করোনার টিকা গ্রহণে শরঈ দৃষ্টিকোণ

মুফতি আব্দুল্লাহ মাসুম (সিএসএএ):

২০১৯ ইং বর্ষের শেষের দিকে শুরু হয় করোনা ভাইরাসের আক্রমণ। চীনের উহান শহরে ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯ তারিখে প্রথম তা শনাক্ত হয়। এরপর ধীরে ধীরে বিশ্বের নানা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ৮ই মার্চ, ২০২০ তারিখে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। ভাইরাসটি এতোটাই ভয়াবহ যে, খুব সহজে তা আল্লাহর আদেশে অন্যের মধ্যে সংক্রমিত হয়। এর শনাক্ত ও মৃত্যুর হার দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। ভেঙ্গে পড়েছে অর্থনৈতিক অবকাঠামো।

এ পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী এ রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা ভ্যাকসিন তৈরির বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় আসে। বিভিন্ন দেশের বৈজ্ঞানিকগণ দীর্ঘ গবেষণা করে একাধিক টিকা তৈরি করেছেন। এখনো করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে ট্রায়াল শেষে কিছু টিকা ব্যাপকভাবে দেয়াও হচ্ছে।

বাংলাদেশে গত ২৭ জানুয়ারী, ২০২১ তারিখে প্রথম করোনা টিকা প্রদান করা হয়। এ টিকাটি মূলত বৃটেনের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির একটি গবেষক টিম উদ্ভাবন করেছে। এরপর অ্যাস্ট্রাজেনেকা বায়োফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি প্রস্তুত করেছে। তাদের থেকে লাইসেন্স নিয়ে ইন্ডিয়ার সেরাম ইনস্টটিটিউটও প্রস্তুত করছে। বাংলাদেশ মূলত সেরাম থেকে তৈরি টিকা গ্রহণ করেছে।

মানব সেবায় টিকা উদ্ভাবন অবশ্যই প্রশংসনীয় একটি উদ্যোগ। এর মাধ্যমে বহু বনি আদম আল্লাহ ফযল ও করমে সুরক্ষিত থাকে। তবে সাধারণত এসব টিকা অমুসলিম বৈজ্ঞানিকগণ তৈরি করে থাকেন। যে কারণে উপাদান হিসাবে কখনো এমন কিছু তারা ব্যবহার করেন, যা মুসলমানদের জন্য নিষিদ্ধ। যেহেতু তাদের কাছে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ নয়, তাই এর বিকল্প হালাল উপাদান ব্যবহারের চিন্তা তাদের মাঝে পরিলক্ষিত হয় না। অবশ্য কখনো অন্য কোনো উপায়ও থাকে না।

সব মিলিয়ে মুসলমানদের জন্য এসব টিকা গ্রহণ করা বৈধ হবে কি না বিষয়টি শরীয়াহ্ অনুসন্ধানের প্রয়োজন হয়। ইতোমধ্যে এর শরঈ অবস্থান জানতে অনেকে জিজ্ঞাসা করছেন আমাদেরকে। দেশের শীর্ষ পর্যায়ের আলেমগণ এ বিষয়ে ডিসকাশন করেছেন। মতামত ব্যক্ত করেছেন। শীর্ষ আলেমদের বৈঠকে আমি এ বিষয়ে একটি গবেষণামূলক প্রবন্ধ পেশ করার সুযোগ হয়। প্রবন্ধের মূল বিষয়ের সাথে আলেমগণ একমত পোষণ করেছেন। সেটির সারসংক্ষেপ এখানে তুলে ধরা হল।

মৌলিকভাবে টিকা গ্রহণের ব্যাপারে শরীয়াহ্ কী বলে?

টিকা মূলত রোগ হওয়ার আগেই জীবাণু যেন আক্রমণ করতে না পারে সে জন্য বিশেষ সুরক্ষা পদ্ধতি গ্রহণের নাম। ইনজেকশনের মাধ্যমে রোগের জন্য দায়ী জীবানুর দুর্বল ভার্সন, মৃত বা জীবানুর অংশবিশেষ সুস্থ বা অসুস্থ মানুষের দেহে টিকা হিসেবে দেয়া হয়। এরপর এর বিরুদ্ধে আমাদের শরীরে আল্লাহর আদেশ ও ক্ষমতায় প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা হিসেবে এন্টিবডি এবং এর মেমোরী সেল তৈরি হয় । পরবর্তীতে সেই নির্দিষ্ট জীবানুটি দেহে প্রবেশ করলে এন্টিবডি এগুলো সনাক্ত করে জীবানুটিকে আল্লাহর আদেশ মেরে ফেলে। এটিই সংক্ষেপে টিকার মূল কথা।

