‘আশরাফুস সাওয়ানেহ’: থানবির জীবনী

মুনশী নাঈম:

জন্ম ও বংশ

আশরাফ আলী থানবি রহ. ১৯ আগস্ট, ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে, রবিউস সানী ৫, ১২৮০ হিজরীতে ভারতের উত্তর প্রদেশের থানাভবনে জন্মগ্রহণ করেন। গোলাম মোর্তজা পানিপথীর নির্দেশক্রমে নবজাতকের নাম রাখা হয় আশরাফ আলী। তার বাবার নাম ছিল আবদুল হক। তিনি হজরত উমর রাদি.-এর বংশের লোক। তিনি ছিলেন একজন ক্ষমতাবান নেতা এবং ধনবান উদারহস্ত ব্যক্তি। মিরাঠের একটি বিরাট রিয়াসতের কর্তৃত্বপরায়ন ছিলেন তিনি। পাশাপাশি সেনাবাহিনীর রসদ সরবরাহের ঠিকাদারিও করতেন তিনি। হাফেজ না হলেও তিনি নাজরানায় পাকা ছিলেন। ছিলেন ফারসি ভাষায় পারদর্শী। তার মাতা ছিলেন ছিলেন হজরত আলী রাদি.-এর বংশের। মা ছিলেন বুদ্ধিমতি, মামা পীরজি ইমদাদ আলী ছিলেন একজন কামেল বুজুর্গ। নানা মীর নাজাবত আলী ছিলেন উচ্চপর্যায়ের ফারসি ভাষাবিদ। তিনি ছিলেন মাওলানা শাহ নিয়াজ আহমদ বেরেলবি রহ.-এর এক খাস খলিফার মুরিদ। সমকালীন বুজুর্গ হাফেজ গোলাম মুরতাযা পানিপথীর সঙ্গে তার বিশেষ সম্পর্ক ছিল।

থানবি রহ. ভাইবোনদের মাঝে সকলের বড় ছিলেন। শৈশবে মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তিনি মাকে হারান। কিন্তু মায়ের মমতায় পিতা তাকে লালন-পালন এবং লেখাপড়া করান। তার আভিজাত্য এবং আত্মমর্যাদাবোধ যেন ক্ষুণ্ন না হয়, সেদিকেও তিনি খেয়াল রাখেন। তারাবিতে কুরআন খতমের পর মিষ্টি বিতরণ করা হতো। তিনি কখনো থানবি রহ.-কে সেসব মিষ্টি খেতে দিতেন না। বরং বাজার থেকে কিনে এনে তৃপ্তিভরে খাওয়াতেন, যেন তার অন্তরে লোভ না থাকে।

থানবি রহ. বাজারি ছেলেদের সঙ্গে খেলাধূলা করতেন না। খেলাধূলার সময়ও জামাতে নামাজ পড়ার প্রতি খেয়াল রাখতেন। ১২-১৩ বছর বয়স থেকে তিনি তাহাজ্জুদের পাবন্দি করতে শুরু করেন। তার প্রকৃতি এতটাই সংবেদনশীল ছিল যে, কারো উন্মুক্ত পেট দেখে তার বমি হয়ে যেতো। এ কারণে সমবয়সীদের থেকে তাকে অনেক তিরস্কার শুনতে হয়েছে। হাজি ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. এর পীরভাই মাওলানা শায়খ মুহাম্মদ থানবি রহ.-এর শৈশবের নিদর্শন দেখে বলেছিলেন, এই ছেলে আমার পর আমার জায়গায় বসবে।

শিক্ষা ও বেড়ে উঠা

শৈশবে তিনি হযরত হাফেয হোসাইন আলী রাহ.-এর কাছে তিনি কুরআন মজীদ হেফয করেন। ফারসী ও আরবীর প্রাথমিক কিতাবগুলো নিজ গ্রামে পাঠ করেন হযরত মাওলানা ফতেহ মুহাম্মদ থানবি রাহ.-এর কাছে। মামা ওয়াজেদ আলীর নিকট ফারসিভাষার উচ্চপর্যায়ের কিবাবগুলো পড়েন। এরপর তিনি ১২৯৫ হিজরীতে ইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য দারুল উলুম দেওবন্দে ভর্তি হন। সেখানে হজরত মানফায়াত আলীর নিকট ফারসি ভাষার অবশিষ্ট নেসাব পূর্ণ করেন এবং ফারসিভাষায় পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। দারুল উলুম দেওবন্দে পড়াকালীন খুঁজলিতে আক্রান্ত হয়ে বাড়ি ফিরলে অবসরে তিনি ফারসিভাষায় ‘যেরে বিম’ নামে একটি কবিতার বই লিখেন। তখন তার বয়স ১৮ এর বেশি ছিল না। দেওবন্দে পাঁচ বছর অধ্যয়ন করে ১৩০১ হিজরির শুরুতে শিক্ষা সমাপ্ত করেন। দারুল উলুম দেওবন্দের প্রথম যুগের শিক্ষা সমাপনকারী ছাত্রদের মাঝে তিনি অন্যতম।

