
জুবায়ের রুমেল:
… বিশাল এক হলোগ্রাফিক প্রজেক্টরের সামনে দাঁড়ানো লোকটা। মুখের রেখায় বিষাদের ছায়া, উত্তেজনায় অল্প অল্প কাঁপছে। আবেগ এসে ভর করেছে গলার কাছটায়। বুকের ভেতর শির শির করা এক অনুভুতি। অপলক তাকিয়ে আছে প্রজেক্টরে ফুটে উঠা সবুজ গাছ-গাছালির দিকে। স্মৃতিরা এসে ভর করছে- জ্যোৎস্না ঝরা আকাশে মিটিমিটি তারার ফুলঝুরি, ফুলে ফুলে আগুন জ্বালানো ঋতুরাজ বসন্ত, শরতের মেঘমুক্ত আকাশে অবারিত নীল, শীত সকালের হিমেল হাওয়া। হৃদয়ের গহনে চেনা সুর, চেনা গান, চেনা পরিবেশ ছেড়ে যাওয়ার হাহাকার…।
পুরো মানব জাতির ইতিহাস আজ সাক্ষী হতে চলেছে প্রথম আন্ত-গ্যালাকটিক অভিযাত্রার। কিছুক্ষণের মাঝেই যাত্রা শুরু করবে স্টার ফ্লিট বুরাক। আদিল, আজিম, মুজিব, মুকাদ্দিম, নাফি, তাওয়াব, সালাম- এমন নিরানব্বইটা শিপ নিয়ে গঠন করা হয়েছে বুরাক। কমান্ডে আছেন মহামান্য মার্শাল অব দ্যা ফ্লিট সাঈদ শিরাজী। সম্মান আর ভালবাসায় অনেকে যাকে ডাকে খায়রুল্লাহ অব দ্যা স্কাই। কল সাইন আলিফ। একাধারে তিনি ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব এয়ার ডিফেন্স আর ওয়ার্ল্ড হলিয়েন প্রিভেনশন টাস্কফোর্সের প্রধান।
অপারেশন মিরাজ। মিশন ইনশাআল্লাহ। ২৭ রজব, ১৬৫৯ হিজরী।
কাঁচা-পাকা দাড়ি মার্শালের চেহারায় এনেছে একটা সৌম্য সমাহিত ভাব। বিষাদকে পিছনে ফেলে কর্মপরিকল্পনা গোছাতে ব্যস্ত। গত হিজরীতে হজের সময় মক্কায় ওয়ার্ল্ড ইসলামিক ইউনিয়নের সভায় সিদ্ধান্ত হয় আজকের এই স্পেস প্রোগ্রামের, এই আন্ত-নাক্ষত্রিক অভিযানের। হঠাৎই হালকা সবুজাভ আলোয় ভরে উঠলো রুমটা। ভেসে এলো এক সুরেলা আওয়াজ…। ‘আল্লাহু আকবার।’ ‘আল্লাহু আকবার।’ যোহরের আজান। চিন্তায় ছেদ পড়ল মার্শালের। নিজের অজান্তেই বলে উঠল, আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। …
দৃশ্যকল্প (অপারেশন মিরাজ; মিশন ইনশাআল্লাহ)
ভাত ঘুম দুপুরে বাড়ির উঠোনে কাথা সেলাইয়ে ব্যস্ত দাদীর মুখে হাজারো কিস্সারা এসে ভিড় জমাতো সেই শৈশবে। কাঞ্চনমালা, সুয়োরানী আর দুয়োরানী পার হয়ে একসময় কিস্সাটা এসে থামত আসহাবে কাহাফের সেই গুহাবাসী যুবকদের কথায়। কখনোবা নবীজীর মেরাজের কথায়। আবার কখনোবা আগুনমুখো একচোখা দাজ্জাল চকিৎ ভয় ধরিয়ে দিয়ে যেত মনের মাঝে, জবুথবু হয়ে যেতাম। পান খাওয়া লাল ঠোঁটে মিটিমিটি হাসত দাদী আমার।
একটু বড় হয়ে যখন নিজে নিজে পড়তে শিখলাম, বাবা এনে দিলো নবীজী স. এর জীবনী। বুড়ি দাদিমার কাটা বিছানো পথের ঘটনা পড়তে গিয়ে কত প্রশ্ন আমার। হিলফুল ফুজুলের কথা পড়েছি না বুঝেই। মায়ের মুখে শুনেছি হিজরতের মর্মস্পর্শী গল্প-কথা। এক বিকেলে ছোট্ট চাচা এনে দিলেন চার খলিফার জীবনী। আরও কত রং বেরংয়ের বই। সাপমুখো এক নৌকায় ডাল তলোয়ার হাতে অনেক মানুষ, মাথার উপরে দেও-দানো- মনে দাগ কেটেছিল বইটা; বড় হয়ে বুঝেছি সিন্দাবাদের অদ্ভুত সব সমুদ্রযাত্রায় অংশ নিয়েছি সেই শৈশবেই। বাবা পড়তো, আমি শুনতাম। শুনতে শুনতে পড়তে পড়তে পড়ার নেশায় পেয়ে বসলো আমাকে। কৈশোরের দুঃসাহসিক অভিযাত্রা, রহস্য-রোমাঞ্চের নোনা স্বাদ আর জলা-জঙ্গলের সোঁদা গন্ধে ভরা শিকার কাহিনি আমাকে টেনে নিয়ে গেল স্বপ্ন-কল্পনার এক মায়াবী জগতে। শব্দের সৌরভে মাতোয়ারা আমার সামনে একে এক খুলে যেতে লাগল- পৃথিবীর মানচিত্র, ভাষা, পোশাক, মাটি আর মানুষের রং। এভাবেই শৈশব আর কৈশোরের সারল্যের মাঝে গেথে গিয়েছিল সাহিত্যের প্রথম পাঠ।
এখন এই মধ্য বয়সে এসে, যখন টিকে থাকার সংগ্রাম, বেঁচে থাকার উদ্যম আর ভালোবাসার আনন্দ-বেদনায় উদ্বেল হয়ে উঠি তখন মনে হয় শৈশবের সেই আউট বই আর মা-দাদীর মুখে শোনা নবী-রাসুলের জীবনী অলৌকিক নিয়তির মতো এখনো এসে পথ বাতলে দেয়। আরও স্পষ্ট করে বললে মুসলিম পারিবারিক আবহে শুনা আর পড়া শৈশবের সেই গল্প-গাথারাই আজকের আমিতে পরিণত করেছে আমাকে। বহুমুখী মানবিক সম্পর্কের মাঝেই যে জীবনের সামগ্রিকতা সেই খোঁজতো আমি গল্প-গাথার মাঝেই পেয়েছিলাম। বুঝেছিলাম বার রকম মানুষ নিয়েই সমাজ।
শুধুই কি আমি, আমার প্রজন্মের অনেকের আবেগের গল্পগুলো হয়তো একই রকম। কিন্তু এই ২০২০ সালে এসে মনে হয় মুসলিম বাঙ্গালি পারিবারিক আবহে গল্প-কথা-সাহিত্য পাঠের জায়গাটা দখল করে নিয়েছে নেটফ্লিক্স·-অ্যামাজনের মতো অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম আর হিন্দি সিরিয়াল-সিনেমার মতো কর্পোরেট বেনিয়ারা। দাদী-চাচী-মাদের মুখে গল্প শুনার চেয়ে স্মার্টফোনের স্ক্রীনে আটকে গেছে এখনকার বেশিরভাগ কিশোর-কিশোরীদের জীবন। ছেলেমেয়েরা আজ ভুলতে বসেছে মানুষের সরলতা আর পারস্পরিক নির্ভরশীলতার আখ্যান। ফেসবুক নামের চিড়িয়াখানায় চিড়িয়া সাজতে ব্যস্ত সবাই।
