কেন্দ্রীয় পরীক্ষাগুলোর প্রশ্নপত্রের ধরন বদলেছে

রাকিবুল হাসান নাঈম:

বেফাক এবং হাইয়াতুল উলয়ার চলতি বছরের কেন্দ্রীয় পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে পরিবর্তন এসেছে। কয়েকজন শিক্ষক ফাতেহকে জানিয়েছেন, এবারের কেন্দ্রীয় পরীক্ষাগুলোর প্রশ্নপত্রের ধরণ বদলেছে। যারা গাইডনির্ভর পড়াশোনা করেছে, তারা ভালো করতে পারছে না। বরং যারা মুল কিতাব ভালো করে পড়েছে, তারাই ভালো করছে।

বেফাক এবং হাইয়ার উর্ধ্বতন দায়িত্বশীলরা বলছেন, এই পরিবর্তন সচেতনভাবেই করা হয়েছে। ছাত্রদের গাইডমুখী প্রবণতা কমাতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় পটিয়ার মাদরাসার সহকারী মুফতি যুবাইর হানিফের সঙ্গে। ফাতেহকে তিনি বলেন, ‘কওমি সনদ প্রবর্তিত হবার পর থেকেই গাইড প্রবণতা বেড়েছিল। এ প্রবণতা তৈরী করে দিয়েছে আল ফাতাহ’র মতো কিছু আধুনিক প্রকাশনী। তারা বিগত বছরের সব প্রশ্ন এবং উত্তরের বই করে ছড়িয়ে দেয়। ফলে এটার প্রভাব বেশ প্রকট হয়ে উঠে। গত বছর যখন এক মাদরাসায় হাইয়াতুল উলয়ার পরীক্ষা নিতে যাই, তখন দেখি পরীক্ষার আগেই ছাত্ররা তাদের মূল কিতাব লাইব্রেরীতে জমা দিয়ে কেবল গাইড নিয়ে বসে আছে। ভাষাভাষা দৃষ্টিতেও কিতাব দেখে না। অমাদের মাঝে বারবার আলোচনা হতো, কিভাবে ছাত্রদেরকে গাইডবিমুখ করা যায়। চলতি বছরের কেন্দ্রীয় পরীক্ষাগুলোতে ছাত্রদেরকে গাইডবিমুখ করার একটা প্রচেষ্টা দেখা গেছে।’

সেই প্রচেষ্টা কেমন জানতে চাইলে মুফতি যুবাইর হানিফ বলেন, ‘আগে হাইয়াতুল উলয়ার প্রশ্নে থাকতো, ‘হরকত যুক্ত করো এবং তরজমা করো।’ কিন্তু এখন কেবল এতটুকুই বলা হয় না। বরং তরজমাকৃত আরবি অংশের দুএকটি শব্দ উল্লেখ করে সেগুলোর ব্যাখ্যা এবং উদ্দেশ্য জানতে চাওয়া হয়। প্রতিটি প্রশ্নে এমন কিছু অংশ যুক্ত করা হয়, মূল কিতাব পড়া না থাকলে সেগুলোর উত্তর দিতে পারবে না কেউ। খানিকটা সৃজনশীল প্রশ্নের মতো। হয়ত উত্তরটা কোনো হাশিয়াতে ছিল, কিংবা আরবি মূল মতনে ছিল। কিন্তু গাইডে তো ভাষাভাষা উত্তর দেয়া থাক। কোনো জিনিসকে গভীর করে বোঝানো হয় না। তাই গাইড পড়ে এবার যারা পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে, তারা সমস্যায় পড়ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘হাইয়াতুল উলয়া যে প্রচেষ্টা করছে, তা আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। আশা করি, এর মাধ্যমে ছাত্ররা গাইড ছেড়ে কিতাবমুখী হবে। কারণ, যে সহজ ও সংক্ষিপ্ত উত্তরগুলো চাওয়া হচ্ছে, তা কেবল কিতাব পড়লেই পাওয়া যাবে। গাইড পড়ে পাওয়া যাবে না।’

এ প্রসঙ্গে কথা হয় কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের সহকারী পরিচালক মাওলানা যুবায়ের আহমাদের সঙ্গে। ফাতেহকে তিনি বলেন, ‘এবারের প্রশ্নগুলো লক্ষ্য করলে দেখবেন, যারা গাইড নির্ভর পড়াশোনা করেছে, তারা আটকে যাচ্ছে। তারা লিখতে পারছে না। আমরা এবার প্রশ্নপত্রের ধরণ বদলে দিয়েছি। ফলে মূল বই না পড়ে পরীক্ষায় বসলে সে লিখতে পারবে না। সামনে এটা আরও পরিবর্তন হবে।’

ছাত্রদের অবস্থা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রথম পরীক্ষা যাবার পর এক ছাত্রের বাবা ফোন দিয়েছে আমাকে। বাবা বলছে, তার ছেলে পরীক্ষা দিতে ভয় করছে। কারণ, প্রশ্ন তো গাইড থেকে করা হচ্ছে না। আমি তাকে বললাম, ছেলেকে গাইড না পড়ে কিতাব পড়তেদ বলবেন, তাহলে এ সমস্যায় পড়তে হবে না।’

কওমি মাদরাসায় গাইড প্রবণতার কথা উল্লেখ করে মাওলানা যুবায়ের আহমাদ বলেন, ‘একটা সময় গাইড-নোট ছিল স্কুল-আলিয়ার নিদর্শন। আমরা ভাবতাম, এগুলো পড়েদে কেবলে স্কুল-কলেজ এবং আলিয়া মাদরাসার ছাত্ররা। কিন্তু এখন এই প্রবণতা কওমি মাদরাসাতেও ঢুকেছে। ফলে সেটাকে বের করা দরকার। তাই মুরুব্বিরা প্রশ্নপত্রে পরিবর্তন এনেছেন। আশা করি, এতে ভালো ফল আসবে।’

আগের সংবাদবধিরদের কুরআন শেখায় যে মাদরাসা
পরবর্তি সংবাদরমজানে তারাবি পাচ্ছেন না হাফেজগণ