যেসব জটিলতায় আটকে আছে কওমি স্বীকৃতি, যা বললেন ড. আফম খালিদ

|| তাসনিফ আবীদ ||

দেশ-বিদেশে উচ্চশিক্ষা সহজকরণ, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন খাতে মানসম্পন্ন কর্মক্ষেত্রের সুযোগসহ নানা প্রত্যয়ে কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসের সনদকে সরকারী স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। কওমি ছাত্রদের আশা ছিল, সরকারি-বেসরকারি খাতে কর্মক্ষেত্র বাড়ছে নিজেদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ হবে। দেশ-বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ হলে নিজেদের স্কিল ডেভেলপ করা যাবে। কিন্তু স্বীকৃতি আদায়ের পর কওমি মাদরাসার দায়িত্বশীলরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে এই স্বীকৃতি তেমন কোনো প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না বললেই চলে।

এখন লাখো কওমি তরুণের প্রশ্ন, স্বীকৃতি আদায় হলেও আমাদের সনদের কার্যকারিতা লক্ষ্য করছি না কেন? আমাদের সনদ জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গ্রহণ হচ্ছে না কেন? কোন জটিলতায় আটকে আছি আমরা?

এমন প্রশ্ন নিয়ে মুখোমুখি হয়েছিলাম চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি অধ্যাপক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক আলেম ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন’র। তিনি কওমি সনদের স্বীকৃতির শতভাগ কার্যকারিতা না হওয়ার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন ফাতেহ’র কাছে।

স্বীকৃতি আদায়ের প্রাথমিক দিকের আলোচনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’র অধীনে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার ৬ বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ, বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া গওহরডাঙ্গা বাংলাদেশ, আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশ, আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তালীম বাংলাদেশ, তানযীমুল মাদারিসিদ দ্বীনিয়া বাংলাদেশ ও জাতীয় দ্বীনি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশকে সমন্বয় করে কওমি শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি প্রদান করে সরকার। এই স্বীকৃতিতে কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিস (তাকমিল)-এর সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি)-এর সমমান প্রদান করা হয়। এই স্বীকৃতি আমাদের প্রয়োজন ছিল। দরকার ছিল। এই স্বীকৃতি আমাদের অনেক পথকে সহজ করার মাধ্যম। তবে এর মধ্যে কিছু জটিলতা বা সংকট থেকে যাওয়ায় এর মাধ্যমে আমরা যে সুফল পাওয়ার কথা ছিল সেখানে বাধা তৈরি হচ্ছে।

‘দেখুন, এদেশের সরকারি স্বীকৃতি শিক্ষা ব্যবস্থার কিছু ধাপ বা স্তর রয়েছে। যেমন, জেনারেল শিক্ষাব্যবস্থায় প্রাক প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক (অনার্স), স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স)। এমনিভাবে আলিয়া মাদরাসার শিক্ষাব্যবস্থার স্তর ইবতেদায়ী, দাখিল মাদ্রাসা, আলিম মাদ্রাসা, ফাজিল মাদ্রাসা, কামিল মাদ্রাসা। কিন্তু কওমি মাদরাসা শিক্ষা সনদের যে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে সেটা শুধু মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি)-এর সমমান।’ –উল্লেখ করেন এই শিক্ষাবিদ

তার মতে, এই সনদের পুরোপুরি কার্যকারিতা পেতে দাওরার আগের যে স্তরগুলো রয়েছে যেমন, মাস্টার্সের আগের যে স্তরগুলো রয়েছে বতিদাইয়্যাহকে প্রাক প্রাথমিক, মুতাওয়াসসিতাহকে প্রাথমিক, সানাবিয়াকে মাধ্যমিক, সানাবিয়াতুল উলইয়াকে উচ্চ মাধ্যমিক, ফজিলাতকে স্নাতক (অনার্স) এর মান প্রদান করতে হবে। তাহলে তাকমিলের সনদকে দেওয়া মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি)-এর সমমানটি কার্যকর হবে।

তিনি বলেন, এই সরকার যেহেতু স্বীকৃতি দিয়েছে তাই আল হাইয়াতুল উলইয়া ও ৬ বোর্ডের দায়িত্বশীলদের কর্তব্য হলো যত দ্রুত সম্ভব এর কার্যকারিতা আদায়ের জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কেননা পরবর্তী অন্যকোনো সরকার এলে এই স্বীকৃতির কার্যকারিতা পুরোপুরি আদায়ে জটিলতা তৈরি হতে পারে। তখন কওমি ছাত্ররা আশাহত হবে। সম্ভাবনাগুলো দমে যাবে।

এই শিক্ষাবিদ আলেম বলেন, আমাদের সিলেবাসে তো স্বাভাবিকভাবে বাংলা, ইংরেজী, গণিত, জ্যামিতি, ইতিহাস, বিজ্ঞান, ভূগোল আছেই। সঙ্গে আরো কিছু বিষয় যুক্ত করে আমাদের সিলেবাসকে কিছুটা পরিবর্ধন করে হলেও দাওরার আগের স্তরগুলোর সরকারী স্বীকৃতি নিয়ে নেওয়া উচিৎ।

‘স্বীকৃতি আদায়ের প্রায় অর্ধ যুগ পার হলো। এখনো দাওরার আগের স্তরগুলোর সরকারি মান নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি কেন বলে আপনার মনে হয়? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বেশ কয়েক সিনিয়র দায়িত্বশীলের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা মনে করছেন, ইবতিদাইয়্যাহ, মুতাওয়াসসিতাহ, সানাবিয়া, সানাবিয়াতুল উলইয়াকে যদি আলাদাভাবে সরকারী স্বীকৃতি দেওয়া হয় তাহলে দাওরার আগেই অনেক কওমি ছাত্র ঝরে যাবে। অনেকেই স্কুল-কলেজে চলে যাবে। যেমনটি আলিয়া মাদরাসায় হচ্ছে। এটি আমাদের আকাবির আসলাফের নজরিয়াতের পরপন্থী।’ -যোগ করেন ড. আফম খালিদ হোসেন

তাহলে কি কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি এখন যেমন আছে এমনই থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এর জন্য আগে দায়িত্বশীলদেরকে সিরিয়াসভাবে বসতে হবে। কওমি মাদরাসা সংশ্লিষ্ট্য শিক্ষাবিদ ও গবেষক আলেম যারা আছেন তাদের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। নিজেদের স্বকীয়তাকে অক্ষুণ্ন রেখে কীভাবে এই স্বীকৃতির কার্যকারিতা পুরোপুরিভাবে আদায় করা যায় তা নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা হতে পারে। কিন্তু উদ্যোগ গ্রহণ না করলে তো এই অর্জন অনেকটা কাগজে-কলমেই থেকে যাবে।

আগের সংবাদদেশে প্রথমবারের মতো আইএফএ কনসালটেন্সির উদ্যোগে অ্যাওফি ইভেন্ট অনুষ্ঠিত
পরবর্তি সংবাদনভেম্বরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪৭৫, আহত ৬০৫