শরীয়াহ দৃষ্টিকোণ থেকে রোগ হওয়ার আগেই, রোগ যেনো না হয় সে জন্য টিকা গ্রহণ বৈধ বা মুবাহ। ভবিষ্যতে রোগ থেকে বেঁচে থাকার জন্য হাদীসে নানা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিশেষ কিছু খেতে বলা হয়েছে, যেনো রোগ থেকে বেঁচে থাকা যায়।

এক হাদীসে ইরশাদ হয়েছে, ‘সকাল বেলা যে মদিনার সাতটি খেজুর তথা আজওয়া খেজুর খাবে, ঐদিন সে না বিষ না যাদুতে আক্রান্ত হবে’ (সহীহ মুসলিম, ৫৩০৬)।

এ হাদীসটি টিকার শরীয়াহ্ ব্যাখ্যার সাথে খুবই সঙ্গতিপূর্ণ। শাইখ বিন বায রহ. টিকার বৈধতার পক্ষে উক্ত হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেছেন। দারুল উলূম দেওবন্দের বিখ্যাত মুফতি, মুফতি আযীযুর রহমান রহ. এক ফতেয়ায় লিখেছেন-‘পূর্ব সুরক্ষা হিসাবে টিকা গ্রহণ করা বৈধ। শরঈ দৃষ্টিকোণ থেকে এতে কোনো সমস্যা নেই। এটিও এক ধরনের চিকিৎসা’। সুতরাং মৌলিকভাবে টিকা গ্রহণ মুবাহ বা বৈধ।

তবে একটি কথা মনে রাখতে হবে, টিকা একটি সতর্কতা মূলক পদক্ষেপ। সরাসরি রোগমুক্তির চিকিৎসা নয়। সুতরাং সরাসরি চিকিৎসার ক্ষেত্রে শরীয়তে শর্ত সাপেক্ষে যেসব ছাড় রয়েছে, সব কিছু হুবহু টিকায় আসবে না। যারা ‘জান বাঁচানো ফরয’ এধরনের অজুহাত তুলে বাছ-বিচার ছাড়াই টিকা নেয়ার ফতোয়া জারি করেন তারা সে বিষয়টি লক্ষ করেন কি না জানি না।

বাংলাদেশে ব্যবহৃত অক্সফোর্ড টিকায় কী কী উপাদান ব্যবহৃত হয়েছে?

এ আলোচনাটি গুরুত্বপূর্ণ। এর উপাদানের উপর নির্ভর করে এর শরীয়াহ বিধান। মূলত যেকোনো টিকা তৈরিতে দু’ ধরনের উপাদান ব্যবহার করা হয়।
এক. মৌলিক উপাদান, যা থেকে ভাইরাস গ্রহণ করা হয়। একে মূল Active Ingredients বলতে পারি।
দুই. মৌল উপাদানকে বহন ও সংরক্ষণ করার জন্য প্রাসঙ্গিক উপাদান। একে সহায়ক Excipients বলতে পারি।

মৌলিক উপাদান

আলোচিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার মৌল উপাদান তথা ভাইরাসের নাম- SARA-CoV-2-। এটি মূলত মূল করোনা ভাইরাস। টিকা তৈরিতে শুধুমাত্র এই ভাইরাসের অংশ বিশেষ ব্যবহার করা হয়েছে। করোনাভাইরাস আমাদের ফুসফুসের কোষে প্রবেশ করতে চাবির মত একটি প্রোটিন ব্যবহার করে, যা স্পাইক প্রোটিন (Spike protein (S)) হিসেবে পরিচিত। এই স্পাইক প্রোটিন ভাইরাসের বাহিরাংশে সজ্জিত থাকে। এই চাবি বা স্পাইক প্রোটিন ছাড়া করোনাভাইরাস ফুসফুসের কোষে প্রবেশ করতে পারে না। যদি ভাইরাসটি কোষে প্রবেশ না করতে পারে তবে কোভিড নামক রোগটি হবে না। করোনাভাইরাস স্পাইক প্রোটিনের সহায়তায় কোষে প্রবেশ করে তাদের সংখ্যা বাড়াতে থাকে।

অন্যদিকে আমাদের শরীর তখন এই ভাইরাসকে মারতে সাইটোকাইন নামক কেমিক্যাল নিঃসরণ করে। করোনাভাইরাস যেহেতু আমাদের কোষে বাস করে, তাই নিঃসৃত সাইটোকাইন ভাইরাস মেরে ফেলার পাশাপাশি ফুসফুসের কোষকে ধংস করে ফেলে। একারণে কোভিডের রোগীরা পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না। ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যেতে পারে। রোগীকে তখন বাইরে থেকে অক্সিজেন দিতে হয়।

করোনার টিকার কাজ হচ্ছে শরীরকে এই ভাইরাস সম্পর্কে পরিচিত করা, অর্থাৎ এন্টিবডি বা মেমোরি সেল তৈরী করে রাখা। এর ফলে ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলেও এন্টিবডির কারনে কোভিড নামক রোগটি হবে না।

যাইহোক, করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের জেনেটিক কোড সংগ্রহের পর, এবার তা আমাদের শরীরে প্রবেশ করাতে এর বাহক হিসাবে শিম্পাঞ্জীকে আক্রান্ত করে (তবে মানুষকে নয়) এমন একটি ভাইরাস নেয়া হয়েছে। যা এডিনোভাইরাস (Adenovirus) নামে পরিচিত। শিম্পাঞ্জির সর্দি-কাশির কারণ এই ভাইরাস। যেহেতু এটি শিম্পাঞ্জির রোগের কারণ, তাই একে শিম্পাঞ্জি এ্যাডিনোভাইরাস বলে। এগুলো ল্যাবে তৈরি হয়। এটিও এমনভাবে জেনেটিকেললি মডিফাই করা হয়েছে, যা মানব দেহে কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। এই ভাইরাসের জেনেটিক কোডে করোনা ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের জেনেটিক কোড জুড়ে দেয়া হয়।

এ্যাডিনোভাইরাসের সাথে শিম্পাঞ্জির সম্পর্ক কী?

মূলত এ্যাডিনোভাইরাস ও শিম্পাঞ্জি দুটি আলাদা বিষয়। ১৯৫৩ সনে শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ, সর্দি, ঠান্ডা এমন আরো কিছু রোগের কারণ হিসাবে একটি ভাইরাস চিহ্নিত (Isolated) হয়। অ্যাডিনয়েন টিস্যূতে সেল কালচার (Adenoid tissue–derived cell cultures) থেকে প্রাপ্ত এটি। তাই ভাইরাসটির তখন নামকরণ করা হয় ‘এ্যাডোনোভাইরাস’ (Adenoviruses)। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষ্যমতে ৬০টির বেশি বিভিন্ন ধরনের এ্যাডিনোভাইরাস রয়েছে, যা বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতার কারণ।
সাধারণত এ্যাডিনোভাইরাস প্রাকৃতিকভাবে জলাধারে পাওয়া যায়। তবে মূল ভাইরাসটি (Parent organism) তার বাহকের দেহ ছাড়া পাওয়া যায় না। তাই মূলত শিম্পাঞ্জির মল থেকে তা সংগ্রহ করতে হয়েছে।

শিম্পাঞ্জির মল থেকে তা সংগ্রহ করার পর ক্যামিক্যাল প্রক্রিয়ায় তা আইসুলেট বা পৃথক করা হয়েছে। বিজ্ঞানীদের ভাষায় শিম্পাঞ্জি থেকে গৃহিত এই প্রজাতির ভাইরাসটির নাম- ChAd Y25। (শিম্পাঞ্জি এ্যাডিনোভাইরাস Y25)। পরবর্তীতে জেনেটিক্যাললি মডিফাই করে একে ভ্যাক্টরে (বাহক) রূপান্তর করা হয়। এর নাম দেয়া হয় ChAdOX1। বিজ্ঞানীরা একে এমনভাবে মডিফাই করেছেন, যা প্রতিলিপি করতে অক্ষম। ফলে ভ্যাক্টরটি মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর হয় না।

সারকথা, আলোচিত মূল এ্যাডিনোভাইরাসটির নাম ChAd Y25 । পরবর্তীতে একে ভ্যাক্টরে রূপান্তর করার পর ভ্যাক্টর হিসাবে এর নামকরণ হয়- ChAdOX1।