বাঙ্গালি মুসলমানের আত্মপরিচয় নির্মাণের এই দ্বন্দ্ব আর সংকটমুখর সময়ে তাইতো বার বার ফিরে আসা এই সব গল্প-গাথার মাঝে। মানব ইতিহাস যেদিন শুরু হয়েছে, গল্প-গাথারাও এসে ভিড় করেছে সেদিন। নিজের অভিজ্ঞতা অন্যের সাথে ভাগাভাগি আর অবসরকালীন বিনোদন- এই দুইয়ে মিলে মানুষের জীবন হয়ে উঠেছে গল্পময়। পরিবেশ, জীবনযাত্রা আর আনন্দলাভের জন্য প্রাপ্ত সময়- এই তিনের সমন্বয়ে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পরিবর্তিত হয়ে আসছে গল্পের আকার, প্রকার আর ভেদ। কথা, নীতিকথা, রূপকথা, উপকথা, ছোট গল্প, উপন্যাস এমনতরো অনেক প্রকরণে ভাগ হয়েছে আমাদের সেই আদি ও অকৃত্রিম ‘গল্প’ বন্ধুটি। আবার বর্ণনাভঙ্গি আর বিষয়বস্তুর উপজীব্যতার উপর নির্ভর করে ‘গল্প’টি কখনো কখনো হয়ে উঠেছে লিটারারি ফিকশন কিংবা জনরা ফিকশন কিংবা সায়েন্স ফিকশনের মতো নানান ধারা। আজকের এই অস্থির সময় আর পরিপার্শ্বের স্বপ্ন ভাঙ্গার বেদনার মাঝে, অতিমারীর বিষণ্ন সময়ে সায়েন্স ফিকশন নিয়ে কিছু কড়চা শেয়ার করা।
সায়েন্স ফিকশন বা কল্প বিজ্ঞান বললেই চোখের সামনে ভেসে উঠে ভিন গ্রহের কোন বুদ্ধিমান প্রাণী কিংবা সিনেমায় দেখা কোন রোবটের ছবি। হ্যাঁ, সায়েন্স ফিকশনের প্রাথমিক গল্পটা এমনই। কাছের কিংবা দূরের ভবিষ্যতে ভর করে, এক মুঠো কল্পনা আর এক মুঠো বিজ্ঞানের মিশেলে সায়েন্স ফিকশন আমাদের শুনায় অনাগত দিনের গল্প যেখানে এক সুতোয় গাঁথা পরে ধর্ম, সমাজ, সংসার আর সময়। শুধুই লাগাম ছাড়া কল্পনা নয়, মাপা স্কেলে বিজ্ঞান- সার্থক সায়েন্স ফিকশনের পূর্বশর্ত। হুগো গার্নসব্যাক এর কলমে জন্ম নেয়া ‘সায়েন্স ফিকশন’ পরিভাষাটি আজ একটি স্বতন্ত্র সাহিত্যিক ঘরানা হিসেবে সর্বজনগ্রাহ্য এবং বহুল পঠিত।
যাত্রা শুরুর পর থেকেই নানান আবর্তন-বিবর্তনের মাঝে সায়েন্স ফিকশনের দুটো রেখা স্পষ্ট হয়ে উঠে- ইউটোপিয়ান ও ডিসটোপিয়ান ধারা। ভবিষ্যতের এক পরিপূর্ণ রাষ্ট্রব্যবস্থা যেখানে নাই কোন খুঁত, নাই কোন দমন-নিপীড়ন; যেখানে যান্ত্রিক ও প্রযুক্তিগত উন্নতি মানুষের জীবনযাপনকে করে তুলেছে সহজতর ও আনন্দময়- এমন একটা কল্পিত স্বর্গলোকের বৈজ্ঞানিক ও যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা তুলে ধরে ইউটোপিয়ান ধারাটি। জুল ভার্ন, এইচ.জি ওয়েলস, আর্থার সি ক্লার্ক আর আইজ্যাক আসিমভের মতো লেখকেরা এই ধারার চর্চা করেছেন। অন্যদিকে, ডিসটোপিয়ান ধারায় দেখতে পাই একটি অরাজক ভবিষ্যৎ সমাজ যেখানে নৈতিকতার কোন বালাই নেই, প্রযুক্তিগত উন্নতি মুষ্টিমেয় কিছু মানুষকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতার শীর্ষে নিয়ে যায় এবং সংগত কারণে ভুক্তভোগী ও দ্রোহী হয়ে উঠে সাধারণ মানুষ। ‘উন্নততর প্রযুক্তি ও তার প্রভাবে জীবনের অবমূল্যায়ন’ হয়ে উঠে এই ধারার প্রধান চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। উইলিয়াম গিবসন, নীল স্টিফেনসন, ব্রুস স্টার্লিং, ফিলিপ কে ডিক সহ আরো অনেকে এই ধারায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। এভাবেই ‘জীবনবোধে বিজ্ঞানের সংঘাত কিংবা সহাবস্থান’ কে উপজীব্য করে সায়েন্স ফিকশন আজকের অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান সমাজ বাস্তবতার নিরিখে ইউটোপিয়ান ধারাটি হয়ে উঠেছে মৃতপ্রায়, চলছে ডিসটোপিয়ান ধারার জয়-জয়কার।
সায়েন্স ফিকশনকে ঈগলের চোখ করে যদি ইসলাম ও মুসলিম বিশ্ব বিশেষ করে আরব বিশ্বে ও সাহিত্যিক চর্চার দিকে তাকাই তাহলে দেখা যাবে, ‘সায়েন্স ফিকশন পশ্চিমাদের একচেটিয়া অধিকার’ ধরনের ধারণাটা অনেকটাই একপেশে। এখন পর্যন্ত সায়েন্স ফিকশনের জানা ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে সেই প্রাক যুগেও ইসলাম ও আরবি ভাষার বিভিন্ন উপাদান ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল প্রোটো-সায়েন্স থেকে শুরু করে সার্থক সায়েন্স ফিকশন সব জায়গাতেই। ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকে যতই সামনে গড়িয়েছে সময় ততই এর সংখ্যাটা বেড়েছে বৈ কমেনি। মুসলিম ও না-মুসলিম সকল ঘরানার লেখকেরাই ইসলাম ও মুসলমান নিয়ে লিখেছেন উদারচিত্তে। গল্পের প্রয়োজনে কখনো একজন মুসলিমকে কেন্দ্র করে প্লট নির্মাণ করা হয়েছে আবার কখনো পার্শ্ব চরিত্র হিসেবে এসেছে কোন মুসলমান। আবার কখনো ইসলাম বা মুসলমান বা ইসলামি সভ্যতাকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে গল্পের প্লট। আর গল্পগুলোও কেবলমাত্র ভবিষ্যৎবাদী কোন গল্প বা কোন বিকল্প ইতিহাস বা ভিনগ্রহবাসী জীবের আক্রমণে আটকে থাকেনি। ডানা মেলেছে হরর আর ফ্যান্টাসির মতো বিচিত্র সব কল্পসাহিত্য ধারায়। চিকিৎসা, গণিত, পদার্থ বিজ্ঞান, জ্যোর্তিবিদ্যা, ভূগোল, স্থাপত্যবিদ্যা, শিল্প, সাহিত্য আর ইতিহাসের মতো প্রত্যেকটি শাখায় মুসলমানদের অনবদ্য আবিষ্কার মানবজাতিকে উপহার দিয়েছিল আশ্চর্যজনক সব প্রযুক্তি- অ্যাস্ট্রোলেব, কোয়াড্রেন্ট, হস্তি-ঘড়ি, ক্যামেরা অবসিকিউরা এবং আরো অনেক কিছু। এছাড়া, জোর্তিবিদ্যা, চিকিৎসাশাস্ত্র আর গণিতের মতো বিষয়গুলো নিয়ে হাজার হাজার বই অন্য ভাষা থেকে অনুবাদ করেছে ইসলামি পন্ডিতেরা তথা মুসলিম বিজ্ঞানীরা যার একটা বড় অংশ (এক হাজারের উপরে পূর্ণাঙ্গ বই) এখনো সংরক্ষণ করা আছে কাতার ডিজিটাল লাইব্রেরিতে।
কোরআনে বর্ণিত গুহাবাসী আসহাবে কাহাফ কিংবা দুষ্ট লোকের বানরে পরিণত হওয়া কিংবা ধোঁয়াহীন আগুন থেকে তৈরি হওয়া জিন- এসবই ইসলামি সাহিত্যিকদের রসদ যুগিয়েছে বারে বারে। নবীজী স. এর বুরাকে চড়ে সাত আসমান পাড়ি দেয়ার মতো অলৌকিক মুজেজার প্রেক্ষিতে বলা যায় সময় পরিভ্রমণের মতো ঘটনা মুসলমানদের কাছে নতুন কোন বিষয় ছিল না। আরও আছে আঙ্গুলের ইশারায় চাঁদকে দ্বিখন্ডিত করার মতো মুজেযা কিংবা আগুনমুখো একচোখা দাজ্জালের কথা। গবেষক ইউসুফ নুরুদ্দীন তার ‘অ্যান্সিয়েন্ট ব্ল্যাক অ্যাস্ট্রোনাটস এন্ড এ·ট্রাটেরেস্ট্রিয়াল জিহাদস: ইসলামিক সায়েন্স ফিকশন এজ আরবান মিথোলজি’ প্রবন্ধে এই ঘটনাসমূহকে মুসলিম লেখকদের জন্য অনুপ্রেরণার বিষয় বলে উল্লেখ করে এটাকে ‘ইসলামি সায়েন্স ফিকশন মোটিফ’ বলে আখ্যা দেন। এই মোটিফ এমন এক প্রভাবক যা উসকে দেয় লেখকের কল্পনাকে। তাকে দিয়ে লিখিয়ে নেয় উপরে উল্লেখ করা দৃশ্যকল্পের মতো কোন সায়েন্স ফিকশন।
ইসলামি সায়েন্স ফিকশন আর আরবি সায়েন্স ফিকশন একে অপরের সাথে ওতোপ্রেতোভাবে জড়িত। প্রথমত, আরব বিশ্বকে কেন্দ্র করেই ইসলামের আবির্ভাব, প্রচার আর প্রসার। দ্বিতীয়ত, আরবি সায়েন্স ফিকশন চর্চা ইসলামি সায়েন্স ফিকশনকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে। বিচ্যুতি যে নাই তা বলা যাবে না, তবে বিচ্যুতিগুলো বাদ দিলেও আরবি সায়েন্স ফিকশনকে আশ্রয় করেই বেড়ে উঠেছে ইসলামি সায়েন্স ফিকশনের সন্তরনশীলতা। বলা যায় আরবি সায়েন্স ফিকশনের শুরুটাই ইসলামি সায়েন্স ফিকশনের শুরু।
১৯৭০ সালের দিকে ‘আল খেয়ালুল ইলমি’ পরিভাষাটি আরবি সাহিত্যে ব্যাপক পরিচিতি পায় যা বর্তমানে ইংরেজি ‘সায়েন্স ফিকশন’ শব্দটির সমার্থক হিসেবে আরবি ভাষা-ভাষী পাঠকের কাছে বহুলপরিচিত ও গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে। আল খেয়ালুল ইলমি বা আরবি সায়েন্স ফিকশনের শিকড় খুঁজতে গিয়ে এডা বারবারো তার ‘লা ফেন্টাসেনজিয়া লিটারেচারা আরাবা’ প্রবন্ধে চারটি উৎসের কথা উল্লেখ করেন। মধ্যযুগীয় আরবি ধ্রুপদী সাহিত্যের জনপ্রিয় ধারা ‘আজাইব’ যার ইংরেজি পরিভাষা ‘মিরাবিলিয়া’ আর সহজ বাংলা হলো: ‘বিস্ময়ে হতবাক হওয়া’- কে বিচনা করা হয় সায়েন্স ফিকশনের সূতিকাগার হিসেবে। পরবর্তি প্রভাবক হিসেবে এসেছে ওই সময়ের অসংখ্য দার্শনিক লেখাঝোকা যেখানে বিবৃত হয়েছে অজানাকে জানার অদম্য স্পৃহা। তারপর এসেছে আলিফ লায়লা ওয়া লায়লার মতো সাহিত্যকর্ম। সবচেয়ে বড় যে প্রভাবকটার কথা না বললেই নয় তা হলো- মুসলিম বিশ্বের হাজারো বছরের ইউটোপিয়ান ঐতিহ্য যেখানে কল্পনা করা হয় এমন এক শরয়ী রাষ্ট্র ব্যবস্থা যার সার্বভৌমত্বের মালিক এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহ। সাথে সাথে চলে আসে ওই সময়ের মুসলমানদেও বিজ্ঞান ও আবিষ্কারের পরম্পরা।
দেখা যাচ্ছে, ঐতিহ্যগতভাবেই আরব ভূ-খণ্ডগুলো গল্প-গাথা, উপকথা আর কিংবদন্তীতে ভরপুর ছিল যা ফ্যান্টাসি আর সায়েন্স ফিকশনের সরস উপাদান। তাই নির্দ্বিধায় এ কথা বলা যায়, এসব আবিষ্কার আর উপাদান ওই সময়ের প্রজন্মকে করেছে বিজ্ঞানমনস্ক যার ছাপ পড়েছে তাদের সাহিত্যিক ঐতিহ্যে। জন্ম নিয়েছে সায়েন্স ফিকশন আর ফ্যান্টাসি কেন্দ্রিক নানা স্বাদের, নানা মতের যুক্তি আর বিজ্ঞান নির্ভর সাহিত্যিক বয়ান। পাঠক আমোদিত হয়েছে, ভাবতে শিখেছে তার চিন্তা জগৎ থেকে আলাদা কোন দৃষ্টিকোণে।
