‘সূর্যাস্তের আগে’ : বালাকোট আন্দোলনের শেষ দিনগুলো

খাজা হাসান মুঈনুদ্দীন

বালাকোট পরিচিতি

 

পাকিস্থানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের খাইবার-পাতুনওয়ার হাযারা প্রদেশে অবস্থিত মেনসেরা জেলা থেকে ৩৮ কি: মি: পূর্ব-উত্তরে অবস্থিত বালাকোট শহর। শহরটি আয়তনে তেমন বড় নয়। তবে কোলাহল মুক্ত ও ছিমছাম। দু’দিকে আকাশছোঁয়া কালুখান আর মেট্টিকোট পর্বত। মাঝ দিয়ে কুলকুল শব্দে বয়ে গেছে কুনহার নদী। উত্তরদিকের ‘মূসা কা মুছাল্লা’ পর্বতের বরফঢাকা চূড়া উপত্যকার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। নদীর দু’পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠেছে শহরটি। প্রায় লক্ষাধিক মানুষের বসবাস এই উপত্যকায়। কাগান ভ্যালির লুলুসার ঝিলের বরফগলা পানি থেকে উৎপত্তি ল কুনহার নদী অবশেষে আযাদ কাশ্মীরের ঝিলাম নদীতে গিয়ে মিশেছে। বড় বড় পাথরে ভরা নদীটি অসাধারণ সুন্দর। ভয়ংকর স্রোত আর বরফশীতল পানি। পাথরের ফাঁক গলিয়ে সগর্জনে যে তীব্রতায় পানির স্রোত ধেয়ে আসে তাতে এটি নদী নয় বরং শক্তিশালী পাহাড়ী ঝরণা ভেবে ভ্রম হয়। চারিদিকে টিলাঘেরা দূর্গম এই ঐতিহাসিক শহরটি আকর্ষণীয় পর্যটনস্থল হিসাবে বেশ প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। শহরটি কাগান উপত্যকার প্রবেশমুখ। লুলুসার লেক থেকে উৎসারিত কুনহার নদী এই শহরের পাশ দিয়ে বয়ে পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরে ঝিলাম নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। জনৈক বালাপীরের নামানুসারে এই অঞ্চলের নামকরণ করা হয় বলে জানা যায়। প্রাচীন বালাকোটে যেখানে ঐতিহাসিক যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল তা ছিল পার্শ্ববর্তী মেটিকোট টিলা ও ঝরণা এলাকায়। উল্লেখ্য, ২০০৫ সালের ৮ই অক্টোবর এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে শহরটি প্রায় ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছিল। নিহত হয়েছিল প্রায় ২০ হাজার মানুষ। পরবর্তীতে সৌদি আরব, আরব আমিরাত ও পাকিস্তান সরকারের যৌথ সহযোগিতায় শহরটি আবার নতুন করে গড়ে উঠেছে।

পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী এই ভূমিকম্পে লক্ষাধিক মানুষ নিহত হয়েছিল কাশ্মীর ও খাইবার-পাখতুনখোয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে। বর্তমানে গোটা বালাকোট শহর স্থানান্তর করে নিউ বালাকোট সিটি নির্মাণ প্রক্রিয়া চলছে ২৫ কি.মি. দূরবর্তী বিকরাল এলাকায়। কেননা বর্তমান বালাকোট শহরটি ভূমিকম্পের দু’টি মারাত্মক ফল্ট লাইনের উপর সরাসরি পড়েছে। তাই যেকোন সময় বার ভূমিকম্পের সম্ভাবনা প্রবল।

যুদ্ধের পটভূমি:

পাক-ভারতে প্রত্যাগমন করে ১৮২৩ খ্রীষ্টাব্দের প্রথমভাগে সাইয়েদ সাহেব আত্মনিয়োগ করলেন শিখদের বিরুদ্ধে অভিযানে। মুজাহিদ ও অর্থসংগ্রহ করতে তিনি ব্যতি ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। তিনি দেশের প্রত্যেক ধর্মনেতার নিকট পত্র পাঠালেন যেন তারা ফরজ হিসেবে জিহাদের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে ও জিহাদের জন্য সর্বতোভাবে সাহায্য করে। এভাবে ভারতের প্রত্যেক অংশে জিহাদের প্রস্তুতি ও প্রচারণা শেষ করে সাইয়েদ আহমদ শহীদ ১৮২৬ খ্রীষ্টাব্দে রায়বেরেলী ত্যাগ করেন। তারপর জীবনের বাকী ছয় বৎসর ধরে চলল আল্লাহর সত্য মহিমা প্রচারের ও পাঞ্জাবে নির্যাতিত মুসলিমদের উদ্ধারের জন্য বিরামহীন প্রত্যক্ষ সংগ্রাম।

গ্যনী কাবুল ও পেশোয়ার পার হয়ে বাহিনী নওশেরায় হাজির হলে পর শিখদের প্রকাশ্যে আহ্বান জানানো হলো ইসলাম গ্রহণ করতে, অথবা বশ্যতা স্বীকার করতে অথবা যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে শীঘ্রই এক নৈশযুদ্ধে মাত্র নয়শত মুজাহিদবাহিনী এক বৃহৎ শিখ বাহিনীকে এমন অনায়াসে পরাস্ত করল যে, সারা সীমান্ত প্রদেশ তাদের প্রশংসায় মুখর হয়ে উঠল। অতঃপর বহু স্থানীয় সরদার বিশেষ করে ইউসুফজায়ীরা সাইয়েদ সাহেবের সঙ্গে যোগ দিল।

কিছুদিন পর শের সিংহ ও একজন ফরাসী জেনারেলের অধীনে প্রায় তিরিশ হাজার শিখ সৈন্য পেশোয়ারের মোহাম্মদ খাঁ ও ভ্রাতাদের নিকট কর দাবী করল। খুবী খাঁ মনপুরী আক্রমণ করতে শিখবাহিনীর সাহায্য চাইলেন, এবং তিন হাজার শিখ তাঁর সাহায্যার্থে অগ্রসর হল। কিন্তু মুজাহিদবাহিনী মনপুর গ্রসর হলে শিখরা পঞ্চতরে সরে পড়ল, এবং সেখান থেকেও খণ্ডযুদ্ধে পরাজিত হয়ে পলায়ন করল।

