অপারেশন আজারবাইজান: মা-ওয়ারাআন নাহারে দুঃসাহসিক অভিযান

সাদিক ফারহান:

যুদ্ধ থেকে মাত্র ফিরেছেন মুসলিম সেনাপতি নুআইম ইবনু মুকাররিন। হাতের তরবারিতে তাজা রক্তের দাগ, মুষ্টিতে এখনো শত্রুকে তাড়ানোর তেজ। তাঁবুতে তার চারপাশে দাঁড়ানো কিছু সাধারণ সেনা। তাদেরও চোখে চোখে বারুদ। ঈমানের নূর ছলকে উঠছে তাদেরও বাহুযুগল থেকে। তরবারি মুছেই নুআইম চোখের সামনে একটি মানচিত্র মেলে ধরলেন। গণ্যমান্যদের ডেকে বললেন, বিলম্ব করার সুযোগ নেই মোটেও। আমাদেরকে পরবর্তী অভিযানের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।

আহত সেনাদের চিত্র তখনও বাহিনীর সেনাপতিদের কোটরে জমে আছে। প্রায় ছিয়াশি হাজার বর্গ কিলোমিটারের বিশাল আজারবাইজানের মানচিত্র তাই তাদের কপালে দুশ্চিন্তার রেখা টেনে দিল। কিন্তু সেনাপ্রধান নুআইমের কণ্ঠ দরাজ। পত্রলেখককে আহ্বান করে তিনি খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব বরাবর বার্তা লেখালেন। দেরি না করে একটি তাগড়া ঘোড়ায় চেপে মদিনার পথে রওয়ানা করল নুআইমের দূত।

ততদিনে মুসলমানদের বিজয়যাত্রা জাযিরাতুল আরবের সীমানা ছেড়ে গেছে। মদীনায় শক্ত স্থিতি দাঁড়িয়ে গিয়েছে রাসূলের যুগেই। প্রথম খলিফা আবু বকরের শাসনামলে সেনারা ঘোড়া ছুটিয়েছে শাম ও ইরাকের দিকে দিকে। তাঁর মৃত্যুর পর খলিফা উমরের যুগে ইসলামের প্রচার-প্রসার এবং বিজিত অঞ্চলের প্রতিরক্ষার আবেদনে আনাতোলিয়া ও মধ্য এশিয়ার দিকেও সমরাভিযানের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।

কিন্তু ধর্মীয় আবেগ ও সীমান্ত-সুরক্ষার আবেদনের পাশাপাশি অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় মুসলিম বাহিনীর প্রথমেই আজারবাইজানের দিকে অগ্রসর হওয়ার আরও কিছু শক্ত তত্ত্ব তো অবশ্যই ছিল; বিজিত অঞ্চলের নিরাপত্তা ও দীন প্রসারের ধর্মীয় দায়িত্বের পরও, যে তত্ত্বগুলো মুসলিম সেনাপতিদের আজারবাইজানের ব্যাপারে যুদ্ধ-পরিকল্পনা করতে বাধ্য করেছিল। যে কারণগুলোর গুরুত্ব বিচারে মুসলিম সাম্রাজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে ককেশাস এবং মধ্য এশিয়া হয়ে উঠেছিল অন্যতম ভৌগোলিক এবং সামরিক কেন্দ্রবিন্দু। মরক্কো এবং আন্দালুসেরও অর্ধ শতাব্দী আগে আজারবাইজানের দিকে মুসলিম বাহিনীর মোড় ঘুরানোর নেপথ্যের সেই কার্যকারণগুলো কী ছিল—কেবলই দীন প্রচারের মানসিকতা নাকি মা ওয়ারাআন নাহার বা ট্রান্স অক্সিয়ানার এ অঞ্চলগুলোর আলাদা কোন বৈশিষ্ট্য সেখানে ক্রিয়াশীল হয়েছিল? এবং প্রায় চৌদ্দ শতাব্দী পূর্বে পরিচালিত সেই সেনা অভিযান, বর্তমান আজারবাইজানেই-বা কতখানি প্রভাব বিস্তার করে আছে—আসুন দেখে নেয়া যাক!