থানবি রহ. ছাত্রকালে বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়স্বজন থেকে দূরে থাকতেন। মোতালাআর অবসরে প্রিয় উসতাদ মাওলাম মুহাম্মদ ইয়াকুব রহ.-এর কাছে গিয়ে বসে থাকতেন। ইয়াকুব রহ. ছিলে হাজি ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ.-এর খলিফা। যে পাঁচ বছর তিনি দেওবন্দে পড়াশোনা করেছেন, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে যেতেন না। কেউ তার সঙ্গে এলে তিনি তার প্র্রতি ভ্রুক্ষেপও করতেন না। ফলে কেউ কেউ তাকে অহংকারী বলে ভুল করতো।

তিনি অন্য ছাত্রদের সাজসজ্জা এবং তাদের কোনো জিনিসের দিকে তাকাতেনও না। তিনি বলতেন, ছাত্রদের সাজসজ্জা এই কথার প্রমাণ যে, তার ইলমের স্বাদ পায়নি।

শিক্ষা সমাপনের পর থানবি রহ. জানতে পারলেন, দস্তারবন্দী এবং সনদ বিতরণী অনুষ্ঠান হবে। এর উদ্বোধন হবে হজরত গাঙ্গুহী রহ.-এর হাতে। থানবি রহ. তার সহপাঠিদের নিয়ে ইয়াকুব রহ.-এর কাছে গিয়ে বললেন, আমরা এই দস্তারের যোগ্য নই । এই আয়োজন বাদ দেয়া হোক। নয়ত মাদরাসার বদনাম হবে যে, অপদার্থ ছেলেদের দস্তার দেয় হয়েছে। ইয়াকুব রহ. বললেন, তোমাদের এই ধারণা ভুল। উসতাদদের সামনে তোমরা নিজেদেরকে দেখতে পাচ্ছো না। এমনটাই হওয়া উচিত। কিন্তু বাইরে গেলে তোমরা নিজেদের মর্যাদা বুঝতে পারবে। যেখানেই যাবে, শুধু তোমারই থাকবে। বাকি ময়দান থাকবে পারিষ্কার।’ ইয়াকুব রহ. এর এই পরবর্তীতে কাটায় কাটায় মিলেছে।

দেওবন্দের পর তিনি মক্কা মুকাররমায় মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ্‌ মুহাজিরে মক্কীর কাছে কেরাত ও তাজবীদ শিখেন।

শিক্ষকতা

কানপুরে প্রাচীন একটি মাদরাসা ছিলো। নাম—মাদরাসায়ে ফয়জে আম। মাদরাসাটির সদরে মুদাররিস মাওলানা আহমদ হাসান যুক্তিশাস্ত্রে ছিলেন বিশেষ দক্ষ এবং অভিজ্ঞ। কোনো কারণে অসন্তুষ্ট হয়ে তিনি এ মাদরাসা ছেড়ে দেন। অন্যত্র গিয়ে ‘দারুল উলূম’ নামে নতুন একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। তখন দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে সদ্য পড়ালেখা শেষ করেছেন হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবি রহ.। কানপুর মাদরাসা থেকে উক্ত পদের জন্য তার নিকট প্রস্তাব আসে। আগে কখনও তিনি শিক্ষকতা করেননি। পড়ালেখা শেষ করা তরুণ একজন আলেম। নিজের উসতাদ এবং পিতার পরামর্শ এবং অনুমতিক্রমে তিনি ১৩০১ হিজরির সফর মাসে কানপুর মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তার শিক্ষকজীবন শুরু হয় পঁচিশ রূপি বেতনে।

