কওমি স্বীকৃতি কীভাবে এগুচ্ছে? জানেনা কেউ

|| তাসনিফ আবীদ ||

কওমি মাদরাসার শিক্ষানদের স্বীকৃতি আদায়ের প্রায় অর্ধযুগ পার হলেও এর সুফল ঘরে তুলে পারেনি কওমি সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের মাধ্যমে কারণ খুঁজতে গিয়ে ফাতেহ টোয়েন্টিফোর দেখেছে, ‘এর পেছনে কার্যকরী উদ্যোগের কমতি, দায়িত্বশীলদের সময় উপযোগী সিদ্ধান্তের অভাবকেই দায়ী হিসেবে দেখছেন অনেকে।’

বহুল প্রত্যাশিত এই স্বীকৃতির মাধ্যমে কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিস (তাকমিল)-এর সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি)-এর সমমান প্রদান করা হয়। শিক্ষাবিদ ও গবেষক আলেমরা জানান, ‘স্বীকৃতি গ্রহণের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) কাছে এটিকে ফরমালাইজ করার দরকার ছিল।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বীকৃতি গ্রহণের পর হাইয়াতুল উলিয়ার শরিক ৬ বোর্ডের দায়িত্বশীলদের সমন্বয়ে একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়; যাদের কাজ ছিল স্বীকৃতিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন ও ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট সরকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা।

হাইয়াতুল উলিয়ার সাব কমিটি স্বীকৃতির অগ্রগতির জন্য বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) এর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেছিল কী না জানতে ফাতেহ টিম যোগাযোগ করে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। ইউজিসি’র চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে বিদেশে ছুটিতে থাকায় কথা হয় চেয়ারম্যানের একান্ত সচিব ও সিনিয়র কর্মকর্তা মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, কওমি স্বীকৃতির অগ্রগতির জন্য কওমি সংশ্লিষ্টরা ইউজিসির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বলে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।

‘যেহেতু বিষয়টি মাদরাসা সংশ্লিষ্ট, আপনি ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।’ -বলেন এই কর্মকর্তা

প্রথমে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর দপ্তর ও তাদের কথানুযায়ী পরবর্তীতে রেজিস্ট্রার দপ্তরে যোগাযোগ করা হলে তারাও কওমি স্বীকৃতি বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেনি।

তারা বলছে, কওমি স্বীকৃতি এগিয়ে নেওয়ার জন্য কীভাবে কাজ করা হচ্ছে সে বিষয়ে আমরা কিছুই জানিনা। আপনি কওমি বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে জানার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল টেলিফোন নাম্বার একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে বন্ধ পায় ফাতেহ টিম।

সবশেষে ফাতেহ টিম আবারও যোগাযোগ করে স্বীকৃতি এগিয়ে নেওয়ার জন্য হাইয়াতুল উলিয়ার গঠন করা সেই সাব কমিটির এক সিনিয়র দায়িত্বশীলের সঙ্গে।

স্বীকৃতির অগ্রগতির জন্য কীভাবে কোন মন্ত্রণালয়ে বা সরকারী কোন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন? ইউজিসি বা শিক্ষামন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল নাকি বিষয়টি ব্যক্তিপর্যায়ে যোগাযোগ করে এগিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেক আগের বিষয় তো, এখন মনে পড়ছে না। অনেক দিন ধরেই তো এ বিষয়ে কোনো নড়াচড়া বা বৈঠক নেই। সামনে কোনো বৈঠক হলে জানাতে পারবো।’

এদিকে দায়িত্বশীলদের এমন কর্মকাণ্ডে আটকে আছে লাখো কওমি তরুণের স্বপ্ন। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, ‘কওমি নেতারা স্বীকৃতি আদায়ের পর যেভাবে কওমি ছাত্রদের স্বপ্নকে গুরুত্ব দেওয়ার দরকার ছিল সেভাবে দিচ্ছে না।’ তাছাড়া সরকারের সঙ্গে লিয়াজু করে সনদের এই স্বীকৃতিকে এগিয়ে নেওয়ার জ্য যে মনমানসিকতা ও আন্তরিকতা দরকার তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ।

অনেকের ধারণা, শত আন্দোলন-সংগ্রাম আর ঘাম ঝরিয়ে যে স্বীকৃতি কওমি সংশ্লিষ্টরা আদায় করেছে, এখনই কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ না করলে পরবর্তীতে আফসোস আরো বাড়বে। ঝুঁকিতে পড়বে কওমি শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন-আশা।

আগের সংবাদফিলিস্তিনিদের উপর ইসরাইলি নৃশংসতা খুব শীঘ্রই বন্ধ হবে: এরদোগান
পরবর্তি সংবাদ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমার সামিয়ানা তৈরির কাজ শুরু