‘আমেরিকায় এক চতুর্থাংশ ধর্মহীন’ : ঈমান হারাচ্ছে প্রবাসী মুসলমানদের সন্তানরা

মুনশী নাঈম:

আমেরিকায় বেড়ে ওঠা প্রায় এক-চতুর্থাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম ধর্মহীন হয়ে যাচ্ছে। তাদের অধিকাংশই প্রবাসী পরিবারের সন্তান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক পিউ রিসার্চ সেন্টারের সর্বশেষ এক সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করা এসব মুসলিমদের অধিকাংশই থেকে যাচ্ছে নাস্তিক হিসেবে। তারা কোনো ধর্মই গ্রহণ করছে না। তবে ইসলাম ত্যাগকারীদের সমান অনুপাতে ইসলাম গ্রহণও করছে মানুষ। কিন্তু তাতে মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে খুব বেশি প্রভাব ফেলছে না।

সমীক্ষা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, যারা ইসলাম ত্যাগ করছে, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে তাদের ইসলামের চর্চা না থাকার কারণে বিজাতীয় ধর্ম ও দর্শনের প্রভাবিত হয়ে তারা ইসলাম ত্যাগ করছে।

২০২০ সালের সরকারি পরিসংখ্যান মতে, আমেরিকার মাত্র এক ভাগ মুসিলম। ২০১৯ সালের পিউ রিসার্চের তথ্য অনুসারে, আমেরিকার বেশির ভাগ প্রাপ্তবয়স্ক মনে করেন, মুসলিমরা অনেক বেশি বৈষম্যের শিকার। আর বিরাশি শতাংশ মনে করেন, মুসলিমরা কিছুটা বৈষম্যের শিকার।

ধর্মহীন হয়ে যাচ্ছে চব্বিশ শতাংশ মুসলিম

মার্কিন মুসলিমদের উপর ২০১৪ সালের একটি সমীক্ষা অনুসারে, আমেরিকায় বেড়ে ওঠা প্রায় এক-চতুর্থাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম ধর্মহীন হয়ে যাচ্ছে। তাদের হার তেইশ শতাংশ। ২০১৭ সালে পিউ রিসার্চ সেন্টারের সমীক্ষায় ২০১৪ সালের সমীক্ষার চেয়ে সামান্য ভিন্ন প্রশ্ন ব্যবহার করা হয়। এ সমীক্ষা অনুযায়ী, ধর্মহীন হয়ে যাচ্ছে চব্বিশ শতাংশ মুসলিম।

যারা ইসলাম ত্যাগ করছে, তাদের মধ্যে পঞ্চান্ন শতাংশ থেকে যাচ্ছে নাস্তিক। তারা কোনো ধর্মই গ্রহণ করছে না। বাইশ শতাংশ গ্রহণ করছে খৃস্টধর্ম। একুশ শতাংশ গ্রহণ করছে বৌদ্ধ, হিন্দু, ইহুদি ধর্মসহ আরও বিভিন্ন ধর্ম।

কেন ইসলাম ত্যাগ করছে?

যারা ইসলাম ত্যাগ করছে, তাদের বড় একটি অংশ ধর্মকেই অপছন্দ করে। কেউ কেউ পারিবারিকভাবে ধর্মীয় চর্চা না থাকার কথাও বলেছে। ২০১৭ সালের সমীক্ষায় ইসলাম থেকে ধর্মান্তরিতদের তাদের নিজস্ব ভাষায় ধর্ম ত্যাগ করার কারণ ব্যাখ্যা করতে বলা হয়েছিল। এরমধ্যে বারো শতাংশ বলেছে, তারা ধর্মকে অপছন্দ করে। আট শতাংশ বলেছে, তারা আল্লাহতে বিশ্বাস করে না। পাঁচ শতাংশ বলেছে, তারা ধর্ম পালনে অভ্যস্ত ছিল না।

সমীক্ষায় পাঁচজনের একজন ইসলাম ত্যাগের নির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করেছে। তাদের মধ্যে নয় শতাংশ বলেছে, তারা মুসলিম হিসেবে বেড়ে উঠেছে ঠিক, কিন্তু কখনোই ইসলামি আচারে যুক্ত হয়নি। সাত শতাংশ বলেছে, তারা ইসলামি শিক্ষার সাথে দ্বিমত পোষণ করে। ষোলো শতাংশ বলেছে, তারা অন্যান্য ধর্ম বা দর্শন লালন করে। চৌদ্দ শতাংশ বলেছে, তারা তাদের ব্যক্তিগত মত এবং স্টাডির উপর ভিত্তি করে ইসলাম ত্যাগ করেছে।

