বাংলাদেশে দেওবন্দি চিন্তা: যেভাবে প্রসারিত হল ক‌ওমি মাদরাসা

রাকিবুল হাসান:

ব্রিটিশপূর্ব মুসলিম শাসনামলে এ ভূখণ্ডে অসংখ্য মাদরাসা ও ধর্মীয় শিক্ষার প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল। কিন্তু ব্রিটিশদের হাতে ভারতবর্ষের ক্ষমতা চলে যাবার পর মুসলিম তাহজিব-তামাদ্দুনকে নিশ্চিহ্ন করার দুরভিসন্ধি নিয়ে ধীরে ধীরে নানা ছুতো ও কৌশলে বন্ধ করে দেওয়া হয় এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বাংলাসহ পুরো ভারত উপমহাদেশের মুসলিম সমাজে অশিক্ষা, কুসংস্কার ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে নানাবিদ অসঙ্গতি দিনদিন বাড়তে থাকে। মুসলিম জনসাধারণের এই দুর্দিন ঘুচাতে এবং ইসলামের প্রকৃত শিক্ষায় তাদেরকে শিক্ষিত করে তুলতে ১৮৬৬ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর জেলার দেওবন্দে প্রতিষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী দারুল উলুম মাদরাসা। পরবর্তী সময়ে এই মাদরাসা থেকে শিক্ষাসমাপ্তকারী আলেমগণ উপমহাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়েন এবং দেওবন্দের অনুসরণ ও আদলে গড়ে তুলতে থাকেন নতুন নতুন মাদরাসা। দেড় শতাব্দী পর আজও এই ধারা চলমান।

দেওবন্দি ও তাদের বৈশিষ্ট্য

এই উপমহাদেশে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের অন্যতম ধারক এবং বাহক উলামায়ে দেওবন্দ। তাঁদের কুরবানীর বদৌলতে এই অঞ্চলে দ্বীনের প্রচার ও হেফাজত হয়েছে সর্ববৃহৎ পরিসরে। এই অঞ্চলে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আদর্শ মোতাবেক দ্বীনী কাজের বেশির ভাগ আঞ্জাম দিচ্ছেন তাঁরা। সাধারণভাবে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ যা, উলামায়ে দেওবন্দও তা। ‘দেওবন্দিয়ত’-এর মাঝে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের বাইরে কিছু নেই। হাকীমুল ইসলাম কারী তায়্যিব রহ. বলেন, দ্বীন-ঈমানের মৌলিক বিষয় এবং শরীয়তের শাখাগত বিষয় ও তার রুচি-প্রকৃতির দিক থেকে উলামায়ে দেওবন্দ পরিপূর্ণভাবে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অনুসারী। তারা নতুন কোনো ফেরকা নয়, নতুন কোনো আকীদা-বিশ্বাসেরও ধারক নয়। (উলামায়ে দেওবন্দ কা দ্বীনি রুখ আওর মাসলাকী মেযাজ, পৃ. ২৩)

সাঈদ আহমদ পালনপুরী রহ. লিখেছেন, উলামায়ে দেওবন্দের আলাদা কোনো দস্তুর-সংবিধান নেই। তাদের দস্তুর কুরআন-সুন্নাহ এবং যার উপর সালাফে সালেহীন তথা সাহাবা-তাবেয়ী এবং পরবর্তী উলামা-আউলিয়া চলে গেছেন তা। (মুকাদ্দিমা, দারুল উলূম দেওবন্দ, আসআদী, পৃ. ৪৮-৪৯)।

মুফতী শফী রহ.-এর মতে আকাবিরে উলামায়ে দেওবন্দের বৈশিষ্ট্য চারটি: ১. কিতাবুল্লাহ ও রিজালুল্লাহকে একসাথে গ্রহণ করা। ২. তালীম ও তরবিয়তে সমান গুরুত্ব দেওয়া। ৩. বিনয়-যুহদ, আবদিয়্যাত ও সাদেগির সাথে সাথে ইলমী গাম্ভীর্য, ইস্তিগনা ও আত্মসম্মানবোধ, নির্লোভ-অমুখাপেক্ষী জীবন আপন করে নেওয়া। ৪. এবং সবকিছুতে ‘ইতেদালে শরঈ’ অবলম্বন। (দারুল উলূম দেওবন্দ আওর উসকা মেযাজ ও মাযাক, জাওয়াহিরুল ফিকহ ৫/২১৮-২২২)

