|| তাসনিফ আবীদ ||
আর মাস খানেকের অপেক্ষা। এর পরেই শেষ হচ্ছে কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিস ও তাখাসসুস বিভাগের সমাপনী পরীক্ষা। এই পরীক্ষার মাধ্যমে ফারেগ হবে হাজার হাজার কওমি তরুন। কিন্তু তাদের জন্য বর্তমানে নিরাপদ কর্মসংস্থান বা খেদমতের ব্যবস্থা আছে কত সংখ্যক? তরুণ এই আলেমরাই বা কী ভাবছেন কর্মজীবন নিয়ে? যারা সদ্য ফারেগ কয়েক হয়ে খেদমতে কয়েক বছর ধরে যুক্ত আছেন তাদের অভিজ্ঞতাই বা কী?
রাজধানী ঢাকার রামপুরা ইফতা বিভাগের শিক্ষার্থী মাওলানা ওমর ফারুক আশিকী। এ বছর তিনি ইফতা শেষ করছেন। এর পরেই তাকে যোগ দিতে হবে কর্মজীবনে। তার সঙ্গে আলাপ হয় কর্মজীবন ভাবনা নিয়ে।
তিনি বলেন, আসলে কর্মজীবনের কথা ভাবতেই অজানা এক জটিলতার মধ্যে পড়ে যাই। আমাদের সিনিয়র যারা ফারেগ হয়েছেন তাদের সঙ্গে প্রায় সময়ই কথা হয়। তারা জানান কর্মজীবন নিয়ে নানা জটিলতার কথা। তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা। এ বিষয়গুলো নিয়ে ভাববারও কেউ আছে বলে মনে হয় না।
তিনি জানান, আর কয়েকদিন পরই যেহেতু আমি ফারেগ হচ্ছি আর আলহামদুলিল্লাহ আমার রেজাল্টও ভালো তাই নানাভাবে অনেক মাদরাসা থেকেই আমার খেদমতের অফার আসছে। কিন্তু হাদিয়া বা মাসিক সম্মানীর যে পরিমাণ বলা হয় তা দিয়ে বর্তমান বাজারে কোনোভাবেই চলা সম্ভব নয়।
‘শুনলে অবাক হবেন, এখন নুরানীর শিক্ষকদের চেয়ে অনেক কম বেতন দেওয়া হয় কিতাব বিভাগের শিক্ষকদেরকে। দাওরা পড়েছি, ইফতা শেষ করেছি। এখন নুরানীতে গিয়ে খেদমত নিলে তো ইলমগুলো চর্চা থাকবে না। তাই সেটাও করার কথা ভাবা যাচ্ছে না।’ যোগ করেন তিনি
রাজধানীর ফরিদাবাদ মাদরাসা দাওরায়ে হাদিসের শিক্ষার্থী হাফেজ তাহসান জানান, আমরা বন্ধুবান্ধব মিলে করোনার সময় থেকেই কিছু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আছি। ইচ্ছে আছে পরীক্ষার পর থেকে সেখানে ফুলটাইম সময় দিয়ে ব্যবসাটাকে বড় করার। আল্লাহ যদি তাওফিক দেন কয়েক বছর পর খেদমতে যুক্ত হবো। কোনো সম্মানী নেবো না। ফি সাবিলিল্লাহ খেদমত করবো।
তার এমন সংকল্পের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বড় ভাই মাদরাসায় খেদমত করে সাত বছর ধরে। তার নানা অভিজ্ঞতার কথা শুনে এই নিয়ত করেছি। ভাইয়া ঠিক মতো বেতন পান না। বেতনের পরিমাণও বর্তমান বাজার অনুযায়ী সামান্য। এসবের কারণে তাকে প্রায়ই টেনশনে থাকতে দেখি।
তাহসান বলেন, ভাইয়া কিছু দিন হয় আর্থিক সমস্যা লাঘবের জন্য মাদরাসার পাশাপাশি একটি মসজিদে খেদমত নিয়েছেন। এ নিয়েও মাদরাসার মুহতামিম সাহেবের প্রশ্নের শেষ নেই। অভিযোগের অন্ত নেই। বলছে, ‘আপনি তো ইমামতি নেওয়ার কারণে ছাত্রদের হক পুরোপুরি আদায় করতে পারছেন না।’
‘ভাইয়া খুব দুঃখ করে মাঝে মাঝে এসব কথা বলেন। তাই নিয়ত করেছি আগে স্বাবলম্বী হবো। আলেম যেহেতু হচ্ছি। খেদমত তো করবোই কিন্তু এখন না। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তারপর করবো।’ যোগ করেন তিনি
এদিকে ঢাকার একটি কওমি মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন মাওলানা সুলতান আহমাদ। তিনি জানান নানা তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা।
তিনি বলেন, দুই বছর হলো ফারেগ হয়েছি। পারিবারিক আর্থিক অবস্থা আলহামদুলিল্লাহ ভালো হওয়ায় নামমাত্র সম্মানীতে খেদমত শুরু করি। কিন্তু সেই সম্মানীটাও নিয়মিত পাই না। দুই মাস, তিন মাসও কখনো দেরি হয়। বাড়ি থেকে টাকা এনে চলতে হয়। এখনো বিয়ে করিনি বলে এভাবে চলতে পারছি। কিন্তু সংসার জীবনে গেলে এভাবে কী চলা সম্ভব?
‘আমাদের সঙ্গের কয়েকজনের তো অবস্থা আরো নাজুক। মাদরাসা থেকে তাদেরকে বলা হয় নিজে কালেকশন করে টাকা উঠিয়ে বেতন নেওয়ার জন্য। এই দুঃখে একজন খেদমত ছেড়ে অনলাইনে ছোট ছোট কিছু ব্যবসা শুরু করেছে গত ছয় মাস আগে। ওইদিন কথা হলো, এখন আলহামদুলিল্লাহ তার মাসিক আয় সন্তুষ্টজনক।’ তথ্য দেন তিনি
তিনি জানান, তরুণরা তাদের হতাশার কথা বলতে পারেন, কিন্তু প্রবীণ যারা আছেন তারা নানা লজ্জায় সেই কথাগুলো কোথায় বলতেও পারে না। যদি এভাবে চলতে থাকে এক সময় মাদরাসাগুলো মেধাবী উস্তাদের শূন্যতায় ভুগতে পারে। কেননা এখন গ্লোবালাইজেশনের সময়। মানুষ চেষ্টা করলে নানা ভাবে হালাল ইনকামের ব্যবস্থা করতে পারে।