 ওয়াজরুজের যুদ্ধ

বুয়াইব, জিসর, সাকাতিয়া, কাদেসিয়া এবং নেহাবন্দের যুদ্ধ জয়ের মধ্য দিয়ে ইরাক ও পারস্যের কোনায় কোনায় পৌঁছে গেছে ইসলামের পতাকা। খণ্ড খণ্ড চারটি অজেয় বাহিনীর নেতৃত্বে এ অঞ্চলে আছেন সেনাপতি খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ, আবু উবাইদ আস-সাকাফি, মুসান্না ইবনুল হারিসা এবং সাদ ইবনু আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহুম। বিজিত অঞ্চলের নিরাপত্তা, সংস্কৃতি, শিক্ষা, সভ্যতা ও সমর বিভাগের প্রশাসনিক অবকাঠামো মজবুত করেই, তাদের পরিকল্পনার ধারাবাহিকতায় উঠে আসছিল বৃহৎ রাজ্য আজারবাইজান। (১)

বর্তমানে আজারবাইজান এশিয়া মহাদেশের একটি প্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র। এটি কৃষ্ণ সাগর ও কাস্পিয়ান উপসাগরের মধ্যবর্তী স্থলযোটক দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলের সবচেয়ে পূর্বে অবস্থিত। আয়তন ও জনসংখ্যার দিকে থেকে দেখলে, এটি ককেশীয় রাষ্ট্রগুলির মধ্যে বৃহত্তম। দেশটির উত্তরে রাশিয়া, পূর্বে কাস্পিয়ান সাগর, দক্ষিণে ইরান, পশ্চিমে আর্মেনিয়া এবং উত্তর-পশ্চিমে জর্জিয়া রাষ্ট্র অবস্থিত। এছাড়াও ছিটমহল নাখশিভানের  মাধ্যমে তুরস্কের সাথে আজারবাইজানের একচিলতে সীমান্তও লেগে আছে। এদিকে আর্মেনিয়ার পর্বতের একটি সরু সারি নাখশিভান ও আজারবাইজানকে পৃথক করে চলে গেছে দিগন্তের ধারে। তবে দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের আর্মেনীয়-অধ্যুষিত এলাকা নাগোর্নো-কারাবাখের আজারবাইজান প্রশাসনের আনুগত্যের প্রশ্ন বিতর্কিত। যদিও কাস্পিয়ান সাগরে অবস্থিত অনেকগুলি দ্বীপ বর্তমানে আজারবাইজানেরই অন্তর্গত হয়ে আছে।  বর্তমানে দেশটিতে মৌলিকভাবে শিয়া ধর্মাবলম্বী আজেরি জাতির লোকেরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। কাস্পিয়ান সাগরতীরে অবস্থিত বন্দর শহর বাকু  বর্তমান আজারবাইজানের রাজধানী ও সর্ববৃহত্তম নগরী।

কিন্তু আজারবাইজানের প্রাচীন পরিচয় এইটুকুতে সীমাবদ্ধ ছিল না। সে-সময় প্রজাতন্ত্রী এ রাষ্ট্রের বিস্তৃতি ছিল আরও বেশি। বর্তমান ইরানের আজরি প্রদেশসমূহ, আজারবাইজান প্রজাতন্ত্র, আর্মেনীয় প্রজাতন্ত্র এবং ভ্যান লেক পর্যন্ত উত্তর তুরস্কের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোও চৌদ্দশ বছর আগের মানচিত্রে আজারবাইজানের অধীনে ছিল। দেশটির সীমানা ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিল প্রকাণ্ড সব পাহাড়সারি। ভৌগোলিকভাবে বর্ষাপ্রধাণ দেশ হওয়ায়, এখানে সর্বক্ষণ নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া বিরাজ করত। এ-ছাড়া আজারবাইজানের ভূমি চিরে বয়ে যেত অসংখ্য নদনদী, খালবিল। এরোমা উপসাগরসিঞ্চিত প্রসিদ্ধ রাস ও কুর নদী সে-সময় এতদাঞ্চলের প্রধান শহরগুলোর কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক ঘাঁটি হয়ে উঠেছিল। (২)

ইসলাম প্রবেশের বহু পূর্বে সুপ্রাচীন কাল থেকেই আজারবাইজান ছিল সাসানি সাম্রাজ্যাধীন খৃস্টান ও অগ্নিপূজকদের আখড়া। ২১ হিজরির যে সময়ের কথা বলছি, তখনও মুসলমানরা লক্ষ্য করছিলেন, দেশটি ক্রমশই জরথুস্ট্র মতবাদের অন্যতম ঘাঁটি হয়ে উঠছে। (৩) তাদের অধিকাংশ অনুসারীরা ধীরে ধীরে সবখানে সরব হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি সেখানে গড়ে উঠেছে বেশকিছু ধর্মীয় উপাসনালয়। মুসলিম বাহিনীর মোকাবেলায় ব্যর্থ ইরাক ও ইরানের পলাতক সেনারা সেসবে এসে মুক্তির আশ্রয় খুঁজছে। ধর্ম প্রচারের বাইরে এসব পলাতক শত্রুসেনাদের কোমর ভেঙে দেবার বিবেচনাও আজারবাইজানে মুসলিম বাহিনীর অগ্রাভিযানের অন্যতম অনুঘটক ছিল; যাতে তারা নতুন করে সংঘবদ্ধ হয়ে পুনরায় মুসলমানদের বিরক্ত করতে না পারে। (৪)