পেশোয়ারবাসীরা তাঁকে নওশেরায় ঘাঁটি করতে ও শিখদের বিরুদ্ধে সামগ্রিকভাবে অভিযান চালাতে আহ্বান জানাল। এই সময় প্রায় একলক্ষ মুজাহিদ সৈয়দ সাহেবের ঝাণ্ডার তলে জমায়েত হয়। কিন্তু শেখ সেনাপতি বুধসিংহের প্রলোভন পেশোয়ারের সরদারগণকে বশীভূত করে ফেলল। এমন কি তারা যুদ্ধের পূর্বে সাইয়েদ সাহেবকে গোপনে বিষ পান করিয়ে ফেলে। যা হোক, সাইয়েদ সাহেব তীব্র বমি করে আল্লাহর রহমতে রক্ষা পেলেন, এবং একরকম অচৈতন্য অবস্থাতেই হস্তী পৃষ্ঠে যুদ্ধক্ষেত্রে গমন করেন। কিন্তু সম্মুখ সমরেও পেশোয়ারের সরদারগণ শিখদের সঙ্গে যোগ দেয়, এবং এভাবে মনোবল হারিয়ে মুজাহিদরা শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করে। তখন তাদেরকে তিনটি দুশমনের মুকাবেলা করতে হয়— শিখ, পেশোয়ারের বিশ্বাসঘাতক ‘সর্দারগণ ও হুন্দের দুর্গ-মালিক খুবী খাঁ।

এই সময়ের মধ্যে শিখদের সঙ্গে যুদ্ধ-বিগ্রহ লেগেই থাকতো। তাতে বাংলা, বিহার ও মধ্যপ্রদেশের হালকা গঠনের মুজাহিদরা বেশ কৃতিত্বের সঙ্গেই শক্তিমত্তা প্রকাশ করত। খিও বিশ্বাসঘাতক পাঠান গোত্রগুলি সমানভাবে তাদের হাতে মার খেত। পেশোয়ারের দুররানী সরদারেরা এরপর প্রকাশ্যভাবেই শিখদের সঙ্গে যোগ দিল, কারণ শিখদের টাকাকড়ির লোভ তারা দমন করতে পারল না। তারা বারে বারে মুজাহিদদের বিরুদ্ধে হামলা চালাত, কিন্তু প্রত্যেকবারই ভারা প্রতিহত হতো। খুবী খাঁ প্রকাশ্যে স্থানীয় লোকদের মুজাহিদদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলতে লাগলেন ।

সাইয়েদ সাহেব প্রথমে স্থির করলেন যে, খুবী খাঁকে শায়েস্তা করতে হবে। তিনি শাহ ইসমাইলকে মাত্র দেড়শত মুজাহিদ নিয়ে হুদ কিল্লাহ অধিকার করতে পাঠালেন। শাহ ইসমাইল রাত্রির অন্ধকারে অন্তরালে দুর্গদ্বারে উপস্থিত হলেন এবং প্রভাতে দ্বার খোলা হলেই নাটকীয়ভাবে প্রবেশ করে তিনি কিল্লাটা দখল করে ফেললেন। খুবী খাঁ নিহত হলেন। শাহ ইসমাইল দৃঢ়হাতে সব গোলযোগ দমন করলেন। অতঃপর সৈয়দ সাহেব কাশ্মীরে প্রধান ঘাঁটি স্থাপন করতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

এদিকে তৎকালীন পেশোয়ারের সুলতান মুহাম্মাদ খাতেনের ষড়যন্ত্রে ইসলামী হুকুমতের ক্বাযী, তহসিলদারসহ বহু কর্মচারীর গণহত্যার ঘটনায় সাইয়েদ আহমাদ অত্যন্ত মর্মাহত হন এবং তিনি দ্বিতীয় দফা হিজরত করার মানসে কাশ্মীর অভিমুখে যাত্রা করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সাইয়েদ আহমাদ শহীদ রহ. যে পাঞ্জতার নামক স্থানে অবস্থানরত মুজাহিদ গোত্র ত্যাগ করেন এবং হাযারা জেলার উচ্চভূমির দিকে গমন করেন, তার উদ্দেশ্য ছিল কাশ্মীরের দিকে অগ্রসর হয়ে সেখানে কেন্দ্র স্থাপন করে উপমহাদেশকে বিধর্মী ও বিদেশীদের জবর দখল হতে মুক্ত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা। কাশ্মীরের দিকে অগ্রসর হবার প্রস্ত্ততি গ্রহণে সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান ছিল এই বালাকোট, সেকারণ এখানেই সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করা হয়। অবশ্য প্রথম দিকে প্রধান সামরিক ঘাঁটি রাওয়ালপিন্ডিতে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল।

সাইয়েদ আহমাদ শহীদ তাঁর দীর্ঘ চার বছরের পাঞ্জতার ঘাঁটি ছেড়ে কাশ্মীরের উদ্দেশ্যে যাত্রার সময়টি ছিল ডিসেম্বরের বরফঢাকা শীতকাল। সাইয়েদ আহমাদ কাশ্মীরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়ে যে এলাকাটি ত্যাগ করেছিলেন শিখরা শীঘ্রই সে এলাকাটি দখল করে তথাকার জনগণের ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন করল।

এ সময় কাশ্মীর গমনের পথে বিভিন্ন এলাকার খান ও সামন্তগণ যেমন- মুজাফ্ফরাবাদের শাসনকর্তা যবরদস্ত খান, খুড়া অঞ্চলের সামন্ত নাজা খান, দেরাবা অঞ্চলের সামন্ত মানসুর খান ও গাঢ়ী অঞ্চলের সামন্ত হাবীবুল্লাহ খান প্রমুখ সাইয়েদ আহমাদ শহীদের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করলেন। সাইয়েদ আহমাদ এই আবেদনে সাড়া দিয়ে যবরদস্ত খানের সাহায্যার্থে মৌলবী খায়রুদ্দীন শেরকুটীর নেতৃত্বে একদল মুজাহিদ মুযাফ্ফরবাদে প্রেরণ করলেন। এদিকে শিখ সেনাপতি রনজিৎ সিংহ-এর পুত্র শেরসিংহ বিরাট বাহিনী নিয়ে নখলী নামক স্থানে পৌঁছে যায়। ফলে সাইয়েদ আহমাদ উক্ত বাহিনী কোন দিকে অগ্রসর হয় তার গতিপথ নির্ণয় করে পরবর্তী করণীয় স্থির করাকে সমীচীন মনে করলেন। এ সময় তিনি মূল গন্তব্য কাশ্মীরের দিকে অগ্রসর হওয়ার নিমিত্তে শের সিং-এর বাহিনীর বিরুদ্ধে সংঘর্ষে লিপ্ত না হয়ে এগিয়ে যেতে পারতেন, কিন্তু তা তিনি করেননি। কারণ হাযারাবেলাতে অবস্থানকারী সাইয়েদ আহমাদ-এর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে সম্পৃক্ত খানদের শিখ সেনারা অত্যাচারের শিকার বানাত। তাই তিনি তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত হাযারাতেই থেকে গেলেন। পরে যখন তিনি শুনতে পেলেন যে, শের সিংহ ভূগাড়মুঙ্গ গিরিপথ আক্রমণ করার পরিকল্পনা করছে, তখন তিনি নিজে রাজদারওয়ান নামক স্থান হতে সারচুল নামক স্থানে পৌঁছান এবং শাহ ইসমাঈল শহীদকে বালাকোট পাঠিয়ে দিলেন। তারপর যখন তিনি জানলেন যে, শের সিং বালাকোট আক্রমণ করতে পারে তখন তিনি ভুগাড়মুঙ্গের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে নিজেই বালাকোটে চলে গেলেন। আর সেই সময় শের সিং-এর বাহিনী কুনহার নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত সোহাল নাজাফ খান গ্রামের সম্মুখে ময়দান নামক স্থানে শিবির স্থাপন করে।