মাওলানা মুহাম্মাদ মনযূর নুমানী রহ. বলেন, মাসলাকে দেওবন্দের বুনিয়াদি বিষয় চারটি: ১. হানাফী মাযহাব অনুসরণের সাথে সাথে হাদীস ও সুন্নাহ চর্চায় গভীর অভিনিবেশ রাখা, অন্য মাযহাব ও মুহাদ্দিসীনের প্রতি আজমত প্রদর্শন করা। ২. ইলমী-ফিকহী বৈশিষ্ট্য রক্ষার সাথে সাথে আহলে হক সুফিয়ায়ে কেরামের নেসবত অর্জনে সচেষ্ট থাকা, অন্তত তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা রাখা। ৩. ইত্তিবায়ে সুন্নত আর শিরক-বিদআতের প্রতি নফরত এবং এর অপনোদনে বিশেষ মজবুতি প্রদর্শন করা। ৪. ই‘লায়ে কালিমাতুল্লাহর জযবা লালন করা। (হায়াতুন নবী পৃ. ১৯-২২)

দারুল উলূম দেওবন্দের ছদ-সালা অনুষ্ঠানে সায়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. উলামায়ে দেওবন্দের প্রধান চারটি দ্বীনী বৈশিষ্ট্য–তাওহীদে খালেস, ইত্তিবায়ে সুন্নত, তাআল্লুক মাআল্লাহ ও ই‘লায়ে কালিমাতুল্লাহ্-এর কথা বিশেষভাবে আলোচনা করেন। (কারওয়ানে যিন্দেগী, ২/৩১০)

বাংলাদেশে কওমি মাদরাসা

দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার ছয় মাস পর দারুল উলুমের আদর্শ ও পৃষ্ঠপোষকতায় সাহারানপুরে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘মাজাহেরুল উলুম মাদ্রাসা’। তারপর দেওবন্দের কারিকুলামে বিভিন্ন দেশে কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা বাড়তে থাকে। সে ধারাবাহিকতায় উনিশ শতকের নব্বইয়ের দশকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বিখ্যাত ওলামায়ে কেরাম বিদেশি সংস্কৃতি ও শিরক-বিদআত থেকে মুসলিম সমাজকে রক্ষা করার লক্ষ্যে দারুল উলুম দেওবন্দের মূলনীতি অনুসরণ করে চট্টগ্রাম অঞ্চলে একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সিদ্ধান্তটি কার্যকরের জন্য হাকিমুল উম্মাত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহ. এর আদেশানুসারে তার প্রিয় অনুসারী ও ছাত্র শাইখুল ইসলাম মাওলানা হাবিবুল্লাহ রহ. এবং তার সাথে মাওলানা আব্দুল ওয়াহেদ, মাওলানা সুফী আজিজুর রহমান এবং মাওলানা আব্দুল হামিদ রহ. ১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দে একটি অস্থায়ী ঠিকানায় প্রতিষ্ঠা করেন আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী। পরবর্তীতে ১৯০১ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের বন্দর নগরী চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বর্তমান ঠিকানায় স্থায়ী জায়গা নিয়ে স্থানান্তরিত হয়। এটিই বাংলাদেশের প্রথম কওমি মাদরাসা।

সিলেট অঞ্চলের শতাব্দীপ্রাচীন মাদরাসাগুলোর অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হয় বাহুবল ইসলামিয়া মাদরাসাটিকে। ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে এলাকাবাসীর সহায়তায় দারুল উলুম দেওবন্দের আদর্শ অনুসরণ করে মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন মাওলানা আবুল হাশেম নামে জনৈক মনীষী আলেম।