তদুপরি আজারি এবং আর্মেনীয় সেনাদের কিছু মিত্রদল ১৫ হিজরিতে কাদেসিয়ায় এবং ২১ হিজরিতে নেহাবন্দে বাইজেন্টাইন এবং পারস্য সাম্রাজ্যের পক্ষ হয়ে মুসলমানদের সাথে সম্মুখযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। কিন্তু কাদেসিয়া ও নেহাবন্দে মুসলমানদের হাতে তাদের মিত্রদ্বয়ের ভরাডুবি হলে সন্ত্রস্ত আজারিরা বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। কেউ পারস্যে, কেউ বাইজেন্টাইনে আবার কেউ নিজভূমিতে পলায়নপর জীবন কাটাতে শুরু করে। এদিকে ইরাক ও ইরানের যুদ্ধগুলোতে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভের মধ্য দিয়ে, মুসলিম বাহিনীর সামনে আজারবাইজানের পথ অনেকটাই সুগম হয়ে যায়।

গুপ্তচরের কবুতর পৌঁছে গেল আজারবাইজানের শাসক ইসফান্দিয়ারের প্রাসাদে। মুসলমানদের মধ্যে আজারবাইজান অভিযানের উদ্যোগ প্রকাশ্য হয়ে উঠছে, যেকোনো সময় তারা প্রবল বিক্রমে রাজা মহাশয়ের প্রাসাদে তলোয়ার ঠেকাতে পারে—গুপ্তচরের চিঠিতে এমনই লেখা ছিল। ইসফান্দিয়ার যেন মখমলের গদি ছেড়ে গা ঝাড়া দিয়ে দাঁড়াল। সেনাপ্রধানকে নির্দেশ দিল, দেরি না করে চক্ষুসীমা পর্যন্ত বিপুল সেনা প্রস্তুত করা হোক; মুসলিম বাহিনী শহরে প্রবেশের পূর্বে পথেই তাদেরকে ধুলোর সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। পরিকল্পনামতে তারা শহর ছেড়ে মুসলমানদের আগমনের পথে গিয়ে গোপনে ঘাঁটি গেড়ে বসে রইল।

মুসলিম সেনাপতি নুআইম ইবনু মুকাররিনের দরোজায় এসে দাঁড়াল এক আরব গোয়েন্দা। অনুমতি মিললে সে ভেতরে ঢুকে ইসফান্দিয়ারের তৎপরতা সম্পর্কে নুআইমকে জানাল। বললো, তারা মুসলিম বাহিনীতে অতর্কিত হামলা করার উদ্দেশ্যে হামদান ও দিনাওয়ারের পথে গোপনে ঘাপটি মেরে বসে আছে। নুআইম হামদানে বসে থেকে সময় নষ্ট করতে চাইলেন না। বাহিনীকে নির্দেশ দিলেন, বেরোতে হবে। সেনারা সকলে তাদের সরঞ্জাম ও ঘোড়া প্রস্তুত করে নিল।

এমন সময় ছুটে এলো মদিনার দূত। হজরত উমর সেনাপতি নুআইমের চিঠি পেয়েছেন। তিনি আজারবাইজান অভিযানের অনুমতি দিয়ে বাহিনীর বিজয়ের জন্য দোয়া করেছেন। ইমাম তাবারি রহ. বলেন: ‘নুআইম তাঁর বাহিনী নিয়ে আজারিদের মোকাবেলার জন্য এগোলেন। চলতে চলতে তারা ওয়াজরুজ নামক স্থানে এসে তাঁবু ফেলেন। গোয়েন্দা মারফত খবর পেয়ে শত্রুরাও পথ পরিবর্তন করে মুসলমানদের ফাঁদে এসে ধরা দেয়। সেখানে দুপক্ষের তুমুল লড়াই হয়। ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে এ যুদ্ধকে নেহাবন্দের যুদ্ধের চেয়ে সামান্যও খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। পুরো ময়দানে রক্তের বন্যা বয়ে যায়। অসংখ্য সেনাদের খুনে পিছলে যায় শত শত ঘোড়ার পদযুগল।’