শাহ ইসমাইল রাহ. বালাকোটে অবস্থানরত অবস্থায় কাশ্মীরের একটি প্রতিনিধি দল মাওলানার সাথে দেখা করে এ মর্মে আবেদন পেশ করে যে, বালাকোটে মুসলিম বাহিনীর আগমনে আমরা অত্যন্ত খুশী হয়েছি। এখান থেকে কাশ্মীর মাত্র তিন মনজিলের পথ। আমরা দুআ করছি যে, আল্লাহ তাআলা মুসলিম বাহিনীকে সত্বর আমাদের দেশে নিয়ে আসুন, যাতে আমরাও কাফিরদের জোর-জুলুমের হাত থেকে নাজাত পাই এবং আমীরুল মুমেনীনের নেতৃত্বাধীন ইসলামী হুকুমতের ছত্রচ্ছায়ায় স্বাধীনভাবে ইসলামী বিধি-বিধান ও কুরআন সুন্নার অনুসরণ করে চলতে পারি। এ প্রেক্ষিতে শাহ ইসমাইল কাশ্মীর অভিযানের অভিপ্রায়ের কথা সুচনে অবাস্থানরত সাইয়েদ সাহেবকে জানান। সাইয়েদ সাহেব সুচনের সরদার হাসান আলী খান ও হাবীবুল্লাহ খানের সঙ্গে পরামর্শ করলে তাঁরা বললেন যে, আপনি কাশ্মীর যেতে ইচ্ছা করলে অনায়াসে যেতে পারবেন। কিন্তু যদি এখানকার শিখ বাহিনীকে পরাস্ত করে না যান, তাহলে আপনাদের চলে যাওয়ার পর শিখরা এ অঞ্চলের জনগণের উপর এই অভিযোগ এনে সীমাহীন নির্যাতন চালাবে যে, তোরাই পথ দেখিয়ে মুজাহিদ বাহিনীকে এখানে নিয়ে এসেছিস এবং কাশ্মীরে পৌঁছার পথ তৈরি করে দিয়েছিস। আর যুদ্ধ করে শিখদের পরাস্ত করে কাশ্মীরের দিকে অভিযান করলে আমরাও আপনাদের সঙ্গে যেতে পারব।

বালাকোটের পাহাড়ী এলাকাতে শিখদের মারধর, জুলুম-নির্যাতনে তছনছ হবার কারণে অত্যন্ত অস্থির ও অনিশ্চিত অবস্থা বিরাজ করছিল। শিখেরা এই এলাকার আমীর-ওমারা ও উপজাতীয় সর্দারদের পরস্পরের সঙ্গে লড়াই বাধিয়ে দিত। কতক সর্দারকে তাদের নিজস্ব এলাকা ও রাজ্য থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। অতঃপর এই সব লোক সাইয়েদ সাহেবের সাথে এসে মিলিত হয়। কাশ্মীরকে হস্তগত ও তার উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য এবং তাকে জিহাদী দাওয়াতের কেন্দ্রভূমি বানাবার জন্য এইসব শক্তির মধ্যে ঐক্য ও সংহতির প্রয়োজন ছিল। বালাকোট যা কাগান উপত্যকার নিকটেই অবস্থিত এবং তিনদিক পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত ছিল, এতদুদ্দেশ্যে চলাচলের অতি উত্তম কেন্দ্র হতে পারত। প্রকৃতি তাকে একটি সুদৃঢ় দূর্গের রূপদান করেছিল। অতএব এ জায়গাটিকেই মুজাহিদ বাহিনীর কেন্দ্র বানানোর পক্ষে সিদ্ধান্ত গৃহীত হল।

বালাকোটের পথে:

সে সময় পাখলী ও কাগান উপত্যকার অভিজাত ও এলাকাবাসীদের শাসনকর্তৃত্ব- কতকাংশ শিখদের হামলার ফলে আর কতকাংশ পারস্পরিক তিক্ত সম্পর্কের কারণে নড়নয়ে হয়ে গিয়েছিল। এরা সবাই ছিলো হযরত সাইয়েদ আহমদ শহীদ রহ. এর সাহায্য ও সহযোগিতা প্রার্থী। অধিকন্তু তাদের রাজ্যগুলো কাশ্মীর যাবার পথেই পড়ে। এগুলোকে সৈয়দ সাহেব নিজের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাচ্ছিলেন। দ্বিতীয় দফার এই হিজরতও সেই দিকেই হতে চলেছিল। তাদের সবাইকে সাহায্য করা, তাদের সহযোগিতা ও সামরিক শক্তির সহায়তা লাভ করা এবং কাশ্মীরের দিকে অগ্রসর হবার প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান ছিল বালাকোট। এটি কাগান উপত্যকার দক্ষিণ মুখে অবস্থিত। এখানে পৌঁছে উপত্যকাকে পাহাড়ী প্রাচীর বন্ধ করে দিয়েছে। কুনহার নদীর উৎসমুখ ব্যতীত দ্বিতীয় কোন রাস্তাও বালাকোটে প্রবেশের নেই । পাহাড়ের দু’ধারী প্রাচীর সমান্তরাল রেখায় এগিয়ে গেছে। মাঝখানে উপত্যকা ভূমি। এর প্রশস্ততা আধা মাইলের বেশি নয়। এর মাঝখান দিয়েই কুনহার নদী প্রবাহিত। বালাকোটের পূর্বদিকে কালুখানের সুউচ্চ চূড়া এবং পশ্চিমে মাটিকোট পর্বতশিখর অবস্থিত।

হিজরতের এ দ্বিতীয় সফরটিও ছিল অত্যন্ত কষ্টকর, দুঃসাধ্য ও বিপদজনক। পাহাড়ের শিখর দেশ এবং উপত্যকা ভূমি ছিলো বরফ দ্বারা আচ্ছাদিত। রাস্তা ছিলো আঁকা-বাঁকা ও উঁচু-নিচু। রাস্তায় রসদপত্র ও মাল সামানের বাহনেরও কোন ব্যবস্থা ছিল না। এ সফরও ছিল তাঁর সুউচ্চ মনোবল, দৃঢ় চিত্ততা, সঙ্গী-সাথীদের সহনশীলতা, ঈমানী কুওয়াত, ধৈর্য-স্থৈর্য ও স্বীয় লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রতি সীমাহীন প্রীতির একটি উজ্জ্বল নিদর্শন। তিনি পাঞ্জেতার থেকে বিভিন্ন স্থান হয়ে সচুন নামক স্থানে পৌঁছেন। সেখান থেকে বালাকোট অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। সচুন থেকে ১২৪৬ হিজরীর যিলকদ মাসের ৫ তারিখে মুতাবিক ১৮৩১ খৃস্টাব্দের ১৭ই এপ্রিল রওয়ানা হয়ে বালাকোট প্রবেশ করেন।

