
মাওলানা মুসা আল হাফিজ। বহু গ্রন্থপ্রণেতা, কবি, গবেষক ও ইসলামি চিন্তাবিদ। ইসলামিক হিস্ট্রি এন্ড কালচার অলিম্পিয়াড বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান, মা‘হাদুল ফিকরি ওয়াদ দিরাসাতিল ইসলামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। সম্প্রতি স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের যৌন-অভিজ্ঞতার জরিপ নিয়ে তার একটি পোস্ট ব্যাপক আলোড়ন তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এই বিষয়ে ফাতেহ টুয়েন্টি ফোরের সঙ্গে তার আলাপ হয়। আলাপটি গ্রন্থনা করেছেন ফাতেহের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রাকিবুল হাসান নাঈম।
ফাতেহ : সম্প্রতি একটি পোস্টে আপনি বলেছেন, স্কুল পড়ুয়াদের যৌন আচরণে লিপ্ত হবার কথা। যৌনকর্ম বা যৌন আচরণ বলতে আপনি কী বুঝিয়েছেন?
মুসা আল হাফিজ : যৌন আচরণ বা যৌন কর্ম শুধু হেটোরো সেক্সুয়ালিটি বা বিপরীত লিঙ্গের মানুষের সাথে যৌনতায় সীমাবদ্ধ নয়। এটা হোমো সেক্সুয়ালিটি বা সমলিঙ্গীয় আকর্ষণ কিংবা বায়ো সেক্সুয়ালিটি তথা উভয় লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণও। এমনকি এ সেক্সুয়াল বা কোনো লিঙ্গের প্রতি আগ্রহ বোধ না করা থেকেও নানা ধরণের যৌন আচরণ জন্ম নেয়। সারা বিশ্বেই সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা একমত যে, মানুষের যৌনকর্ম অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা। মানুষের যৌনকর্ম কেবলই যৌনসঙ্গম নয়। আরো বিভিন্ন রূপে যৌন আচরণের প্রকাশ পাচ্ছে। স্বভাবিক যৌন আচরণ যেমন আছে, তেমনি আছে অস্বাভাবিক যৌন আচরণ। স্বাভাবিক যৌন আচরণের পরিধিতেও পণ্ডিতগণ একমত নন।
দ্য মিথ অব সেক্স অ্যাডিকশনের লেখক ডেভিড লে লিখেন, আগে মনে করা হতো স্বমেহন ও সমকামিতা অস্বাভাবিক যৌনকর্ম। এখন তাকেও অস্বাভাবিক মনে করা হচ্ছে না। যৌনতার এই যে বিস্তারিত পরিসর, সেখানে বয়ঃসন্ধিকালের কিশোর-কিশোরীদের নানাভাবে দেখা যাচ্ছে। এ সময়ে তাদের মনে রোমান্টিকতা ও যৌন আগ্রহ সৃষ্টি হয়। সঠিক অভিভাবকত্ব না পেলে এ সময়ে সাধারণত ভুল পথে যাবার আশঙ্কা বেশি। সেটাই ঘটছে এখন প্রচুর। দেশে বাড়ছে কিশোর- কিশোরীদের অস্বাভাবিক যৌন আচরণ বা টিন অ্যাবনর্মাল সেক্সুয়াল বিহেভিয়ার। পর্নোগ্রাফি, হস্তমৈথুন, সমকামিতা, ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, অশ্লীল মন্তব্য, বিভিন্ন তরিকায় সেক্স করা, বিভিন্ন ইন্সট্রুমেন্ট ব্যবহার করা, পর্ননায়িকার মতো করে মেয়ে বান্ধবীর কাছ থেকে সাড়া পাওয়ার চেষ্টা, এসবই ঘটছে আর তাকে আমরা টিন অ্যাবনর্মাল সেক্সুয়াল বিহেভিয়ার হিসেবেই দেখছি। এর সাথে জড়িয়ে আছে মাদকও।
দুনিয়াজোড়া এসব বিষয়ে উদ্বেগ ও সচেতনতা রয়েছে। সম্প্রতি কানাডার কুইবেকে একটি গবেষণা হয়েছে , যার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে দ্য জার্নাল অব সেক্সুয়াল রিসার্চে। ২০২২ এর সেপ্টেম্বরে ফক্সনিউজ এ নিয়ে প্রকাশ করে প্রতিবেদন। সেই গবেষণায় বিকৃত যৌনকর্ম হিসেবে চিত্রিত করা করা হয় যে সব কাজকে, তা হচ্ছে বিকৃত পর্নোগ্রাফি, বিপরীত লিঙ্গের পোশাক পরিধান, অপরিচিতের ওপর গোয়েন্দাগিরি, অপরিচিতকে জননাঙ্গ প্রদর্শন, অপরিচিতের সামনে যৌন বিকৃতি, শিশু পর্নোগ্রাফি, মর্ষকাম ও কাউকে আঘাত করে বিকৃত যৌন আনন্দ। যৌন আচরণের মধ্যে এসবই পড়ে। এবং কিশোরদের মধ্যে তা লক্ষ্যনীয় হলে সেটা টিন অ্যাবনর্মাল সেক্সুয়াল বিহেভিয়ার। যা নিয়ে কথা বলা জরুরী, কাজ করা জরুরী। কী রাষ্ট্রের, কী নাগরিকদের! যেখানে ২০১৮ সালে প্রদত্ত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী দেশে মোট জনসংখ্যার মধ্যে ২ কোটি ৭৭ লক্ষ কিশোর-কিশোরী। স্থলনকে তার জায়গায় রেখে দিয়ে তো লাভ হবে না। স্থলনটাও শুধু দেশীয় নয়, বৈশ্বিক। যার অভিঘাত এড়ানো কঠিন।
ফাতেহ : যে বিচিত্র যৌনাচারের কথা বললেন, বাংলাদেশে কিশোরদের মধ্যে তা কি বাড়ছে?