হজরত উমর বসে আছেন মদিনায়। চিন্তিত, শঙ্কিত এবং আশান্বিত। রাসূলের মসজিদে তাঁর চারপাশে ছড়িয়ে আছেন আরও অনেক দীনপ্রেমী সাহাবা। মুসলমানদের বেশ কয়েকটি বাহিনী তখন যুদ্ধের ময়দানে। সকলে সবসময় প্রতীক্ষার প্রহর গুনতে থাকে, কখন কোন দিক থেকে বিজয়ের বাহিনীর কোন পত্র আসে। কে কোথায় শহিদ হয়ে যায়, কোন জমিনে শক্ত হয়ে বসে যায় ইসলামের বিজয় নিশান। কিন্তু উমরের মনে পারস্যের দিকে হেঁটে চলা নুআইমের বাহিনীর জন্য চিন্তা জমে আছে। উৎসুক নয়নে তিনি কেবল সেদিকের কোন পত্রবাহকের অপেক্ষায় মদিনার প্রবেশদ্বারে চোখ মেলে রেখেছেন।

হঠাৎ একজন লোক এলো উমরের মজলিসে। জোর আওয়াজে বলল, সুসংবাদ এনেছি আমি শোনো তোমরা। উমরের মন প্রশান্ত হলো না। সুসংবাদ তো শাহাদাতেরও হয়, উমর তাই বিজয় নিয়ে নিশ্চিত না তখনো। তিনি আগন্তুকের আস্তিন টেনে ধরে বললেন, আস্তে বলো। সে মাথা ঝুঁকিয়ে খলিফাতুল মুসলিমিনকে বললো, বিজয়ের সুসংবাদ এনেছি আমি। উমর তখনো দোদুল্য। বললেন, নুআইমের পক্ষ থেকে এসেছ? লোকটি বলল, হ্যাঁ, নুআইমের পক্ষ থেকেই এসেছি। বিজয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে খলিফাতুল মুসলিমিন আল্লাহর দরকারে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করলেন। নিজের পক্ষ থেকে একটি বিজয়ের চিরকুট লিখে সকলের সামনে সেটা সোৎসাহে ঘোষণা করার নির্দেশ দিলেন। (৫)

ওয়াজরুজের এ যুদ্ধ ঐতিহাসিক নেহাবন্দের যুদ্ধ থেকে কোন অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। বরং এ যুদ্ধের মাধ্যমে মুসলমানদের সামনে পারস্য বিজয়ের পথ খুলেছে। ইসলামের পতাকা হাতে সাহাবিরা ছুটে গেছেন এশিয়া, আফগানিস্তান এবং মা-ওয়ারাআন নাহার বা ট্রান্স অক্সিয়ানার কোনায়-কানায়, সীমান্তে সীমান্তে। তেমনি শাহাদাহপ্রেমী মুসলিম মুজাহিদদের জন্য উন্মুক্ত হয়ে গেছে উত্তরের পথও।

আজারবাইজান অভিযান

ওয়াজরুজের বিজয়ের পর মুসলমানরা সরাসরি আজারবাইজানে আক্রমণ করার চিন্তা করলেন। তারা চাইলেন, কৌশলে মুসলিম বাহিনী দুই ভাগ হয়ে দুই পাশ ধরে আজারবাইজানের রাজধানী আরদাবিলে গিয়ে পৌঁছবে। সে-মতে মূল বাহিনীকে দুটি ভিন্ন সেনাদলে বিভক্ত করা হলো। বুকাইর ইবনু আবদুল্লাহর নেতৃত্বে এক বাহিনীকে পাঠানো হল আজারবাইজানের দক্ষিণ দিকে। সেখানে তারা দায়িত্বরত পারস্য বাহিনীকে পরাস্ত করে রাজধানীর দিকে এগিয়ে গেল। পথে পারস্যের আরও কিছু টুকরো দলের সাথে সংঘর্ষ বাঁধলে, আরদাবিলে পৌঁছতে তাদের কিছু সেনাসাহায্যের প্রয়োজন দেখা দিল। খলিফাতুল মুসলিমিন বরাবর সাহায্যের আবেদন জানিয়ে পত্র লিখলেন বুকাইর। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু দ্রুত রায় শহরে ছাউনি গাড়া নুআইমের কাছে দূত পাঠিয়ে সাহাবি আবু দুজানাকে বুকাইরের সাহায্যের জন্য প্রেরণের নির্দেশ দিলেন। আবু দুজানা নেমে পড়লেন পথে। যেতে যেতে ওয়াজরুজ থেকে পালিয়ে আসা রাজা ইসফান্দিয়ারের সাথে তার দেখা হয়ে গেল। তিনি তাকে বন্দি করে নিয়ে বুকাইরের সাথে যোগ দিয়ে একত্রে আজারবাইজানের রাজধানী আরদাবিলের দিকে এগোতে থাকেন।