শের সিং গড় থেকে প্রথমে মুজাফফরাবাদের দিকে রওয়ানা হয়। মুজাফফরাবাদ থেকে পুনরায় গড়ে প্রত্যাবর্তন করে বালাকোটে যাওয়ার রাস্তা তালাশ করে। এ জন্য সে বাহিনীও প্রস্তুত করতে থাকে। ইতিমধ্যে দূত মারফত শাহ ইসমাইল জানতে পারলেন যে, শের সিং ভুগাড়মাঙ্গ উপত্যকা অভিমুখে যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে। তিনি সাইয়েদ সাহেবকে পত্র মারফত এ সংবাদ জানিয়ে বলেন যে, যেহেতু আপনি সেদিকে আছেন সুতরাং সে সেদিকে যেতে পারে। তবে যদি যুদ্ধের আভাস পান তাহলে দূত পাঠিয়ে দ্রুত আমাদেরকে সংবাদ দিবেন, যাতে আমরা আমাদের বাহিনী নিয়ে অগ্রসর হয়ে যুদ্ধে শরীক হতে পারি। কিন্তু শের সিং এই পরিকল্পনা ত্যাগ করে গড়ে ফিরে আসে। শাহ ইসমাইল অন্যান্যদের সাথে পরামর্শ করে রাতের বেলায় শিখদের গড়ে একটি অতর্কিত হামলার পরিকল্পনা তৈরি করেন। ইতিমধ্যে সুচনে চলে আসার জন্য সাইয়েদ সাহেব তার কাছে জরুরি তলবনামা পাঠান। অগত্যা আক্রমণের পরিকল্পনা ত্যাগ করে তিনি সুচনে গিয়ে উপস্থিত হন।

১২৪৬ হিজরীর জিলকদ মাসে সময় বালাকোটের দায়িত্বশীল হাবীবুল্লাহ খানের পক্ষ থেকে এ মর্মে পত্র আসে যে, শের সিং তার বাহিনী নিয়ে বালাকোট থেকে আড়াই ক্রোশ দূরে কুনহার নদীর দক্ষিণ পাড়ে এসে তাঁবু ফেলেছে বলে জানা গেছে। সুতরাং আপনি আপনার বাহিনী নিয়ে অতিসত্ত্বর বালাকোটে চলে আসুন । এ চিঠি পেয়ে সাইয়্যিদ সাহেব বালাকোটের পথে রওয়ানা হওয়ার সংকল্প গ্রহণ করেন। যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণের পর ১২৪৬ হিজরীর ৫ই জিলহজ্জ মুজাহিদদের সঙ্গে নিয়ে তিনি বালাকোটের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন। পাহাড়ী পথ মাড়িয়ে আল্লাহর রাহের এই মুসাফিররা এগিয়ে চললেন।

মেঘে ঢাকা অন্ধকার রাতে পূর্বপ্রস্তুতি:

বালাকোটে পৌঁছেই বালাকোটের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে তিনি জোরদার করেন এবং যে যে পথে শিখদের আগমনের সম্ভাবনা ছিল সব দিকেই পাহারা মোতায়েন করেন। মোল্লা লাল মোহাম্মদকে মাটিকোটের সেই পাহাড়ী সরু পথটির পাহারায় নিয়োগ করা হয়েছিল। পরে তাকে পরিবর্তন করে মির্জা আহমদ বেগকে সেখানে মুতায়েন করা হয়। শের সিংহের বাহিনী কুনহার নদীর পূর্ব-দক্ষিণ দিকে বালাকোট থেকে দুই-আড়াই ক্রোশ দূরে অবস্থান নিয়েছিল। সাইয়্যিদ সাহেব কুনহার নদীর উপর দিয়ে দক্ষিণ পূর্বদিকের এলাকায় গমনের জন্য গাছ দিয়ে একটি পুল তৈরি করিয়ে ছিলেন। শিখরাও পশ্চিমে আসার জন্য একটি পুল নির্মাণ করেছিল। কাঠের পুল নির্মাণের দুই একদিন পরই গুপ্তচর এসে সংবাদ দিল যে, শিখ বাহিনী নদী পার হয়ে এদিকে না এসে অন্যদিকে যেন চলে যাচ্ছে। কিন্তু তার পর দিন যোহরের পরই মাটিকোট পাহাড়ের উপর গুলির আওয়াজ শোনা গেল। গোয়ালাদের লোকজন চিৎকার করে বলতে লাগল যে, শিখ বাহিনী এসে গেছে।

সাইয়েদ সাহেব সে দিকে কিছু সৈন্য আহমদ বেগের সহযোগিতার জন্য পাঠালেন এবং বলে দিলেন যে, সেই পাহাড়ে তাদেরকে বাধা না দিয়ে আহমদ বেগ যেন তাঁর বাহিনী নিয়ে নিচে নেমে আসে। দিনের মাত্র দেড় ঘণ্টা বাকী, এ সময় সুলতান নযফ খানের কাছে থেকে একটি চিঠি আসে। চিঠিতে সে সাইয়েদ সাহেবকে যে পরামর্শ দেয়, শিখদের তোপখানা আক্রমণ করা হোক। আবার কেউ কেউ পরামর্শ দেয় যে, বালাকোট থেকে সরে গিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে এসে যান। এর ফলে আক্রমণরত বাহিনী নিজেদের উদ্দেশ্য সাধনে কামিয়াব হতে পারবে না। এসব শুনে তিনি বললেন, এখন কাফিরদের উপর অতর্কিত আক্রমণ করা আমার ইচ্ছা নয়। আমি এই বালাকোটের পাদদেশেই তাদের সাথে লড়াই করব। মনে রেখো, এই ময়দানই লাহোর আর এখানেই বেহেশত এবং বেহেশতকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এমনই উত্তম জিনিস বানিয়েছেন যে, সমগ্র দুনিয়ার রাজত্বও তার সামনে কোন গুরুত্বই রাখে না।