উপরের আলোচনা থেকে পরিষ্কার যে, এ্যাডিনোভাইরাস সংগ্রহ ও তৈরিতে মানব দেহের কোনো অংশ সম্পৃক্ত নয়। হাঁ, এটি নাপাক থেকে সংগৃহিত। তবে মডিফায়িং এর পর তাতে আর নাপাক বাকি নেই। আর থাকার কোনো সম্ভাবনাও নেই। কারণ এখানে শেষ পর্যন্ত শুধু ডিএনএ নেয়া হয়। অন্য কিছু নয়।
আরো একটি বিষয় স্পষ্ট করা দরকার, শিম্পাঞ্জির মল থেকে প্রতিবার ভাইরাস সংগ্রহ করতে হয় না। একবার সংগ্রহ করা হয়েছে। এরপর এর বহু কপি ল্যাবেই তৈরি হয়। সুতরাং শেষতক শিম্পাঞ্জির সাথে এর সরাসরি কোনো সম্পৃক্ততা থাকে না। এগুলো পরবর্তীতে ল্যাবেই তৈরি হয়। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের কাছে একেবারেই পরিষ্কার।

ভাইরাস গ্রোয়িং/বৃদ্ধি প্রক্রিয়ায় মানবাংশের কোনো সম্পৃক্ততা কি আছে?

হাঁ, মানব দেহের অংশ বিশেষের সম্পৃক্ততা আছে। তবে সরাসরি নয়। বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন-

উপরের আলোচনা থেকে বুঝতে পেরেছি, করোনা ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের জেনেটিক কোড বা ডিএনএ-কে এ্যাডোনোভাইরাসের জেনেটিক কোড বা ডিএনএ-তে স্থাপন করা হয়েছে। দুটিই ল্যাবে ক্যামিক্যাললি তৈরি। এই স্থাপন প্রক্রিয়াও ক্যামিক্যাল প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়। এরপর এর গ্রো (Grow)/বৃদ্ধি করার জন্য, একটি মানব সেলের সহযোগিতা নেয়া হয়েছে। সেলটি-হেক-২৯৩ সেল লাইন নামে প্রসিদ্ধ। অনেকটা এরকম যে, বীজ থেকে অংকুর হওয়ার জন্য মাটির সহযোগিতা নেয়ার মতো।

হেক-২৯৩ সেল লাইন আসলে কী?

সময়টি ১৯৭৩ ইং সন। দেশীয় আইনের অধীনে একটি ১২ সপ্তাহের অধিক বয়সী মানব ভ্রুণের গর্ভপাত করানো হয়। বিজ্ঞানীরা ভাইরাস গ্রোয়িং/বৃদ্ধির জন্য এই ভ্রুণের কিডনী থেকে কিছু সেল গ্রহণ করেন। কারণ ভাইরাস গ্রোয়িং বা সংখ্যা বাড়াতে ইয়াং সেলের প্রয়োজন হয়। এই মানব সেলের নাম- ঐঁসধহ বসনৎুড়হরপ শরফহবু ঈবষষ । সংক্ষেপে -(HEK) 293 cells বলে। এরপর থেকে আজ অবধি এই সেল লাইন কপি থেকে কপি হয়ে আসছে। ক্লোনিং প্রক্রিয়ায় তা বহু কপি হয়েছে। সেই অরিজিনাল মানব সেল আর নেই। এখন সেই কপি সেলই ব্যবহৃত হয়। বিজ্ঞানীদের ভাষায়- HEK-293 cells used nowadays are clones of those original cells, but are not themselves the cells of aborted babies

সহজে বলতে পারি, বই যখন ফটোকপি করা হয়, তখন ফটোকপি আরেকটি বই হয়ে যায়। তবে সেটি মূল বই হয় না। ক্লোনিং প্রক্রিয়ায় সেলটি আজ অবধি ক্যামিক্যাল প্রক্রিয়ায় এরকম বহু ফটোকপি হচ্ছে। তাই আজ যে সেল লাইন ব্যবহৃত হচ্ছে, তাতে সেই অরিজিনাল হিমম্যান ফিটাসের কিছুই নেই। এখানে বলে রাখা ভালো, সেল সংগ্রহের উদ্দেশে গর্ভপাত করানো হয়েছে বিষয়টি এমন নয়।

সারকথা, উক্ত হেক সেল লাইনকে আমরা একটি কারখানার সাথে তুলনা করতে পারি। প্রথমে করোনা ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন বা ডিএনএ-কে এ্যাডিনোভাইরাসের ডিএনএ-এর মধ্যে প্রবেশ করানো হয়েছে। পুরো কাজটি করা হয়েছে ল্যাবে ক্যামিক্যাল প্রক্রিয়ায়। এখানে এ্যাডিনোভাইরাসকে করোনা ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের জিনের জন্য একটি ভ্যাক্টর হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এরপর একে গ্রোয়িং এর জন্য হেক সেল লাইন নামক কারখানায় বা ওয়ার্কশপে দেয়া হয়েছে। সেখান থেকে সেটি বহু কপি ও ভাইরাস তৈরি হয়েছে। এভাবে তৃতীয় ধাপে হেক সেল লাইনের ব্যবহার সম্পন্ন হয়।