শিক্ষক জীবনের শুরুতেই থানবি রহ.কে পড়াতে দেয়া হয় বড় ক্লাসের বড় বড় কিতাব। প্রথম প্রথম ঘাবড়ে গেলেও দোয়ার বদৌলতে তিনি সাহস অনুভব করেন। দরসে পড়াতে থাকেন বেশ সাবলীলভাবেই। মাঝেমধ্যে অনুভব করতেন, অদৃশ্য থেকে কেউ তার সাহস বাড়িয়ে দিচ্ছেন। অন্তরে ছড়িয়ে দিচ্ছেন প্রশান্তি। হজরত থানবি রহ. এমন একনিষ্ঠতার সঙ্গে পড়াতে থাকেন, কানপুরে তার প্রসিদ্ধি ছড়িয়ে যায় দু’তিন মাসেই। তার দরস-তাদরিসে মুগ্ধ হয়ে যায় ছাত্ররা; বয়ানে-নসিহতে অনুরক্ত পড়ে সাধারণ জনতা।

থানবি রহ.-এর এই জনপ্রিয়তা কাজে লাগাতে চায় মাদরাসা কমিটি। তারা তার নিকট চাঁদা কালেকশনের আবেদন করলো। তিনি না করে দিলেন। কারণ, তিনি এভাবে চাঁদা কালেককশন বরকতহীন, আত্মমর্যাদা পরিপন্থী এবং নাজায়েজ মনে করতেন। প্রত্যাশা মোতাবেক চাঁদা কালেকশন না করায় কমিটি থানবি রহ.কে নিয়ে কানাঘুষা করতে থাকে আড়ালে-আবডালে। বিষয়টি থানবি রহ.-এর কানে গেলে তিনি মাদরাসা থেকে ইস্তফা দিয়ে দেন। অনেক অনুরোধ করা সত্বেও তিনি আর থাকেননি। গ্রামে চলে যাবার আগে তিনি দেখা করতে যান মাওলানা শাহ ফজলুর রহমান গঞ্জে মুরাদাবাদীর সঙ্গে।

এদিকে থানবি রহ. চলে যাওয়ায় ছাত্রদের মধ্যেও হতাশা তৈরী হয়। জনাব আবদুর রহমান খান এবং হাজি কেফায়াতুল্লাহ পরামর্শ করেন, এমন মাওলানা পাওয়া মুশকিল হবে। তাকে চলে যেতে দেওয়া যাবে না। দরকার হলে তার জন্য নতুন মাদরাসা কায়েম করা হবে। আমাদের শহরের মাদরাসাগুলোতে মানতেক বেশি পড়ানো হয়। এমন একটি মাদরাসা দরকার, যেখানে দিনিয়াত বিষয়গুলো পূর্ণ শেখানো হবে। কানপুরে থানবি রহ.-এর বেতন ছিলো পঁচওশ রূপি। তারা দুজন সিদ্ধান্ত নেন, এখানেও তাকে পঁচিশ রূপি বেতন দেয়া হবে। খান সাহেব দিবেন বিশ রূপি, হাজি সাহেব পাঁচ রূপি।

গঞ্জে মুরাদাবাদীর দরবার থেকে ফিরে গ্রামের পথ ধরেন থানবি রহ.। কানপুরে তার পথ আটকালেন খান সাহেব এবং হাজি সাহেব। তাদের মিনতি তিনি ফেলে দিতে পারলেন না। টপকাপুর মহল্লার জামে মসজিদে তিনি দরস দিতে শুরু করলেন। এভাবেই ভিত্তি স্থাপিত হয় নতুন মাদরাসার। মসজিদের সঙ্গে মিল রেখে মাদরাসার নামকরণ করা হয়—জামিউল উলূম।

শিক্ষকতার দিন চলতে থাকে। একসময় থানবি রহ.-এর মনে ভাবনার জন্ম হয়—আল্লাহর কাজ আল্লাহর জন্যই শুধু করা উচিত। এই কাজে বেতন নেয়া একবারেই অনুচিত। এই ভাবনার সমাধান হিসেবে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, চিকিৎসা বিদ্যা শিখে এর মাধ্যমে তিনি জীবীকা নির্বাহ করবেন। বিদ্যা শিখতে তিনি হাকিম আবদুল মজিদ খানের চলেও যান। কিন্তু পনেরো দিনের বেশি তিনি সেখানে থাকতে পারেননি। কানপুরবাসীর আবেদনে তিনি আবার কানপুরে ফিরে আসেন। তার ফিরে আসায় হাজি সাহেব রহ.-ও অত্যন্ত আনন্দিত হন। এখানে টানা ১৪ বছর দরস-তাদরিসে মশগুল থাকেন। তারপর ১৩১৫ হিজরিতে তিনি কানপুর ছেড়ে স্থায়ীভাবে থানাভবনে বসবাস শুরু করেন।

