ঢাকার মাদরাসাগুলোতে কেমন হল চামড়া-কালেকশন?

|| তাসনিফ আবীদ ||

কোরবানির ঈদ এলেই দেশের কওমি মাদরাসাগুলোতে শুরু হয় চামড়া কালেকশনের ভিন্নএক প্রস্তুতি। তবে গেল কয়েক বছর চামড়ার বাজার দর খারাপ যাওয়ায় দিন দিন চামড়া কালেকশনে আগ্রহ হারাচ্ছে দেশের কওমি মাদরাসাগুলো।

জানা যায়, প্রান্তিক পর্যায়ের মাদরাসাগুলোর বেশকিছু মাদরাসা নিজেরা লবণ মাখিয়ে কিছুদিন পরে চামড়া বিক্রির ফলে বাজারমূল্য কিছু বেশি পেলেও সেই সুযোগ নেই ঢাকার মাদরাসাগুলোর। ঢাকায় অবস্থিত কয়েক হাজার মাদরাসা ওইদিনই চামড়াগুলো বিক্রি করতে বাধ্য হয় সংরক্ষণের জায়গার অভাবে। সেই সুযোগে চামড়া ব্যবসায়ীরাও নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে নেয়।

এ বছর ঢাকার মাদরাসাগুলোতে কেমন হলো চামড়া কালেকশন? মাদরাসাগুলো কতটা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পেরেছে সে বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম ঢাকার বেশ কয়েকটি মাদরাসা কর্তৃপক্ষের কাছে।

রাজধানীর খিলগাঁও জামিয়া মাদানিয়া মাদরাসার মুহতামিম জানান, এবছর তারা চামড়া কালেকশন করেছে প্রায় ছয় থেকে সাত শ’র মতো। কিন্তু এসব চামড়ার সন্তোষজনক দাম পাওয়া যায়নি। চার লাখ, পাঁচ লাখ টাকা মূল্যের গরুর চামড়ার দাম পেয়েছি মাত্র এক হাজার টাকা।

তিনি বলেন, যদি চামড়ার সঠিক দাম আমরা পেতাম তাহলে যেসব অসহায় ছাত্রদের দায়িত্ব আমরা নিয়েছি তারা হয়তো আরো ভালো থাকতে পারতো।

ঢাকার চৌধুরীপাড়া মাদরাসায় এ বছর চামড়া কালেকশন হয়েছে সাড়ে চারশ’র কাছাকাছি। এগুলো বিক্রি হয়েছে মাত্র ৮শ টাকা দরে।

বারিধারা মাদরাসার চামড়াও একই দরে বিক্রি হয়।

দারুল উলুম বনশ্রীর এবারের কোরবানির চামড়া বিক্রি হয় ৮৫০ টাকা দরে।

তবে সাভার, মিরপুর, আশুলিয়া এলাকার মাদরাসাগুলো ৬ শ’র বেশি চামড়ার দাম পায়নি বলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়। এসব জায়গায় এলাকা ভেদে ৩ শ থেকে সাড়ে পাঁচ শ বা ছয় শ টাকা দরে বিক্রি হয় কোরবানির চামড়া।

এছাড়া বুড়িগঙ্গার ওইপারে কেরানীগঞ্জ এলাকায় গড়ে ৭ শ থেকে সাড়ে ৭ শ টাকা দরে কোরবানির চামড়া বিক্রি করে কওমি মাদরাসাগুলো।

কোরবানি ঈদের আগে সরকার চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেয়। যদিও সেই দাম সন্তোষজনক ছিল না। কিন্তু গত কয়েক বছরের মতো এবারও সেই দামও পায়নি ঢাকার মাদরাসাগুলো।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দেশে কয়েক লাখ কওমি মাদরাসা রয়েছে। চামড়ার বাজার ভালো থাকলে গড়ে সবগুলো মাদরাসারই আর্থিক অবস্থা ভালো থাকতো। মাদরাসার এতিম-গরিব শিশু-কিশোররা আরেকটু ভালো খেতে-পড়তে পারতো। সিন্ডিকেটের এই পরিস্থিতিতে যেকোনোভাবেই হোক কওমি সংশ্লিষ্টরা যদি চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন এবং ব্যবসায়ী আলেমরা এক্ষেত্রে এগিয়ে আসেন; তাহলে হয়তো মাদরাসাগুলো চামড়ার দর আরো ভালো পেতে পারে। ট্যানারি ব্যবসায় আলেমদের মনোযোগী হওয়া এখন খুব প্রয়োজন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের লাখ লাখ এতিম-গরিব-অসহায় শিক্ষার্থীদেরকে পড়াশোনা ও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে কওমি মাদরাসাগুলো। অথচ তাদের লালন-পালন করার দায়িত্ব ছিল রাষ্ট্রের। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে চামড়ার বাজার নষ্ট হতে থাকায় কওমি মাদরাসাগুলো আর কতদিন এই এতিমদের লালন-পালন করতে পারবে তা বলা যাচ্ছে না। সরকার যদি চামড়াখাতকে আবারও নতুনভাবে জাগিয়ে তুলতে না পারে তাহলে হুমকির মুখে পড়বে দেশের লাখো এতিম-গরিব শিশু-কিশোর। ব্যহত হবে তাদের পড়াশোনা।

আগের সংবাদইসরাইলে হামলা বন্ধে গাজায় পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধবিরতি চায় হিজবুল্লাহ
পরবর্তি সংবাদআন্দোলনে জানমাল অনিশ্চয়তায় পড়লে পুলিশ বসে থাকবে না: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী