মাওলানা ইউসুফ সুলতান। বিশিষ্ট ইসলামি অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ। সিওও ও হেড অফ শারিয়াহ, ইথিস মালয়েশিয়া; কো-ফাউন্ডার, আইএফএ কন্সাল্টেন্সি ঢাকা। সাবেক সহকারী মুফতি, জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ। তরুণ আলেম এ অর্থনীতিবিদের মুখোমুখি হয়েছিল ফাতেহ টোয়েন্টি ফোর। ধর্মীয়ক্ষেত্রে এআই বা আর্টিফিসিয়াল ইন্টালিজেন্ট ব্যবহারের সুবিধা, অসুবিধা, প্রয়োজনীয়তা, সতর্কতা ইত্যাদি নানা বিষয়ে কথা হয়েছে। উঠে এসেছে এ বিষয়ক বিস্তারিত আলাপ। এবং আরও নানান কিছু। ফাতেহ টুয়েন্টি ফোরের সম্পাদক ইফতেখার জামিলের নেওয়া সাক্ষাৎকার শ্রুতিলিখন করেছেন আবদুল্লাহ মারুফ।
ফাতেহ: এআই বা আর্টিফিসিয়াল ইন্টালিজেন্ট আসলে ঠিক কী এবং এটা কিভাবে কাজ করে?
সুলতান: এআই বা আর্টিফিসিয়াল ইন্টালিজেন্স, যাকে আমরা বাংলায় ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’ বলে থাকি। এখানে মূল বিষয় হলো, আমরা যখন কম্পিউটার আবিষ্কার করি, তখন অনেক কাজকে মেশিনের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রসেসিং করাটা ছিলো এর প্রথম ধাপ। আমরা যদি শিল্প বিপ্লবের শুরুটা দেখি, তাহলে দেখব, অনেক মানুষের কাজকে মেশিন দিয়ে সহজে করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মিলফ্যাক্টরি তৈরি হয়েছে। উদ্দেশ্য হলো কর্মদক্ষতা-ক্ষমতা বাড়ানো। অল্প সময়ে, অল্প রিসোর্সে বেশি আউটপুট বের করা। যাকে এফিশিয়েন্সি বলা হয়ে থাকে।
এর পরের ধাপে এসেছে অটোমেশন। মেশিন যেটা করেছে সেটা মূলত ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিতে হয়েছে। কিন্তু আমাদের টুকটাক অনেক কাজ থাকে, যেগুলো আগে ম্যানুয়ালি করতে হতো, বা ইনপুট দিতে হতো। যেমন, আমি যদি এক জায়গা থেকে ইমেইল পাই তাহলে সেটা আবার অন্য কাউকে ইনফর্ম করতে হবে, কোনো ড্যাটা ইনপুট দিতে হবে, এটা প্রায়ই করতে হয়। সেক্ষেত্রে এমন রিপিটিটিভ টাস্ক বা যেগুলো বারবার করতে হতো সেই কাজগুলোকে অটোমেশন বা স্বয়ংক্রিয় করা। এই জিনিসটা আমরা গত প্রায় একদশক যাবৎ দেখছি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এসেছে, প্রথমে সবাই নিজস্ব সফটওয়ার বানাতো। ধীরে-ধীরে একধিক থার্ডপার্টি এপ্লিকেশন এমন দাঁড়িয়ে গেছে যে, আমি যদি তার মাধ্যমে দুটো এ্যাপ্লিকেশনকে কানেক্ট করে দেই, তাহলে সে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজগুলো করে দিবে। একটা ঘটনা ঘটলে বা ইভেন্ট হলে সে অন্য কিছু ট্রিগার করবে বা বাস্তবায়ন করবে। এক্ষেত্রে কিছু লজিক বা সূত্র সেট করে দেয়া হয়, যেমন এই করলে এই হবে। এই লজিকের ভেতর কিছু এক্টিভিটি বা কার্যকারণ সেট করা থাকে। সে সময়মতো সে অনুযায়ী কাজগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে করতে থাকে।
তো, এখন এআই বলতে তারা যেটা বুঝাতে চাচ্ছে তা আরো একধাপ এগিয়ে। এখানে অনেক ইভেন্ট এবং ট্রিগার সেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিজেই শিখে নিবে। আগে তো আমরা ইভেন্ট এবং ট্রিগার নিজেরা সেট করে দিয়েছি, এই হলে এই হবে, এখন আর তা করতে হচ্ছে না। এখন সে নিজেই শিখে নিচ্ছে। সে বুঝবে, কোনটা তার ইভেন্ট, এবং ওই ইভেন্টে আমার কী কী ট্রিগার করতে হবে। এটাই মূলত এইআই।
ফাতেহ: ধর্মীয়ক্ষেত্রে এআই ব্যবহারের সুযোগ কতটা থাকছে?
সুলতান: ধর্মীয় কোন ক্ষেত্রে? ধর্মীয় তো অনেক ক্ষেত্র রয়েছে।
ফাতেহ: জি, অনেকক্ষেত্র; তবে আপনার থেকেই জেনেছি, রোবো এ্যাডভাইজারী..
সুলতান: ও, রোবো অ্যাডভাইজারি, জি, জি।
ফাতেহ: এটা একটা দিক, এছাড়া তো আরো…।
সুলতান: ওটা আসলে ঠিক নিরেট ধর্মীয় না, এতে ইসলামী ও অনৈসলামী দুটোই হতে পারে। মূলত ওটা ইনভেস্টমেন্ট সাইডে। রোবো এ্যাডভাইজারী বলে মূলত তারা যেইটা করে সেটা হলো ট্রেডিশনালি যাদের হাতে টাকা ছিল তারা টাকাটা কী করবে বা কোথায় বিনিয়োগ করবে সেই সিদ্ধান্ত নিতে বিভিন্ন মানব অর্থ-পরামর্শক বা হিউম্যান ফাইন্যান্সিয়াল এ্যাডভাইজার এর স্মরণাপন্ন হত। ওরা আপনার টোটাল ইনকাম, এসেট, আপনার লাইফস্টাইল, ঝুঁকি গ্রহণের মাত্রা, মোটামুটি সবকিছুর ভিত্তিতে আপনাকে বলবে যে, আপনি এখানে ইনভেস্ট করেন। এতো পার্সেন্ট আপনি বন্ড ইনভেস্ট করেন, ফিক্সট রিটার্ন। এত পারসেন্ট ঝুঁকিভিত্তিক বা ইকুইটি ইনভেস্ট করেন।
এখন সেটাকে তারা অটোমেট করেছে। অটোমেট কীভাবে করেছে? উদাহরণস্বরূপ, রোবো অ্যাডভাইজারি যারা সেবা দেয় তাদের মধ্যে ওয়াহেদ ইনভেস্ট বর্তমানে হালাল রোবো অ্যাডভাইজারির ক্ষেত্রে বেশ পপুলার। আমেরিকা থেকে শুরু করে তারা এখন মালয়েশিয়াতেও লাইসেন্স পেয়েছে। অন্যান্য দেশেও তারা লাইসেন্স পেয়েছে। ওয়াহেদ কি করে, তার কাছে বিভিন্ন শরিয়া অনুমোদিত স্টক আছে তার পোর্টফোলিওতে। এখন এখানে আপনি আমি যখন একাউন্ট খুলবো, এটা বিভিন্ন রকম প্রশ্ন করবে। প্রশ্নের উত্তরের ভিত্তিতে আমার জন্য কাস্টমাইজ প্রোফাইল ও পোর্টফোলিও তৈরি করবে। প্রত্যেক ব্যক্তির পোর্টফোলিও ভিন্ন হবে। হয়তো যেই দশটা স্টকে আপনার টাকা গিয়েছে, আমার টাকা অন্য দশটা স্টকে যাবে। এটাকে ওরা রোবো অ্যাডভাইজারি বলছে। রোবো কারণ, এইযে সিদ্ধান্তটা নেয়া, প্রথমধাপে ছিল ইভেন্ট একটা, ট্রিগার একটা। এখন এই রোবো অ্যাডভাইজারগুলো বিভিন্ন তথ্য ও এলগরিদম বা সূত্রের ভিত্তিতে একাধিক ইভেন্ট এবং ট্রিগার নিয়ন্ত্রণ করছে। দেখা যাচ্ছে, একটা মানুষের মাল্টিপল ইনফারমেশনকে নিয়ে প্রসেস করে সে একটা জিনিস সাজেস্ট করছে। এটাকে তারা ইনভেস্টমেন্টের ক্ষেত্রে রোবো অ্যাডভাইজারি বলছে।
ফাতেহ: এছাড়া এই জাতীয় আরো কিছু আছে কি? ঠিক ধর্মীয় বলছি না, এখন পর্যন্ত আর কি কি প্রজেক্ট এসেছে?
সুলতান: যদি ফাইল্যান্সের কথা বলি তাহলে সেটা। আর দুবাইয়ের যেটা ফতোয়ার,…
ফাতেহ: দুবাইয়েরটায় আমরা একটু পরে আসি। সেটা আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব।
সুলতান: হ্যাঁ, ওইটা আমরা পরে আসি। এছাড়া তো আর কোনোকিছু তেমন দেখি না। হয়তো এখন আমরা কাউন্সিলর টাইপের নানা সার্ভিসে সেটা চিন্তা করতে পারি। যেমন ম্যারেজ কাউন্সিলিং। হয়ত কারো বৈবাহিক সমস্যা যাচ্ছে, তার অবস্থাটা শুনে, তার সমস্যার ভিত্তিতে সেখানে পরামর্শ দেয়া হবেㅡ কাস্টমাইজড পরামর্শ। ফিকহি বিষয়ে, ওই যে দুবাইয়েরটা নিয়ে আমরা পরে কথা বলবো। বাকি খালেস ধর্মীয় বিষয়ে এআইয়ের কতটুকু সুযোগ আছে সেটা নিয়ে আমি একটু সন্দিহান। এখানে একটু ঝুঁকি আছে, কারণ এটা নিজে প্রসেস করে সমাধান করে তো, তাই শরীয়াহ ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি। এক্ষেত্রে মানব শরীয়াহ স্কলারের পরামর্শের বিকল্প নেই।
ফাতেহ: তার মানে আমরা দেখতে পাচ্ছি ধর্মীয় এডভাইজারির ক্ষেত্রে এটা আপাতত সীমিত। তবে এর সম্ভাবনা আছে; কিন্তু এখন পর্যন্ত তেমন কোনো প্রজেক্ট আমরা দেখতে পাচ্ছি না।
সুলতান: জি।
ফাতেহ: এখন যদি দুবাইয়ের দিকে যাই, আমি যতদূর দেখেছি, এটা খুবই সিম্পল। কিন্তু এটাকে নিয়ে যত আলোচনা, প্রচারণাㅡ আপনার কাছে আসলে কি মনে হয়?
