আব্দুল্লাহ আফফান।।
বাংলাদেশ থেকে বহু ধর্মপ্রাণ মুসল্লি হজ ও ওমরা পালন করেন। তাদের অধিকাংশই পুরো জীবন টাকা জমান মক্কা, মদিনায় একবার যাওয়ার জন্য। এই শহর দু’টির সাথে জড়িয়ে আছে ধর্মীয় ভাবাবেগ। নতুন হিজরি সাল শুরুর পর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ওমরা পালন করেছেন ২ লাখ ৩১ হাজারের বেশি মানুষ। নতুন হিজরি বর্ষ শুরুর প্রথম ৬ মাসের ওমরাকারীদের তথ্য জানাতে গিয়ে এমনটাই জানিয়েছে সৌদি হজ ও ওমরা মন্ত্রণালয়। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে ওমরা করেছিল ৫২ হাজার ৮৪৮ জন। সে হিসেবে গত তিন বছরে ওমরাকারী বেড়েছে প্রায় কয়েকগুন।
করোনার আগে এজেন্সিভেদে ওমরার সর্বনিম্ন প্যাকেজ ছিল ৮০ হাজার টাকা। করোনা বিধিনিষেধের কারণে ওমরা পালনে ব্যয় বেড়েছিল কয়েকগুন। চলতি বছর হজ ও ওমরার খরচ কমিয়েছে সৌদি সরকার। সৌদির হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় ৪১৩ সৌদি রিয়াল কমিয়েছে। গত বছর করোনার কারণে আবাসন ও পরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানা বাধ্যতামূলক ছিল। যা এ বছর শিথিল হয়েছে। তবে সে তুলনায় বাংলাদেশে কমেনি ওমরা খরচ। গত বছর এজেন্সিভেদে ওমরা খরচ ছিল এক লাখ ৪৫ হাজার টাকা। চলতি বছর ওমরা করতে খরচ হবে ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ২ লক্ষ ১০ হাজার পর্যন্ত।
দিন দিন মধ্যবিত্তদের আওয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে ওমরার খরচ। এবিষয়ে জানতে চাইলে ফাতেহ টোয়েন্টিফোরকে হলি টুরিজম বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর শাহাদাত হোসাইন জানিয়েছেন, হজ ও ওমরা এটি শারীরিক ও আর্থিক এবাদত। শারীরিক সুস্থতা ও আর্থিক সক্ষমদের জন্য হজ ও ওমরা। যাদের আর্থিক সক্ষমতা নেই তারা ওমরা করবে না। এটা তো ফরজ না। আর হজ ফরজ হয় আর্থিক সক্ষমতার ভিত্তিতে। তাই খরচ বাড়াকে খুব বড় সমস্যা মনে হয় না।
এবিষয়ে স্কাই হলিডেইজের প্রশাসন বিভাগের হেড সাইয়্যেদ মিনহাজ নবী জানিয়েছেন, করোনার পর ভিসার খরচ কিছুটা কমিয়েছে সৌদি আরব। তবে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বিমান ভাড়া বেশি। এছাড়া ডলারের রেটও বেশি। এসব কারণে খুব বেশি কমেনি ওমরার খরচ।
ভারত, পাকিস্তানসহ এশিয়ার দেশগুলোর হজের খরচ একই। তবে আমাদের বিমান ভাড়া তুলনামূলক বেশি। এছাড়া হজের অন্যান্য খরচে কোন পার্থক্য নেই বলে দাবি করেছেন হলি টুরিজম বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর শাহাদাত হোসাইন।
শাহাদাত হোসাইন বলেন, সৌদি আরবে যাওয়া ও আসার বিমান ভাড়ায় পার্থক্য রয়েছে। যাওয়ার ভাড়া তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে। অথচ রুট এক, বিমান এক, তেল খরচও এক; তবুও খরচে পার্থক্য হবে কেন? অন্য সময়ের চেয়ে হজের সময় বিমান ভাড়া বেশি রাখা হয়। এমনটা কেন করা হয় বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ভালো বলতে পারবে।
জানা যায়, গত বছর ভারতে থেকে হজ করতে খরচ হয়েছে (বাংলাদেশি টাকায়) ৪ লাখ টাকার কম। পাকিস্তানের খরচ হয়েছে (বাংলাদেশি টাকায়) ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৬১৮ টাকা। বাংলাদেশ থেকে বেসরকারি ভাবে খরচ হয়েছে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৭৪৪ টাকা।
এ বছর বিমান ভাড়া বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে শাহাদাত হোসাইন বলেন, প্রতি বছরই আমরা বিমান ভাড়া বিষয়ে কথা বলি। এবছর বিমান ভাড়া কমানো বিষয়ে বিমান প্রতিমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছে হজ্জ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। চিঠির জবাব এলে এ বছর বিমানের ভাড়া কমবে কিনা সেটা বলা যাবে।
ওমরার খরচ বাড়া-কমার কারণ হিসেবে স্কাই হলিডেইজের সাইয়্যেদ মিনহাজ নবী বলেছেন, এয়ারলাইন্সগুলোর টিকেট গ্রুপ ভিত্তিক আগের থেকে নিতে পারলে খরচ কিছুটা সাশ্রয়ী হয়। সৌদি আরবে লোকাল, ইন্টারন্যশনাল ছুটির কারণে খরচ কম-বেশি হয়। বাইতুল্লাহ থেকে হোটেলের দূরত্ব, রুম ও ট্রান্সপোর্ট শেয়ার, বাসের পরিবর্তে আলাদা গাড়ি ব্যবহারে খরচ বাড়ে। এছাড়া জ্বালানি মূল্য ও ডলার মূল্য বৃদ্ধি তো আছেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ওমরা প্রত্যাশী জানান, কাবা ছোঁয়া, রাসূল সা. এর করব জিয়ারত করা সকল মুসলমানের স্বপ্ন। আগের তুলনায় এখন ওমরা করা সহজ। কিন্তু খরচের কারণে ওমরা করতে পারছে না অনেকে। ওমরার খরচ কমলে সাধারণ মানুষের জন্য সুবিধা হয়। তারা ওমরা করার সুযোগ পায়। করোনার পর পর ওমরার খরচ অনেক বেশি ছিল। এখন কিছুটা কমেছে। সরকার অনেক ক্ষেত্রে ভুর্তুকি দেয়। হজ ওমরাতেও যদি কিছুটা ভূর্তুকি দিতো, তাহলে সাধারণ মানুষের ওমরা করতে সহজ হতো।
হজ ও ওমরা সহজ করতে স্বচেষ্ট সৌদি সরকার
সৌদি সরকার হজ ও ওহরা সহজ করার জন্য বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম নুসুক অ্যাপ। এর মাধ্যমে হজ ও ওমরার আবেদন করা যায়। বাংলাদেশ থেকে হজ ব্যবস্থাপনা আরও সহজ ও গতিশীল করতে ‘নুসুক’ অ্যাপ উদ্বোধন করেছে সৌদি আরব। এর ফলে বাংলাদেশিদের জন্য সৌদি আরব ভ্রমণ আরও সহজ হবে। ওমরাহ পালনে ব্যক্তিগতভাবেই আবেদন করতে পারবেন আগ্রহীরা। অ্যাপটি ইউরোপ-আমেরিকায় আগেই চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ধীরে ধীরে কমে আসবে এজেন্সি-নির্ভরতা।