দ্বিতীয় বাহিনীর নেতৃত্ব দেয়া হলো সাহাবি হজরত উতবা ইবনু ফারকাদের হাতে। আজারবাইজানের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্ত হয়ে তিনি রাজধানীর দিকে এগোতে থাকলেন। পথে দেখা হলো আজারবাইজানের রাজা ইসফান্দিয়ারের ভাই বাহরাম ইবনু ফাখারযাদের সঙ্গে। উতবা ইবনু ফারকাদ তার বাহিনীর সাথে মোকাবেলা করলেন। তাদেরকে পরাভূত করে বাহরামকে বন্দি করে নিয়ে তিনিও আরদাবিলের দিকে অগ্রসর হলেন। এর আগেও বাহরাম ওয়াজরুজের যুদ্ধে মুসলমানদের হাতে বন্দি হয়েছিল। (৬)

আরদাবিলের সামনে দুই দিক থেকে এসে মুসলিম বাহিনী এক হয়ে গেল। প্রধান সেনাপতির দায়িত্ব তুলে দেয়া হলো সাহাবি উতবা ইবনু ফারকাদের হাতে। আরদাবিল শহরের প্রান্তরে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর মুসলমানরা আজারবাইজানের রাজধানী অধিকার করে নিতে সক্ষম হলেন। রাজা ইসফান্দিয়ারকে প্রস্তাব দেয়া হলো, সে কি ধ্বংস চায় নাকি সন্ধি ও শান্তি কামনা করে? ইসফান্দিয়ার সন্ধির সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইল না। ধ্বংস অনিবার্য জেনে সে মুসলিম বাহিনীর অধীনে থেকে জিযিয়া কর দিতে সম্মতি জানাল। সে-মতে উতবা ইবনু ফারকাদ তাদেরকে চুক্তিপত্র লিখে দেন। শান্তি, সম্প্রীতি এবং আনত শত্রুদের প্রতি ইসলামের উন্নত মনোভাব বিকাশের দলিল হিসেবে যা আজও আজারবাইজানের রাজধানী বাকুর জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।

তারিখে তাবারির মতে, উতবা ইবনু ফারকাদের সেই ঘোষণাপত্রের মূলভাষ্য ছিল এমন:

‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, এটা খলিফাতুল মুসলিমিন উমর ইবনুল খাত্তাবের প্রতিনিধি উতবা ইবনু ফারকাদের পক্ষ থেকে আজারবাইজানের অধিবাসীদের প্রতি সন্ধি ও নিরাপত্তার পয়গাম। নির্ধারিত পরিমাণ জিযিয়া কর আদায়ের শর্তে এ-দেশের সমতল ও পাহাড়, প্রান্ত ও নগরের সবকিছুতে, তারা তাদের জান-মাল, শহর ও ধর্মের পরিপূর্ণ নিরাপত্তা পাবে। তবে কর আদায়ের বাধ্যবাধকতা বর্তাবে না কোন শিশু, মহিলা বা পার্থিব সম্বলহীন পক্ষাঘাতগ্রস্ত পুরুষের উপর; বর্তাবে না কোন সম্পদহীন সন্নাসী ও বিরাগী ব্যক্তির উপরও। তারা এবং তাদের অধিনস্থ অন্যরা কর আদায়ের শর্ত ব্যতিরেকেই সার্বিক নিরাপত্তা পাবে। রাত্রদিন নির্বিশেষে মুসলিম সেনারা তাদের সম্পদ এবং জানের নিরবিচ্ছিন্ন প্রহরার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে।’ (৭)

 চুক্তি ভঙ্গ ও পুনর্দখলের কথা

বিজয়ের প্রাক্কালে মারজাবান নামী রাজা ইসফান্দিয়ারের এক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মুসলমানদের হস্তগত হয়। ইসফান্দিয়ার তাকে আরদাবিলের কারাগারে বন্দি করে রেখেছিল। ধ্বংস এড়িয়ে মুসলমানদের সাথে আজারিদের সন্ধির অন্যতম উদ্যোক্তা ছিল এই মারজাবান। এবং এই অবদানের প্রেক্ষিতে সন্ধিপরবর্তী সময়ে মারজাবান আরদাবিলের অন্যতম প্রধান নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়।

এদিকে মুসলমানরা আরদাবিলের সাথে সন্ধি চুকিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে আজারবাইজানের অন্যান্য শহরগুলোতে অভিযান পরিচালনায়। সুযোগে মারজাবান সন্ধিচুক্তি ভঙ্গ করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার ঘোষণা দিয়ে দেয়। তার এহেন আচরণের খবর পৌঁছে যায় মদিনায়, হজরত উমরের কানে। তিনি জানতেন, পারস্যের শত্রুরা সন্ধিভঙ্গে সিদ্ধ। তারা বেশিদিন শান্তির বাণী সহ্য করতে পারবে না। তাই মারজাবানের এমন বিদ্রোহে তিনি খুব একটা বিচলিত হলেন না। তিনি কুফার গভর্নর হজরত মুগিরা ইবনু শুবা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে একটি পত্র লিখে বললেন, দ্রুত হজরত হুজাইফা ইবনুল ইয়ামানকে একটি সেনাদলসহ আরদাবিলের দিকে প্রেরণ করুন। তিনি তাই করলেন। হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু মারজাবান শক্তিশালী হয়ে ওঠার আগেই তার ডানা ভেঙে দিলেন। আরদাবিলে পুনরায় শক্ত অবরোধ টেনে তিনি তাদেরকে খিলাফতের অনুগত হতে বাধ্য করলেন। বাৎসরিক কর প্রদানের শর্তে তারা নতুন করে মুসলমানদের অধীনতা মেনে নিল। (৮)

 বিজিত এলাকার সংহতি ও নতুন বিজয়াভিযান

আরদাবিলে পুনরায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে মুসলমানরা আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার বিজিত অঞ্চলগুলোর নিরাপত্তা ও সীমান্ত সংহতকরণের কাজে মনোনিবেশ করেন। ২২ হিজরি সনে এই গুরু দায়িত্ব দিয়ে সেখানে পাঠানো হয় সাহাবি সুরাকা ইবনু আমরকে। ইরাক থেকে শক্তিশালী এক বাহিনী নিয়ে তার সাথে যোগ দেন সাহাবি আবদুর রহমান ইবনু রাবিআও। সুরাকা এই বাহিনীর সাহায্যে রাজধানী এবং পার্শ্ববর্তী আজারবাইজানের অন্যান্য এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা ও প্রশাসন জোরদার করেন। এরপর বর্তমান ককেশাসের দাগিস্তান সাম্রাজ্যের তৎকালীন প্রধান শহরের দিকে এগিয়ে যান। সেখানকার শাসক শাহরবরাজ মুসলমানদের সাথে মোকাবেলার শক্তি নেই অনুভব করে সন্ধির আবেদন করলে ৬৪২ খ্রিষ্টাব্দে সুরাকা ইবনু আমর তাকে ও তার শহরকে জিযিয়া প্রদানের শর্তে নিরাপত্তা দান করেন।

অল্প কয়েক বছরের ব্যবধানে আজারবাইজানের দিকে দিকে উড়তে থাকল কালিমার পতাকা। মুসলমানদের ক্রমবর্ধমান উন্নতি ও জয়যাত্রার ধারাবাহিকতা ককেশাশ ও আজারবাইজানের আর্মেনীয় খৃস্টানদের পুড়িয়ে মারল। তারা প্রতিশোধের ক্রোধে অন্ধ হয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ভেতরে ভেতরে কোন চূড়ান্ত পদক্ষেপের চিন্তা করতে থাকল।

বস্তুত হজরত উমর এবং হজরত উসমান রাদিয়াল্লাহু আইহুমার খেলাফতকালের পুরোটা সময়ই, এ অঞ্চলে মুসলমানদের সামরিক অভিযান অব্যাহত ছিল। হজরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর সময়ে খেলাফতের পতাকা এদিকটায় উঁচু হলেও, হজরত উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর আমলে সেটা আরও গভীরে নিয়ে চলেন হজরত সালমান ইবনু রাবিআ। হজরত সালমানের বিজয়যাত্রার সময়ই আর্মেনীয় খৃস্টান, রোমান এবং ককেশাসীয় বিধর্মীরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঐক্যজোট গঠন করে। চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্তমূলক যুদ্ধের মানসে তারা আজারবাইজানের পশ্চিমে আর্মেনিয়ার সুমাইসাত এলাকায় এসে একত্র হয়। (৯)