যুদ্ধের এক পর্যায়ে এমন একটি সময় অবশ্যই আসে যে, চূড়ান্ত যুদ্ধ ও দৃঢ়তা প্রদর্শনের প্রয়োজন হয়। সাইয়েদ সাহেবও এক্ষেত্রে পুরোপুরি মুকাবিলার সিদ্ধান্তই নেন। বাহ্যত বালাকোট পরিত্যাগ করে চলে যাবার পরামর্শ বোধগম্য ও যুক্তিপূর্ণ বলেই মনে হয়। কিন্তু অধিকতর গভীর দৃষ্টি এবং একজন তেজস্বী বীর বাহাদুরের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে গেলে এ পরামর্শ গ্রহণযোগ্য এবং এ কৌশল কার্যকরী ছিল না। এর পরিণতি শুধু এই হতো যে, আপাতত ও সাময়িকভাবে সৈন্য বাহিনীর জীবন বেঁচে যেত, কিন্তু শিখেরা বালাকোটের গোটা বস্তি ধূলোয় মিশিয়ে দিতো এবং নিরীহ ও নিষ্পাপ অধিবাসীদেরকে তলোয়ারের তলায় নিক্ষেপ করত। তাই তিনি সকল স্থান থেকে পাহারারত মুজাহিদদেরকে তলব করে তাঁর কাছে নিয়ে আসলেন। তখন সকল গাযীদের সম্বোধন করে বললেন, ভাইয়েরা আমার! আজকের রাতটা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে পরিপূর্ণ ইখলাসের সথে তওবা ও ইস্তিগফার করো এবং নিজেদের গুনাহর জন্য ক্ষমা চাও। এটাই বিদায়ের লগ্ন। কাল ভোরে কাফিরদের সঙ্গে মুকাবিলা। আল্লাহই জানেন, আমাদের ভেতর কে জীবিত থাকবে আর কার ভাগ্যে শাহাদাত জুটবে।

যখন এ কথা দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার হয়ে গেল যে, শিখ সৈন্যবাহিনী মাটিকোট থেকে অবতরণ করেই বালাকোটের উপর হামলায় উদ্যত হবে তখন একটি কার্যকর ও ফয়সালামূলক যুদ্ধের জন্য যাবতীয় ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন করা হয়। কসবার অবস্থানস্থল এবং যুদ্ধের ময়দানের প্রাকৃতিক অবস্থা মুজাহিদ বাহিনীর অনুকূলে ছিল। এ থেকে পুরোপুরি ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করা হয়। হামলাকারীরা মাটিকোট থেকে অবতরণ করতেই এবং কসবার উপর হামলা করবার পূর্বেই (যা উচ্চে অবস্থিত ছিল) এই নীচু ময়দানের মুখোমুখি পড়তে হতো যা ছিল টিলা এবং কসবার মাঝখানে অবস্থিত। নীচু ময়দানে ছিল ধানের ক্ষেত। সাইয়েদ আহমদ শহীদ রহ.-র নির্দেশে সেখানকার ঝরণার পানি ছেড়ে দেওয়া হয় যেন সমতল ময়দান দলদলে ভূমিতে রূপান্তরিত হয়ে যায়, যা পার হওয়া এবং সেখানে যুদ্ধ ব্যবস্থাপনা কায়েম রাখা হামলাকারীদের জন্য কঠিন ও দুঃসাধ্য হয়। এর বিপরীতে মুজাহিদ বাহিনী কসবার উচ্চতার উপর পজিশন নিয়েছিলে যেন দুশমনের উপর হামলা করা সহজসাধ্য হয় এবং হামলাকারীরা যেন অতি সহজেই তাদের গুলীর আওতায় এসে যায় ।

রাজকুমার শেরসিংহ (যে বীর পিতা রঞ্জিত সিংহ কর্তৃক মুজাহিদ বাহিনীর সাথে শেষ শক্তি পরীক্ষার অভিযানে আদিষ্ট হয়েছিলো যখন জানতে পায় যে, সৈয়দ সাহেব তাঁর সাথীদের নিয়ে বালাকোটে অবস্থান করছেন, তখনই সে শিখদের একটি বিরাট বাহিনীসহ কুনহার নদীর পূর্ব তীরে বালাকোট থেকে দু আড়াই ক্রোশ দূরে ছাউনী ফেলে এবং ধীরে ধীরে অতি সন্তর্পণে বালাকোটের কাছে গিয়ে পৌঁছে।

রাজকুমার শের সিং বালাকোটের এরূপ প্রাকৃতিক অবস্থা দেখে একে অবরোধ করার পরিকল্পনা সম্পর্কে হতাশ ও নিরাশ পড়ে এবং প্রত্যাবর্তনের ইচ্ছে করতে থাকে। ঠিক এমনি মুহূর্তে স্থানীয় অধিবাসীদের কেউ পল্লীতে পৌছুতে পথ প্রদর্শকের ভূমিকা দেয়।

সেই রাত এত ভয়াবহ ছিল যা বর্ণনার বাইরে। আকাশ ছিলো মেঘে ঢাকা আর বৃষ্টি হচ্ছিলো গুড়ি গুড়ি। সন্ধ্যা থেকে ভোরবেলা পর্যন্ত জীবজন্তু ও পশু-পাখি শোরগোলে মাতিয়ে তোলে। সেই বস্তির লোকেরা বলছিল যে, আমরা একের পর এক ভয়াবহ অন্ধকার রাতও দেখেছি। কিন্তু এমন উদাস ও ভয়াবহ রাত কখনও দৃষ্টিগোচর হয়নি ।

শাহাদতের প্রত্যুষে:

৬ই মে ১৮৩১ মোতাবেক ২৪ শে যিলকদের (১২৪৬ হিজরী) সুবহে সাদিক। ফজরের আযান হল। সকলেই ওজু করে অস্ত্র সজ্জিত অবস্থায় হাজির হল। সাইয়েদ আহমদ শহীদ রহ. ইমামতি করলেন। এরপর তিনি অনুমতি দিলেন, যে যার জায়গায় গিয়ে সতর্ক ও হুশিয়ার থাকবে। তিনি নিজেও নিজের ডেরায় এসে ওযীফা পাঠে মশগুল হয়ে গেলেন। সূর্য উঠার পর তিনি সালাতুল ইশরাক দু’রাকাত আদায় করলেন। কিছুক্ষণ বিলম্ব করার পর উর্দূ করে চোখে সুরমা এবং দাঁড়িতে চিরুণী লাগান। এরপর পোশাক পরিধান করে অস্ত্রসজ্জিত হয়ে মুসজিদ অভিমুখে রওয়ানা হন। সে সময় শিখবাহিনী পাহাড় থেকে মাটিকোটের দিকে অবতরণ করছিল। লোকজন এর প্রতি ইঙ্গিত করে সাইয়েদ আহমদ শহীদ রহ.-এর নিকট আরজ জানায় যে, শিখ বাহিনী পাহাড় থেকে অবতরণ করছে। তিনি বললেন, তাদের নামতে দাও। অতঃপর তিনি মসজিদে প্রবেশ করেন এবং এর সম্মুখভাগের ছাদের নীচে বসেন। এক-এক, দুই-দুই করে বহু সাথীই সেখানে জমায়েত হয়। এটা ছিলো সেই মুবারক মুহূর্তে যখন জান্নাত সুসজ্জিত হয়ে চোখের সামনে ধরা দেয়। এমন মনে হচ্ছিল যে, তাদের চোখের সামনে থেকে পর্দা উঠে গেছে আর বালাকোটের পাহাড়ের পেছনে থেকে বেহেশতের খোশবু তাদের শরীর মনের প্রতিটি তন্ত্রীকে সুবাসিত করে তুলছে।