সুলতান: এখানে আরেকটা দিক আছে যা আমি প্রথমবার বলতে ভুলে গেছি। এইযে আমরা এআই বলছি, অনেকে আসলে এআই ব্যবহারই করে না। তারা সিম্পল ইভেন্টভিত্তিক ট্রিগার সেট করে, যেমন, আমাদের দেশেও বেশকিছু ব্যাংক আছে তারা চ্যাটবট ব্যবহার করে। আপনি চ্যাটে নক করলে সে অনেক সলিউশন বলবে। এগুলো ঠিক এআই না। এগুলো পূর্ব নির্ধারিত উত্তর থাকে, এটা বললে এই উত্তর দিবে, ওটা বললে সেটা। সে কেবল উত্তরগুলো আমাদের দেখাচ্ছে, নিজে বানাচ্ছে না।
ফাতেহ: এখন দুবাইয়েরটা কি এআই বলা যায়?
সুলতান: আমি দুবাইয়েরটা দেখি নি। আপনি যা বললেন, যদি এমন হয়ে থাকে তাহলে এটা আসলে এআই না। কিন্তু অনেকে ওই যে আলোচনায় আসার জন্য এই কাজগুলো করে। দুবাইকে আমি দেখেছি, দুবাইয়ের বর্তমান ইকোনমিক অবস্থা খুব একটা ভালো না, ভেতর দিয়ে খুবই দুর্বল। সে বিভিন্ন হাইপের উপর দিয়ে চলছে। মানে কখনো গোল্ড নিয়ে হাইপে আসবে, কখনো তাদের বুরজখলিফা নিয়ে আসবে, কখনো জুমারা নিয়ে আসবে। বিভিন্ন ইস্যুতে সে বিভিন্ন আলোচনায় সামনে আসবে।
এখন সামনে এক্সপো লাইভ, এই বছর ছয় মাসব্যাপি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা হবে। এটাকে কেন্দ্র করে দেখবেন তারা এয়ারপোর্ট থেকে শুরু করে সবজায়গায় প্রচারণা চালাচ্ছে। দুবাই আসলে এখন সেটার হাইপে চলছে। দুবাই বিভিন্নসময় বিভিন্নভাবে আলোচনায় আসার চেষ্টা করে।
ফাতেহ: আচ্ছা, আমি যেটা দেখছি আরেকটু ব্যাখ্যা করি। অনেক সময় দেখা যায় প্রশ্ন যা আছে তাই, দেখা গেলো প্রশ্ন দেয়া আছে, এরপর যেটা হয়, সে শুধু এটাকে রিফ্রাজিং করতে পারে। এইটুকু পারে আরকি।
সুলতান: রিফ্রেজ করতে পারে নাকি কাছাকাছি উত্তর খুঁজে বের করতে পারে?
ফাতেহ: এইটাই। কাছাকাছি আরেকটা উত্তর এনে দেয়।
সুলতান: হ্যাঁ।
ফাতেহ: সেইগুলো কিন্তু গিভেন।
সুলতান: বুঝতে পারছি। অনেক বছর আগে ‘আল ফাতওয়া ডটকম’ নামে এরকম একটা ওয়েবসাইট ছিলো। তারা গুগলের সার্চইঞ্জিনকে ব্যবহার করে করেছিল। এটাকে ব্যবহার করে যে-কেউ কাস্টম সার্চইঞ্জিন বানাতে পারে। তারা সেই মডিউলটাকে ওপেনসোর্স করে দিয়েছে, তার মধ্যে আপনি ধরেন, দশটা কি বিশটা ওয়েবসাইট দিয়ে দিতে পারেন। সে শুধু ওই ওয়েবসাইটগুলোতে সার্চ করবে।
তো, আল ফাতওয়া ডটকম করেছিল ইসলামী প্রশ্নোত্তর সংশ্লিষ্ট যত ওয়েবসাইট আছে, এগুলোকে ইন্ডেক্স সার্চইঞ্জিনে বানিয়েছিল। এবং এটা খুব পাওয়ারফুল ছিলো। কারণ গুগলের সার্চ এলগরিদম খুব চমৎকার। আমরা যেভাবেই সার্চ করি না কেন, সে তার কাছাকাছি একটা উত্তর নিয়ে আসতে পারত।
এখন যদি দুবাইয়েরটা এরকম হয়ে থাকে তাহলে এটা পুরোপুরি এআই না। তবে এটা এআইয়ের প্রথম স্টেপ। এআই করতে গেলে আমাকে প্রচুর ডেটা দিতে হবে। সে ডেটাগুলো যদি সে যথাযথ ফিট করে, তাহলে আস্তে আস্তে লার্নিং এলগরিদমটা ভালো হবে আরকি।
ফাতেহ: তার মানে এটাকে যতটা গুরুত্বপূর্ণ ভাবা হচ্ছে, ওরকম না আসলে?
