আমাদের ছোটবেলার ঈদ

মুফতি ফয়জুল্লাহ:

আমার সবচে চমৎকার ঈদস্মৃতি—শৈশব ও কৈশোরের।  সেসময় একটি সুন্দর পাঞ্জাবী, পাজামা পরা, সঙ্গে আব্বার দেয়া নতুন টাকার ঘ্রাণ ছিল বড়ই আনন্দের। আমাদের পারিবারিক অবস্থা ভালো ছিলো। আব্বা সরকারী চাকুরি করতেন। সেই সুবাদে ভালো জামা-কাপড় কিনে দেয়ার সাধ্য তার ছিল। তিনি কিনেও দিতে নিষ্কম্পচিত্তে।

কস্কো সাবান ছিল আব্বার ফেভারিট। এই সাবান দিয়ে বাবা-মা মিলে আমাকে গোসল করাতেন। গোসল শেষে পরিয়ে দিতেন নতুন কাপড়। মেখে দিতেন আতর। তারপর নতুন জামা-কাপড় পরে আব্বার হাত ধরে ঈদগাহে যাওয়া, ঈদের জামাতে শামিল হওয়া, ঈদ উপলক্ষে বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনদের বেড়াতে আসা—সবকিছুতেই উৎসব উৎসব আমেজ মিশে থাকতো। দিনগুলো ছিল সুন্দর, সুখের, অনুভবের। আনন্দে উড়ে যেতে ইচ্ছে করতো আমার।

আমাদের পরিবারে আমরা পাঁচ ভাইবোন। এক বোন, চার ভাই। সবার বড় বোন, তারপর আমি।  এরপর আমার পরে তিন তিনটে ভাই। সবার ছোট ভাইটি জন্মের ক-দিনের মধ্যেই ইন্তিকাল করে। আমরা আমাদের মা-বাবাকে ঘিরেই থাকতাম। মায়ের আচল থেকে চাবি নেওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি করতাম।

কোথায় হারিয়ে গেলো সেসব দিন, রঙিন মুহূর্ত। সেই স্মৃতিগুলো এখন আমাকে বিষণ্ন করে তুলে। বেদনার স্পর্শে আমাকে আনমনা করে দেয়। চোখে ভাসে ঈদের সকালে মায়ের ব্যস্ততা, বাবার দৌড়ঝাঁপ। চোখে ভাসে কত আপনজনের হাসি হাসি মুখ। এখন তারা নেই, প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে অনেকেই চলে গেছেন ওপারে, মহামহিমের দরবারে।

সেই দিনগুলো ছিল স্পেশাল, খুবই স্পেশাল। এখন আমি তাদের সান্নিধ্যে পাই না, সংস্পর্শ পাই না। কিন্তু মনে হয়, এখনো গায়ে লেগে আছে মায়ের স্পর্শ, বাবার আদর। একদিন এভাবে আমিও চলে যাবো। আমি স্মৃতি হয়ে যাবো তাদের মতোন। ভাবি—মৃত্যুর আগে একবার যদি তাদের সঙ্গে দেখা হয়ে যেতো। তাদের সঙ্গে বসে থাকতাম, গল্প করতাম। জানি—কিছুই ফিরে আসে না। ফিরে আসে কেবল ঈদ, এইসব উদযাপন।

 

আগের সংবাদঅস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে মাদরাসা শিক্ষার ভবিষ্যৎ
পরবর্তি সংবাদহলোকাস্টের মিথ : যেভাবে তৈরি হয়েছে বিশ শতকের সবচেয়ে বড় মিথ্যাচার !