মুনশী নাইম:
আগামী ১৭ ডিসেম্বর জাতীয় ওলামা মাশায়েখ সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছে হেফাজতে ইসলাম। এতে সভাপতিত্ব করবেন হেফাজত আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সমাবেশের অনুমতি নিয়ে কোনো ধরণের শঙ্কা করছেন না হেফাজত নেতৃবৃন্দ। তারা বলছেন, সমাবেশের সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। সম্মেলন সফলে সোমবার (১২ ডিসেম্বর) খিলগাঁও জামিয়া ইসলামিয়া মাখজানুল মাদরাসায় বাস্তবায়ন কমিটির সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেছেন হেফাজত মহাসচিব আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান।
হেফাজতের নেতা-কর্মীদের নামে দায়েরকৃত সব মামলা প্রত্যাহার, কারাবন্দী হেফাজত নেতা-কর্মীদের দ্রুত মুক্তি, জাতীয় শিক্ষানীতিতে ধর্মীয় শিক্ষা সঙ্কোচনের প্রতিবাদ, পাবলিক পরীক্ষায় ধর্ম বিষয়ে ১০০ নাম্বারের পরীক্ষার ব্যবস্থা করা এবং জাতীয় শিক্ষা কমিশনে হক্কানী আলেম প্রতিনিধি রাখার দাবীতে এ সম্মেলন করা হচ্ছে।
‘সমাবেশ কারও ইশারায় নয়’
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ময়দান এখন উত্তপ্ত কড়াই। বিরোধীদলীয় বড় বড় সমাবেশে আরোপ করা হচ্ছে কঠোরতা। ঠিক এই সময় হেফজতের সমাবেশ কারও ইশারায় হওয়ার আশঙ্কা থাকতে পারে। তবে এ আশঙ্কা অস্বীকার করেছেন হেফাজত নেতৃবৃন্দ।
এ প্রসঙ্গে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী ফাতেহকে বলেন, ‘কারো ইশারায় হবে কিভাবে। আমাদের দাবিগুলো সবার। এ সমাবেশ নিয়ে সরকার বা অন্য কারও সঙ্গে আমাদের কোনো কথা হয়নি। বাইরে অনেক অভিযোগ ছড়ায়। আর আমাদের সমাবেশের তারিখ নির্দিষ্ট হয়েছিল বিএনপির কর্মসূচি ঘোষণার অগে।’
একই কথা বলেছেন দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদরীস। ফাতেহকে তিনি বলেন, ‘এ অভিযোগের ভিত্তি নেই।’
অভিযোগের ভিত্তি না থাকলে ঠিক এ সময়েই কেন জাতীয় উলামা-মাশায়েখ সস্মেলন করা হচ্ছে। যে সময়ে বিভিন্ন অভিযোগ উঠতে পারে। এ সময়েটি নির্ধারণ করার বিশেষ কোনো কারণ আছে কিনা? হেফাজত নেতৃবৃন্দের বক্তব্য হলো, ‘এ সময়টা কওমি মাদরাসার জন্য উপযুক্ত সময়। দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার পর মাত্র মাদরাসা খুলেছে। পড়ালেখার চাপ কম। আলেমরা খুব সহজেই সম্মেলনে আসতে পারবেন। তাই এ সময়টা নির্বাচন করা হয়েছে।’
সমাবেশের ভেন্যু নিজেরাই ঠিক করেছে বলে জানিয়েছে হেফাজত নেতৃবৃন্দ। সূত্র জানিয়েছে, প্রথমে সমাবেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে করার ইচ্ছে ছিল নেতৃবৃন্দের। কিন্তু নির্ধারিত তারিখে সেখানে ভেন্যু খালি না পাওয়ায় গুলিস্থানস্থ কাজী বশির মিলনায়তনকে নির্ধারণ করা হয়।
সমাবেশ নিয়ে শঙ্কা নেই
হেফাজত এ সমাবেশের অনুমতি চেয়েছে ডিএমপি কমিশনারের কাছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও হা বা না জানানো হয়নি। সমাবেশের একদিন আগে জানা যাবে অনুমতি মিলবে কিনা। হেফাজতের প্রত্যাশা হলো, অনুমতি মিলবে।
এ প্রসঙ্গে মাওলানা মীর ইদরীস ফাতহকে বলেন, ‘অনুমতি পাব আশা করছি। সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। অনুমতি নিয়ে শঙ্কা করছি না।’ এখন বিভিন্ন সমাবেশে যেমন শর্ত দেয়া হয়, হেফাজতের সমাবেশ নিয়ে তেমন কোনো শর্ত প্রত্যাশা করছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রশাসন তো শর্ত দিবেই।’ মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী ফাতেহকে বলেন, ‘আমরা অনুমতি পাব। অনুমতি না পাওয়ার শঙ্কা করছি না। কারণ, আমরা তো সমাবেশ খোলা ময়দানে করছি না। একটা হলে করছি। তবু একান্তই যদি অনুমতি না পাই, পরেরটা পরে দেখা যাবে।’
উদ্দেশ্য জনমত যাচাই
এ প্রসঙ্গে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী ফাতেহকে বলেন, ‘আসলে একটা দাবি সরকারের কাছে জানাতে হলে জনমতও দেখাতে হয়। সেই জনমত তৈরী করার জন্যই সমাবেশ করা। সমাবেশে আমাদের দাবিগুলো আমরা তুলে ধরব। তবে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কারাবন্দী আলেমদের মুক্তির জন্য আমরা সরকারের সঙ্গে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শিডিউল পেলে আমরা বসব।’
সরকারের সঙ্গে হেফাজতের সম্পর্কটা এখন কেমন? আগের মতোই বৈরী নাকি স্বাভাবিক হয়েছে? প্রশ্নের উত্তরে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘সবার সঙ্গে যেমন আছে, আমাদের সঙ্গেও তেমনই আছে। আগের মতো বৈরী নাই। স্বাভাবিক হয়েছে। ফলে আমরা ভাবছি, দাবিগুলো নিয়ে এখন সরকারের কাছে যাওয়া যায়।’