সুলতান: এটাকে অতটা গুরুত্ব দেওয়ার মত কিছু নেই।
ফাতেহ: আচ্ছা আচ্ছা।
সুলতান: এটা জাস্ট সাধারণ টেকনোলোজি, যা আগে থেকেই ছিল।
ফাতেহ: সর্বশেষ শুনলাম নাগরিকদেরকে রেটিংস দেওয়ার কথা।
সুলতান: হ্যাঁ, হ্যাঁ, এইগুলো সব নতুন প্রযুক্তিতে হেডলাইন তৈরি করছে। কারণ দুবাইয়ের শেখ মুহাম্মাদ বিন যায়েদ হলেন টেকনোলজিতে খুবই উৎসাহি একজন ব্যক্তি। যার কারণে টেকনোলজি শিরোনামে দুবাই সবসময় সামনে থাকার চেষ্টা করে।
ফাতেহ: আচ্ছা আপনি বলছিলেন, এর কিছুটা ঝুঁকির দিক আছে। আমরা কি ঝুঁকিটা আগে বলবো না সম্ভাবনাটা আগে বলবো?
সুলতান: এআইয়ের?
ফাতেহ: জি। ধর্মীয়ক্ষেত্রে সম্ভাবনা।
সুলতান: সম্ভাবনা মানে কি, এটা হচ্ছে একটি টেকনোলজি। আর যে কোনো টেকনোলজি হচ্ছে এনাবলার, সে বিভিন্ন কাজ সহজ করে দেয়।
ফাতেহ: আমি জাস্ট সিম্পল একটা প্রশ্ন করি। আমাদের ইফতা বিভাগগুলো তো হচ্ছে, যারা সরাসরি কাজ করে, দেখা যায় যে, লালবাগে যেই ফতোয়াটা আসছে সেই ফতোয়াটাই হাটহাজারিতে দিচ্ছে। অথবা দেয়া হয়ে গেছে। তো, এখন পুনরায় ফতোয়াটা দিতে যে পরিমাণ টাইম লস হয়, সেটা কি আসলে কোনো দরকার আছে?
সুলতান: মানে রিপিটেটিভ বা বারবার করা হয় এমন যে-কোনো-কিছুকে সহজ করার জন্যই আসলে টেকনোলজি। যেমন ধরেন জাকাতের মাসআলাটা, কতটাকা জাকাত আসবে? এই জিনিসগুলো আমরা এআই দিয়ে কভার করতে পারি।
ফাতেহ: জি, যদি আরো নির্দিষ্ট করে বলি, এখন কি আসলে আগের যে ফারায়েজগুলো যেভাবে হতো সেসব দরকার আছে?
সুলতান: হ্যাঁ, ফারায়েজের কথা মাত্রই আমার মাথায় আসছিল। এগুলো আমরা সরাসরি এলগরিদমে বসিয়ে দিতে পারি। জাকাত, তারপর ফারায়েজ।
ফাতেহ: জাকাতটা তো কোনো কোনো ক্ষেত্রে একটু সিম্পল।
সুলতান: খুব কম। ওটাকে এলগরিদমে বসানো সম্ভব।
ফাতেহ: কিন্তু ফারায়েজের যেইটা…
সুলতান: ওটা একদম ক্লিয়ারকাট।
ফাতেহ: তাইলে এমনটা যদি হয়, লার্নিংয়ে তো অবশ্যই একটা প্রসেস থাকবেই। কিন্তু প্র্যাকটিসে কি এখন আর ফারায়েজ নিয়ে লেখালেখির দরকার আছে?
সুলতান: এখানে লেখার কাজটা হয়তো আমরা সফটওয়্যার দিয়ে করে ফেলতে পারি, তবে ভেরিফিকেশনের জন্য বিশেষজ্ঞ লাগবে। আমরা আইনের ক্ষেত্রেও দেখি, অনেক কিছু এখন সফটওয়্যারে করা সম্ভব, তবে এখানেও বিশেষজ্ঞের ভেরিফাই করতে হয়। টেকনোলজি এ জায়গায় যতই উন্নতি সাধন করুক, এটা কেবল প্রথম ধাপকে সহজ করবে, শেষে ঠিকই মানব বিশেষজ্ঞের ভেরিফিকেশন লাগবে।
ফাতেহ: এটা সার্চিংয়ের ক্ষেত্রেও। যেমন, যখন আমরা দাওরা পড়ি অথবা ইফতা পড়ি তখন আমাদের বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে হাদিস সার্চ নিয়ে একটা বিতর্ক ছিল, হাদিস সার্চের যে ট্র্যাডিশনাল ওয়েগুলো আছে, যতই একজন দক্ষ হোক, কিছুটা ক্লান্তিকর ও সময়সাপেক্ষ। সেই তুলনায় দেখা যায় যে আরেকজন যদি সার্চইঞ্জিনে সার্চ দেয়, তাহলে সে খুব দ্রুত পেয়ে যাচ্ছে।
সুলতান: এজন্যই তো ‘জাওয়ামেউল কালিম’ স্যাফটওয়ারটা অনেকজন আলেমের সমন্বয়ে করা। ওটা আপনি দেখেছেন কি না!
ফাতেহ: আমি আসলে ‘আদ দুরারুস সুন্নিয়া’ ইউজ করি।
সুলতান: আদ দুরারুস সুন্নিয়া তো অনলাইনে।
ফাতেহ: জি।
সুলতান: কিন্তু জাওয়ামেউল কালিমটা একটা ডেস্কটপ এপ্লিকেশন। এবং ওইটা অনেক বেশি শামিল আরকি। ওইটা করা হয়েছে গ্রুপ অব টেকনোলজিস্ট এবং উলামাদেরকে নিয়ে। পুরো এলগরিদমটা তারা প্রস্তুত করেছে। যেমন, হাদীস হাসান কিভাবে হয়, সহিহ কিভাবে হয় সব সেট করা হয়েছে। সফটওয়ার সহিহ-হাসান বলছে, কীসের ভিত্তিতে বলছে সেটা আবার আপনি ক্লিক করে দেখতে পাবেন। সব তারা দিয়ে রেখেছে। এবং খুব দক্ষতার সাথেই সে হাসান-সহিহ বলছে।
মানে, সে তিন-চারজনের মতামতটা সামনে আনছে। যাহাবি এটা বলছে, অমুক এটা বলছেㅡ তারপর সে একটা মধ্যম মতকে নিয়ে ওই ব্যক্তির বর্ণনাকে হাসান হিসেবে নির্বাচন করছে।
ফাতেহ: এইক্ষেত্রেও কি একটু ঝুঁকি থেকে যায় না?
সুলতান: ঝুঁকি তো থাকেই, এইজন্যই আমি বলেছিㅡ এই সফটওয়ারগুলো আমাদের জন্য এনাবলার বা সহজকারী। কিন্তু চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে গেলে ওই বিষয়ে যিনি বিশেষজ্ঞ তার মতামত লাগবেই। আমি শুধু সফটওয়ারের উপর নির্ভর করে বিধান দিয়ে দিলাম, এটা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। ইবাদাহর ক্ষেত্রে এটার সরসরি প্রয়োগ অনেক কঠিন। এইজন্য অবশ্যই একজন মুফতি, বা সেই বিষয়ের একজন বিশেষজ্ঞের অনুমোদন লাগবে।
ফাতেহ: অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় কিতাবগুলো একটু দূরে, অথবা মাদরাসায়। তখন আমরা অনলাইনে সার্চ করি। সার্চ করে মাসআলাটা বের করি। কিতাবটা দেখতে একটু ক্লান্তি লাগে।
সুলতান: হ্যাঁ, এইটা আমারো হয়। হাহা হা..
ফাতেহ: আবার দেখা যায় এভাবে তথ্যটা বের করা যতটা সহজ, পিডিএফের ওই পৃষ্ঠাটা বের করা একটু ক্লান্তিকর।
সুলতান: ক্লান্তিকর। এইটাই পরিবর্তিত অভ্যাস। আমাদের অভ্যাস পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। মোবাইলে যেই তথ্যটা একসেস করি, কোনো একটা ওয়েবসাইট যদি মোবাইল ফ্রেন্ডলি না থাকে, সেই তথ্যটা মোবাইলে সহজে দেখা না গেলে আমরা সেটাকে উপেক্ষা করি।
ফাতেহ: জি, জি।
