কোরবানির ঈদ ও ঈদসংখ্যার তাৎপর্য

কোরবানির ঈদ বাঙালী মুসলমানদের জীবনে স্বতন্ত্র তাৎপর্য বহন করে। ঐতিহাসিকভাবে এই অঞ্চলে নানাসময় হিন্দু জমিদারদের আধিপত্য ছিল। এর দৃষ্টান্ত হিসেবে মুসলিম শাসনের সূচনাকাল ও ব্রিটিশ আমলকে বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়। হিন্দু জমিদারদের শাসনামলে কোরবানি করা খুব সহজ বিষয় ছিল না। কোরবানির সাথে তাই রাজনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিল ও আছে।

হিন্দু হিসেবে কেউ কোরবানি নাও করতে পারে, তবে নিজের ধর্মবিশ্বাসে অন্য কাউকে বাধ্য করা যাবে না, ক্ষমতাবান শ্রেণীর গোলামিতে জনতাকে আটকে রাখা যাবে না, এই পয়গাম নিয়েই এই অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম প্রচারিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়। কোরবানির ঈদ ও উৎসবে আমরা যেন এই ইতিহাস ও মূল্যবোধের কথা ভুলে না যাই। ফাতেহ তথ্য ও বিনোদনের পাশাপাশি কোরবানির মূল্যবোধকেও গুরুত্ব দিয়ে দেখে থাকে।

এবার এমন এক সময় আমরা কোরবানির ঈদ উদযাপন করছি, যখন আমাদের অঞ্চলের জনপদগুলো নিয়মিত রক্তাক্ত হচ্ছে। ধুঁকছে অসহায় আরাকান। কাশ্মীরকে কেটে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে, যোগাযোগ বন্ধ, জানাও যাচ্ছে না হতাহতের সংখ্যা। মর্মান্তিক বিপর্যয়ের নিষ্ঠুর অপেক্ষায় আছে আসাম। ভারতে গরুর মাংস খাওয়া ও বহন করার অপরাধে মুসলমানদের পিটিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে। সবখানেই হিন্দুত্ববাদীদের শক্ত থাবা। মুসলিমদেশগুলো চুপচাপ দর্শকের মতো দেখে যাওয়া ছাড়া আর কিছু করতে পারছে না। এমন সময়ে কোরবানির বিশেষ তাৎপর্য তো আছেই। ঈদ আয়োজন ও উপযাপনের পাশাপাশি এই প্রেক্ষাপটটাও মাথায় থাকুক।

আমাদের ঈদসংখ্যা প্রধানত সাহিত্য নির্ভর হবে। পাশাপাশি আরও বেশ কিছু আয়োজনও থাকবে। আমরা অনেকবার বলেছি, ফাতেহ টুয়েন্টি ফোর মূলত ইসলাম ধর্ম ও প্রশ্ন কেন্দ্রিক বিশেষায়িত অনলাইন পোর্টাল। সংবাদ, বিশ্লেষণ ও ফিচারের আয়োজনে ইসলাম ধর্ম ও প্রশ্নের কন্টেন্ট পেশ করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। এর সাথে সাহিত্যের একটা সম্পর্ক আছে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, ধর্ম ও প্রশ্নের সাথে সাহিত্যের যোগ কোথায়? ধর্ম অনেক ক্ষেত্রেই পরম সুন্দর ও পূর্ব নির্ধারিত বক্তব্য পেশ করে। ফলে এর সাথে সাহিত্যের মুক্তির একটা বিরোধ থেকেই যায়।

আমাদের মনে হয়, এই বক্তব্যের মধ্যে স্ববিরোধ আছে। শিল্প কখনো নিছক ‘শিল্প’ করার জন্য হতে পারে না। শিল্পেরও জীবন ও জগতের প্রশ্ন ও সঙ্কটের উত্তর দিতে হয়। মূল্যবোধের আশ্রয় গ্রহণ ছাড়া এই উত্তর দান সম্ভব নয়। পাশাপাশি ইসলাম কখনো নিছক পরম সুন্দরের কথা বলে না। ইসলামে ফেরেশতার সাথে শয়তানের ধারণাও আছে। বেহেশতের সাথে কেয়ামতও আছে। ইমাম মাহদির প্রতিপক্ষ দাজ্জাল। আছে জাহান্নাম, জিহাদ ও জাহেলিয়াত। ধর্ম শুধু ইউটোপিয়া নয়, ধর্ম দুনিয়া ধ্বংসের গল্পও বলে, নাফস ও শয়তানের ডিসটোপিয়া ধর্মের অন্যতম কেন্দ্রীয় বিষয়।

ফাতেহের ঈদসংখ্যাকে নানা আয়োজনে সজ্জিত করার চেষ্টা আমাদের মধ্যে ছিল। আমরা পাঠকের চাহিদা ও বিষয়ের গুরুত্ব মাথায় রেখে লেখা ও লেখক নির্বাচনের চেষ্টা করেছি। তবে সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় করতে গিয়ে অনেক কিছু বাদ দিতে হয়েছে। আগামীবার থেকে প্রিন্টেড ঈদসংখ্যা প্রকাশের আশাবাদ ব্যক্ত করে এবারের সংখ্যার অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল-ত্রুটি সম্পর্কে আগাম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। ভালো কাটুক ঈদ। ভালো থাকুক সময়। মাআস সালামাহ।

আগের সংবাদতাকবিরে তাশরিক : কেন ও কখন পড়তে হবে
পরবর্তি সংবাদভারতের বিপক্ষে ইসলামাবাদের পাঁচ দফা পরিকল্পনা