বিদায় বিশ, স্বাগত একুশ!

রাকিবুল হাসান:

দুই হাজার বিশ পেরিয়ে গেল। আমরা আমাদের যাবতীয় স্বপ্ন, প্রত্যাশা ও প্রত্যয় নিয়ে শুরু করেছি একুশ। জানি বিশের বিষে নীল হয়ে আছে আমাদের দেহ। দুঃস্বপ্নের মতো বিগত বছর আমাদের তাড়া করেছে করোনা। আমরা ভয়ে কাতর হয়ে থেকেছি। গলা শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে, তবু পানি খেতে বাইরে বেরুইনি। মনে হয়েছে, দরজায় বসে আছে আজরাইল।

বাইরে বেরুতে হলেও মুখে পড়েছি মাস্ক, হাতে গ্লাভস, গায়ে পিপিই। একটি বছর পেরিয়ে গেলো; দেখা করতে এলে প্রিয়জনদের সঙ্গে মোসাফাহা করতে পারিনি। দুটো ঈদে বুকে বুক মিলিয়ে ভাগ করে নিতে পারিনি উৎসব। কী অদ্ভুত চিনচিনে ব্যথা বুকে বহন করে চলেছি আমরা। বাবা মারা যাচ্ছে, ছেলে হাসপাতালে বেড পাচ্ছে না। স্ত্রী শ্বাস নিতে পারছে না, স্বামী ব্যবস্থা করতে পারছে না অক্সিজেন। টিভিতে এসব দৃশ্য দেখে আমরা নীরবে চোখের জল মুছেছি। ঘুমন্ত মা-বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে উচ্চারণ করেছি বারবার–আল্লাহুম্মা ইন্না নাউজুবিকা মিনাল বারাসি ওয়াল জুযামি…

বিশ ছিল আমাদের হারানোর বছর। আমরা হারিয়েছি আল্লামা আশরাফ আলী, আল্লামা আযহার আলী আনওয়ার শাহ, আল্লামা আহমদ শফি, আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমি। হারিয়েছি বারো মাসে ত্রিশের অধিক আলেম। একজন আলেম মারা যায়, আমাদের সাজানো সুন্দর আকাশ থেকে ঝরে পড়ে একটি নক্ষত্র। নক্ষত্র যত ঝরতে থাকে, আমরা তত একলা হতে থাকি, নিঃসঙ্গ হতে থাকি। আমাদের হাহাকার বাড়তে থাকে বাতাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে।

রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সামাজ, সাংস্কৃতি সবখানে করোনার প্রভাব পড়েছে। কর্মহীন হয়েছেন দেশের অনেক মানুষ। অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে অনেকে বাধ্য হয়ে শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন। করোনায় বড় ক্ষতি হয়েছে শিক্ষা ব্যবস্থায়। পুরোটা বছরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। গুরুত্বপূর্ণ এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা হয়নি। নিচের ক্লাসেও পরীক্ষা ছাড়াই দেয়া হয়েছে অটো প্রমোশন।

করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পরপরই বিপুলসংখ্যক প্রবাসী দেশে চলে আসেন। এদের বড় একটি অংশ সৌদি প্রবাসী। এরাই পরে সৌদি ফিরতে গিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ে যান। অনিশ্চয়তা কাটিয়ে কেউ গিয়েছেন, কেউ এখনো যেতে পারেননি। দেশেই চাকরি হারিয়েছেন অনেকে।

দেশে চলছে এখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। এই ঢেউ মাথায় নিয়ে আমরা নতুন একটি বছরে প্রবেশ করেছি। আল্লাহ তায়ালার কাছে আমাদের প্রার্থনা–করোনা চলে যাক এই পৃথিবী থেকে। আবার সুস্থ হয়ে উঠুক মানুষ। কর্মে ফিরুক, চঞ্চলতায় ফিরুক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন বছরের শুভেচ্ছা বাণীতে বলেছেন, ‘করোনা মহামারি বিশ্ববাসীকে এক কঠিন বার্তা দিয়েছে। যতই উন্নত হোক না কেন, একা কোনো দেশ শ্রেষ্ঠত্বের দাবি নিয়ে দাঁড়াতে পারবে না। পারস্পরিক সহযোগিতা এবং অংশীদারিত্বের মাধ্যমেই যে কোনো বৈশ্বিক সঙ্কট মোকাবিলা করা সম্ভব। আমাদের সবাইকে এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি তারুণ্যের শক্তি ও প্রযুক্তি-জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে নেতৃত্বে দেয়ার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।’

নতুন বছরে সবাইকে স্বাগত। ফাতেহের সঙ্গেই থাকুন।

আগের সংবাদট্রাম্পের প্রণোদনা বাড়ানোর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে সিনেট
পরবর্তি সংবাদনববর্ষের পার্টি করতে গিয়ে এক যুবকের মৃত্যু