সুলতান: রিসেন্টলি ডোনেশন নিয়ে একটা কাজ করছিলাম। ইউএসের একটি প্রতিষ্ঠান, তারা তিন হাজার মানুষের উপর একটি জরিপ করেছে। সেখানে ৬৬ পারসেন্ট মানুষ বলেছে, কোনো এ্যাপ থাকলে তারা আরো বেশি ডোনেট করত। যেমন বর্তমানে যদি আমরা চিন্তা করি, বিকাশে যদি ক্যাশব্যাক দেয়ার পর অপশন দিয়ে বলে, তুমি ক্যাশব্যাকের পাঁচটাকা এখানে ডোনেট করে দাও, তাহলে কতজন মানুষ ডোনেট করত? আমরা এটা মালয়েশিয়াতেও দেখেছি, এ্যাপে যখন ডোনেশনটা যুক্ত করে দিই, তখন মানুষ বেশি ডোনেট করে। আর টাকাটা পকেট থেকে বের করে এক জায়গায় দিবে সেটা আর হয়ে উঠে না।
ফাতেহ: ক্রেডিট কার্ডের মত আরকি। দেখা যায় অনেককিছু খরচ হয়ে যায়…
সুলতান: জি, জি। তখন গায়ে লাগে না যে আমার কতটাকা খরচ হচ্ছে। কিন্তু ক্যাশ দিতে মানুষের অনেক কষ্ট হয়। তো, এই পরিবর্তনগুলোর সাথে আমাদের ধর্মীয় পরিমণ্ডলে যারা কাজ করেন, তাদেরকে সবসময় সজাগ থাকতে হবে। এবং আপটুডেট থাকতে হবে।
ফাতেহ: এইখানে একটা বিষয়, ফতোয়ার ক্ষেত্রে আমাদের হিন্দুস্তানি আলেমদের তো বিশাল একটা অবদান রয়েছে। এবং ফতোয়ার বিরাট বিরাট ভলিউম রয়েছে। কিন্তু দেখা যায়, সাধারণ মানুষ তো অবশ্যই, আমরা যারা কওমি মাদরাসা থেকে এসেছি কখনো কখনো আমরাও এই ভলিউমগুলোর পরিবর্তে ‘ইসলাম কিউএ’ বা এই জাতীয় ওয়েবগুলোতে তথ্য অনুসন্ধান করি।
সুলতান: তার কারণটা হল, মনে ধারণা আসে এই ভেবে যে, সেগুলো এভেলেবল না, অনলাইনে আসে নাই, ডিজিটালাইজড করা হয় নাই।
ফাতেহ: তো, আপনার কি মনে হয় না, যদি এগুলো ডিজিটালাইজড না হয়, তাহলে ফতোয়ার যে ভলিউমগুলো আছে সেগুলোর গুরুত্বটা পাবলিক পরিসরে কমে যাবে?
সুলতান: কমে গেছে তো। অলরেডি কমে গেছে। সামনে একদমই কমে যাবে যদি আমরা এগুলোকে ডিজিটালাইজড না করি।
ফাতেহ: আচ্ছা, আচ্ছা। এবং বাংলাদেশে যাদের সঙ্গে সরাসরি আলেমদের সম্পর্ক নাই, তারা তো এখন ইসলাম কিউএ অনেক বেশি ব্যবহার করে।
সুলতান: জি
ফাতেহ: তো সেক্ষেত্রে কি আসলে শংকা হয় না যে, দীর্ঘদিন যাবৎ মাজহাব-তাকলিদ-ইজতেহাদ নিয়ে যেই কাজটা করে আসলাম, আলোচনা-পর্যালোচনা করলাম, কিন্তু কনটেন্ট না থাকার কারণে এরকম পরিস্থিতি হচ্ছে বা হবে যে, তাদের কন্টেন্ট বেশি থাকার কারণে তাদেরগুলো মানুষ বেশি মানবে।
সুলতান: এইটাই তো হচ্ছে। এজন্যই বললাম পরিবর্তিত বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের অনেক বেশি সজাগ থাকতে হবে। মানুষের কাছে এখন কেন মাজহাব নিয়ে দ্বন্দ্বটা তৈরি হচ্ছে? কারণ আগে অন্য মাজহাবের তথ্য আসাটা সহজ ছিলো না। একেক জায়গায় নির্দিষ্ট মাজহাবের উলামায়ে কেরাম ছিলেন। তারা সেখানে নেজামের জন্য, ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখার জন্য একটা মাজহাবে থাকার গুরুত্ব দিয়েছেন। আবার অন্য মাজহাবের তথ্য আসাটাও ছিলো কঠিন।
কিন্তু এখন তো তথ্য সহজ হয়ে গিয়েছে। মানুষ এক জায়গায় বসেই বিভিন্ন মাজহাবের তথ্য পেয়ে যাচ্ছে। এই পরিবর্তিত অবস্থায় আমাদের ফিকহি অবস্থান কি হবে, কিভাবে আমরা মানুষের সামনে তথ্যগুলো নিয়ে আসবㅡ এগুলো নিয়ে আসলে আমাদের অনেক বেশি আলোচনা ও চিন্তা করা দরকার।
ফাতেহ: কিন্তু কথা হচ্ছে, ইসলাম কিউএ বা এই জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর যে পরিমাণ ফান্ডিং, বাংলাদেশে কি সেটা সম্ভব?