চতুর্থ ধাপে-ল্যাবে বিশেষ মেশিনের সাহায্যে হেক সেল লাইন থেকে যেসব ভাইরাস তৈরি হল, তাকে আলাদা করে নিয়ে মডিফাই করা হয়। এক্ষেত্রে তা এতোটাই মডিফাই করা হয় যে, এতে প্রাণীর কোনো অংশ-ই থাকে না। এ জন্যই তারা বলছেন-ভ্যাকসিনে এ্যানিম্যাল কোনো পার্ট নেই। সব শেষে এই ভ্যাক্টরসহ মূল ভ্যাকসিন গঠন সম্পন্ন হয়।

সংক্ষেপে এখানে মোট পাঁচটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়েছে, যথা-
১। করোনা ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের জেনেটিক কোড সংগ্রহ করা।
২। শিম্পাঞ্জি এ্যাডিনোভাইরাসের জেনেটিক কোড সংগ্রহ।
৩। এ্যাডিনোভাইরাস কোডে স্পাইক প্রোটিনের জেনেটিক কোড প্রতিস্থাপন।
৪। স্পাইক প্রোটিন জিন প্রতিস্থাপিত এ্যাডিনোভাইরাস জিনকে হেক-২৯৩ সেল লাইনে প্রতিস্থাপন।
৫। নির্ধারিত সময়ের পর হেক সেল লাইন থেকে মূল ভাইরাসটি পৃথকীকরণ।

আলোচিত মূল উপাদানে শরীয়াহ কোনো সমস্যা কি আছে?

মূল উপাদানে আমরা পূর্বে দেখেছি-তাতে সরাসরি প্রাণীর কোনো উপাদান নেই। তাই তা শরীয়াহ্ দিক থেকে ইতিবাচক। হাঁ, ভাইরাস গ্রোয়িং/বৃদ্ধির জন্য ‘হেক-২৯৩ সেল লাইন’ এর ব্যবহার নেয়া হয়েছে। যা মানব অংশ থেকে কপিকৃত। তবে সেই সেল লাইনও ক্লোনিং প্রক্রিয়ায় ট্রান্সফরমেশন হয়ে গেছে। যদ্দরুন তাতে মূল হিউম্যান ফিটাস নেই। সুতরাং এটি ব্যবহারে মৌলিক কোনো শরীয়াহ্ সমস্যা নেই।

তাছড়া ভ্যাকসিন তৈরির পর তা পিউরিফাই করে নেয়া হয়েছে। ফলে পরবর্তীতে তাতে পরিবর্তিত সেল লাইনও বাকি নেই। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া অ্যাস্ট্রাজেনেকাও তা স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছে যে, চূড়ান্ত ধাপে তাতে অ্যানিম্যাল কোনো পার্ট নেই।। তবে প্রশ্ন থেকে যায়-
-‘হেক-২৯৩ সেল লাইন’ নাপাক। এই নাপাক বস্তু থেকে উপকৃত হওয়া কতটুকু বৈধ?
-‘হেক-২৯৩ সেল লাইন’ যদিও পরবর্তীতে ক্লোনিং প্রক্রিয়ায় বহু কপি হয়ে গেছে। তাতে অরিজিনাল হিউম্যান সেল নেই। তদুপরি মূলগতভাবে সেল লাইন-এ-মানব অংশ ওতপ্রোথভাবে জড়িত। এভাবে মানবাংশ থেকে উপকৃত হওয়া কতটুকু বৈধ?

প্রথম প্রশ্নের ব্যাপারে কথা হল-তৈরিকৃত ভ্যাকসিনে নাপাক কিছু নেই। শুধু এতটুকু হয়েছে, ওই নাপাক বস্তুতে তা পরিপক্ক হয়েছে। নাপাক থেকে জন্ম নেয়নি। এটি পরবর্তীতে যদি ভালো করে পিউরিফাই করে নেয়া হয়, তাতে নাপাকের কোনো অংশ না থাকে তাহলে এতে সমস্যা নেই। যদিও তা নাপাকেই বেড়ে উঠেছে। এটি নাপাকের অংশ নয়।