ইসলামি সায়েন্স ফিকশনের এই অভিযাত্রাকে মোটা দাগে তিনটি সময় পরিসরে ভাগ করা যায়। প্রথম ভাগে ফেলা যায় ইসলাম ও মুসলিম বিজ্ঞানীদের স্বর্ণযুগকে। দ্বিতীয় ভাগে আসে, আঠারশ শতকের শেষাংশ থেকে ঊনবিংশ শতক আর বিংশ শতক পেরিয়ে বর্তমান একবিংশ শতকের প্রারম্ভ পর্যন্ত। আর তৃতীয় ভাগ যাকে বলা হয় ইসলামি সায়েন্স ফিকশনের নিও ওয়েভ তার শুরুটা ধরা যায় ২০০০ সাল থেকে যা প্রাসঙ্গিকভাবে এখনো বর্তমান। সমসাময়িক সমাজ ব্যবস্থা, জীবনযাত্রার নানা বিশ্বাস আর সংস্কার এবং সেই সাথে মানুষের সামাজিক ও মানসিক বিবর্তন- প্রত্যেকটা সময়-স্তর তার স্ব স্ব বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল।
ইসলাম ও মুসলিম বিজ্ঞানীদের স্বর্ণযুগের সময়টাকে বলা যায় প্রাক ইসলামি সায়েন্স ফিকশনের যুগ। এ সময় লেখা গল্পগুলোতে যেমন আছে সাহিত্যের খোরাক তেমনি দেখা যায় সৃজনশীলতা আর শিল্পপ্রতিভা উস্কে দেয়ার শক্তি। যদিও মেরি শেলীর উপন্যাস ‘ফ্রাংকেনস্টাইন: অর দ্যা মডার্ন প্রমিথিউস’ কে বিবেচনা করা হয় প্রথম সায়েন্স ফিকশন হিসেবে; এর আগেও মুসলিম লেখকদের অনেক বই পাওয়া যায় যাতে সায়েন্স ফিকশনের সব রকম বৈশিষ্ট্য উপস্থিত। এসব বৈশিষ্ট্যই পরবর্তীতে বার বার ফিরে এসেছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বিভিন্ন লেখকের লেখায়। এ যেন আল মাহমুদের সেই অমোঘ প্রত্যাবর্তনের সহজ আর সোজা পথ।
প্রসঙ্গত, এই সময়ের প্রথম যে বইটার কথা বলা যায় তা হলো ‘এ ট্রু হিস্টোরি’। লেখক লুসিয়ান অব সামুসাতা তৎকালীন সময়ে ছিলেন সিরিয়ার বাসিন্দা। দ্বিতীয় শতকে লেখা বইটিতে দেখা যায় পানির বুদবুদে করে এক লোক পৌঁছে গেছে চাঁদে। সেখানে তার সাথে দেখা হয় অদ্ভুত সব জন্তু-জানোয়ারের। বিচিত্র এক সমাজ ব্যবস্থার মুখোমুখি হয় সে।
দ্বিতীয় যে বইটার কথা বলতে হবে তা হলো আলিফ লায়লা ওয়া লায়লা বা আরব্য রজনীর এক হাজার এক রাত। ধারণা করা হয় ওই সময়ের পার্সিয়ান, ইন্ডিয়ান, বাগদাদী আর মিশরীয়দের মুখে মুখে প্রচলিত গল্প-গাঁথার সমন্বয়ে এই সংকলনটি বই আকোরে রূপ পায় নবম শতকে। বইটির মূল উৎস হিসেবে অনেক সাহিত্যসমালোচক পার্সিয়ান লোকগাঁথা ‘হাজার আফসানা’ কে কৃতিত্ব দিতে চান। এই বইয়ের অনেক গল্পই বিজ্ঞান ভিত্তিক কল্প গল্পের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ‘দ্যা থার্ড দারবিশ কালান্দার’, ‘দ্যা সিটি অব ব্রাস’, দ্যা অ্যাডভেঞ্চারস অব বুলুকিয়া’, ‘জুললনার অব দ্যা সি’, ‘দ্যা এবনি হাউস’ আর ‘দ্যা অ্যাডভেঞ্চার অব সিন্দাবাদ’ কে বিবেচনা করা হয় সফল প্রোটো-সায়েন্স ফিকশন হিসেবে।
তৃতীয় যে বইটির কথা বলা যায় তা হলো ‘মাবাদিয়ুল আহল আল মাদিনাতুল ফাদ্বিলাহ’ ইংরেজিতে ‘দ্যা প্রিন্সিপালস অফ দ্যা ভিউস অফ দ্যা সিটিজেনস অফ দ্যা ভার্চুয়াস সিটি’। এক ইউটোপিয়ান মুসলিম নগর রাষ্ট্রের কথা বলা হয়েছে বইটিতে। নবম শতকে লেখা এই বইটির লেখক আল ফারাবি।
চতুর্থ বইটি ইবনে তুফায়েলের লেখা ‘রিসালাত হাই ইবনু ইয়াকজান ফি আসরার লিল হিকমাহ লিল মাশরিকিয়া’ যার ইংরেজি নাম ‘দ্যা সেলফ টট ফিলোসোফার’। বারো শতকের দিকে লেখা বইটাতে দেখা যায়, জনমানবশূন্য দ্বীপে এক অ্যান্টিলোপ (বিশেষ জাতের হরিণ) লালন পালন করে বড় করে তুলে এক মানব শিশুকে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অনুসন্ধান, অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান আর পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে একাকী এক মানবশিশুর বেড়ে উঠার গল্প এই বই। অনেকে গবেষক মনে করেন সতের শতকে লেখা ডেনিয়েল ডিফোর রবিনসন ক্রুসো আর জোনাথন সুইফটের গালিভার্স ট্রাভেলস বইদুটো এই বই থেকে অনুপ্রাণিত। সতের শতকের ইউরোপে জনপ্রিয় হয়ে উঠে বইটি, ওই সময়ের সকল বৈজ্ঞানিক বিপ্লবে দারুন প্রভাব বিস্তার করে।
পঞ্চম বই ‘আল রিসালা আল কামিলিইয়া ফিল সিরা আল নবুইয়া’, ইংরেজি নাম ‘থিওলোগাস অটোডিডেকটাস’। লেখক ইবনু আল নাফিস, সময়- বারো শতক। অনেকটা তুফায়েলের বইটির মতো লেখা এই বইটাতেও আমরা দেখা পাই নিঃসঙ্গ এক মরুচারীর আত্ম অনুসন্ধান। মজার বিষয় হলো গল্পের মূল চরিত্র এক গুহায় আপনা-আপনি জন্ম নেয়, বিজ্ঞানে যাকে বলে স্পনটেনিয়াস জেনারেশন। চারপাশের জগৎ সম্পর্কে কিভাবে তার ধারণা গড়ে উঠে এই নিয়েই কাহিনি। একদিন হঠাৎ করেই মানব সভ্যতার সংস্পর্শে আসে সে। কোন পূর্বজ্ঞান ছাড়াই ইসলামের মূল আকিদা আর নবী স. এর কাহিনি লোকজনকে জানাতে শুরু করে সে। ভবিষ্যতে ঘটবে এমন অনেক ঘটনার কথা বলে। পৃথিবী ধ্বংসের লোমহর্ষক বর্ণনা দেয়, বলে সেই দিন হবে শেষ বিচারের দিন। পশ্চিমা গবেষকরা এটিকে সার্থক বিজ্ঞান ভিত্তিক কল্প-গল্পের সম্মান দেন। মনে করা হয় এটাতেই ছিল প্রথম অ্যাপোকেলিপস বা পৃথিবী ধ্বংসের বিজ্ঞান ভিত্তিক বর্ণনা।