সুলতান: আমি আজকেই একটা প্রতিষ্ঠানে গিয়েছিলাম। ওই ভাইয়ের সঙ্গে যখন বিষয়টা শেয়ার করলাম, তিনি বললেন, ফান্ডিং এর কোনো অভাব নাই। প্রয়োজন সঠিক জনবল এবং সুচিন্তিত প্ল্যানিং। আপনি যে এ প্রজেক্টটা বাস্তবায়ন করতে পারবেন, এই বিশ্বাসটা যারা ফান্ডিং করবে, তাদের থাকা লাগবে।
বাংলাদেশে অবশ্যই সীমাবদ্ধতা আছে। আরবে তারা যেমন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ফান্ডিং পেয়েছে, আমরা এখানে সেভাবে সেটা পাবো না। তদ্রুপ আমরা যখন গবেষণামূলক কিছু শুরু করতে যাবো, স্বাভাবিকভাবেই এখানে নানারকম জটিলতা তৈরি হতে পারে। কিন্তু সবমিলিয়ে বললে, বিষয়গুলো যে একবারে অসম্ভব, তেমন না আসলে। দরকার উদ্যোক্তা। আমরা আজকে ওই ভাইয়ের সঙ্গে যে কথা বলছিলাম, বারবারই ঘুরেফিরে আসছিল, শুধু কওমি মাদরাসা না, পুরো বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীর ভেতরই উদ্যোক্তা তৈরির কাজটা ওরকম করে হয় নি।
এসব কাজেও কিন্তু একজন উদ্যোক্তার প্রয়োজন। একজন এই কাজগুলো বাস্তবায়ন করবে। এখানে ঝুঁকি আসবে, তাকে ঝুঁকি নিতে হবে, তাকে শ্রম দিতে হবে। এই জিনিসগুলো নিতে কেউ যদি প্রস্তুত না থাকে, তাহলে তো আমরা এইগুলো কখনোই বাস্তবায়িত হতে দেখবো না।
ফাতেহ: আমি যদি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাটা বলি…
সুলতান: ঐ তো, উদ্যোক্তাটা তো দরকার। এইযে আমরা গুগল-ফেসবুক বলি এগুলো তো কেউ-ই নিজের পকেট থেকে শুরু করে নি। এই যে সিলিকনভ্যালির কথা বলি, মডেলটা কী, মডেলটা হচ্ছে রাব্বুল মাল টাকা দিচ্ছে আরেকজন এটাকে বাস্তবায়ন করছে। ঐ উদৌক্তা ও ঝুঁকি গ্রহণের মানসিকতাটা আমাদের এখানে মিসিং। আমাদের প্রতিবছর হাজার হাজার গ্র্যাজুয়েট হচ্ছে, মুফতি-মাওলানা হচ্ছে, কিন্তু তারা নিজেরা কিছু একটা করার মত সৃজনশীল হচ্ছে না। তাদের চিন্তা সর্বোচ্চ একটা মসজিদ, অথবা মাদরাসাㅡ কিন্তু দ্বীনী নতুন কোনো উদ্যোগ তেমন উঠে আসছে না। অথচ এটা করা কিন্তু সম্ভব।
ফাতেহ: জেনারেল লাইনেও কিন্তু একই অবস্থা।
সুলতান: একি, একি অবস্থা। জেনারেল লাইনেও সবাই বিসিএস করছে, সবাই একটা চাকরির পেছনে ছুটছে।
ফাতেহ: জি, জি
সুলতান: এবং যেই ভাইয়ের কথা আমি বারবার রেফারেন্স দিচ্ছি, তার সঙ্গে কথা হচ্ছিল যে, উদ্যোক্তা হওয়ার অর্থ এই না যে প্রত্যেকে নতুন নতুন জিনিস শুরু করবে। আপনি উদ্যোক্তার মানসিকতা নিয়ে কোন একটা প্রতিষ্ঠানে থাকলে সেখানেও নিজের সৃজনশীলতা প্রয়োগ করার চিন্তাটা থাকবে। নতুন কিছু করার চেষ্টা থাকবে। কাজেই উদ্যোক্তার অর্থ সবাইকে যে নতুন নতুন উদ্যোগ নিতে হবে, এটা জরুরি না।
ফাতেহ: এখানে কিছু ঝুঁকির বিষয়। এআই-এর ক্ষেত্রে ঝুঁকির কথাটা তো আপনি বললেন। পাশাপাশি আমরা যারা শিক্ষকতা করি, ইদানীং লক্ষ করছি, ছাত্ররা আগে যেমন মান্য করতো বা আমরা শুনছি যেরকমㅡ এখন কিন্তু কিছুটা ব্যতিক্রম। এখন নানান চিন্তার ছেলে তৈরি হয়েছে। এখন আমরা যারা তরুণ, আমরা দেখছি যে আমাদেরই মাঝেমধ্যে খুব কনফিউজড লাগেㅡ এদিকে হচ্ছে এই গ্রুপ, ওদিকে হচ্ছে ওই গ্রুপㅡ কোনদিকে যাবো! এবং বিষয়টা দাঁড়িয়েছে এরকম, পাবলিকলি যে কথা বলা, সেটাই অনেকক্ষেত্রে জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু পাবলিকলি হয়তো থাকতে হচ্ছে নানান কারণে, এটা আমাদের অভ্যাসের কারণেই হোক আর যেই কারণে। এই যে জটিলতাটা, এবং আমরা ট্র্যাডিশনালি জেনে আসছি যে দেওবন্দ হলো একটা ঘরানাㅡ এটা সম্ভবত আর থাকছে না।