চট্টগ্রামের প্রাচীনতম ও বৃহৎ দ্বীনি বিদ্যাপীঠের অন্যতম আল জামিয়াতুল আরাবিয়া আল ইসলামিয়া, জিরি। হাটহাজারী মাদরাসা প্রতিষ্ঠার কয়েক বছর পর ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দের দিকে চট্টগ্রামের মনীষী আলেম মাওলানা আহমদ হাসান রহ. এই প্রতিষ্ঠানটির গোড়াপত্তন করেন।

জামেয়া ইসলামিয়া রায়পুর-মামরকপুর মৌলভীবাজার মাদরাসাটি ১৯০৭ সালে স্থানীয় এলাকাবাসীর সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠা করেন দুই মনীষী আলেম–হজরত উবায়দুল্লাহ কুমিল্লাভি ও হজরত হাবিবুর রহমান রায়পুরী রহ.। হজরত হাবিবুর রহমান রায়পুরী ছিলেন শায়খুল ইসলাম হোসাইন আহমদ মাদানি রহ.-এর প্রথম সারির খলিফা। একই সঙ্গে ছিলেন সিলেটের খ্যাতিমান মনীষী শায়খুল হাদীস আল্লামা নুরুদ্দীন গহরপুরী রহ.-এর পীর। গহরপুরী হজরত মাদানির নির্দেশে তাঁর কাছে বায়আত হয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে খেলাফত লাভ করেছিলেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে দারুল উলুম দেওবন্দের আদর্শ ও আদল অনুসরণে বাহরুল উলুম নামে একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন ভারতের উত্তর প্রদেশের মুজাফফরাবাদের এক মনীষী আলেম, মাওলানা আবু তাহের ইউনুস রহ.। স্বপ্নযোগে মহানবি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের আদেশপ্রাপ্ত হয়ে তিনি কাদিয়ানি ফেতনা মিটাতে এখানে এসে মাদরাসা করেন। মাওলানা আবু তাহের ইউনুসের ইন্তেকালের পর মাদরাসাটির দায়িত্বে আসেন ফখরে বাঙাল তাজুল ইসলাম রহ.। তিনি দায়িত্বগ্রহণের পর হজরত আবু তাহের ইউনুসের হিজরত এবং ত্যাগকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে বাহরুল উলুম মাদরাসাটির নাম পরিবর্তন করে ‘জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া’ রাখা হয়। কালের পরিক্রমায় মাদরাসাটি আজ দেশের অন্যতম বৃহৎ দীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে দেওবন্দের চিন্তাধারা যখন ভারত উপমহাদেশে ক্রমশ বিকাশ লাভ করছিল, সেই সময়টাতেই, ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে, দেওবন্দের অনুসারী আলেম মাওলানা আরকান আলি রহ. এলাকাবাসীর সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মাদরাসাটি। প্রতিষ্ঠাকালীন মুহতামিম তিনিই ছিলেন। পরবর্তীতে মুহতামিমের দায়িত্ব পান শায়খুল ইসলাম হোসাইন আহমদ মাদানি রহ.-এর খলিফা, রেঙ্গা এলাকারই কৃতি সন্তান হজরত বদরুল আলম শায়খে রেঙ্গা রহ.। সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা জকিগঞ্জের ৩ নং কাজলসার ইউনিয়নের হাড়িকান্দী গ্রামে ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রাচীনতম দীনি বিদ্যাপীঠ জামিয়া মোহাম্মদিয়া।