ইসলাম গ্রহণ করছে তেইশ শতাংশ

আমেরিকায় যারা ইসলাম গ্রহণ করছে, তাদের সংখ্যা ইসলাম ত্যাগকারীদের সমান। তারা সংখ্যায় তেইশ শতাংশ। তাদের অধিকাংশই খৃস্টধর্ম থেকে ইসলামে ধর্মান্তরিত।

সমীক্ষায় বলা হয়, ইসলামে গ্রহণকারীদের তেপ্পান্ন শতাংশ আগে প্রোটেস্ট্যান্ট খৃস্টান ছিল। বিশ শতাংশ ছিল ক্যাথলিক। পাঁচজনের একজন বলেছে, ইসলামে ধর্মান্তরিত হওয়ার আগে তাদের কোনো ধর্ম ছিল না। তাদের হার উনিশ শতাংশ। এছাড়াও অর্থোডক্স খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, ইহুদি বা অন্য কোনো ধর্ম থেকে ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছে।

সমীক্ষায় কেন তারা মুসলিম হয়েছে, তা উল্লেখ করতে বলা হয়। তাদের প্রায় এক-চতুর্থাংশ বলেছে, তারা তাদের পূর্বের ধর্মের থেকে ইসলামের বিশ্বাস বা শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়েছে। একুশ শতাংশ বলেছে, তারা ধর্ম পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ইসলামের ধর্মীয় গ্রন্থ বা ইসলাম বিষয়ক অধ্যয়ন করেছিল। দশ শতাংশ বলেছে, তারা কোনো একটা কমিউনিটিতে যুক্ত হতে ইসলাম গ্রহণ করেছে। নয় শতাংশ বলেছে, তাদের ইসলাম গ্রহণের পেছনে মূল প্রেরণা ছিল বিবাহ। নয় শতাংশ বলেছে, তারা ইসলাম জেনেছিল কোনো বন্ধুর কাছে।

ধর্মান্তরের হার প্রবাসীদের মধ্যে বেশী

সমীক্ষায় বলা হয়, প্রবাসীদের মধ্যে ইসলাম ত্যাগের প্রবণতা বেশী। এরমধ্যে সবচে বেশি ইসলাম ত্যাগ করছে ইরান থেকে আসা অভিভাসীরা। তাদের ইসলাম ত্যাগের হার বাইশ শতাংশ। ইসলামে টিকে থাকছে মাত্র আট শতাংশ। ১৯৭৮ এবং ১৯৭৯ সালের ইরানী বিপ্লবের পর ইরান থেকে অভিবাসন বৃদ্ধির ফলে আমেরিকায় ইরানি প্রবাসী বাড়ে। যারা ইসলাম ত্যাগ করছে, তাদের অনেকে সেক্যুলার ইরানি। এছাড়াও আর বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রবাসীদের সন্তানরাও ইসলাম ত্যাগ করছে।

এদিকে যদিও এক চতুর্থাংশ মুসলমান ইসলাম থেকে সরে যাচ্ছে, তাদের অধিকাংশই খ্রিস্টান হচ্ছে না। যারা ইসলাম থেকে ধর্মান্তরিত হয়েছে, তাদের মধ্যে মাত্র বাইশ শতাংশ খ্রিস্টান অনুসারী হচ্ছে। পঞ্চান্ন শতাংশ কোনো ধর্মই গ্রহণ করছে না।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, আমেরিকান মুসলমানদের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে বছরে এক লাখ। কিন্তু ইসলামে প্রবেশকারী এবং ত্যাগকারী লোকেদের ভাগ মোটামুটি সমান। ফলে মুসলমানদের সামগ্রিক বৃদ্ধিতে এই সংখ্যা সামান্যই প্রভাব ফেলছে।

আগের সংবাদইডেনের ছাত্রীদের দিয়ে জোরপূর্বক দেহব্যবসার অভিযোগ
পরবর্তি সংবাদইউসুফ কারজাভি : ইসলাহি ধারার প্রধান আলেমের বিদায়