কেমন হলো ময়মনসিংহের ইসলামি বইমেলা?

রাকিবুল হাসান নাঈম:

শিল্প-সাহিত্যের নগরী ময়মনসিংহে শেষ হয়েছে ৯ দিনব্যাপী ইসলামি বইমেলা। মাহে রবিউল আওয়াল উপলক্ষে নগরীর টাউন হল প্রাঙ্গণে বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) থেকে শুরু হওয়া এ বইমেলা চলেছে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় ও ইত্তেফাকুল উলামা বৃহত্তর মোমেনশাহীর পৃষ্ঠপোষকতায় এবার বৃহৎ পরিসরে এ মেলার আয়োজন করেছিল সীরাতকেন্দ্র।

সংশ্লিষ্টগণ জানিয়েছেন, ২০০৭ সালে ঢাকার বাইরে প্রথম ময়মনসিংহে ইসলামি বই মেলার আয়োজন করা হয়। তবে আর যেকোনো সময়ের তুলনায় এবারের মেলা ছিল জমজমাট, বিক্রিও হয়েছে আশানুরূপ।

সবার অংশগ্রহণে মুখরিত

এবারের মেলা বেশ জমজমাট ছিল বলে স্বীকার করেছেন মুহাম্মদ প্রকাশনীর কর্ণধার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ খান। তিনি ফাতেহকে বলেন, এবারের মেলার বেচাবিক্রি এবং লেখক, পাঠক, প্রকাশকদের সম্মিলন আমাদেরকে আশান্বিত করে তুলেছে। আগে ময়মনসিংহে মেলা হতো মাত্র কয়েকটি প্রকাশনী নিয়ে। কিন্তু এবার ৪৫টি স্টলে প্রকাশনী ছিল ৬০ টি। এবারের মেলায় প্রসিদ্ধ সব প্রকাশনীগুলোও অংশগ্রহণ করেছে। ফলে মেলা আরও জমজমাট হয়েছে। আমরা আয়োজকদেরকে আবেদন করেছি, তারা যেন আরও বড় পরিসরে মেলাটা করেন। তাতে যত সাপোর্ট লাগে, আমরা প্রকাশকরা দিব।’

মেলা সম্পর্কে কথা হয় পুনরায় প্রকাশের কর্ণধার নাসিম মুমতাজির সঙ্গে। ফাতেহকে তিনি জানান, ময়মনসিংহের ইতিহাসে এই মেলাটি ছিল সবচে গোছানো সুন্দর পরিপাটি এবং সবার অংশগ্রহণমূলক ইসলামি বইমেলা। প্রথমত, মেলাটি ছিল অংশগ্রহণমূলক। ইত্তেফাকুল উলামার মতো বৃহৎ একটি সংগঠন পৃষ্ঠপোষকতা করেছে, সিটি করপোরেশন সহযোগিতা করেছে, লেখকরা আয়োজন করে এসেছেন, দলবেঁধে এসেছেন প্রকাশকরাও। দ্বিতীয়ত, যে জায়গায় মেলাটি হয়েছে, জায়গাটা ছিল বিশাল। যাতায়াতও সহজ। এ দুটি কারণে মেলাটা জমজমাট বেশি হয়েছে।

মেলায় পাঠকদের আনাগোনা কেমন ছিল জানতে চাইলে নাসিম মুমতাজি বলেন, পাঠকদের আনাগোনা ছিল বেশ। ক্রেতা-দর্শনার্থীরা মেলা প্রাঙ্গণে এসে তাদের পছন্দের বই ঘুরে ঘুরে দেখছেন, পড়েছেন ও কিনেছেন। এবারের আয়োজনটা শহরের প্রাণ কেন্দ্রে হওয়ায় এবং যাতায়াত সহজ হওয়ায় স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষ মেলায় এসেছেন। মাদরাসা শিক্ষার্থীর চাইতে জেনারেল শিক্ষার্থীরাই বেশি এসেছেন। তবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক, শিক্ষক, বিভাগীয় প্রধানরাও এসেছেন এ মেলায়।’

মেলায় প্রতিদিন সকাল ১০ থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ‘নারীপ্রহর’ নামে নারীদের জন্য ছিল বিশেষ ব্যবস্থা। নারীদের উপস্থিতিও উল্লেখযোগ্য ছিল বলে জানান নাসিম মুমতাজি।

বেচাবিক্রি কেমন হলো?

এবারের বেচাবিক্রিও বেশ ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান সীরাতকেন্দ্রের পরিচালক মাওলানা আমীর ইবনে আহমদ। ফাতেহকে তিনি বলেন, এবারের মেলায় মোট বিক্রি হয়েছে পৌনে এক কোটি টাকা। এরমধ্যে সবচে বেশি বিক্রি করেছে কতকিছু ডটকম। অনলাইন এ শপটির সেল ছিল ৫ লাখের উপর। দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে বিখ্যাত দু’তিনটি প্রকাশনী।’

দ্বিতীয় স্তরের দু’তিনটি প্রকাশনীর নাম ইবনে আহমদ না জানালেও একটি সূত্র জানিয়েছে, দ্বিতীয় স্তরে রয়েছে রাহনুমা প্রকাশনী। তাদের সেল ছিল সারে চার লাখের উপর।

আমির ইবনে আহমদ বলেন, ২০০৭ সালে ঢাকার বাইরে প্রথম ময়মনসিংহে ইসলামি বই মেলার আয়োজন করি। এরপর থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মেলাটি হচ্ছে। এরইমধ্যে, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় মেলার আয়োজন করা হয়। এ মেলা দেখে অনেকে নিজেদের অঞ্চলে আয়োজন করতে চাচ্ছেন এবং আমাদের সহায়তা চাচ্ছেন। আমাদের সাধ্যমত তাদের সহায়তা করব বলে আশ্বাস দিয়েছি।

আগের সংবাদযুগশ্রেষ্ঠ স্কলার ড. ইউসুফ আল কারযাভী র.-এর জীবন ও অবদান
পরবর্তি সংবাদকমছে স্কুলগামী শিক্ষার্থীর সংখ্যা : হোমনায় চাপ বাড়ছে মাদরাসাগুলোর ওপর