সুলতান: আমি গত তিন-চার দিন আগে একটা ওয়ার্কশপ করেছি।
ফাতেহ: জি, জি, আমি দেখেছি।
সুলতান: হ্যাঁ, ওখানে টিমওয়ার্ক নিয়ে একটা আলাদা পয়েন্ট ছিলো। টিমওয়ার্ক নিয়ে যখন কথা বলা হয় তখন ফুটবল টিমের কথা বলা হয়। একটা ফুটবল টিমে বিভিন্ন রোলের প্লেয়ার থাকে। একজন গোলকিপার, তিনি গোল রক্ষা করেন। একজন স্টাইকার, তিনি বলটা মারেন। আর মাঝখানে ডিফেন্সার আছে, মিডফিল্ডার আছে। এখন গোলকিপার যদি চিন্তা করে যে স্টাইকার তারই শুধু নাম হয়, আমি গোল ছেড়ে দিই। তাহলে হবে কি, স্টাইকার যদি পাঁচটা গোল দেন তাহলে তিনি আরো পাঁচটা গোল খাবেন। আরেকজন যদি মনে করে আমার তো নাম হয় না, নাম হচ্ছে দশ নাম্বার জার্সির, আমি বল ছেড়ে দিই। তাহলে কিন্তু হলো না। এখানে কিন্তু সবাইকে পাস দিয়ে দিয়ে একে অপরকে বল দিয়ে খেলতে হয়।
এখন আল্লাহ সুবহানাহুতাআলা আমাদেরকে أمة واحدة বলেছেন। একটা উম্মাহ। একটা দল। দলের চেতনাটা ততক্ষণ পরিপূর্ণ হবে না, যতক্ষণ না আমরা সবাইকে মিলে একটা টিম মনে করবো। একটা টিমের মধ্যে তারা একেকজন একেকটা ফাংশন সম্পন্ন করছেন। কিন্তু আল্টিমেটলি সবাই আমরা ‘লাইলাহা ইল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসূল্লাহ’র ব্যানারের ভেতর। একটা টিমের ভেতর।
এই মাইন্ডসেটটা নিয়ে আমাদের বেশি বেশি কথা বলতে হবে। কারণ, এটা একটা মেন্টাল ব্লক। এটা আমাদের মনস্তাত্ত্বিক একটা বাঁধা। এই বাঁধা যতক্ষণ না দূর হবে, যত কথাই বলি, যা কিছু করিㅡ আমরা আসলে ঐক্যের চিন্তা করতে পারি না। আমরা একই ব্যানারের ভেতর ভিন্ন রোল, এবং আমাদের অনেক ভিন্নতা থাকতে পারে।
ফাতেহ: আমি যদি আপনার কথাটা বুঝতে পারি, আপনি আসলে বলতে চাচ্ছেন, এইযে বৈচিত্র্যটা, এটা আসলে সমস্যা না।
সুলতান: সমস্যা না। আমরা মালয়েশিয়াতে আমাদের প্রতিষ্ঠানে টিম মেম্বাদের সরাসরি দ্বিমত করি, এবং এটা আমরা খুব স্বাভাবিকভাবে নেই। আমরা ভিন্নমতের ওপর ঐক্যমত লালন করছি। ঐক্য হওয়ার অর্থ এই নয় যে সবাইকে একটি মত গ্রহণ করতে হবে। এটা সম্ভব না। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এভাবে সৃষ্টি করেন নি। ঐক্যমত হওয়ার অর্থ হচ্ছে, ভিন্নমত হওয়া সত্ত্বেও আমাদের ভেতর পরস্পরিক সহনশীলতা থাকবে, সৌহার্দ্যতা থাকবে, সম্মান থাকবে। এবং সমালোচনা থাকবেই। আমরা অনেক সময় ঐক্যের কথা বলতে গিয়ে সমালোচনাকে খুব ভয় করি। সমালোচনা থাকবেই। কারণ সমালোচনাটাই আমাকে পারফেকশন বা যথার্থতার দিকে নিয়ে যাবে। ‘আল মু’মিনু মিরআতুল মু’মিন’ – একজন মুমিন অপর মুমিনের জন্য আয়না স্বরূপ। মিরআ বা আয়নায় কিন্তু আমরা নিজেদের সমস্যাগুলো দেখতে পাই। বাকি সমালোচনার ধরণটা হতে হবে, আমার সমালোচনা যেনো সংশোধমুখী হয়। আমি দোষ ধরছি না, বরং এই দোষটাকে উৎরে উঠার সম্ভাবনা ও উপায়কে আমি তুলে ধরছি। আমি চাচ্ছি আমার ভাইয়ের কাজটা আরো সুন্দর হোক। তার কাজকে আমি এপ্রিশিয়েট করি, সম্মান করি।
এইভাবে যখন আমরা মাইন্ডসেটে কাজ করবো, তখন আমরা এমন একটা প্রজন্ম পাবোㅡ যারা ভিন্নমত থাকা সত্ত্বেও একসঙ্গে কাজ করতে পারবে।