ষষ্ঠ বইটি হলো ‘আজাইব আল মাখলুকাত ওয়া ঘারাইব আল মাওজুদাত’ যার ইংরেজি নাম ‘ওন্ডার্স অফ ক্রিয়েশন এন্ড অডিটিস অব এক্সিসটেন্স’। বইটিতে ওই সময়ের জানা-অজানা-কল্পনার বিচিত্রসব বিষয়ের বর্ণনা করা হয়েছে । লেখক জাকারিয়া ইবনে মোহাম্মদ আল কাযভিনি। তার আরেকটি বই ‘আওয়াজ বিন আনফাক’। তেরো শতকে লেখা এটিতেও দেখা যায় দূর গ্রহ থেকে আসা এক লোকের পৃথিবীবাসীকে দেখে চমৎকৃত হওয়ার গল্প। প্রোটো সায়েন্স ফিকশনের আরো এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
বইগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় কল্প কাহিনীর আবরণে ইসলামের ইহজাগতিক আর পারলৌকিক বিশ্বাসের সাহিত্যিক বয়ান যেখানে বিজ্ঞান এসেছে সময়ের গুঞ্জরিত চাকায়। আম-পাঠকের মনোরঞ্জনের চেয়ে তাদের আধ্যাত্মিক সফরকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণে। এই যুগ বৈশিষ্ট্যই পরবর্তী ইসলামি সায়েন্স ফিকশন লেখকদের লেখায় এসেছে বারে বারে। সমসাময়িক মানবদর্শন চিত্রনে তাদেরকে দারুনভাবে প্রভাবিত করেছে।
মুসলিম বিশ্বে সায়েন্স ফিকশন লেখার দ্বিতীয় জোয়ার আসে ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি থেকে। মুসলিম ইউটোপিয়ান ঐতিহ্যের ধারায় পূর্ণাঙ্গ ইসলামি জীবন ব্যবস্থার অনুসন্ধানে হন্যে হয়ে উঠলেন যেনো এ সময়ের সায়েন্স ফিকশন লেখকেরা। ফ্রানসেস ফাতাল্লাহ আল মারাস লিখলেন ‘ঘাবাত আল হক’ যার ইংরেজি নাম ‘দ্যা ফরেস্ট অফ ট্রুথ’ (১৮৬৫); আল্লাহর প্রতি ভালবাসা-ই জাগতিক সমাজ উন্নয়নের চাবিকাঠি যার মূল থিম। সিরিয়ান লেখক আব্দুল রহমান আল কাওয়াকিবি লেখেন ‘উম্মুল কুরা’ ইংরেজিতে ‘দ্যা মাদার অফ ভিলেজেস’ (১৯০৩) যেখানে দেখা যায় ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয় নিয়ে আরব নেতাদের এক মহাসম্মেলন। লেবানিজ লেখক ফারাহ আনতুন লেখেন ‘আল দ্বিন ওয়াল ইলম ওয়াল মাল : আল মুজুন আল তাহালাত’ যার ইংরেজি নাম ‘রিলিজন, নলেজ এন্ড মানি: দ্যা থ্রি সিটিস’ (১৯০৩)। মিশরীয় লেখক মুস্তফা লুতফি আল মানফালুতি লেখেন ‘মদীনাতুল সাদা’ যার ইংরেজি নাম ‘দ্যা সিটি অব হ্যাপিনেস’ (১৯০৭) যেখানে দেখা যায় সামাজিক ন্যায় বিচার আর সুশাসনের এক ইউটোপিয়ান নগর রাষ্ট্র।
বিংশ শতকের মাঝামাঝিতে মানে ঊনিশশো ষাট এর দশক থেকে সায়েন্স ফিকশনের জোয়ার পরিলক্ষিত হয় ছোট গল্প উপন্যাস আর নাটকের ধারায়। এ সময় যেমন হাজার বছরের ইসলামি সংস্কৃতি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বুনা হয়েছে গল্পের জাল ঠিক তেমনি প্রাসঙ্গিকভাবে যুগ-বৈশিষ্ট্য হিসেবে এসেছে পশ্চিমা উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার কন্ঠ। সায়েন্স ফিকশনের ঐতিহ্যগত প্রচলিত ধারা যেমন সময় পরিভ্রমণ বা টাইম ট্রাভেল কিংবা গ্রহান্তরের কোন বুদ্ধিমান প্রাণীর পৃথিবীকে আক্রমণ করা- এসব নিয়েও বিস্তর গল্প বলা হয়েছে। ইসলামি বিশ্বাস আর মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে বলা এসব গল্পই আস্তে আস্তে হয়ে উঠেছে মুসলিম বিশ্বের কন্ঠস্বর। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, এসব লেখার বেশিরভাগই পশ্চিমা সাহিত্যে এখনো তুলনামূলকভাবে অপরিচিত। পশ্চিমা কর্তৃত্ববাদী মনোভাব, একপেশে দৃষ্টিভঙ্গি আর সেই সাথে বেশি বেশি অনুবাদ না হওয়াই এর মূল কারণ বলে মনে করেন সায়েন্স ফিকশন সংশ্লিষ্ট বোদ্ধারা।
এই সময় পরিসরে প্রথম বলা যায় তুরস্কের লেখক রাইফ নেদেত এর ‘সেমাভি ইহতিরাস’ যার ইংরেজি নাম ‘দ্যা কেলেস্টিয়াল প্যাশন’ বইটার কথা। ১৯৩৩ সালে প্রকাশিত বইটিতে ভবিষ্যতের এক ইউটোপিয়ান নগর-রাষ্ট্রের কথা বলা হয়েছে যেখানে গল্পটা আবর্তিত হয়েছে নোবেল জয়ী এক লেখক আর এক তরুণীর বয়ানে।
বলা যায় নাইজেরিয়ান লেখক মোহাম্মদ বেল্লু কাগারা’র ‘গান্ডোকি’ বইটার কথা। ১৯৩৪ সালে প্রকাশিত এই বইটিতে দেখা যায় এক বিকল্প পশ্চিম আফ্রিকার গল্প যেখানে নেটিভ অধিবাসীরা ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে লড়ছে। তাদের সাথে আছে জিন সহ আরো অনেক রহস্যময় জীব।
