আমার ‘ইসলামি সংগীত’ চর্চা

বাংলা ভাষায় সমকালীন ইসলামি সংগীতের উজ্জ্বল মুখ আবু উবায়দা। তিনি সংগীতের ঐতিহ্যবাহী ও আধুনিক ধারার মধ্যে সমন্বয়ের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। গেয়েছেন ‘কথাতে ভুল হলে’ ও ‘মায়ের কথা পড়লে মনে’ শীর্ষক আলোচিত গান। পাশাপাশি বাউল ও সূফী ধারার বেশ কিছু জনপ্রিয় গান নতুনভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। সংগীত সাধনা বিষয়ে কথা বলতে ফাতেহ টুয়েন্টি ফোরের পক্ষ থেকে আমরা তার মুখোমুখি হয়েছিলাম। সাক্ষাৎকার গ্রহণ ও গ্রন্থনা করেছেন রাকিবুল হাসান

 ফাতেহ : সঙ্গীত নিয়ে আপনার বেড়ে ওঠা এবং ক্যারিয়ারের গল্প শুনতে চাই।

আবু উবায়দা: ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতের সাথে আমার একটা মাখামাখি ব্যাপার ছিল। তার প্রধান কারণ হলো আমার বাবা।  যার ফলে সঙ্গীতটা সিলসিলাগত ভাবেই পেয়েছি। আর  ক্যারিয়ারের কথা বলতে গেলে স্বপ্ন তো ছোটবেলা থেকেই ছিল। বড় হয়ে সেটা পূরণ হতে শুরু করেছে ।

ফাতেহ: নিজের লেখা, সুর করা এবং গাওয়া কোন গানগুলোতে বেশি সাড়া পাচ্ছেন?

আবু উবায়দা: নিজের লেখা, সুর করার মধ্যে অন্যতম ছিল ‘সাদা কাফন’ এবং ‘কথাতে ভুল হলে’। এই দুইটাতেই মূলত দর্শক সাড়া ছিল ব্যাপক।

ফাতেহ: আপনার প্রিয় গীতিকার এবং প্রিয় সুরকার কে?

আবু উবায়দা: আমার প্রিয় গীতিকার সাইয়্যেদ তানভির এনায়েত এবং শাকীর এহসানুল্লাহ। আর প্রিয় সুরকার, সুজা হায়াত (পাকিস্তান), বাংলাদেশের ইসলামি অঙ্গনে আহমদ আব্দুল্লাহ।

ফাতেহ: ইসলামি ঘরানার বিদেশী গায়ক কাকে বেশি ভালো লাগে এবং কেন?

আবু উবায়দা: ইসলামি ঘরানার বিদেশী প্রিয় গায়ক Humood Alkhudher। তার গায়কিতে এক ভিন্নতর স্বাদ পাওয়া যায়।

ফাতেহ: ইউটিউবের দর্শক-ভিউ কি গানের গুণগত মান নির্দেশ করে?

আবু উবায়দা: ইউটিউবের দর্শক-ভিউ কখনোই একটি গানের মান যাচাইয়ের মাপকাটি বা পরিমাপক হতে পরে না। এখানে অনেক রুচির অনেক বর্ণের মানুষের পদচারণা। একেকজনের রুচির ভিন্নতাও একেকরকম। কখন কোনটা ভিউ হয় বলা যায় না। তাই আমার কাছে ইউটিউবকে মনে হয় একটি ট্রেন্ডি প্লাটর্ফম।

ফাতেহ: বাংলাদেশের ইসলামি সংগীতের গুণগত মান নিয়ে আপনার মূল্যায়ন শুনতে চাই।

আবু উবায়দা: বাংলাদেশের ইসলামি সংগীতের বর্তমান মার্কেট ভালো। কিন্তু আসলে মানের দিকে তাকালে হতাশ হতে হয়। সঙ্গীত বা গান হলো চর্চা আর সাধনার বিষয়। এখানে কেউ আসলে চর্চাটা করে না। আবার কেউ কেউ চর্চা করলেও সেটাকে সাধনার স্তরে উন্নিত করতে পারে না। অথচ গান হলো সম্পূর্ণ গুরুমুখী বিদ্যা। গুরু ছাড়া গানের শিখরে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। আমাদের প্রচলিত গান শেখা বা শেখানোর প্রচলনটাও একদম ভুল। এটা নিয়ে বিস্তারিত কথা বলতে হবে।

ফাতেহ: ‘ইসলামি সংগীত’ পরিভাষাটা নিয়ে বিতর্ক আছে। সংগীতের সাথে ‘ইসলামি’ শব্দ কেন যোগ করতে হবে বা শুধু হামদ-নাতেই কেন ইসলাম আটকে থাকবে?

