মুনশী নাঈম:
সুদানে একসময়ের সমৃদ্ধ কাগজের সংবাদপত্র শিল্প হ্রাস পাচ্ছে। গভীর অর্থনৈতিক সঙ্কট এবং অনলাইন পত্রিকার সহজলভ্যতার কারণে এমনটা ঘটছে। সুদানের সংবাদপত্র বিক্রেতা, সম্পাদক ও ইউনিয়নের কর্মকর্তারা বলছেন, সুদানের প্রিন্ট সংবাদপত্রগুলো বছরের পর বছর রাজনৈতিক সেন্সরশিপ এবং অর্থনৈতিক কষ্টের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নাগরিকরা এখন প্রধানত ইন্টারনেটের মাধ্যমে, কখনও কখনও অনলাইন সংবাদপত্র ও সোশ্যাল মিডিয়া থেকে খবর পায়।
অস্তিত্বগত চ্যালেঞ্জ
গত বছর পুনর্গঠিত সুদানী সাংবাদিক সিন্ডিকেটের সেক্রেটারি-জেনারেল মোহাম্মদ আবদেল আজিজ আর জাজিরাকে বলেছেন, ‘প্রথমত, এটা স্পষ্ট যে, মুদ্রণ সাংবাদিকতা গুরুতর অস্তিত্বের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। পত্রিকার মুদ্রণকপির পরিসংখ্যান দেখলেই তা বুঝা যায়। দ্বিতীয়ত, মুদ্রিত কপির সংখ্যা হ্রাস। যদি আমরা সংবাদপত্রের কথা বলি, তাহলে বিগত বছরগুলোতে মুদ্রিত সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ছুঁয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে এই সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। এখন সবচে বেশি মুদ্রিত পত্রিকার মুদ্রণকপি হবে সর্বোচ্চ ১০ হাজার কপি।’
সুদানে ইতোমধ্যেই শত শত সাংবাদিক সাংবাদিকতার পেশা ত্যাগ করে অন্য পেশার পথে হাঁটছে। কেউ চাকরি হারিয়েছে, কেউ ইচ্ছে করেই পেশা ত্যাগ করেছে। ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে সেখানের সংবাদিকদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি।
মোহাম্মদ আবদেল আজিজের মতে, ছাপাখানা এবং এতে কর্মরত সাংবাদিকদের সমস্যা সমাধান না করে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে না। এরমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো, প্রেসের প্রতি সরকারের বিনিয়োগ দৃষ্টি দিতে হবে। এটাকে কেবল নাগরিক জনমতকে আলোড়িত করার পরিষেবা হিসাবে নিলে হবে না।’
সুদান গত চার বছরে একটি জনপ্রিয় অভ্যুত্থান এবং দুটি অভ্যুত্থান সহ বছরের পর বছর ধরে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার সাক্ষী হয়ে আসছে। জ্বালানি ও মৌলিক পণ্যের খরচ বেড়ে যাওয়ায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সুদানি মুদ্রার পতন ঘটেছে। বর্তমানে সুদানে একটি কাগজের সংবাদপত্রের দাম প্রায় ৩০০ সুদানিজ পাউন্ড (০.৫৩ ডলার)।
কাগজের প্রেস
কাগজের সংবাদপত্র হিসাবে শুরু হলেও রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণে অনলাইনভিত্তিক হয়ে গেছে আল-হাদাসা পত্রিকা। এর প্রধান সম্পাদক ইউসুফ হামাদ আল জাজিরাকে বলেন, ‘আসলে, আমি মুদ্রণ সাংবাদিকতার পক্ষপাতী। আমি আশা করি, কাগজের পত্রিকা কখনও হারিয়ে যাবে না। কারণ, আমাদের সমাজে কাগজের পত্রিকার সরবরাহ করা বিশ্বাসযোগ্যতা প্রয়োজন। আমরা আল হাদাসা পত্রিকা কাগজেই শুরু করেছিলাম। কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে কোভিড ১৯-এর সময় অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়ে। ফলে এখন এটি অনলাইনেই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।’
হামাদ বলেন, রাজধানীর বাইরে সংবাদপত্র বিতরণ দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে।
যে কয়েকজন নাগরিক এখনও কাগজের সংবাদপত্র কেনেন, তাদের মধ্যে একজন আবদেলকাদের হেম্মত। তার মতে, সংবাদপত্র অন্য যে কোনো মাধ্যমের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এগুলো বাস্তবে সংরক্ষণ করা যায়।
তিনি আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমি আমার দিনের কাজের শুরু করতাম সংবাদপত্রের শিরোনাম পড়ে। এখন কাগজের ছাপা শেষ হয়েছে। সেখানে ইলেকট্রনিক প্রেস, হোয়াটসঅ্যাপ এবং অন্যান্য মিডিয়া রয়েছে। সেখানেই খবর খুঁজে পাওয়া যায়। তবে কাগজের পত্রিকা অন্যসব পত্রিকা থেকে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি ইতিহাস সংরক্ষণ করে। অনলাইনে যে কোনও উপাদান মুছে ফেলা যেতে পারে। কিন্তু কাগজ থেকে মুছে ফেলা যায় না। তাই ইতিহাস এবং বিজ্ঞানের প্রধান মাধ্যম হলো কাগজ।’
মুহাম্মদ নামে একজন সংবাদপত্র বিক্রেতা বলেন, ‘ইলেকট্রনিক প্রেস এবং পঙ্গু অর্থনৈতিক অবস্থা সহ বেশ কিছু কারণে সংবাদপত্র আগের বছরের তুলনায় অনেক বেশি শতাংশ কমে গেছে। ইলেকট্রনিক প্রেসই একমাত্র কারণ নয়। এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা এখনও কাগজের সংবাদপত্র পড়েন অভ্যাসবশত। অনেকে কাগজের পত্রিকা কিনেন বিশেষ কোনো সার্কুলার দেখার জন্য। তবে খবর জানার দরকার হলে তারা অনলাইন মিডিয়াতেই ঢুঁ মারে। শিরোনাম পছন্দ হলে তারা পুরো খবর পড়ে। খবরের কাগজের প্রতি মানুষের এখন কোনো অনুরাগ নেই।’ৎ
সূত্র: আল জাজিরা