এরপর আল জামিয়া হোসাইনিয়া আশরাফুল উলুম, বড় কাটরা মাদ্রাসাটি স্থানীয় ধর্মপরায়ন ব্যক্তিদের সহায়তায় ১৯৩১ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৩৭ সালে আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া, লালবাগ, ঢাকা ৷ এর প্রতিষ্ঠার পেছনে কাজ করেছেন হাফেজ্জি হুজুর এবং শামসুল হক ফরিদপুরী রহ.। ১৯৫৬ সালে শামসুল হক ফরিদপুরী প্রতিষ্ঠা করেন জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলুম ফরিদাবাদ মাদরাসা। দাউদকান্দির বায়নগরে ১৯৪৬ সালে জামিয়া ইসলামিয়া আতিকিয়া মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আতিকুর রহমান সাহেব। প্রতিষ্ঠাকালিন মুহতামিমও তিনি। কুমিল্লা জেলার হোমনা থানার রহমতপুর গ্রামে ১৯৪৮ সনে জামিয়া আরাবিয়া ইসলামিয়া এমদাদুল উলুম মারাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন আল্লামা আব্দুল ওহহাব পীরজী হুজুর রহ.। জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম স্বল্প পেন্নাই মাদ্রাসাটি ১৯৬০ইং সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।

এভাবে দেওবন্দ পড়ুয়া আলেমদের হাতে কওমি মাদরাসার জোয়ার শুরু হয়। ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত এ দেশে প্রায় ৪৪৩টি কওমি মাদ্রাসা ছিল। এর মধ্যে প্রায় ৫১টি ছিল দাওরায়ে হাদিস মাদ্রাসা। বর্তমানে কওমি মাদরাসার সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়েছে।

বাংলাদেশে দেওবন্দি  মাসলাক চর্চা

বাংলাদেশে যতগুলো কওমি মাদরাসা রয়েছে, সবগুলোই মূলত দেওবন্দের মাসলাক চর্চা করে। শিক্ষা কারিকুলাম থেকে শুরু করে দ্বিনী দায়িত্ব পালন—সবকিছুতেই। দেওবন্দিদের যে বুনিয়াদি বৈশিষ্ট্যগুলো উপরে উল্লেখ করা হয়েছে, দেওবন্দ পড়ুয়া আলেমগণ তা পুঙ্খানুপুঙ্খ ধারণ করে আছেন। এদেশে ইসলাম রক্ষায় দেওবন্দ পড়ুয়া আলেমদের অবদান অনস্বীকার্য। নিচে কয়েকটি পয়েন্ট তুলে ধরা হচ্ছে।

. তাওহিদ ও ঈমানে খালেস: আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের ব্যাখ্যা অনুযায়ী যা কিছু তাওহীদ ও ঈমান পরিপন্থী, উলামায়ে দেওবন্দ তার বিরুদ্ধে আপসহীন। এ দেশের আলেমগণ এ ব্যাপারে সবসময়ই কঠোর ছিলেন। বিভিন্ন বাতিল ফিরকা যখনই ঈমান ও আকিদা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে, দেওবন্দি  আলেমরা তখনই সত্যটা তুলে ধরেছে। বিভ্রান্তি খণ্ডন করেছে।

২. তাআল্লুক মাআল্লাহ ও তাজকিয়া: এ দেশের দেওবন্দি  আলেমগণ মানুষকে আল্লাহর সঙ্গে জুড়ে দেয়ার কাজটি করে গেছেন একনিষ্ঠভাবে। বয়ানে, ওয়াজে, খুতবায়, লেখনীতে আত্মশুদ্ধির তালিম দিয়ে গেছেন এবং যাচ্ছেন। দেশজুড়ে তাদের খানকা তাজকিয়ায়ে নফসের আলো ছড়াচ্ছে। মানুষ তাদের হাতে বায়াত হচ্ছে, ইসলাহে নফসের দীক্ষা নিচ্ছে।

৩. তালিম ও তরবিয়ত: এদেশের কওমি মাদরাসায় কেবল তালিম দেয়া হয় না, তরবিয়তও দেয়া হয়। শিক্ষার সঙ্গে দীক্ষা এ ধারার প্রধান স্লোগান।