ইলাহী বখশ রামপুরী বলেন যে, আমাদের জামাআতে পাতিয়ালার সৈয়দ চেরাগ আলী নামে এক ব্যক্তি ছিল। সে তখন ক্ষীর পাকাচ্ছিল। তার কাঁধে ছিলো কুরাবীন (চওড়া মুখওয়ালা ছোট বন্দুক)। শিখবাহিনী মাটিকোট থেকে নীচে অবতরণ করছিল। আর সে তার ক্ষীর চামচ দিয়ে জোরে জোরে নেড়ে চলছিল, আবার শিখদের দিকে তাকাচ্ছিল। এ সময় তার অবস্থাই ছিল অন্য রকম। একবার আসমানের দিকে তাকিয়ে বলল, ঐ দেখো! একজন হুর কাপড় পরে চলে আসছে। কিছুক্ষণ দেরী করার পর বলতে থাকে, দেখো! একজন পোশাক পরে আসছে, এই বলেই সে চামচ ডেকচীর উপর জোরে আঘাত করে বলে ওঠে এখন তোমাদেরই হাতের খানা খাব। এই বলে সে শিখবাহিনীর অভিমুখে ছুটে যায়। পেছন থেকে অনেকেই বলে উঠল, মীর সাহেব। থামুন, আমরাও যাব। কিন্তু সে কোনদিকেই বিন্দুমাত্রও ভ্রুক্ষেপ করলো না এবং যেয়েই শিখদের জমায়েতের ভেতর ঢুকে পড়ে ও অত্যন্ত বীরত্বের স্বাক্ষর রেখে শহীদ হয়ে যায়।

এদিকে সাইয়েদ আহমদ শহীদ রহ. মসজিদের সম্মুখভাগের তলা থেকে উঠে দাঁড়ান এবং সবাইকে বলেন যে, তোমরা এখানেই থাকো। আমি একলা গিয়ে দুআ করছি। আমার সাথে কেউ যেন না আসে। অতঃপর সমস্ত লোক-লশকর হাতিয়ার বাঁধা অবস্থায় যে যেখানে ছিলো দাঁড়িয়ে থাকে। তিনি মসজিদের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলেন এবং দরোজা-জানালা বন্ধ করে দুআতে মশগুল হয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর মসজিদের প্রাঙ্গণ থেকে বেরিয়ে তিনি বালাকোটের পাদদেশের দিকে অবতরণ করতে থাকেন আর সকল লোকই ছিল তাঁর পেছনে। নীচে বালুর দিকে একটি মসজিদ ছিল, গাযীদের একটি বাঁকও এর ভেতরে ছিলো। তিনি এতে তশরীফ নেন ।

যখন তিনি নীচের দিকে অবস্থিত মসজিদের দিকে আসেন সেখানে তখন শিখদের গুলী বৃষ্টিধারার ন্যায় বর্ধিত হচ্ছিল। আধঘণ্টা খানেক মসজিদে অবস্থান করে তিনি সাইয়েদ আবদুল হাসানকে বললেন যে, নিশান নিয়ে আগে যাও। অতঃপর উচ্চস্বরে তকবীর ধ্বনি উচ্চারণ করতে করতে তিনি আক্রমণোদ্যত হন। সে সময় আরবাব বাহরাম খান সাইয়েদ আহমদ শহীদ রহ.-এর সামনে ঢালস্বরূপ আগে আগে চলছিলেন। শিখ বাহিনীর গোলাগুলী বৃষ্টিধারার ন্যার বর্ধিত হচ্ছিল। তিনি অগ্রসর হয়ে তকবীর ধ্বনি করেন এবং দুশমনের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। বাঘ যেমনি শিকারের উপর ক্ষিপ্র ও তীব্রগতিতে গিয়ে পড়ে, ঠিক তেমনি ক্ষিপ্র ও তীব্রগতিতে তিনি অগ্রসর হচ্ছিলেন। পঁচিশ-তিরিশ কদম দূরে একটি বড় পাথরখণ্ড মাটি খুড়ে বেরিয়েছিল, তিনি তারই আড়ালে গিয়ে থামেন। তিনি ও তাঁর সাথী গাথীবৃন্দ বন্দুক-পিস্তলের গুলী বৃষ্টিধারার ন্যায় ছুঁড়তে থাকেন। এরূপ নিক্ষেপের ফলে অসংখ্য দুশমন প্রাণ হারায় এবং ছত্র-ভঙ্গ হয়ে পাহাড়ের দিকে পিছু হটতে থাকে। মুজাহিদ বাহিনী পাহাড়ের পাদদেশে গিয়ে উপস্থিত হয়। দুশমনের ঠ্যাং ধরে ধরে টেনে নীচে নামাতে থাকে এবং তলোয়ারের আঘাতে নির্মূল করতে থাকে ।

হাফিয ওয়াজীহুদ্দীন সাহেব বলেন যে, আমি বন্দুক চালনা করতে করতে একটি ঝরণার ধারে গিয়ে পৌঁছি। দেখতে পাই যে, কতিপয় লোকের সঙ্গে সৈয়দ সাহেব কিবলামুখী বসে বন্দুক চালাচ্ছেন। সে সময় তিনি আমার বরাবর নিজের বুকের ডান ছাতির উপর বন্দুক চেপে ফায়ার করেন। আমি দেখতে পেলাম, ডান হাতের কনিষ্ঠ আঙুলে কিংবা তার পাশের অনামিকায় তাজা খুন। আন্দাজ অনুমানে জানতে পেলাম সম্ভবত সৈয়দ সাহেবের কাঁধে গুলী লেগেছে। বন্দুক ছাতির উপর রাখতে গিয়ে তারই খুন তাঁর আঙুলে লেগে গেছে । ঠিক সেই মুহূর্তে তিনি বললেন যে, ভাইয়েরা। ঐ দুষ্কৃতিকারীদের তাক করে গুলী মারো।

