হাবীব হুবায়বী
মসজিদ হলো আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় ও পবিত্র জায়গা। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়সহ মুসলমানরা মসজিদে বিভিন্ন ইবাদত বন্দেগি, যিকির আযকার করে থাকেন। মসজিদ যে শুধু ইবাদতের জায়গা— এমন নয়, এটি ইসলামি সমাজের একটি প্রতিচ্ছবিও। তাছাড়া প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর মসজিদগুলো শতাব্দীর পর শতাব্দী ইসলামি ঐতিহ্য বহন করে আসছে। এমনই একটি প্রাচীন মসজিদ হলো বরুণা মসজিদ। ঐতিহাসিক স্থাপত্যে নির্মিত চারশো বছরের পুরোনো ‘বরুণা বড়ো জামে মসজিদ’।
অবস্থা ও অবস্থান
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালাপুর ইউনিয়নের বরুণা গ্রামে অবস্থিত এই মসজিদটির নাম ‘বরুণা বড়ো জামে মসজিদ’। প্রায় ষাট শতাংশ জায়গায় নির্মিত মসজিদটির উপরে তিনটি দৃষ্টিনন্দন গম্বুজ রয়েছে। গম্বুজ ছাড়াও এর বিভিন্ন দিকের কারুকাজ দর্শনার্থীদের মন কাড়ে। এই স্থাপত্যের অবকাঠামো নির্মাণে পোড়ামাটি, চুন ও ইট ব্যবহার করা হয়েছে। বারান্দায় কাঠের উপর টিনের ছাউনি— যা মূল ভবনের সঙ্গে পরবর্তীতে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে জানান মুসল্লিরা। অবাক করা বিষয় হলো— মসজিদটি নির্মাণে কোনো রড ব্যবহার করা হয়নি।
মসজিদ পরিচালনা কমিটির একজন সদস্য ফাতেহকে জানান, এই মসজিদটিতে কোনো রড ব্যবহার করা হয়নি। মসজিদটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৭০ ফুট, প্রস্থ ৫৫ ফুট, আর দেয়াল ৩-৪ ফুট প্রশস্ত। পুরোটাই চুন-সুরকি দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন— ‘ভিতরে কুরআন শরিফ রাখার কয়েকটি খোপও রয়েছে। রয়েছে মোমবাতি রাখারও খোপ। প্রত্যেক গম্বুজের ভিতরে গোল অংশে নান্দনিক কারুকাজ। তাছাড়া গম্বুজের উপরের অংশ বেশ বড়, যা এখন সবুজ রং করে রাখা হয়েছে।
স্থাপত্যকাল
এটি কতো আগের মসজিদ? কেই বা নির্মাণ করলেন? এর কোনো সঠিক তথ্য স্থানীয়দের কাছে নেই। তবে মসজিদের প্রধান ফটকে আবছা করে একটি সন লেখা রয়েছে। এর দ্বারা বুঝা যায়, ১৫৯৩ ঈসায়ি সনে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। এলাকার মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্র রায়হান রাহিমী ফাতেহকে বলেন— ‘এই মসজিদটির স্থাপত্য সম্পর্কিত সঠিক কোনো তথ্য আজ অবদি পাওয়া যায়নি। কিন্তু অনেকেই ধারণা করেন মসজিদটি গায়েবি। যা আদৌ সত্য নয়।’ তিনি জানান, এরশাদ সরকারের আমলে একজন প্রকৌশলী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানতে পারেন, আনুমানিক চারশো বছর পূর্বে মসজিদটি স্থাপিত হয়। রায়হান ফাতেহকে বলেন— ‘মসজিদটি এখনো অনেক মজবুত। প্রায়ই দূর দুরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা এখানে ছুটে আসেন।’
ভেতরে এসি না থাকলেও গরম নেই একটুও
চার শতাব্দি পুরোনো এই মসজিদটিতে প্রবেশের জন্য তিনটি দরজা, উভয় পাশে দুটি জানালা রয়েছে। এখানে প্রায় সাতশো জন মুসল্লি একসাথে নামাজ আদায় করতে পারেন। বিগত আট-নয় বছর পূর্বে মসজিদের সামনের প্রাচীর এবং প্রাচীরের উপরে থাকা মিনারটি ভেঙে পড়ে। অতঃপর ২০১৬ সালে প্রবেশপথে মসজিদ কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে প্রায় পঞ্চাশ ফুট লম্বা নয়নাভিরাম মিনার নির্মাণ করা হয়। তাছাড়া সামনের প্রাচীর সরিয়ে সেখানে মসজিদ থেকে একই বাউন্ডারিতে স্থাপিত হয়েছে ঈদগাহ মাঠ। যেখানে প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার মুসল্লি একসাথে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারেন। চারশো বছর পূর্বের পুরোনো এই মসজিদটিতে নামাজ আদায় করতে কেমন লাগে? প্রশ্ন করলে একজন মুসল্লি বলেন— ‘মসজিদের ভেতর সব সময় ঠান্ডা থাকে। ভেতরে কোনো এসি না থাকলেও এমন মনে হয় যে এসির নিচে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ছি।’