কওমি সনদের কার্যকারিতা : শিক্ষাবোর্ড যা বলছে

মুসান্না মেহবুব:

বাংলাদেশের কওমি মাদরাসা শিক্ষাধারার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসের সনদ সরকারি স্বীকৃতি লাভ করার প্রায় তিন বছর হতে চলেছে। সরকারিভাবে এই সনদকে ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি মাস্টার্স ডিগ্রির মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারি কর্মক্ষেত্রে সনদটির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। গত তিন বছরে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নির্দিষ্ট একটি বিভাগে কিছু লোক নিয়োগ ছাড়া এই সার্টিফিকেট দিয়ে সরকারের ধর্মীয় সেক্টরের অন্যকোনো বিভাগে কওমি আলেমরা চাকরি নিতে পারেননি।

আরও পড়ুন : স্বীকৃতিতে প্রশাসনিক বাধা: কওমি সনদের কার্যকারিতা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন

কওমি মাদরাসার সম্মিলিত শিক্ষাবোর্ড আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ বলছে, কওমি সনদধারীরা সরকারি কোন কোন ক্ষেত্রে চাকরি করতে পারবেন, সেটা এখনও নির্ধারণ হয়নি বিধায় কওমি আলেমদের সরকারি চাকরির সুযোগ তৈরি হয়নি।

বোর্ড আরও বলছে, বিষয়টা এখনও প্রক্রিয়াধীন আছে, প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে বেশ কিছু দিন সময় লাগবে। বোর্ড কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে বোঝাপড়া অব্যাহত রেখেছে।

হাইআতুল উলয়ার সিনিয়র দুজন সদস্য, মুফতি নুরুল আমীন ও মুফতি মাহফুজুল হক বিষয়টি জানিয়েছেন ফাতেহ টুয়েন্টি ফোরকে।

মুফতি নুরুল আমীন ফাতেহ টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, আমরা যখন স্বীকৃতি নিই, তখন আমাদের দাবি কেবল একটাই ছিল, আর সেটা হলো সরকারিভাবে স্বীকৃতি প্রদান। আমরা প্রধানত চেয়েছি, কওমি শিক্ষাব্যবস্থাকে যেন সরকার স্বীকৃতি প্রদান করে। কারণ এর আগে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাসঙ্গিক এই শিক্ষাধারার কোনো স্বীকৃতিই ছিল না।

তিনি বলেন, কওমি মাদরাসা পড়ুয়ারা যে সুশিক্ষায় শিক্ষিত এবং সমৃদ্ধ একটা শ্রেণি, তা সরকারি নথিপত্রে স্বীকৃত ছিল না। আমরা সরকারের কাছ থেকে কেবল এ স্বীকৃতিটাই চেয়েছি এবং যথাযথভাবে পেয়েছিও। স্বীকৃত এই সনদ দিয়ে চাকরি-বাকরি করা হবে, এটা আমাদের আবশ্যকীয় কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। কারণ, আমাদের শিক্ষাধারায় শিক্ষিতদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা যেকোনো একভাবে হয়ে যায়, কাউকে বেকার থাকতে হয় না। তাছাড়া এ শিক্ষাধারায় পড়াশোনার লক্ষ্য কেবলই ইসলাম সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন, ইসলামের খেদমত এবং এসবের মাধ্যমে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা। চাকরি-বাকরির জন্য আমাদের এই শিক্ষা এবং শিক্ষার সার্টিফিকেট নয়।

একই কথা বলছেন বোর্ডটির অপর সদস্য মুফতী মাহফুজুল হকও। তিনি ফাতেহ টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, কওমি মাদরাসা শিক্ষাধারায় শিক্ষিতরা যে শিক্ষিত শ্রেণি সরকারিভাবে এটাই স্বীকৃত ছিল না। দাওরায়ে হাদিসের সনদের স্বীকৃতির মাধ্যমে এ স্বীকৃতিটা এসেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের সবশ্রেণির মানুষও এ শিক্ষাধারা সম্পর্কে জানার জন্য আগ্রহী হয়েছে, যেটা এতোদিন ছিল না। স্বীকৃতির মাধ্যমে এই প্রাপ্তিটাই আমাদের চাওয়া ছিল। স্বীকৃত সনদের দ্বারা সরকারি চাকরি-বাকরি সুযোগ তৈরি করা আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল না।

তবে কওমি সার্টিফিকেটের মাধ্যমে চাকরি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা এবং প্রাসঙ্গিকতা স্বীকার করছেন উভয়েই। মাওলানা মাহফুজুল হক বলছেন, যেহেতু ইসলামিক স্টাডিজে মাস্টার্সের সমমানের মর্যাদা দাওরার সনদকে দেওয়া হয়েছে, অতএব ইসলামিক স্টাডিজে মাস্টার্স কমপ্লিটকারীরা যে সুযোগ পাবেন দাওরার সম্পন্নকারী একজন কওমি আলেমকে সে সুযোগ দিতে হবে। কিন্তু এটা বাস্তবায়নে নানা প্রক্রিয়া ও ফরমালিটির ভেতর দিয়ে যেতে হবে। সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়ার ব্যাপার আছে। বোর্ড সেটা করছে এবং এ লক্ষ্যে এগোচ্ছেও।

তবে মুফতি নুরুল আমীন বলছেন, আমাদের ‘মুরব্বি’রা চাচ্ছেন না ঢালাওভাবে সরকারি কাজকর্মে কওমি শিক্ষার সনদগ্রহণকারীরা ঢুকে পড়ুক। কোন কোন ক্ষেত্রে কওমি সনদধারীরা সরকারি চাকরি গ্রহণ করবেন, সেটা নিয়ে তারা ভাবছেন। এ ব্যাপারে সরকারের কাছে একটা প্রস্তাবনা পেশ করা হবে বোর্ডের পক্ষ থেকে। সেই অনুযায়ীই নির্ধারিত হবে কওমি সনদধারীদের সরকারি চাকরির ক্ষেত্র।

প্রস্তাবনাটি কবে পেশ করা হবে জানতে চাইলে মুফতি নুরুল আমীন বলেন, চাকরির ক্ষেত্র বিষয়ে মুরব্বি ওলামায়ে কেরামের মাঝে এখনও আলাপ-আলোচনা চলছে। আলাপ-আলোচনা চূড়ান্ত হলে সেটার আলোকে প্রস্তাবনা তৈরি করা হবে। এটা দীর্ঘ মেয়াদি প্রক্রিয়া। এখনই কোনো সিদ্ধান্তে আসা যাচ্ছে না।

আগের সংবাদ২০ ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানকে একুশে পদক প্রদান
পরবর্তি সংবাদসিএএ বিরোধী বিক্ষোভে নিহতদের সম্পর্কে যোগী আদিত্যনাথের উগ্র মন্তব্য