করোনা ভেবে ৬ হাসপাতাল ঘুরে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু!

ফাতেহ ডেস্ক

অ্যাম্বুলেন্সে করেই রাজধানীতে ১৬ ঘণ্টা ঘুরলেন মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণের রোগী মো. আলমাছ উদ্দিন। কিন্তু ৫টি হাসপাতালের একটিতেও তার ঠাঁই হয়নি। অবশেষে চিকিৎসা ছাড়াই ইন্তেকাল করেন তিনি । শনিবার (২৮ মার্চ) সকাল ৮টা থেকে বাবা আলমাছ উদ্দিনকে নিয়ে সন্তানেরা পাঁচটি হাসপাতালে ঘুরেছেন।

মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের চিকিৎসা ছাড়াই রোববার (২৯ মার্চ) সকালে তিনি মারা যান।

আলমাছ উদ্দিনের মেয়ে বলেন, শনিবার সকাল ৮টায় বাবাকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয় আমাদের বাসাবোর বাসা থেকে। অনেকগুলো হাসপাতাল ঘুরে রাত ১২টার দিকে অনেক দেনদরবারের পর একটি হাসপাতাল নিল। কিন্তু বাবাকে বাঁচানো গেল না। আমার বাবা একরকম বিনা চিকিৎসায় মারা গেল।’

মেয়ে জানালেন, বাবা আলমাছ উদ্দিনের পেটের পুরোনো রোগ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। শুক্রবার ভীষণ ডায়রিয়া, সঙ্গে জ্বর। কিছুক্ষণ পর কথা জড়িয়ে যেতে থাকে তার। তখনই পরিবারের লোকজন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেন। এমনিতে দুটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসা করাতেন তিনি। জ্বর-ডায়রিয়া শুনে তারা নিতে চাননি। পরদিন শাহবাগের একটি বড় হাসপাতালে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা। সেখানে বুকের এক্স-রে করে নিউমোনিয়া মতো মনে হচ্ছিল। করোনাভাইরাসের উপসর্গের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে দেখে তারা রাখেননি।

সেখান থেকে তারা ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেন। তাদের আইসোলেশন ওয়ার্ড আছে। রোগী ভর্তি করা যাবে এই আশ্বাস পেয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয় আলমাছ উদ্দিনকে। কর্তৃপক্ষ রাখতে রাজি হলেও, চিকিৎসকেরা আসেননি। ওই হাসপাতাল থেকে সরকারি একটি হাসপাতালে নিয়ে যান স্বজনেরা। ভর্তি নেয় তারা। কিন্তু জরুরি বিভাগ থেকে ওয়ার্ডে পাঠানোর সময় চিকিৎসকদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়।

করোনাভাইরাসের ব্যাপারে নিশ্চিত তথ্য না পেলে রোগী রাখবেন না বলে জানান। তারা কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে যান। পৌঁছানোর আগে আইইডিসিআরে যোগাযোগ করেন। সন্ধ্যার পর আলমাছ উদ্দিনের অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছায় কুয়েত মৈত্রীর গেটে।

তারা লক্ষণ দেখে বলেন, রোগী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে মনে হচ্ছে না। কিন্তু নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে আইসোলেশনে থাকতে হবে। সেখানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীরা থাকলে বিপদ। এভাবে ছয় হাসপাতালে গিয়েও বাবাকে ভর্তি করাতে পারেননি সন্তানেরা।

এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে যখন এভাবে ছুটছেন আলমাছ উদ্দিন, তখন এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা এগিয়ে আসেন। আলমাছ উদ্দিনের মেয়ে বলেন, ‘বাবা মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু এই পরিচয় দিয়ে কখনও কোনো সুবিধা নেওয়া পছন্দ করতেন না। আমরাও তাই কোনো হাসপাতালে গিয়ে এই পরিচয় দিইনি।’ মুগদা জেনারেল হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড আছে। মুক্তিযোদ্ধারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তাকে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। কিন্তু সেখানেও বিপত্তি। হাসপাতালের সিটিস্ক্যান, এমআরআই মেশিন নষ্ট। পরদিন সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া আর উপায় নেই।

-এ

আগের সংবাদবিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসে মৃত্যু ৩৪ হাজার, আক্রান্ত সোয়া ৭ লাখ
পরবর্তি সংবাদভাড়াটিয়ারা ব্যর্থ হলে বাড়ি ভাড়া দেবে দিল্লি সরকার