কুফায় তখন খেলাফতের পক্ষ থেকে গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন ওয়ালিদ ইবনু উকবা। ইরাক, ইরান এবং আজারবাইজানের বিজিত অঞ্চলগুলোর সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বও ছিল তারই হাতে। স্বভাবতই এখানকার কোন বিদ্রোহী বা শত্রুগোষ্ঠীর অপতৎপরতার ব্যাপারে তাকেই প্রথম প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। তাই তিনি ছয় হাজার সেনা দিয়ে কুফার সেনাপতি মাসলামা ইবনু হাবিবকে সুমাইসাতের দিকে রওয়ানা করিয়ে দেন। তিনি আজারবাইজানের ইতিহাসে পরবর্তীতে অন্যতম রাজধানী হয়ে ওঠা তাবলিস এবং বর্তমান তুর্কির উত্তর সীমান্তে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য খালাত দখল করে নেন। সুমাইসাতে বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে শক্ত হাতে দমনের পর খলিফাতুল মুসলিমিন হজরত উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু আশআস ইবনু কাইস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সেখানকার নির্বাহী গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দান করেন। (১০)

খলিফা উসমানের মৃত্যুর পর হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুও আশআস ইবনু কাইসকে স্বপদে বহাল রাখেন। এতদাঞ্চলে ইসলামের প্রচার প্রসারে তিনি ছিলেন অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। তার আমলেই আজারবাইজান সত্যিকার অর্থে ইসলামি নগর হিসেবে গড়ে ওঠে। সেখানে যুদ্ধ-বিগ্রহ থেমে নিয়ে শুরু হয় কুরআন এবং অন্যান্য ইসলামি জ্ঞানের শাস্ত্রীয় চর্চা। ধর্মীয় আচার-বিধান থেকে আজারবাইজানের সংস্কৃতিতেও ইসলাম হয়ে ওঠে প্রথম অবলম্বন। পাশপাশি তিনি আরবের বহু গোত্রকে স্থায়ীভাবে আজারবাইজানে নিয়ে আসেন। বসরা এবং কুফা থেকেও প্রচুর মানুষ তার সময়ে আজারবাইজানে এসে স্থায়ী বসবাস শুরু করে। তাদের পদচারণায়, ঈমান, আকিদা, ইলম ও চেতনায় মা ওয়ারাআন নাহারের পুরো এলাকা নান্দনিক সৌরভে ভরে ওঠে।

খোলাফায়ে রাশেদার পর আজারবাইজানকে জনে-বলে, ইলমে-ঈমানে, জ্ঞানে ও প্রজ্ঞায় জাগিয়ে তোলার চেষ্টা অব্যাহত রাখেন উমাইয়া খেলাফতের শাসকেরাও। সেখানকার দেয়ালে দেয়ালে, আজও মুসলমানদের অস্তিত্বের চিহ্ন প্রবল ও প্রকট হয়ে ধরা দেয়। শামাখি অঞ্চলের জামে আল-উমাওয়ি এবং অন্যান্য প্রাচীন স্থাপনাগুলোর প্রতিটি ইটে কান পাতলে, আজও মুসলমানদের তাসবিহের আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়। (১১)

বর্তমান সীমানা ও ক্ষমতার নিকটকাল পালাবদল

সুবিশাল এলাকা নিয়ে বিস্তৃত জনপদ হিসেবে গঠিত প্রাচীন সেই আজারবাইজান এখন আর নেই। সে সময়ের রাজ্যটি বর্তমান মানচিত্রে উত্তর ইরান, আজারবাইজান প্রজাতন্ত্র এবং উত্তর তুর্কিস্তানে ভাগ হয়ে গেছে।