বায়াত ও হজ

দারুল উলুম দেওবন্দে অধ্যয়নের সময় আল্লামা রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি রহ.-এর প্রতি শিষ্যত্ব গ্রহণের আবেদন করেন। কিন্তু গাঙ্গুহি রহ. শিক্ষার্থীদের বাইয়াত করানো সমীচীন মনে করতেন না, তাই তিনি নিষেধ করে দিলেন। ১২৯৯ হিজরি রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি রহ. হজের ইচ্ছা করলে থানবি রহ. তাঁর মাধ্যমে হাজি ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কি রহ.-এর কাছে চিঠি লেখেন। চিঠিতে তিনি তাঁর বাইয়াতের আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং গাঙ্গুহি রহ.-এর কাছে সুপারিশের অনুরোধ করেন। চিঠি পাঠ করে হাজি ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কি রহ. নিজেই তাঁকে বাইয়াত করে নেন।

১৩০১ হিজরিতে থানবি রহ. হজে গেলে প্রিয় শায়খের সঙ্গে তাঁর সরাসরি সাক্ষাৎ হয়। হজ শেষ হলে শায়খ তাকে মক্কায় ছয় মাস থেকে যেতে বলেন। তিনিও প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু তার পিতা তাকে সঙ্গে নিয়ে আসবে চাইলে শায়খ আর বাধা দেননি। বরং থাবনি রহ.কে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, ‘পিতার আনুগত্য আগ্রগণ্য। এবার চলে যাও। পরে দেখা যাবে।’ পিতার মৃত্যুর পর তিনি ১৩০৭ হিজরিতে দ্বিতীয়বারের মতো হজে গেলে প্রিয় শায়খের সাক্ষাত লাভে ধন্য হন এবং ছয় মাস তার কাছে অবস্থান করেন। ১৩১১ হিজরিতে তিনি হাজি ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কি (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।

বিয়ে ও পরিবার

১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে মাওলানা থানবি রহ. প্রথম বিবাহে আবদ্ধ হন। গাঙ্গুহে বিয়ে পড়িয়েছিলেন দারুল উলুম দেওবন্দের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা রশীদ আহমাদ গাঙ্গুহী রহ.। এই স্ত্রী ছিলেন হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ.-এর বাইয়াতপ্রাপ্ত। মুত্তাকী ও পরগেজগার ছিলেন।

দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন ভাতিজা মাওলানা সাঈদ আহমাদ থানবি রহ.-এর বিধবাপত্নী। ভাতিজার মৃত্যুর একবছর পর ১৩৩৪ হিজরী রমজানুল মোবারাকের মাঝামাঝি সময়ে মাওলানা থানবি রহ. বিধবাপত্নীকে বিয়ে করেন। উভয় স্ত্রী ছিলেন নিঃসন্তান। দ্বিতীয় বিয়ের সময় তাদের সহযাত্রী হয় মাওলানা সাঈদ মরহুমের এক মেয়ে। থানবি রহ. যার লালনপালন করেছেন ও পরবর্তীতে মাওলানা জামিল আহমাদ থানবির সাথে বিবাহ দিয়েছেন।

মাওলানা থানবি রহ. যখন দ্বিতীয় বিয়ে করেন, প্রথম স্ত্রী বলেছিলেন, ‘আপনি তো শাগরিদদের জন্য মাসনার পথ সুগম করলেন। এখন তারা আপনাকে অনুসরণ করে দ্বিতীয় বিয়ে করতে উদ্বুদ্ধ হবে।’ হজরত উত্তরে বলেছিলেন, ‘আমি পথ সুগম করিনি, বরং বন্ধ করেছি। ওরা যখন দেখবে উভয় স্ত্রীর মাঝে সমানাধিকরণ কতটা কষ্টসাধ্য, তখন এ সিদ্ধান্তে আগ্রহী হবে না।’

