরকে কেন্দ্রীয় উম্মতে পরিনত করেছি। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় উম্মাহ। আদিল (ন্যায়পরায়ণ)উম্মাহ। যে উম্মাহ আদালতকে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত করে রাখবে।

 

 

 

তথ্য সুত্র-

 

কুরআন

 

হাদিস

 

উইকিপিডিয়া

 

আল জাজিরা

 

দানিয়েল হাকিকাতজু

 

 

 

 

আগের সংবাদসুফি ধারাগুলোর মধ্যে বাড়ছে শিয়া প্রভাব
পরবর্তি সংবাদরেকর্ড মূদ্রাস্ফীতি : ঝুঁকিতে ইসলামি প্রকাশনাগুলো