২০২০: কওমি মাদরাসার করোনা জয়

ফাতেহ ডেস্ক:

করোনা মহামারীর কারণে দেশের প্রায় ২২ হাজার কওমি মাদ্রাসার ২৫ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী গত শিক্ষাবর্ষের বার্ষিক পরীক্ষা দিতে পারেনি। ঈদুল ফিতরের পর কওমি মাদ্রাসাগুলোর নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হলেও করোনার কারণে তা স্থগিত রাখা হয়। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও হিফজখানার কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে যায়। এসব মাদ্রাসার নিরবচ্ছিন্ন অধ্যবসায়ের আবশ্যকতার কথা উল্লেখ করে কার্যক্রম চালুর বিষয়ে দেশের আলেমরা আবেদন করেন। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১২ জুলাই থেকে দেশের সব হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও হিফজখানা খোলার অনুমোদন দেয়া হয়। ৮ জুলাই ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করে। সেখানে বলা হয়, এসব মাদ্রাসাকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে।

এরও আগে ১ জুন দেশের কওমি মাদ্রাসায় ছাত্রছাত্রী ভর্তির কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে অফিস খোলার অনুমতি দেয়া হয়।

সোমবার (১৭ আগস্ট) সচিবালয়ে জাতীয় দ্বীনি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের সহ-সভাপতি ড. মাওলানা মুশতাক আহমদ ও মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ এবং বোর্ডের মহাসচিব মুফতি মোহাম্মদ আলীসহ কওমি আলেমদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। বৈঠকে কিতাব বিভাগের কার্যক্রম চালু ও পরীক্ষা নেয়ার সুযোগ করে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন জানায় কওমি মাদরাসাগুলো। এরই প্রেক্ষিতে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা না দিলেও কওমি মাদ্রাসা খোলার অনুমতি দেয় সরকার। সোমবার (২৪ আগস্ট) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করে।

মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব সৈয়দ আসগর আলী স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়, কওমি মাদ্রাসাগুলোর কিতাব বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু ও পরীক্ষা গ্রহণের অনুমতি প্রদান করা হলো। তবে ৬টি শর্ত পালন করতে হবে মাদ্রাসাগুলোকে। শর্তগুলো হলো: ১. প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, মাথায় নিরাপত্তা টুপি পরা আবশ্যক। ২. মাদ্রাসায় প্রবেশের পূর্বে গেটে স্যানিটাইজিং করতে হবে। ৩. শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ কক্ষে অবস্থান করবে, বিক্ষিপ্তভাবে চলাফেরা করবে না। ৪. একজন শিক্ষার্থী অন্য শিক্ষার্থী থেকে কমপক্ষে ৩ ফিট দূরত্বে অবস্থান করবে। ৫. করোনার কারণে কোলাকুলি ও হাত মেলানো যাবে না। ৬. শিক্ষক ও কর্মচারীরাও একইভাবে সরকারের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে ক্লাস করাবেন।

মাদরাসা খোলার পর অনুষ্ঠিত হয়েছে আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি‘আতিল কওমিয়া বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় পরীক্ষা। তার ফলাফলও দেয়া হয়েছে কদিন আগে। আটকে থাকেনি কোনো কাজই।

স্কুল-কলেজ যেখানে খোলার সাহস করছে না সরকার, সেখানে কওমি মাদরাসায় নিয়মতান্ত্রিক ক্লাস চলছে প্রায় পাঁচমাস। এখনো কোনো মাদরাসায় করোনাক্রান্ত হয়ে কারো মারা যাবার সংবাদ আসেনি। এমনকি আক্রান্তের খবরও আসেনি। সে হিসেবে বলা যায়, কওমি মাদরাসা করোনা জয় করেছে ভালোভাবেই।

আগের সংবাদউত্তরপ্রদেশে ‘লাভ জিহাদ’ আইন: এক মাসে গ্রেফতার ৫১
পরবর্তি সংবাদ৩৮তম বিসিএসে নন-ক্যাডারে ৪৪৩ জনকে সুপারিশ