ইবারত পড়তে পারে না অনেক শিক্ষার্থী, পেছনের কারণ কী?

|| তাসনিফ আবীদ ||

কওমি মাদরাসার ছাত্রদের ইলম অর্জনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম আরবি ভাষা। কুরআন-হাদিসসহ জ্ঞানার্জনের প্রধান কিতাবগুলো আরবি হওয়ায় শিক্ষাক্রমের শুরু থেকেই তাদেরকে আরবি ভাষার ব্যাকরণসহ নানা বিষয়ে আত্মস্থ করানো হয়, যেন আরবি বুঝতে এবং পড়তে কোনো সমস্যা না হয়। তবে আরবি ভাষায় বাংলা বা ইংরেজির মতো কোনো ‘স্বরচিহ্ন’ না থাকায় এর ইবারত পড়তে হয় খুব সচেতনতার সঙ্গে। ব্যাকরণের প্রয়োগ করতে হয় সজাগ দৃষ্টি রেখে। বর্তমানে কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা এই বিষয়টা কতটা সতর্কতার সঙ্গে করতে পারছে? সম্প্রতি ফাতেহের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে কওমি মাদরাসার মাত্র ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী শুদ্ধভাবে ইবারত পড়তে ও বুঝতে সক্ষম। কওমি মাদরাসার অনেক শিক্ষার্থীরাই নানা কারণে আরবি কিতাবের ইবারত পড়তে পারে না এবং তার পুরোপুরি মর্ম বুঝতে সক্ষম হয় না।

লম্বা একটা সময় আরবি ভাষার পরিবেশে থাকার পরও তাদের এই দুর্বলতাটা কেন থেকে যায়? এ বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম দেশের দুই শিক্ষাবিদ আলেমের কাছে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলায় অবস্থিত জামিয়া রাহমানিয়া আজিজিয়া ঢাকার প্রধান মুফতি ও গবেষক আলেম মুফতি হিফজুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, ইবারত পড়ার দুর্বলতা মূলত নাহু-সরফের দুর্বলতা। যে ছাত্র শক্তভাবে মিজান-মুনশাইব এবং নাহবেমির, হেমায়াতুন্নাহু আত্মস্থ করবে। তার এই দুর্বলতা থাকার কথা না। ইবারত পড়া থেকে তাকে কোনোকিছুই আটকাতে পারবে না।

কিন্তু এসব কিতাব পড়ে আসার পরও ছাত্রদের বড় একটা অংশ ইবারত পড়তে পারে না। এর কারণ কী? জানতে চাইলে তিনি তথ্য দেন, ‘অনেক শিক্ষকরাই কিতাবগুলো পড়ায়, কিন্তু যেভাবে পড়ানো দরকার, সেভাবে পড়ায় না। এসব বুনিয়াদি কিতাব পড়াতে হয় চৌকস উস্তাদগণ। তাদের হৃদয়ে রয়েছে ছাত্র গঠণ করা তীব্র আকাঙ্ক্ষা। এই দুই/তিনটা বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বছরগুলোতে প্রতিটি সবক ছাত্ররা যেন বুঝে সেভাবে পড়াতে হয়। প্রতিদিন পড়া ধরতে হয়। পড়াগুলো ছাত্ররা ঠিকভাবে বুঝেছে কী না তা খতিয়ে দেখতে হয়। প্রয়োজনে সাপ্তাহিক এবং মাসিক পরীক্ষা নিতে হয়। এসব বিষয় মাথায় রেখে কোনো শিক্ষক যদি পড়ান, আর তার ছাত্র যদি ২০ জন থাকে তাহলে ২০ জনই নাহু-সরফে সবল হয়ে গড়ে উঠবে।

ইবারত পড়তে না পারার কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে একই মত প্রকাশ করেন রাজধানীর জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম মাদানিয়া যাত্রাবাড়ী বড় মাদরাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস ও তাফসীর বিভাগের মুশরিফ মাওলানা হেমায়েত উদ্দীন। তিনি বলেন, আমি সবসময় বলে থাকি, ছাত্রদের ইবারতে দুর্বলতা থাকার বড় কারণ তিনটি কিতাব ভালোভাবে না পড়া। মিজান, ইলমুস সরফ এবং নাহবেমির কিতাব যদি কেউ বুঝে বুঝে ভালো পড়ে তাকে তাহলে সে দুই ক্লাস গ্যাপ দিয়ে উপরের জামাতে ভর্তি হলেও অত্যন্ত ইবারত পড়ায় সমস্যা হবে না।

তার মতে, কিতাবি ইলম অর্জনের জন্য ইবারত বুঝা এবং পড়তে পারার বিষয়টি যার পর নাই গুরুত্বপূর্ণ। কারো ইবারত শুদ্ধ না হলে সে অর্থ বুঝবে না, সঠিক মর্ম বুঝবে না এবং ভালো আলেমও হতে পারবে না। তাই যারা ক্লাস ডিঙিয়ে উপরে উঠে গেছে কিন্তু ইবারত পড়তে পারে না তাদের জন্য উচিৎ হবে প্রতিদিন নিজেদের মতো করে কিছু সময় বের করে উল্লিখিত তিনটি কিতাব ভালোভাবে আত্মস্থ করা। প্রয়োজনে প্রাজ্ঞ উস্তাদের সহায়তা নিয়ে পড়তে হবে।

ছাত্রদের ইবারতের দুর্বলতা থাকার পেছনের কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, অনেক মাদরাসাতে বুনিয়াদি এসব কিতাব গড়ে পড়িয়ে যায় অন্যান্য কিতাবের মতো। অনেক জায়গায় তো সবকও আদায় করে না। ইজরাও করায় না। এসব কিতাবের ইবারত ছাত্ররা মুখস্ত করুক আর না করুক কিতাবের বিষয়-বস্তু শতভাগ বুঝে ছাত্ররা এগুতে হবে। অন্যান্য সাধারণ কিতাবের মতো মিজান, ইলমুস সরফ আর নাহবেমিরকে মনে করলে হবে না।

দাওরা বা মেশকাত পড়ে এমন অনেক ছাত্রকে দেখা যায় ইবারত পড়তে পারে না এবং বিষয়টি নিয়ে খুব আফসোস করে। কীভাবে ইবারতের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারবে সে বিষয়ে পথ খোঁজে। এসব ছাত্রদের জন্য আপনার কোনো পরামর্শ আছে কী না জানতে চাইলে শিক্ষাবিদ আলেম মুফতি হিফজুর রহমান বলেন, এসব ছাত্ররা নিয়মতান্ত্রিকভাবে দাওরা শেষ করবে। এরপর এখন ভালো ভালো প্রচুর কোর্স চালু হয়েছে নাহু-সরফ ও ইবারত শুদ্ধ করার জন্য। এক বছর লাগুক আর দুই বছর লাগুক ওইসব কোর্সে সময় দিয়ে নিজেদের ইবারত ঠিক করে নিতে হবে। তারা যেহেতু বুঝমান এবং নিজেদের ভেতর প্রবল একটা ইচ্ছেও আছে তাই তাদের বেশি সময় লাগার কথা না। তারা যদি সঠিকভাবে পরিশ্রম করতে পারে তাহলে অল্প ব্যবধানেই হাদিসের কিতাবসহ সব কিতাবের ইবারত পড়তে সক্ষম হবে।

আগের সংবাদভারতের আলেমরা বাংলাদেশে আসছেন, পাকিস্তানের আলেমদের উপস্থিতি কম কেন?
পরবর্তি সংবাদমুসলিমদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রোজা রাখলেন জাতিসংঘ মহাসচিব