সে সময় আসমান ছিলো পরিষ্কার। মেঘ যেমন ছিল না, তেমনি ছিল না ধূলো-বালি কিংবা রৌদ্র। কিন্তু বারুদের ধোয়ার কারণে অন্ধকার এরূপভাবে ছেয়ে যায় যে, কাছের মানুষ চিনতেও কষ্ট হচ্ছিল। শিখদের কার্তুজের কাগজ এমনিভাবে উড়ছিলো মনে হচ্ছিলো যেমন – পঙ্গপাল উড়ছে। সময়টা অত্যন্ত ভয়াবহ ও উদাস প্রকৃতির মালুম হচ্ছিল। সকল মুজাহিদ ছোট বন্দুক ও সাধারণ বন্দুক গলায় লটকিয়ে তলোয়ার হাতে নেয় এবং সমস্বরে ‘আল্লাহু আকবার’ ‘আল্লাহু-আকবার’ বলে আক্রমণোদ্যত হয়। সে সময় যুদ্ধের অবস্থা ও প্রকৃতি এমনি ছিল যে, শিখবাহিনী পেছপা হয়ে পাহাড়ের উপর আরোহণ করছিল আর মুজাহিদ বাহিনী পাহাড়ের পাদমূলে গিয়ে পৌঁছে শিখদের ঠ্যাং ধরে ধরে টানছিল এবং তালোয়ারের আঘাত সাবাড় করছিল। উভয় পক্ষ থেকে পাথরও বর্ধিত হচ্ছিল। লোকজন সেখানে ফিরে দেখতে পায় যে, সাইয়েদ আহমদ শহীদ রহ. দৃষ্টি বহির্ভূত। শাহ ইসমাঈল সাহেবকে লোকেরা বন্দুক গলায় ঝুলানো অবস্থায় দেখেছিল। তাঁর হাতে ছিল তলোয়ার, কপাল ছিল রক্তাক্ত আর তিনি সে রক্ত হাত দিয়ে মুছে ফেলছিলেন। সে সময় কেউ কারো সন্ধান রাখার মতো অবস্থা ছিল না। মুজাহিদ বাহিনীকে এই যুদ্ধে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়। এরই ভেতর শাহ ইসমাঈল শাহাদাত লাভ করেন। বীরত্ব ও সাহসিকতা, শাহাদত লাভের প্রতি প্রবল আগ্রহ ও দুনিয়ার প্রতি চরম ঘৃণা ও বিতৃষ্ণা এবং ইমামের প্রতি মহব্বত ও আনুগত্যের এমনিই সব আশ্চর্যজনক ঘটনা এ যুদ্ধে দৃষ্টিগোচর হয়, যা ইসলামের প্রাথমিক শতাব্দীগুলোর স্মৃতিকেই জীবন্ত করে তোলে এবং সেই সব পুরনো দিনগুলো আর একবার ফিরে আসে। তিনি তপ্ত খুনে লালিত হয়েছিলেন এবং সেভাবেই সাধ্য-সাধনা ও জিহাদের এই দীর্ঘ ও অব্যাহত পবিত্র জীবনের সমাপ্তি হয়। এর ভেতর সম্ভবত একদিনের তরেও অবসর কিংবা আরাম, এক রাতও অলস মুহূর্তে কিংবা সুখ নিদ্রায় তাঁর বায়িত হয়নি।

ইত্যবসরে সাইয়েদ আহমদ শহীদ রহ. লোকজনের দৃষ্টির আড়ালে হারিয়ে যান। মুজাহিদ বাহিনীর মনে এরূপ প্রতীতি জন্মাতে থাকে যে, সম্ভবত তিনি শহীদ হয়ে গেছেন। সাইয়েদ আহমাদ শহীদ মেটিকোটের ঝরনার মধ্যে শাহাদত বরণ করেন। মুজাহিদগণের একটি বড় দল সাইয়েদ আহমাদ শহীদের শাহাদত বরণের বিষয়টি উপলব্ধি করতে না পারায় তাঁর সন্ধানে ঘুরে ঘুরে শাহাদত বরণ করলেন। এছাড়া মুজাহিদদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ করতে করতে শাহাদত বরণ করেন। এই যুদ্ধ স্থায়ী হয়েছিল কমপক্ষে দুই ঘণ্টা। এই যুদ্ধে তিনশতেরও বেশি মুজাহিদ যাঁদের নিজ নিজ এলাকার সার-নির্যাস ও মগজ-সদৃশ বলা যেতে পারে শাহাদত লাভে ধন্য হন। তাঁদের একই জয়গায় শহীদী দাফনগাহে চিরবিশ্রাম লাভ ঘটে।

 

বালাকোট বিপর্যয়ের কারণ:

সাইয়েদ আহমদ শহীদের নেতৃত্বে ভারতে ইসলামি আযাদীর প্রবর্তনের যে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন এবং যে আন্দোলন সাফল্যের দুয়ার পর্যন্ত এগিয়েও কেন ব্যর্থতার সম্মুখীন হল? তার কারণ অবশ্যই অনুসন্ধান করে দেখা উচিত। কারণ অতীত ইতিহাসের চুলচেরা বিচার ও পরীক্ষা নিরীক্ষায় ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা সঠিকভাবে নির্ণীত হতে পারে। চিন্তাশীল মনীষীগণ উপরোক্ত আন্দোলনের ব্যর্থতার যে কারণসমূহ বর্ণনা করেছেন তা সংক্ষেপে আলোচনা করা যাক।

১. আল্লাহর পথে জিহাদ পরিচালনার জন্যে যে কর্মীবাহিনীর প্রয়োজন, তাদের প্রত্যেকের চরিত্র হতে হবে নির্ভেজাল ইসলামী আদর্শে গড়া। তাদেরকে হতে হবে আল্লাহর পথে উৎসর্গীকৃত। সাইয়েদ সাহেব বাইরে থেকে যে মুজাহিদ বাহিনী সাথে নিয়ে গিয়েছিলেন, নিঃসন্দেহে তাঁরা উক্ত চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। এবং তাঁরাও অনুরূপ চরিত্রে চরিত্রবান ছিলেন, যাঁরা জেহাদ চলাকালে বাংলা, বিহার, মধ্য প্রদেশ প্রভৃতি অঞ্চল থেকে একমাত্র খোদার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আত্মীয়স্বজন, আপন ঘরদোর, ক্ষেত-খামার ছেড়ে সাইয়েদ সাহেবের মুজাহিদ বাহিনীতে গিয়ে যোগদান করেছিলেন। কিন্তু এঁদের সংখ্যা এক থেকে দু’ হাজারের মধ্যেই ছিল সব সময়ে সীমিত। জিহাদের জন্যে সাইয়েদ সাহেবের জ্বালাময়ী ভাষণ শুনে এবং প্রথমদিকে শিখদের উপরে অপ্রত্যাশিত বিজয়লাভ দেখে দলে দলে পাঠানরা সাইয়েদ সাহেবের দলে যোগদান করে। কিন্তু তাদের সত্যিকার কোন ইসলামি চরিত্র ছিল না। তাদের মধ্যে ইসলামি প্রেরণা ও জোশ ছিল প্রচুর। কিন্তু তাদের অধিকাংশই ছিল দরিদ্র, অজ্ঞ, অর্থলোভী এবং বহুদিনের পুঞ্জীভূত কুসংস্কারের বেড়াজালে আবদ্ধ। যারা সরদার অথবা গোত্রীয় শাসক ছিল, তারাও অত্যন্ত স্বার্থপর ও সুবিধাবাদী ছিল। কোন কোন সময়ে মুজাহিদ বাহিনীর সংখ্যা তিন লক্ষ পর্যন্ত পৌঁছেছে। এরা প্রায় সবই বিভিন্ন পাঠান গোত্রের লোক। এরা অর্থলোভে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, চরম মুহূর্তে প্রতিপক্ষ শিখ সৈন্যদের সংগে যোগদান করেছে। অথবা মুজাহিদ বাহিনীর সাথে যুদ্ধকালীন শুধু গনিমতের মাল লুণ্ঠনে লিপ্ত হয়ে বাহিনীর মধ্যে শৃংখলা ও নিয়মতান্ত্রিকতা ভংগ করেছে। অন্ধ ব্যক্তিস্বার্থ ও অর্থলোভের প্রবল প্লাবনে তাদের জলবুদবুদসম ইসলামী প্রেরণা ও জোশ ভেসে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।

