গ্রামের মাদরাসা: অন্ধকারে আলোকবাতি

কাজি মাহবুবুর রহমান

আমাদের গ্রামের বাড়িতে অর্থাৎ থানা শহরের ভেতরে দুইটি কওমী মাদরাসা আছে। আগে একটা ছিল। কয়েক বছর হল দুইটা হয়েছে। দুটি মাদরাসাতেই দাওরায়ে হাদিস জামাত রয়েছে। ঢাকা থেকে দেশের শীর্ষস্থানীয় শাইখুল হাদিসগন বিভিন্ন সময়ে সেখানে গিয়ে হাদিসের দরস দিয়ে আসেন। গ্রামের মাদরাসাগুলিতে গেলে এক অপার্থিব ভাললাগা টের পাওয়া যায়।

আমিও অনেকদিন পড়ালেখা করেছি সেখানে। শহরের মত খুব অল্পে আয়তনে নয় সেগুলি। গ্রামের সব মাদরাসারই সামনে থাকে উন্মুক্ত বিশাল মাঠ। একটা পুকুর। কিছু নারিকেল গাছ। এসব কমন বৈশিষ্ট। ছাত্ররা বিকেল হলে মাঠে খেলাধুলা করে। পুকুরে গোসল করে। খুব স্বচ্ছ, নিবিড় প্রকৃতির সঙ্গে তাদের পড়ালেখার সময়টা কেটে যায়।

আমরা দেখেছি, গ্রামে প্রচুর লোডশেডিং হত। সন্ধার পর মোমের আলো জ্বেলে পড়তে বসতে হত। সেই রহস্যময় হলুদ আলোর ছাঁয়ায় ফেলে আসা দিনগুলির কথা ভেবে এখনো কাতর হই।

শহরের মাদরাসাগুলির আয়তন খুব ছোট হয়। নির্ধারিত ছোট একটি রুমে অনেকজন থাকা। একই জায়গায় খাওয়া-ঘুম সবকিছু, এটা বেশ দুস্কর হয়ে পড়ে। ছাত্রদের জন্য খোলা হাওয়ায় হেটে বেড়ানোর মত কোন জায়গা থাকেনা। ঢাকা শহর এমনিতেও দম ফেলবার মত জায়গা নয়।

জরিপে উঠে এসেছে, ঢাকা পৃথিবীর দ্বিতীয়তম বসবাসের অযোগ্য শহর। তবু শিক্ষাপ্রত্ষ্ঠানগুলোর জন্য এতখানি প্রশস্ততা বাণ্ছনীয়। কিছু জায়গা হাতে এলেই বহুতল ভবন নির্মানের পাশাপাশি একটু খোলা জায়গা, এক চিলতে মাঠের কথা শহরের মাদরাসার কর্তৃপক্ষকে নতুন করে ভাবতে হবে।

প্রশ্ন থেকে যায় গ্রামের মাদ্রাসাগুলিতে পড়াশোনা কেমন হচ্ছে তা নিয়ে। গ্রামের মাদরাসাগুলিতে অনেক জায়গাতেই এখনো জায়গীর সিস্টেম চালু আছে। ছাত্ররা জায়গীর বাড়িতে যেয়ে এসে পড়াশোনা করে। অনেকেই গ্রামের ছোটখাট জামে মসজিদ ও পান্জেগানাগুলোতে ইমামের চাকরি করেন।

এতে পড়াশোনার বিঘ্ন হয় এমন বলা যায়না। তবে শহরের মাদরাসাগুলির নিয়মনীতি লক্ষ্য করলে এটাকে আপাত দৃষ্টিতে একরকম বিঘ্নই মনে হয়। এছাড়াও শহরমুখি শিক্ষার ফলে ভাল মানের শিক্ষকগন গ্রামমুখো হতে চান না। কওমী মাদরাসার গোড়ার দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় আজকের দিনের বিশ্ববিখ্যাত দারুল উলুম দেওবন্দ, সাহারানপুর ইত্যাদি মাদরাসাগুলি গ্রামকেন্দ্রিকই গড়ে উঠেছে। একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ের মাদরাসাগুলিতে এখনো রয়ে গেছে মুষ্টি কালেকশন। যা একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি নষ্ট করে।

এছাড়াও নানাবিধ সংকটের ফলে মাদ্রাসার মেধাবীরা গ্রামে থাকতে চাইছেননা। মাদরাসাকে কেন্দ্র করে একটা গ্রাম গড়ে উঠবে এমনটা হয়ে উঠছেনা। অথচ বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের দেশে গড়ে উঠেছে। মেখল ধারার মাদরাসাগুলি আমাদের কওমী শিক্ষার্থীদের কাছেই এখনো অস্পষ্ট।

তাদের সঙ্গে আমাদের চিন্তার কোন আদান প্রদান নেই। জনসাধারণের সঙ্গে তাদের দূরত্ব আরো বেশী। এই দূরত্ব কমে আসুক। মাদরাসা শিক্ষা সার্বজনীন হোক, আরো আধুনিক হোক, এই প্রত্যাশা আমাদের

আগের সংবাদনিজ প্রশাসনেই বিপাকে ট্রাম্প
পরবর্তি সংবাদপদ্মার অগ্নিরুপ: ভেসে যাচ্ছে এলাকা