দ্বিতীয় প্রশ্নের ব্যাপারে কথা হল, এটি ঠিক যে, মানব অংশ দিয়ে উপকৃত হওয়া বৈধ নয়। এটি মানবের সম্মানের পরিপন্থী। তবে মানবাংশ ব্যবহার যদি প্রয়োজনে সম্মানজনক পন্থায় হয়, তবে এতে সমস্যা নেই। মুফতি কেফায়াতুল্লাহ রহ. এক প্রশ্নের জবাবে এমনটি বলেেেছন।

আলোচিত হেক সেল লাইন যে প্রয়োজন ও পন্থায় ব্যবহার করা হয়েছে, এতে মানবের কোনো অপমান হয় না। কারণ, এর জন্য কোনো ভ্রুণ হত্যা করা হয় নি। বরং স্বাভাবিকভাবে গর্ভপাতকৃত ভ্রুণকেই কাজে লাগানো হয়েছে বলে তথ্যে বলা হয়েছে।

তাছাড়া সবচেয়ে বড় কথা হল, বর্তমান সেল লাইন এতোটা পরিবর্তিত, তাতে অরিজিনাল হিউম্যান ফিটাস নেই। সেটি বহু স্তরে কপি হয়ে গেছে। ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন সেল তৈরি হয়েছে। এখনো মানবাংশ বাকি আছে তা বলা মুশকিল। তদুপরি ভ্যাকসিন তৈরির চূড়ান্ত ধাপে তাতে মানবের কোনো অংশ থাকে না।
সর্বোপরি ভ্যাকসিন তৈরির জন্য মানব অংশের ব্যবহার সরাসরি হয়নি। বরং বহু মাধ্যমে ক্লোনিং কপিতে হয়েছে।

র্অধশতাব্দী ধরে ঐ সেল থেকে ট্রিলিয়ন-ট্রিলিয়ন পরিমাণে ভাইরাস গ্রো করার পর এখন আর সরাসরি একথা বলা যাচ্ছে না যে, এখনকার টিকায় মানবাংশ রয়ে গেছে। আর সরাসরি সম্পৃক্ততা না থাকায় উক্ত হেক সেল লাইনের কারণে এ টিকা ব্যবহার হারামও বলা যাচ্ছে না।

অবশ্য এতে যেহেতু মানব অংশের কোনো না কোনো সহযোগিতা আছে, সে দৃষ্টিকোণ থেকে কেউ কেউ বলেছেন, যে দেশে এর চেয়ে ভালো বিকল্প আছে, সে দেশে সেটিই গ্রহণ করা ভালো।

বলার অপেক্ষা রাখে না, কথাটি আমাদের দেশে প্রযোজ্য হবে না। কারণ আমাদের দেশে এর বিকল্প এখন পর্যন্ত নেই। এখানে এটিও উল্লেখ্য, ইসলামে গর্ভপাত সাধারণত বৈধ নয়। তাই এখান থেকে গর্ভপাত বৈধতার কোনো ভুল বার্তা যেনো আমরা গ্রহণ না করি।

তবে আমরা বলবো, এমন পদ্ধতি আবিষ্কার করা উচিত, যাতে কোনো স্তরেই মানবাংশের কোনো প্রকার ব্যবহার করতে হয় না। এমন ভ্যাকসিন তৈরি হয়ে থাকলে সেটিই অগ্রগণ্য হবে। বিশেষত মুসলিম দেশগুলোর অবশ্যই দাবি তোলা উচিত, যেন ভবিষ্যতে অন্যান্য টিকায় এর উপাদানে উত্তম বিকল্প ব্যবহার করা হয়, যেন মানুষের মনে কোনো সন্দেহের উদ্রক না ঘটে এবং শরীয়ার দিক থেকে কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত না হয়।

আলোচিত ভ্যাকসিনে সহায়ক উপাদান হিসাবে কী কী ব্যবহার করা হয়েছে? এতে শরঈ কোনো সমস্যা কি আছে?

মূল ভ্যাকসিন গঠন হওয়ার পর একে সংরক্ষণ করার জন্য প্রয়োজন হয় সহায়ক Excipients এর। এগুলো ভ্যাকসিনকে স্টাবিলাইজ (Stabilize) করার জন্য স্টাবিলাইজার হিসাবে ব্যবহার করা হয়। এই স্টাবিলাইজারসমূহের মধ্যে শরঈ দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনার দাবি রাখে কেবল তিনটি উপাদান। যথা- পলিসরবেট-৮০, ডাইসোডিয়াম এডিটেইট ও ইথানল।