. শিরক-বিদআত, হিন্দুয়ানি ও বিজাতীয় সংস্কৃতির প্রতি আপোষহীন মনোভাব: শিরক-বিদআত, হিন্দুয়ানি ও বিজাতীয় সংস্কৃতির প্রতি নারাজি এবং এবিষয়ে একধরনের আপোষহীন মনোভাব উলামায়ে দেওবন্দের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। আর শিরক-বিদআতে লিপ্ত অবুঝ মানুষের প্রতি দরদ পোষণ এবং এ থেকে তাদেরকে উদ্ধার করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টায় এদেশের আলেমগণ কখনো কসুর করেননি। যখনই এদেশে হিন্দুয়ানি সংস্কৃতি আমদানি করতে চেয়েছে সুশীলরা, সবার আগে প্রতিবাদ করেছেন দেওবন্দি  আলেমগণ। যখনই ইসলামের অবমাননা হয়েছে, নবির অবমাননা হয়েছে, সবার প্রথম দেওবন্দি  আলেমরাই গর্জে উঠেছে। তসলিমাবিরোধী আন্দোলন, ফতোয়া আন্দোলন, হোফাজতের আন্দোলন তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

৫. জমহুর উলামায়ে কেরাম ও গণমানুষকে সাথে নিয়ে চলা: জমহুর উলামায়ে কেরাম ও গণমানুষকে সাথে নিয়ে চলা দেওবন্দিদের বৈশিষ্ট্য। গণবিচ্ছিন্ন হয়ে ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের জন্য সরকারের লেজুড়বৃত্তি করা, জমহুর উলামায়ে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শায মত-পথ অবলম্বন করা দেওবন্দিয়ত নয়। এদেশের দেওবন্দি  আলেমগণ যে গণমানুষের কতটা কাছাকাছি, বিভিন্ন মাহফিল এবং আন্দোলনে দেখা যায়।

. জামিইয়্যত তথা দ্বীনের সকল শাখা জিন্দা করার চেষ্টা ও মানসিকতা: জামিইয়্যত তথা দ্বীনের সকল শাখা জিন্দা করার চেষ্টা ও মানসিকতা উলামায়ে দেওবন্দের অন্যতম গুণ। এজন্য ইলম চর্চা, তাবলীগ, তাযকিয়া, সিয়াসত তারা একইসাথে আঞ্জাম দিচ্ছেন। যদিও আমলিভাবে সব ময়দানে সবাই সমানভাবে সক্রিয় নন, কিন্তু সমর্থনে এবং সময়-সুযোগ মতো অংশগ্রহণে কোনো প্রকৃত দেওবন্দি  দ্বিধাগ্রস্ত নন। কেউ দরস-তাদরিসে মগ্ন, কেউ রাজনীতির ময়দানে, কেউ তাবলীগের সফরে। এভাবে একই ঘরানা থেকে দ্বীনের এত শাখায় কাজ করার নজির বর্তমানে দেখা যায় না।

উপসংহার

দেশের কওমি মাদরাসাগুলো দ্বীনরক্ষার বাতিঘর। এখান থেকে তৈরী হয় দেওবন্দি  চেতনায় উদ্দীপ্ত আলেম। বেফাকের মরহুম মহাসচিব আবদুল জব্বার জাহানাবাদী রহ.-এর একটি জবাব দিয়ে লেখাটা শেষ করছি। তাকে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জিজ্ঞেস করেছিলো, কওমি মাদরাসায় পড়ে ছেলেরা চাকরির বাজারে ফাইট করতে পারে না। উত্তরে জাহানাবাদী রহ. বলেছিলেন, ‘এদেশের মানুষের ধর্মীয় চাহিদা ও জিজ্ঞাসা পূরণ করার জন্য যথেষ্ট আলেম তৈরী করছে কওমি মাদরাসা। কওমি মাদরাসার লক্ষ্যও এটাই। সরকারি ধর্মীয় পদগুলো হয়তো সরকারি মাদরাসা পড়ুয়াদের দখলে। কিন্তু ৯৯ শতাংশ বেসরকারি ধর্মীয় পদ দখল করে আছে কওমি মাদরাসা পড়ুয়া ছাত্ররা।’

আগের সংবাদপ্রস্তাবিত বাজেট মন্ত্রিসভায় অনুমোদন
পরবর্তি সংবাদপদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে ২৫ জুনের এসএসসি পরীক্ষা ২৪ জুন