এ সময়ের উল্লেখযোগ্য একটি বই ‘আহল আস সাফিনা’ ইংরেজি নাম ‘দ্যা পিপল অব দ্যা শিপ’ (১৯৩৫)। মরোক্কান লেখক মুহাম্মদ ইবনু আব্দুল্লাহ আল মুওয়াক্কিত আল মারাকুশি, ইসলামি সায়েন্স ফিকশনের প্রথম ডিসটোপিয়ান উপন্যাসের তকমা পাওয়া এই বইয়ে দেখান: ইসলাম ও পাশ্চাত্য সভ্যতার বিভাজন।
বিংশ শতকের মাঝামাঝিতে আরবি সায়েন্স ফিকশন তথা ইসলামি সায়েন্স ফিকশনের সবচেয়ে জনপ্রিয় মুখ হয়ে উঠেন মিশরীয় নাট্যকার তৌফিক আল হাকিম। তার ‘রিহলা ইলাল গাদান’ ইংরেজি ‘অ্যা ভয়েজ টু টুমরো’ কে প্রথম সফল ও সার্থক আরবি সায়েন্স ফিকশন হিসেবে দেখা হয় পশ্চিমা বিশ্ব ও আরব দুনিয়া দুই জায়গাতেই। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য লেখাগুলো হলো: ‘শায়ের আলা আল কামার’ ইংরেজি নাম ‘পয়েট অন দ্যা মুন’ এবং ‘হাদীস আম-আল কাওকাব’ ইংরেজি নাম ‘কনভার্সেশন উইথ দ্যা প্লানেট’।
তারপর সন্দেহাতীতভাবে যার নাম চলে আসে তিনি হলেন আর এক মিশরীয় লেখক মোস্তফা মাহমুদ। তাকে বলা হয় আরবি সায়েন্স ফিকশনের জনক। তিনি একাধারে চিকিৎসক, উপন্যাসিক, ছোট গল্পকার এবং ইউএফওলজি (গ্রহান্তরের জীবন) গবেষক। ‘আল খুরুজ মিন আত তাবুত’ ইংরেজি নাম ‘দ্যা রাইজিং ফ্রম দ্যা কফিন’, ‘রাজুল তাহতা আস সিফর’ ইংরেজি নাম ‘দ্যা ম্যান উইথ অ্যা টেম্পারেচার বিলো জিরো’, ‘আল কানকাবুত’ ইংরেজি নাম ‘দ্যা স্পাইডার’- ১৯৬৫ সালে লেখা তিনটি বই তাকে রাতারাতি আরবি সায়েন্স ফিকশনের কাল্ট ফিগারে পরিণত করে।
আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ লেখক হলেন সিরিয়ার ইমরান তালিব। ‘কাউকাব আল আহলাম’ ইংরেজি নাম ‘প্ল্যানেট অব ড্রিমস’ (১৯৭৮), ‘লাইসা ফি কামার আল ফুকারা’ ইংরেজি নাম ‘দেয়ার আর নো পুওর অন দ্যা মুন (১৯৮৩), ‘আসরার মিন মাদিনা আল হুকুমা’ ইংরেজি নাম ‘সিক্রেটস অব দ্যা টাউন অব উইজডম (১৯৮৮)- এই তিনটি ছোট গল্পের সংকলন তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ। ‘খালফা হাজিজ আজ-জামান’ ইংরেজি নাম ‘বিয়ন্ড দ্যা ব্যারিয়ার অব টাইম (১৯৮৫)’ তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। তালিব আরবি তথা ইসলামি সায়েন্স ফিকশনের প্রথম তাত্তিক গবেষক হিসেবেও পরিচিত। তার লেখা ‘ফি আল খেয়ালিল ইলমি’ ইংরেজি নাম ‘অ্যাবাউট অ্যারাবিক সায়েন্স ফিকশন (১৯৮০)’ কে আরবি সায়েন্স ফিকশন ইতিহাসের আকরগ্রন্থ বিবেচনা করা হয়।
আশির দশকের আরো দুই গুরুত্বপূর্ণ মিশরীয় লেখক হলেন নাবিল ফারুক আর আহমাদ খালিদ তওফিক। ফারুকের লেখা ‘মিলাফ আল মুস্তাকবাল’ ইংরেজি নাম ‘দ্যা ফিউচার ফাইল (১৯৮০)’ কে অনেকেই প্রথম আরবি সায়েন্স ফিকশন ডিডেকটিভ উপন্যাস হিসেবে বিবেচনা করেন। আর তওফিকের লেখা ‘মা ওয়ারা আল তাবিয়া’ ইংরেজি নাম ‘সুপারন্যাচারেল (১৯৮০)’ এবং ‘ফ্যান্টাসেনজিয়া’ ইংরেজি নাম ‘ফ্যান্টাসিয়া (১৯৮০)’ কে বলা হয় প্রথম সার্থক আরবি হরর-ফ্যান্টাসি উপন্যাস। ফারুক আর তওফিকের সমসাময়িক আরেক গুরুত্বপূর্ণ লেখক হলেন নিহাদ শরিফ। তার সবচেয়ে বিখ্যাত বই ‘কাহির আল জামান’ ইংরেজি নাম ‘দ্যা কনকারার অফ টাইম (১৯৭২) যেখানে দেখা যায় ইসলামিক ধর্মতত্ত্বের সুনিপুণ প্রয়োগ।
আরো দুটো বই এর কথা বলা যায়। প্রথমটি সাবরি মুসা’র ‘আল সাঈদ মিন হাকল আল সাবিনাখ’ ইংরেজি নাম ‘দ্যা জেন্টলম্যান ফ্রম দ্যা স্পাইনাক ফিল্ড (১৯৮৭)’। দ্বিতীয় বইটি, মরোক্কান কূটনীতিক ও লেখক আহমেদ আব্দুল সালাম আল বাক্কালি’র ‘আল তুফান আল আজরাক’ ইংরেজি নাম ‘দ্যা ব্লু ফ্লাড (১৯৭৬)’।
এছাড়া বলা যায় কেনিয়ান লেখক ড. আলি মাজরুই এর ‘দ্যা ট্রায়াল অফ ক্রিস্টোফার ওকিগবো’ বইটার কথা। ১৯৭১ সালে প্রকাশিত ইউটোপিয়ান এই বইটাতে দেখা যায় বেহেশতে ঘটমান এক বিচার-প্রক্রিয়ার বর্ণনা। মরোক্কোর লেখক মুহাম্মদ আজিজ লাহবাবি’র ‘ইখশিরুল হায়াত’ যার ইংরেজি অনুবাদ ‘দ্যা এলিক্সির অফ লাইফ’ অমরত্বের সন্ধানে এক অভিযানের গল্প। প্রকাশিত হয় ১৯৭৪ সালে।
পাকিস্তানি লেখক ইবনে সাফি’র কথাও বলা যায়। চল্লিশের দশক থেকে ১৯৮০ সালে মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি লেখেন পিয়াসা সমন্দর, জংগল কি শরিয়ত এর মতো জনপ্রিয় সায়েন্স ফিকশন।
আরো আছে, তিউনিসিয়ান লেখক হেদি তেহবেতের লেখা ‘হোয়াট ইফ হানিবাল রিটার্নড’। মরোক্কোর লেখক খালেদ ইয়াবুদির রিটার্ন টু গ্রানাডা থ্রো সেজিটারিয়াস’। দুটো লেখাই ইউটোপিয়ান ইউক্রোনি ধাঁচে আমাদের শুনায় এক বিকল্প ইতিহাসের কথা।
আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ বই এর কথা আলাদাভাবে না বললেই নয়। প্রথমটি হলো ‘মিন মুজাখ্খিরাত রাজুল লাম ইয়ুলাদ’ ইংরেজি নাম ‘ফ্রম দ্যা ডায়েরি অফ অ্যা ম্যান নট ইয়েট বর্ন (১৯৭১)’। লেখক হলেন লিবিয়ার ইউসুফ আল কোওয়ারি। বত্রিশ শতকের লিবিয়ার দেখা পাই আমরা এই গল্পে। দ্বিতীয় বইটি হলো ‘আল ওয়াকা আল গারিবা ফি ইখতিফা সাঈদ আন নাস আল মুতাশাইল’ ইংরেজিতে ‘দ্যা সিক্রেট লাইফ অফ সাঈদ, দ্যা ইলফেটেড পেসোঅপটিমিস্ট: অ্যা পেলেস্টাইনিয়ান হু বিকেম অ্যা সিটিজেন অব ইসরায়েল (১৯৮২)’। ফিলিস্তিনি লেখক আমিল হাবিবির লেখা এই গল্পে আমরা দেখি ভাগ্য বিড়ম্বিত যুবক সাঈদ এর সাথে সাক্ষাৎ ঘটে রহস্যময় এক ভিনগ্রহীর।
এই সময় পরিসরে সফল নারী সায়েন্স ফিকশন লেখিকা হলেন কুয়েতের তিবা আহমেদ ইবরাহিম। ‘আল ইনসান আল বাহিত’ ইংরেজি নাম ‘দ্যা পেইল পার্সন (১৯৮৬)’, ‘আল ইনসান আল মুতাদ্দাদ’ ইংরেজি নাম ‘দ্যা মাল্টিপল পার্সন (১৯৯০)’ এবং ‘ইনকিরাদ আল রাজুল’ ইংরেজি নাম ‘দ্যা এ·টিংশন অব ম্যান (১৯৯২)’- তার প্রথম তিনটি উপন্যাসে উপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদী রাজনীতির পাশাপাশি দেখতে পাই ক্রায়োজেনিকস আর ক্লোনিং এর মতো সায়েন্স ফিকশনের উপাদান। প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধেও এক মর্মস্পর্শী বয়ান যেন এই সিরিজ উপন্যাসগুলো।
এছাড়াও উল্লেখযোগ্য অন্য মিশরীয় লেখকগণ হলেন: আহমেদ সুওয়ালিয়েম, উমায়মা খাফাজি ও মোহাম্মদ আল আশরি। আরবি সায়েন্স ফিকশনের এই মিশরীয় জোয়ার পুরো মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে অন্যান্য দেশের লেখকদেরও দারুনভাবে প্রভাবিত করে। মরক্কোর লেখক মোহাম্মদ আজিজ আল হাব্বাবি, ইরাকি লেখক কাসেম আল খাত্তাত। এছাড়াও সিরিয়ান, লেবানীজ জর্ডানিয়ান, বাহরাইনি আর সৌদি আরবিয়ান লেখকদেও মাঝে উল্লেখযোগ্য হলেন: কাসেম কাসেম, লিনা আল কাইলানি, তালেব ওমরান, সুলাইমান মোহাম্মদ আল কাহলিল, আব্দুল্লাহ খালিফা এবং আশরাফ ফকিহ।
আরব বিশ্বের সাহিত্যিক ঐতিহ্যে নাটক ধারাটিও বিশিষ্ট স্থান পেয়েছে। অনেক নাটক পেয়েছে সায়েন্স ফিকশনের তকমা। প্রথমেই বলা যায় মিশরীয় নাট্যকার ইউসুফ এজেদ্দীন এসা’র রেডিও ড্রামা ‘দ্যা হুইল অফ ডেইস’। চল্লিশ এর দশকে এই নাট্য-সিরিজটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় যেখানে সময় পরিভ্রমণের মতো বিষয়কে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নিখুঁতভাবে। জনপ্রিয় মিশরিয় রম্য নাট্যকার আলি সেলিম লেখেন ‘আর-রাজেল এলি দিহিক আল মালাইকা’ ইংরেজি নাম ‘এ ম্যান হু লাফড অ্যাট অ্যাঞ্জেলস (১৯৬৮)’ এবং ‘আফারিত মাস্র আল-গাদিদা’ ইংরেজি নাম ‘স্যাটান ফ্রম হেলিওপোলিস (১৯৭২)’। আরেক জনপ্রিয় নাট্যকার ইউসুফ ইদ্রিস লেখেন ‘আল-জিনস আথ-থালিত’ ইংরেজি নাম ‘দ্যা থার্ড সে· (১৯৭১)’।
এ সময়ের অনেক পশ্চিমা অমুসলিম সাইফি লেখকদের লেখায়ও এসেছে ইসলাম, মুসলিম এর মতো বিষয়-আশয়। লিখেছেন অসাধারণ সব সায়েন্স ফিকশন। বলা যায় ফ্রাংক হোবার্টের ‘ডিউন’ এর কথা। বহুল পঠিত এই কল্প বিজ্ঞান গল্পটিতে ইসলামী সভ্যতা আর সংস্কৃতির অনেক উপাদান, দৈনন্দিন মুসলিম জীবনাচারের অনেক শব্দ ব্যবহার করেছেন লেখক। ‘ফিকাহ’, ‘ফতোয়া’ ও ‘উলামা’র মতো ইসলামের একান্ত নিজস্ব পরিভাষার দেখা পাওয়া যায় তার গল্প উপন্যাসে। ইসলাম ও নবী মুহম্মদ স. কে চিত্রিত করা হয়েছে অত্যন্ত উদারভাবে।
আরও আছে, ফিলিপ জোসে ফার্মার ‘আনরিজনিং মাস্ক’; কিম স্টেনলি রবিনসনের ‘মার্স ট্রিলজি’; সারাহ জেটেলের ‘ফুল’স ওয়ার’। বিকল্প ইতিহাস কেন্দ্রিক কল্পবিজ্ঞানেও দেখা যায় ইসলাম ও মুসলমানদের উদার চিত্রায়ন। কিম স্টেনলি রবিনসনের বৃহৎ কলেবরের ‘দ্যা ইয়ার অব রাইস এন্ড সল্ট’ উপন্যাসে দেখা যায় বুবনিক প্ল্যাগে পুরো ইউরোপ ধ্বংস হয়ে গেলেও ইসলামি সভ্যতা টিকে আছে। অরসন স্কট র্কাডের ‘পাস্টওয়াচ: দ্যা রিডেম্পশন অফ ক্রিস্টোফার কলম্বাস’ উপন্যাসে দেখা যায় ভবিষ্যৎ থেকে একটা দল আসে ১৪৯২ সালে। কলম্বাসকে লোভী সাম্রাজ্যবাদী থেকে আন্তর্জাতিক শান্তির দূত বানানোর চেষ্টায় রত সেই দলে আছে একজন মুসলমান।
