এনসিটিবির প্রতি বাড়ছে অবিশ্বাস, পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি মানতে নারাজ আলেমরা

রাকিবুল হাসান নাঈম:

এনসিটিবির প্রতি দেশের আলেম সমাজের অনাস্থা এবং অবিশ্বাস বাড়ছে। চলতি বছর থেকে নতুন কারিকুলামে শুরু হওয়া নতুনভাবে রচিত পাঠ্যপুস্তকে ব্যাপকভাবে ইসলামবিদ্বেষ ঢুকানো হয়েছে। বিকৃত করা হয়েছে মুসলিম ইতিহাস। পাশাপাশি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হয়েছে দেশ ও জনগণের ঐতিহ্য ও ধর্মবিরোধী বিকৃত যৌন মানসিকতা। বিষয়টি নিয়ে আলেম সমাজ ক্ষুব্ধ।

দেশের আলেমসমাজ বলছেন, এর আগেও পাঠ্যপুস্তকে ইসলামবিদ্বেষ ঢুকানোর চেষ্টা করেছে এনসিটিবি। বারবার আলেমদের প্রতিবাদের মুখে সংস্কার করেছে সংস্থাটি। কিন্তু এবারের চেষ্টা মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।

ফাতেহের কাছে এনসিটিবি স্বীকার করেছে, এ বছর যে বইগুলো দেয়া হয়েছে, সে বইগুলো পরীক্ষামূলক সংস্করণ। সবার মতামত নিয়ে এগুলো সংস্কার করা হবে। এনসিটিবি পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিলেও আলেমসমাজ সেই প্রতিশ্রুতি মানতে নারাজ। তারা বলছেন, পরীক্ষা করার মানে হলো, ইসলামবিদ্বেষ ও মুসলিম ইতিহাস বিকৃতি নিয়ে যদি কেউ কিছু না বলে, তাহলে সেটা তারা রেখে দিবে। দেশের মুসলিম শিশুদের মানসিকতা পবিত্র রাখার কোনো ইচ্ছে এনসিটিবির নেই।

‘আমরা আশ্বস্ত হতে পারছি না’

দারুল উলুম হাটহাজারি মাদরাসার মুহাদ্দিস আশরাফ আলী নিজামপুরী ফাতেহকে বলেন, দেশে এখন খৃস্টান ও হিন্দুত্ববাদী শক্তি সক্রিয়। তারই পরিচয় পাওয়া গেছে পাঠ্যপুস্তকে। যেভাবে ইসলামবিদ্বেষ শেখানো হয়েছে বইগুলোতে, তা এককথায় ভয়ংকর।

তিনি আরও বলেন, এনসিটিবির এই কাজ আজ নতুন না। প্রতিবছরই করে। ইসলাম নিয়ে কোনো না কোনো বইয়ে ঘৃণা ছড়াবেই। আলেমদের প্রতিবাদের মুখে পরে আবার ঠিক করে। শুনেছি, এবার পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের আগেই আলেমরা তাদের দাবি তুলে ধরেছিলেন। পাইলটিং কার্যক্রমের সময় পড়ানো বইগুলো থেকে নোট করে পয়েন্ট আকারে ভুলগুলো তুলে ধরেছিলেন। কিন্তু এনসিটিবি সেটা কানে নেয়নি। এখন তারা স্বীকার করছে বিষয়টি ভুল হয়েছে। কিন্তু আমরা আশ্বস্ত হতে পারছি না, তারা আসলেই ভুলগুলো সঠিক করবে কিনা।

নিজামপুরী আরও বলেন, আলেমদের কাজই হলো ভুল থেকে মানুষকে সতর্ক করা। যদিও এনসিটিবির প্রতি আমাদের আস্থা নেই, তবুও আমাদের প্রতিবাদ চালিয়ে যেতে হবে। আর আমাদের বড় বড় মুরুব্বি আলেমদের উচিত, সরকারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বসা। সংস্কারকে সুনিশ্চিত করা। সরকারের বসা ছাড়া বিষয়টি সমাধান হবে না।

‘ইসলামবিদ্বেষীরাই কাজটা করেছে’

এ প্রসঙ্গে কথা হয় দারুন্নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদরাসার শিক্ষাসচিব ও প্রধান মুহাদ্দিস মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ শেখের সঙ্গে। তিনি পাঠ্যপুস্তকে ইসলামবিদ্বেষ ঢুকানোর কাজটি একটি ইসলামবিরোধী মহলের কাজ বলে অভিহিত করেন। তিনি ফাতেহকে বলেন, পাঠ্যপুস্তকে যা ঘটেছে তা নিতান্তই দুঃখজনক। আমরা এমনটা আশা করিনি। আগে থেকেই আমরা বলে আসছি। কিন্তু এনসিটিবি কানে নেয়নি। এনসিটিবিতে ইসলামবিদ্বেষী কিছু মানুষ আছে। বিভিন্ন সময় আগেও ঘটেছে, এখনও ঘটেছে।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ আরও বলেন, আমরা দারুন নাজাতের অধ্যক্ষ আ.খ.ম. আবুবকর সিদ্দীকসহ প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলাম। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি খুলে বুঝিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীকে আমরা ইতিবাচক পেয়েছি। তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন সংশোধন করার জন্য। তাই এনসিটিবি এখন বলছে, তারা সংস্কার করবে। অথচ এতদিন তারা বিষয়টির দিকে নজরই দেয়নি।

‘এক বছরের খেসারত কে দেবে?’

পাঠ্যপুস্তক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ফাতেহ যে প্রতিবেদন করেছে, তার প্রতিক্রিয়ায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহকারী সার্জন ডা. শামসুল আরেফিন শক্তি একটি প্রশ্ন তুলেছেন।

তিনি বলেছেন, এই বই পরীক্ষামূলক হলেও এক বছর পড়াবে। কিন্তু এসব পড়লে যে সমকামী, জেন্ডার ডিজফোরিক, ইসলামবিদ্বেষী, হীনম্মন্য জেনারেশন তৈরি হবে, তার খেসারত কে দেবে? সবার সাথে আলোচনা কি কোটি টাকার বই ছাপানোর আগে করে? নাকি কোটি কোটি টাকার বই ছাপানোর পর করে? এই পুরো লেখক-সম্পাদক-বিশেষজ্ঞ-চেয়ারম্যান প্যানেল ব্যর্থ।

তিনি পুস্তক রচনা প্যানেলের পদত্যাগ দাবি করে বলেন, পুরো প্যানেল ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করুক। নয়ত একই কাজ তারা আবার করবে। আর এভাবেই ডোজ দিয়ে টেস্ট করবে। প্রতিবাদ হলে বলবে ‘পরীক্ষামূলক ছিল’। আর প্রতিবাদ না হলে রেখে দেবে।

আগের সংবাদজেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা আর হবে না
পরবর্তি সংবাদজাজিরার সড়কে অ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনায় নিহত ৬