আবু উবায়দা: আসলে এই ব্যাপারটি এখনো বাংলাদেশের ইসলাম প্রিয় মানুষের কাছে কমপ্লিকেটেট। তাই এটা নিয়ে কোন কথা বলতে চাচ্ছি না। তবে হামদ-নাত ছাড়াও আমাদের ভিন্ন ভিন্ন ধারার গান করতে হবে মিউজিক বিহীন।

ফাতেহ: যে গানে গীতিকার ও গায়ক একই ব্যক্তি, সেই গানে কি আলাদা সৌন্দর্য তৈরি হয় বা আলাদা সুবিধা পাওয়া যায়?

আবু উবায়দা: অবশ্যই, একটি গানে একই ব্যক্তি যদি সুরকার এবং গীতিকার হন তাহলে অনেক সুবিধা হয়। যেমন গানের ফিলটা ভালো দেওয়া যায়। গানের ভেতরে ঢুকা যায়। মোটকথা হলো গীতিকার সুরকার একজন হলে গানটি প্রাণ খুঁজে পায়।

ফাতেহ: কাজী নজরুল ইসলামের ইসলামি গানগুলো আমাদের ইসলামি অঙ্গনে যতটা আলোচিত ও সমাদৃত হবার কথা, সেভাবে হচ্ছে না। এর কারণটা ঠিক কী?

আবু উবায়দা: আসলে সত্যি বলতে আমাদের অঙ্গনে নজরুল সঙ্গীত গাওয়ার জন্য একজন শিল্পীর যেই সাধনাটুকু প্রয়োজন সেটা আমাদের মধ্যে নেই বললেই চলে। যার কারণেই আমাদের অঙ্গনে নজরুল সঙ্গীতের চর্চা খুবই কম। আর যারা করে তাদের মানের দিকে তাকালে সঙ্গীতজ্ঞরা আমাদের হেয় প্রতিপন্ন করে। যার কারণেই আমাদের অঙ্গনে নজরুল সঙ্গীত আলোচিত হতে পারে না।

ফাতেহ: বাউল ও সূফী সঙ্গীতকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?

আবু উবায়দা: আমার কাছে মনে হয় এই গানগুলোতে যেই শক্তি আছে তা আমাদের এখনকার গানে খুঁজে পাওয়া যায় না। এবং ব্যক্তিগতভাবে আমি এই গানগুলোকে বাদ্য ছাড়া নতুনভাবে উপস্থাপন করার আপ্রাণ চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

ফাতেহ: বাংলাদেশে ‘ইসলামি’  শিল্পীদের জীবনঘনিষ্ঠ গান নেই বললেই চলে। এই কমতিটা কেন?

আবু উবায়দা: আমাদের একটা সমস্যা হলো নিজে থেকে কিছুই করার চিন্তা থাকে না। আমরা চাই অমুকে একটি গান করেছে আমি তার মতো একটি গান করবো। যার কারণে সৃজনশীলতা হারিয়ে গিয়ে কপি পেস্টের একটা ব্যাপার দাঁড়িয়ে যায়। এর ফলে জীবনমুখী গান বা এবস্ট্রাক্ট ঘরানার গান খুব কম তৈরী হয়। সেইসাথে সাথে ফিন্যান্সিয়াল একটা ব্যাপার থাকে। এছাড়া জীবনঘনিষ্ঠ গানগুলো প্রথমে সমাদৃত কম হয়। তাই হয়ত কেউ করতে চায় না।

ফাতেহ: লিরিক লেখার মানুষ কম, এটা কীভাবে কাটিয়ে উঠা যায়?

আবু উবায়দা: আমরা গীতিকারদের মূল্যায়ন করতে জানি না। অপরিণত মানুষের লিরিক দিয়ে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি সয়লাভ হয়ে আছে। সেখানে ভালো মানের গীতিকারের কোন মূল্যায়ন নাই। ফলে যারা আসলেই ভালো লিখে তারা আর এই দিকে ধাবিত হতে চায় না। কাটিয়ে উঠার জন্য আমাদের আমাদের সবাইকে একটু নিজেরদের সময় এবং মনোযোগকে ইনভেস্ট করতে হবে। ইনশাআল্লাহ, এখন আমরা কাছে মনে হচ্ছে, নিকট ভবিষ্যতেই লিরিকের উপর মানুষের বিশাল একটা আগ্রহ দাঁড়াবে।

ফাতেহ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছু বলুন।

আবু উবায়দা: আসলে আমি পরিকল্পনায় খুব একটা বিশ্বাসী না। তবে সিদ্ধান্ত একটাই; নিজের কাজের পাশাপাশি গান করে যাব ইনশাআল্লাহ!

আগের সংবাদবাংলাদেশে আরবি ভাষার চর্চা ও জামিয়া ইমদাদিয়ার সিলসিলা
পরবর্তি সংবাদইলমি রিহলাহ