১৯৯০ সালে লেখা ডোনাল্ড মুফেটের ‘ক্রিসেন্ট ইন দ্যা স্কাই’ আর ‘এ্যা গেদারিং অফ স্টারস’ কে বলা যায় মুসলমানদের নিয়ে লেখা সায়েন্স ফিকশনের সার্থক উদাহরণ। ইসলামকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে উপন্যাস দুটোর প্লট। উপন্যাস দুটোতে দেখা যায় মানুষের জানা মহাজগতের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে ইসলাম। কিন্তু এই আন্তঃগ্যালাকটিক মুসলিম উম্মাহ হয়ে আছে নেতৃত্ব শূন্য যাদের দরকার একজন খলিফাহ, একজন আমিরুল মুসলিমুন। হাজার আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত আলফা সেঞ্চুরাই এর সুলতান স্বপ্ন দেখে খলিফা হওয়ার। স্বপ্নের পথে বাধা একটাই- হাজার আলোকবর্ষ পেরিয়ে মক্কায় এসে হজ করা। সব বাধা পেরিয়ে তার মহাজাগতিক হজ যাত্রা কিংবা আমিরুল মুমিনিন হওয়ার দোলাচল এসব নিয়েই এগিয়েছে গল্প-বয়ান। আরও একটা মজার বই হলো ইয়ান ডালাসের লেখা ‘দ্যা বুক অফ স্ট্র্যাঞ্জার্স (১৯৭২)। ডালাস পরবর্তিতে ইসলাম গ্রহণ করে হয়ে যান আব্দুল কাদির আস সুফি।
হুগো এওয়ার্ড নমিনি লেখক স্টিভেন বার্নেস তার ‘ইনশাআল্লাহ সিরিজ’ এর ‘দ্যা লায়ন’স ব্লাড’ ও ‘জুলু হার্ট’ গল্পে দেখিয়েছেন বিকল্প এক নর্থ অ্যামেরিকা যেখানে আফ্রিকান মুসলিমরা উপনিবেশ গড়েছে। তার অন্য আরেকটি গল্প ‘অ্যাসাসিন’ এ দেখা যায় বার শতকের হাসাসিনদের। এক সাক্ষাৎকারে লেখক বলেন, যদিও অ্যাসাসিন আমার শ্রেষ্ঠ গল্প নয় তারপরও যে ধর্মের কথা ওখানে বলা হয়েছে তার প্রতি আমার পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা রয়েছে।
অনেক মুসলিম সিনেমাপ্রেমীরা মনে করেন সায়েন্স ফিকশন ভিত্তিক জনপ্রিয় সিনেমা ফ্র্যাঞ্চাইজি ‘স্টার ওয়ার্স’ ইসলাম ও মুসলিম বিশ্বাসগুলোর সাথে সাদৃশ্য রেখে অনেক দৃশ্য উপস্থাপন করেছে। ইসলামি মিথ খিজির আ. থেকে শুরু করে তাওহীদের মতো মৌল বিশ্বাস যেমন এসেছে তেমনি এসেছে ইবলিশের ধারণাও।
উনবিংশ শতকের শেষ আর বিংশ শতকের শুরুর দিকে আরব বিশ্বে বিশেষ করে মিশর, লেবানন ও সিরিয়াতে ইউটোপিয়ান ধারায় লেখার একটা সহজাত প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় যার বৈশিষ্ট্যই ছিল পূর্বানুমান আর আশাবাদ। অনেক বছর ধরে এই বৈশিষ্ট্যই মুখ্য ছিল সকল ধারার লেখকদের মাঝে। ‘দ্যা ওয়ার্ল্ড অফ আননোন’ উপন্যাসে নগীব মাহফুজ ভবিষ্যৎবাদী বিষয়-আশয় জোরালোভাবে উপস্থাপন করেন। পরে ধারাটিকে জনপ্রিয় করে তুলেন আরব কল্পবিজ্ঞানের অগ্রদূত বলে খ্যাত নিহাদ শরিফ, নাবিল ফারুকের মতো লেখকেরা। প্রত্যাশাবাদের সাথে ভবিষ্যতবাদ এর মিশেলে তারা উপহার দিতে থাকেন মিলিটারি সাই ফাই থেকে শুরু করে স্পেস অপেরার মতো সমসাময়িক বিষয়। তবে এখনো পর্যন্ত আরব সায়েন্স ফিকশন তথা ইসলামি সায়েন্স ফিকশনের ধারায় হার্ড সাই-ফি নিয়ে তেমন কাজ হয়নি।
ইংরেজিতে অনুবাদকৃত এসব লেখার শিরোনামগুলো দেখলেই বুঝা যায় বিষয়ের বৈচিত্র্য। এছাড়াও, বইগুলোর পাঠ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় নামগত প্রকরণ যেমন এদের দিয়েছে ভিন্নতা তেমনি বিষয়ের বৈচিত্র্যে এসব সায়েন্স ফিকশন বেশ আগ্রহ উদ্দীপক ও আশা জাগানিয়া। কল্পনার মিশেলে ধর্ম আর বিজ্ঞান একাকার হয়ে এমন এক কল্পলোক তৈরি করেছে এসব বই, যা পাঠককে নিরন্তর আবিষ্ট করে রাখবে অনুসন্ধিৎসা আর সন্তরণমগ্নতায়।
মহামারির এই ক্রান্তিকালে ইসলামি সায়েন্স ফিকশনের এই টুকরো ইতিহাস পরিভ্রমণ কোন তত্ত্বকথা প্রতিষ্ঠার খেরো খাতা নয়, নিছকই অনুসন্ধিৎসু পাঠকের ভিতর একটা মন-বাতি জ্বালিয়ে দেয়ার চেষ্টা মাত্র। পাঠক মাত্রই মগ্ন চৈতন্যে শীষ দেয়া ভোরের দোয়েল। আগ্রহী পাঠকেরা জেগে উঠা কৌতূহল আর প্রশ্নের বুদবুদকে নিবৃত্ত করতে হাতে কান বই তুলে নিলে এটাই হবে এই লেখার বড় সার্থকতা।
তথ্যসূত্র:
অ্যাবাউট অ্যারাবিক সায়েন্স ফিকশন, লেখক- ইমরান তালিব
অ্যারাবিক সায়েন্স ফিকশন, লেখক- ইয়ান ক্যাম্পবেল
অ্যান্সিয়েন্ট ব্যাক অ্যাস্ট্রোনাটস এন্ড এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল জিহাদস: ইসলামিক সায়েন্স ফিকশন এজ আরবান মিথোলজি, গবেষক: ইউসুফ নুরুদ্দীন
ফিকশনাল ইসলাম : অ্যা লিটারারি রিভিউ এন্ড কমপারেটিভ অ্যাসে অন ইসলাম ইন সায়েন্স ফিকশন এন্ড ফ্যান্টাসি, গবেষক: রেবেকা হানকিনস
লা ফেন্টাসেনজিয়া লিটারেচারা আরাবা, গবেষক: এডা বারবারো
সায়েন্স ফিকশন ইন অ্যারাবিক লিটারেচার: হিস্টোরি, গ্রোথ, ডেভেলপমেন্ট এন্ড পজিশন, গবেষক: ড. এইসাম আসাকালি
সায়েন্স ফিকশন ইন দ্যা আরব ওয়ার্ল্ড : তৌফিক আল হাকিম’স ভয়েজ টু টুমোরো, গবেষক : ভার্গব রানি
ক্রসিং দ্যা থ্রেসোল্ড অব ইজিপশিয়ান সায়েন্স ফিকশন : দ্যা হাফ হিউম্যানস, হুয়ের স্টার ওয়ারর্স মিটস সিন্দাবাদ’স সেভেন জার্নি, লেখক: মোঃ আওরঙ্গজেব আহমাদ
শোড অ্যা মুসলিম পারস্পেকটিভ মেটার ইন সায়েন্স ফিকশন? লেখক: ডেকা ওমর
দ্যা সারপ্রাইজিং ইন্টারসেকশন অফ ইসলাম এন্ড সায়েন্স ফিকশন, লেখক: বেথ এল্ডারকিন
ইসলাম ও সায়েন্স ফিকশন ওয়েবসাইট