১৮শ ও ১৯শ শতকে ককেশীয় এই বর্তমান আজারবাইজান প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রটি পর্যায়ক্রমে রুশ ও পারস্যদেশের শাসনাধীন ছিল। রুশ গৃহযুদ্ধকালীন সময়ে ১৯১৮ সালের ২৮ মে তৎকালীন আজারবাইজানের উত্তর অংশটি একটি ইসলামী অঞ্চল হিসেবে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। কিন্তু মাত্র ২ বছরের মাথায় ১৯২০ সালে বলশেভিক লাল সেনারা এটি আক্রমণ করে আবার রুশদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে এবং ১৯২২ সালে দেশটি আন্তঃককেশীয় সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের অংশ হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। ১৯৩৬ সালে আন্তঃককেশীয় সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রটি ভেঙে তিনটি আলাদা প্রজাতন্ত্র আজারবাইজান, জর্জিয়া ও আর্মেনিয়াতে বিভক্ত করে দেওয়া হয়। তখন থেকেই আজারবাইজানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠী এবং নাগোর্নো-কারাবাখ এলাকার খৃস্টান আর্মেনীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে সুদূরপ্রসারী দ্বন্দ্বের সূত্রপাত ঘটে। এর জের ধরে নাগোর্নো-কারাবাখের জনগণ আর্মেনিয়া প্রজাতন্ত্রের সাথে একত্রিত হতে চায়।

১৯৯১ সালের ২০শে অক্টোবর আজারবাইজান স্বাধীনতা লাভ করলে এই দ্বন্দ্ব বিদ্রোহীদের হাত হয়ে সশস্ত্র সংঘাতে রূপ নেয়। ফলে নতুনভাবে স্বাধীন দেশটির প্রথম বছরগুলি রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, অর্থনৈতিক অবনতি, এবং নাগোর্নো-কারাবাখের যুদ্ধ-বিগ্রহেই অতিবাহিত হয়। ১৯৯৪ সালের মে মাসে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর বিচ্ছিন্নতাবাদী আর্মেনীয়রা যুদ্ধে ক্ষান্তি টানে। তবে এখনও নাগোর্নো-কারাবাখসহ আরও ৭টি আজারবাইজানি জেলা আর্মেনীয়দের সামরিক নিয়ন্ত্রণে আছে। ১৯৯৫ সালে আজারবাইজানে প্রথম আইনসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং ঐ বছরই সেখানে সোভিয়েত-উত্তর নতুন সংবিধান পাশ করা হয়।

উল্লেখ্য, আজারবাইজানের রাজধানী বাকুর তেলক্ষেত্র বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তেলক্ষেত্রগুলির মধ্যে অন্যতম। কিন্তু দুর্নীতি, সঙ্ঘবদ্ধ অপরাধ এবং দুর্বল সরকারের কারণে, দেশটি খনিজ সম্পদ থেকে সম্ভাব্য মুনাফা অর্জনে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলেই বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন।

পাদটিকা:

(১) তারিখে তাবারি: ৩/৫৯০-৫৯৫

(২) মুজামুল বুলদান: ইয়াকুত হামাভি ১/১৪২

(৩) খ্রিষ্টপূর্ব ৬৬০ অব্দে আজারবাইজানে জন্ম  হয় এক ঐতিহাসিক চরিত্রের, নাম তার জরথুস্ত্র। পারস্যের কথিত প্রথম একেশ্বরবাদী ধর্ম জরথুস্ত্রবাদের প্রবর্তক হিসেবে সে স্মরণীয় হয়ে আছে তার অনুসারীদের মাঝে। ভারত, বর্তমান ইরান ও ইউরোপের কিছু দেশে জরথুস্ত্রবাদের অনুসারীদের সন্ধান পাওয়া যায়।

(৪) আল-আরাব ইনতিসারুহুম ওয়া আমজাদুহুম: ৬৮ পৃ.

(৫) তারিখুর রুসুলি ওয়াল মুলুক: ৪/১৪৮

(৬) তারিখুল ইসলাম ফি আজারবাইজান: ৫১-৫২ পৃ.

(৭) তারিখুর রুসুলি ওয়াল মুলুক: ৪/১৫৫

(৮) ফুতুহুল বুলদান: বালাজুরি ৩২১ পৃ.

(৯) তারিখুল ইসলাম ফি আজারবাইজান: রজব মাহমুদ ৬১-৬২ পৃ.

(১০) ফুতুহুল বুলদান: বালাজুরি ৩২৩-৩২৪ পৃ.

(১১) তারিখুল ইসলাম ফি আজারবাইজান: রজব মাহমুদ ৬১-৬২ পৃ.

আগের সংবাদপশ্চিমবঙ্গে কওমি মাদরাসার হালচাল
পরবর্তি সংবাদসিসিলি জয় ও পরাজয়: ইতালিতে মুসলমানদের তিন শতক