২. স্থানীয় মুসলিমদের বিশ্বাসঘাতকতা। যেসব সামন্ত ও খানরা শিখবাহিনীর হাত থেকে তাদেরকে রক্ষার জন্য সাইয়েদ আহমাদকে আহ্বান করেছিল তারা পরবর্তীতে মুসলমানদের সাহায্য না করে গোপনে শিখদের সাথে হাত মেলায়। শিখবাহিনী যখন মেটিকোটে আরোহণের চেষ্টা করছিল তখন সেখানে পাহারায় থাকা মুজাহিদ বাহিনীতে অনুপ্রবেশকারী কিছু স্থানীয় মুসলিম তাদেরকে গোপন পথ বাতলে দেয়। এই সাহায্য না পেলে শিখবাহিনী মেটিকোটে প্রবেশ করতে পারত না। সাইয়েদ আহমাদের সাথে চূড়ান্ত বিশ্বাসঘাতকতা করে হাযারার এক উপজাতীয় প্রধান শিখদেরকে বালাকোটের সাথে সংযুক্ত পাহাড়ের উপরিভাগে ওঠার গোপন পথের সন্ধান দেয়।

৩. বিশ্বাসঘাতক ও চরিত্রহীন পাঠানদের প্রতি পূর্ণমাত্রায় আস্থা স্থাপন করাও ঠিক হয়নি। যে সুলতান মুহাম্মদ খাঁ এবং তার ভ্রাতৃবৃন্দ সাইয়েদ সাহেবের চরম বিরোধিতা করত, সেই সুলতান মুহাম্মদের উপরে পেশাওরের শাসনভার অর্পণ করাও ঠিক হয়নি। সুলতান মুহাম্মদই শেষ পর্যন্ত আন্দোলনের উপর চরম আঘাত করে এবং একই রাতে এক সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সাইয়েদ সাহেবের কয়েকশ’ বাছা বাছা মুজাহিদের প্রাণনাশ করে। যার ফলে সাইয়েদ সাহেবকে পেশাত্তর থেকে পশ্চাদপসরণ করতে হয়।

৪. স্থানীয় পাঠানদের আল্লাহর পথে জীবন দানের চেয়ে জীবন বাঁচিয়ে পার্থিব স্বার্থলাভই উদ্দেশ্য ছিল। তাই যুদ্ধকালে তারা সত্যিকার মুজাহিদগণকে পুরোভাগে থাকতে বাধ্য করতো এবং নিজেরা যথাসম্ভব নিশ্চেষ্ট থাকতো এবং লুণ্ঠনের সুযোগ সন্ধান করতো।

৫. স্বয়ং সাইয়েদ সাহেব ও শাহ ইসমাইল দুর্ধর্ষ বীরযোদ্ধা ও রণকৌশলী থাকা সত্ত্বেও গোটা মুজাহিদ বাহিনীকে তৎকালীন যুদ্ধ বিদ্যায় তেমন প্রশিক্ষণ ছিল না। আধুনিক রণকৌশল সম্পর্কেও ছিল না সচেতনতা।

পরিশেষে:

সাময়িকভাবে এ আন্দোলন ব্যর্থ হলেও এর প্রতিক্রিয়া ছিল সুদূর প্রসারী। সাইয়েদ আহমদ শহীদ যে খুনরাঙা পথে চলার দুর্বার প্রেরণা দিয়ে গেলেন ভারতীয় মুসলমানদেরকে; বাংগালী, বিহারী, পাঞ্জাবী, সিন্ধি, পাঠান নির্বিশেষে ভারতীয় মুসলমানগণ সে খুনরাঙা পথে অবিরাম চলেছে প্রায় শতাব্দীকাল পর্যন্ত। জেল-জুলুম, ফাঁসি, দ্বীপান্তর, স্থাবর, অস্থাবর সম্পদের বাজেয়াপ্তকরণ, অমানুষিক ও পৈশাচিক দৈহিক নির্যাতন ক্ষণকালের জন্যেও তাদেরকে এ পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি।

মুজাহিদদের এই আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। তাদের কুরবানী স্বাধীনতার চেতনাকে করেছে বেগবান। যুগে যুগে যুগিয়েছে স্বাধীনতার চেতনা। বালাকোটের রণাঙ্গণে বেঁচে যাওয়া মুজাহিদরা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে স্বাধীনতার আন্দোলনকে করেছে সক্রিয় ও গতিশীল। বালাকোটের আত্মত্যাগই আমাদেরকে পরবর্তী সময়ে আন্দোলন ও সংগ্রামের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।

 

উৎসগ্রন্থ:

১. ঈমান যখন জাগলো , আবুল হাসান আলী নাদভী

২. ওলামায়ে হিন্দ কা শানদার মাযী, মুহাম্মাদ মিঞা

৩. দেওবন্দ আন্দোলন ইতিহাস ঐতিহ্য অবদান, মাওলানা আবুল ফাতাহ মুহাঃ ইয়াহইয়া

৫. ইসলামী বিশ্বকোষ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ

৬. দি ইন্ডিয়ান মুসলমানস, ডাব্লিউ. ডাব্লিউ. হান্টার

৭. বাংলার মুসলমানদের ইতিহাস, আব্বাস আলী খান

৮. ওয়াহাবী আন্দোলন, আবদুল মওদুদ

৯. চেতনার বালাকোট, শেখ জেবুল আমিন দুলাল

আগের সংবাদ‘পরিবার পরিকল্পনার বিষবৃক্ষ’ : রাষ্ট্র যেভাবে বন্ধ্যাত্বকরণে উৎসাহিত করছে
পরবর্তি সংবাদরোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করতে পারছে না মুসলিম প্রতিষ্ঠানগুলো