অ্যাস্ট্রাজেনেকার বক্তব্য অনুযায়ী প্রথম দুটির উৎস হিসাবে এ্যানিমেল সোর্স ব্যবহৃত হয়নি। এ্যানিমেল সোর্স ব্যবহৃত হলে তখন বিষয়টি জটিল হয়ে যেতো। দেখতে হতো, সেটি হালাল প্রাণী কি না, হালাল হলে শরীয়াহ্ পন্থায় যবেহকৃত হয়েছে কি না ইত্যাদি। সুতরাং প্রাণীজ উৎস যেহেতু ব্যবহৃত হয়নি, এ তথ্য সঠিক হয়ে থাকলে এ দুটিতে শরীয়াহ্ সমস্যা নেই। বাকি থাকলো ইথানল বা এ্যালকোহল ।

ইথানল মূলত এ্যালকোহল। এটি সবচেয়ে প্রসিদ্ধ এ্যালকোহল। সাধারণত এ্যালকোহল বলতে একেই বুঝানো হয়। সহজে যা ‘মদ’ হিসাবে পরিচতি। ইসলামে তা ‘খামর’ হিসাবে পরিচিত। ইসলামে অত্যন্ত কঠোরভাবে যে কয়টি বিষয় নিষিদ্ধ, তন্মধ্যে ‘খামর’ অন্যতম।

অধিকাংশ ফকীহগণের মতে-নেশা সৃষ্টিকারী সব কিছুই ‘খামর’। যেটা খেলে নেশা হয়, সেটি অল্প-বেশি যেকোনো পরিমাণ খাওয়া হারাম। যা বেশি খেলে নেশা হয়, তা অল্পও খাওয়া নিষেধ। যদিও অল্প খেলে নেশা না হয়। খাদ্য ও পানীয় এর ক্ষেত্রে দলীলের বিচারে এটিই সঠিক বক্তব্য।

সুতরাং মুসলমানদের জন্য খাদ্য ও পানীয়তে ইথানল বা ‘খামর’ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ও অবৈধ। এর উপাদান ও তৈরির প্রক্রিয়া যাই হোক। মূল হল নেশা তৈরি করা। নেশা সৃষ্টি করলে সেটিই নিষিদ্ধ হবে। অল্প পরিমাণ হলেও নিষিদ্ধ। যদিও অল্পতে নেশা না হয়। বেশিতে হয়।

খাদ্য ও পানিয় ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে যেমন-শরীরের বহিরাংশে ব্যবহার, ঔষধে, টিকায় এ্যালকোহলের ব্যবহারের ব্যাপারে কিছু ফকীহ খামরের উপাদানের বিবেচনা করেছেন। অর্থাৎ খেজুর, আঙ্গুর বা কিসমিস অন্যান্য দ্রব্য বা শষ্য থেকে তৈরি হয়ে থাকলে, সেটি কেবল নেশা পরিমাণ হারাম। নেশা সৃষ্টি না করলে, হারাম হবে না।

সাধারণত এটি প্রমাণিত যে, মেডিসিন ও শিল্প জাতীয় কাজে ব্যবহৃত ইথানল সংগ্রহ হয় বিভিন্ন শষ্য থেকে। পশ্চিমা দেশে আঙ্গুর ও খেজুর সহজলভ্য নয়। সুতরাং এ দুটি উপাদান থেকে সংগৃহিত না হওয়াটাই মূল ও স্বাভাবিক বিষয়।

এছাড়া ইউকের ‘মেডিসিন অ্যান্ড হেলথকেয়ার প্রডাক্টস রেগুলেটরী এজেন্সী’ স্পষ্ট জানিয়েছে-এখানে ব্যবহৃত ইথানল ভেজিটেবল সোর্স থেকে নেয়া হয়েছে। মোটকথা, সাধারণত ঔষধ ও অন্যান্য কাজের জন্য ব্যবহৃত ইথানল বা এ্যালকোহল তৈরি হয় শস্য বা উদ্ভিদ থেকে। আঙ্গুর/খেজুর থেকে তৈরি করাটা প্রমাণিত নয়। বরং অন্যান্য সোর্স থেকেই তৈরি হওয়াটা প্রমাণিত। সে হিসাবে এতে শরঈ সমস্যা থাকছে না।

উপরন্তু প্রতি ০.৫ মি.লি. ডোজ টিকায় এ্যালকোহল আছে মাত্র ০.০০২ গ্রা. । সহজে বললে, ১ মি.লি. এর অর্ধেক পরিমাণ ডোজে এ্যালকোহল আছে ২ মি.গ্রা.। অথবা এক ডোজ পরিমাণ ভ্যাকসিনে (০.৫ মি.লি.) এর আড়াইশ ভাগের এক ভাগ এ্যালকোহল আছে। যা খুবই নগণ্য।

উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, আমাদের দেশে ব্যবহৃত করোনা টিকায় শরীয়াহ্ নিষিদ্ধ কোনো উপাদান নেই। তাই তা ব্যবহারে শরীয়াহ্ সমস্যা নেই। কেউ চাইলে তা গ্রহণ করতে পারেন। শরঈ দৃষ্টিতে তা মুবাহ বা বৈধ। বৃটিশ ইসলামিক মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন (ইওগঅ), বেফাকুল উলামা, ফতোয়া, ইউকেসহ অনেকেই অক্সফোর্ডের টিকাকে বৈধ বলেছেন।

তবে আলোচিত ভ্যাকসিনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া যদি অধিক ও ব্যাপক হয়, উপকারের চেয়ে ক্ষতি-ই বেশি হয়, তবে তা গ্রহণ করা বৈধ হবে না।

বলার অপেক্ষা রাখে না, দীর্ঘমেয়াদি করোনার টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী হতে পারে তা এখনই বলা সম্ভব নয়। কারণ টিকাগুলো প্রয়োগই শুরু হয়েছে মাত্র মাস দুয়েক আগে। অন্যদিকে প্রচারিত তথ্য অনুযায়ী ব্যবহারকারীদের মধ্যে অল্প কিছু লোক ছাড়া অন্যদের মধ্যে এখনও জটিল কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি বলে বলা হচ্ছে। বাস্তবে এমনটি হয়ে থাকলে এ দিক থেকে উক্ত টিকা গ্রহণে আপাতত শরীয়াহ্ সমস্যা নেই। তথাপি টিকা ব্যবহারের পূর্বে স্বাস্থ্যগত বিষয়গুলো জেনে-বুঝে নেওয়া দরকার।

টিকা গ্রহণের ক্ষেত্রে একজন মুসলিম কি ধরনের আকীদা পোষণ করা উচিত?

টিকা গ্রহণে এমন বিশ্বাস বা আকিদা রাখা যাবে না যে, এ টিকা গ্রহণ করা হলে আর রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই বা ভ্যাকসিন না নিলে রোগাক্রান্ত হয়ে যাবে অথবা ভ্যাকসিনের মাঝে এমন নিজস্ব শক্তি রয়েছে, যা নিজেই স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে রোগ থেকে সুরক্ষা দিতে পারে। এসব বিশ্বাস নিয়ে ভ্যাকসিন গ্রহণ করা বৈধ নয়। বরং তাকে এ বিশ্বাস ও ঈমান রাখতে হবে যে, ভালো-মন্দ, রোগাক্রান্ত হওয়া বা রোগমুক্ত থাকা সবকিছুর মূল শক্তি আল্লাহর হাতে। আল্লাহ না চাইলে তার ক্ষেত্রে টিকা কার্যকর হবে না। টিকা কাজ করলে তা আল্লাহর ইচ্ছায় এবং তাঁর অনুগ্রহেই করেছে। না করলেও সেটি আল্লাহর ইচ্ছায়।

শেষ কথা, বাংলাদেশ মুসলিমদের দেশ। লক্ষ লক্ষ মুসলিম এ টিকা গ্রহণ করবে। তা আমদানির সিদ্ধান্তের আগে যদি নির্ভরযোগ্য আলমেদের মাধ্যমে আগেই এর শরীয়া বিষয়গুলো নিশ্চিত করে নেয়া হত তাহলে তা কতই না ভাল হত। অন্যান্য মুসলিম দেশ তা করলে পারলে আমরা কেন তা করতে পারলাম না!

উল্লখ্যে, এখানে যা বলা হল, তা দীর্ঘ গবেষণা প্রবন্ধের সারসংক্ষেপ। জায়গার স্বল্পতায় রেফারেন্স ব্যবহার করার সুযোগ হয়নি। মুল গবেষণা প্রবন্ধে বিস্তারিত রেফারেন্স রয়েছে। ভালো হতো, দেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যদি জন স্বার্থে গবেষণাটি প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করতেন।

লেখক: সহকারী মুফতি, জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ, ঢাকা।

আগের সংবাদইন্দোনেশীয় অঞ্চলে ইসলাম : আগমন ও বিকাশ
পরবর্তি সংবাদধর্মীয় গবেষণা ও উচ্চশিক্ষা : ইউসুফ সুলতানের মুখোমুখি