লেখালেখি

থানবি রহ. রচিত গ্রন্থ ও পুস্তকের সংখ্যা প্রায় আটশ৷ ছোট ছোট রিসালা, পরিভাষায় যেগুলোকে মাযামিন ও মাকালাত তথা প্রবন্ধ বলা হয়, সেগুলোও এর অন্তর্ভুক্ত। ১৩৫৪ হিজরিতে থানবি রহ.-এর খাদেম মাওলানা আবদুল হক ফাতেহপুরী থানবি রগ.-এর রচনাবলীর একটি তালিকা প্রকাশ করেন। তালিকাটি ছিল ৮৬ পৃষ্ঠাব্যাপী। মুসলমানদের এমন খুব কম বিষয়ই আছে, যে বিষয়ে থানবি রহ. কলম ধরেননি।

তার রচনাবলীর অধিকাংশই ইসলাহ এবং ফিকহ সম্পর্কিত। দরস সম্পর্কিত কিতাব কম হলেও দু’চারটি আছে। আর ধর্মীয় রচনাবলীর মধ্যে উলুমুল কুরআন, উলুমুল হাদীস, কালাম ও আকায়েদ, ফিকহ ও ফতোয়া, সুলুক, তাসাউফ এবং মাওয়ায়েজ সম্পর্কিত। থানবি রহ.-এর অধিকাংশ বই গদ্যাকারে এবং উর্দু ভাষায় রচিত। তবে ১২-১৩টি কিতাব রচিত আরবিতে।

তাঁর প্রসিদ্ধ গ্রন্থগুলোর মধ্যে বেহেশতি জেওর, বয়ানুল কোরআন, মোনাজাতে মাকবুল, তালিমুদ্দিন, ইসলাহুর রুসুম বাংলাভাষী পাঠকের মধ্যেও বহুল পঠিত। তাঁর আরো কয়েকটি গ্রন্থ হলো—তারবিয়াতুস সালিক, ইমদাদুল ফাতাওয়া, কাসদুস সাবিল, জাঝাউল আমাল, আগলাতুল আউয়াম, মাওয়ায়িজে আশরাফিয়া, আমালে কোরআনি, আশরাফুত তাফসির, আদাবুল মুআশারাত, হায়াতুল মুসলিমিন।

ইন্তেকাল

ইনতেকালের পাঁচ বছর পূর্ব থেকেই পেটের অসুখ এবং হৃদরোগে ভুগছিলেন থানবি রহ.। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে সহজে দূর হতো না। ডায়রিয়া হলে চলতেই থাকতো। বিভিন্ন অঙ্গ ফুলে গিয়েছিলো। এক পর্যায়ে হারিয়ে ফেলেন ক্ষুধার অনুভূতি। দুর্বল অক্ষম ও শয্যাশয়ী হয়ে পড়েন। বেশিরভাগ সময় বেহুঁশ থাকতেন। ১৩৬৫ হিজরির ১৫ রজব সোমবার সকাল থেকে লাগাতার ডায়রিয়া শুরু হয়। দুর্বলতায় বিছানা থেকে উঠার শক্তিও পাচ্ছিলেন না। সোমবার সন্ধ্যায় ছোট স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেন, আমি তোমাদের দুজনের মাসিক খরচ দিয়েছি? তাকে সান্ত্বনা দিয়ে তারা বললো, আমরা অনেক কিছু পেয়েছি। নিশ্চিন্ত থাকুন।

এক জীবন অলো বিলাতে বিলাতে পরিশেষে ১৬ রজব ১৩৬২ হিজরি মোতাবেক ১৯ জুলাই ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে উপমহাদেশের বিখ্যাত এ আলেম ইন্তেকাল করেন। বেদনায় অশ্রুসিক্ত হয় অসংখ্য ভক্ত-মুরিদান। সাহারানপুর এবং অন্যান্য শহর থেকে স্পেশাল ট্রেন আসে। পঙ্গপালের মতো ছুটে আসে মানুষ থানবি রহ. এর জানাজায়। জানাজার নামাজ পড়া হয় ঈদগাহে। তারপর তারই ওয়াকফকৃত কবরস্থান ‘কবরস্তানে ইশকে বাযাঁ’তে তাকে দাফন করা হয়।

আগের সংবাদসংক্ষিপ্ত সিলেবাসে হবে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা: শিক্ষামন্ত্রী
পরবর্তি সংবাদকরোনায় দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ২১ জনের মৃত্যু