মুসা আল হাফিজ : বাড়ছে মানে প্রচণ্ডভাবে বাড়ছে। প্রতিদিন প্রচার মাধ্যমে যে সব অপরাধের খবর আসছে, এর মধ্যে প্রায় প্রতিটিতেই জড়িয়ে আছে কিশোর-কিশোরী, তরুণরা। আর সে সব অপরাধের অধিকাংশই যৌনতাকেন্দ্রিক। প্রতি বছরই তা বাড়ছে। এদেশে টিন অ্যাবনর্মাল সেক্সুয়াল বিহেভিয়ার বাড়ছে , অতএব টিন ডেটিং ভায়োলেন্স বা কিশোরদের যৌন অপরাধও বাড়ছে। টিন ডেটিং ভায়োলেন্স সম্পর্কে যারা জানেন, তারা জানেন এই অপরাধ শুধু যৌনসঙ্গীর সাথে হয়, তা নয়, নিজের সাথেও হয়। নিজের শরীরের সাথেও।
কিশোর-কিশোরীরা এখন একটি ব্যাপক পরিবর্তনের কবলে আছে। সেদিন এক মনোবিদ বললেন ১০০ বছর আগে সাধারণত যৌবনের শুরু হতো ১৬ বছরে, এখন তা হচ্ছে ১০ বছরে। হাইপার সেক্সুয়ালিটি বা কম্পালসিভ সেক্সুয়াল ডিস-অর্ডার বলে একটা সমস্যা রয়েছে। এর লক্ষণ দেখা যেতে পারে ১০ বছর বয়স থেকেই। এই সমস্যার ফলে যৌন বিষয়ে অতিরিক্ত উৎসাহ দেখা দেয় । পরিণত বয়সের আগে থেকেই যৌন চাহিদা জন্ম নেয় । এর হার এখন বেড়েছে প্রচুর। ফলে আগের প্রজন্মের কেউ যদি কিশোর-কিশোরীদের যৌনতার বর্তমান বাস্তবতা সম্পর্কে বুঝতে চান, তাকে তার সময় দিয়ে বুঝলে হবে না। পর্নোগ্রাফি এখন ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। চটি সাইটগুলোর রমরমা ইন্টারনেটে। অশ্লীলতা হাতের মুঠোয়। গ্রামে ও শহরে কিশোর-কিশোরীরা ব্যবহার করছে প্রযুক্তি, সেখানে দেখছে এমন সব এমিনেশন গেইম, যা মনকে ধর্ষকামী করে তোলে। কিশোর-কিশোরীরা যখন এসব চরিত্রকে আদর্শ মনে করে নিজেদের তাদের সঙ্গে মেলানোর চেষ্টা করে, তখন তারা না জেনে, না বুঝে জড়িয়ে পড়ে ক্ষতিকর ও অস্বাভাবিক যৌন আচরণে।
কিশোর-কিশোরিরা এতে লিপ্ত হচ্ছে যেমন, তেমনি হচ্ছে এর শিকার। ২৩ মার্চ ২০২২ এ জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘কন্যাশিশু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন’ প্রকাশ করা হয় । গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদন তৈরী করে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম। এতে দেখানো হয় ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে কন্যাশিশু ধর্ষণের হার শতকরা ৭৪ দশমিক ৪৩ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে । শিশু ধর্ষণ ও নির্যাতনগুলোর বেশির ভাগ হয়েছে রাস্তায়, নিজের বাসায়, কাছের আত্মীয়-পরিজন ও গৃহকর্তার দ্বারা। এগুলো খুবই এলার্মিং।
ফাতেহ : নাম না নিয়ে আপনি দশটি স্কুলের কথা বলেছেন। যেখানে অষ্টম শ্রেণী অতিক্রমের আগেই প্রায় ৫০ ভাগ শিক্ষার্থী যৌন আচরণে বা যৌনকর্মে লিপ্ত হবার অভিজ্ঞতা লাভ করে। এটি কি সম্ভব?
মুসা আল হাফিজ : খুবই সম্ভব। আমরা ২০১৬ সালে জেনেছি, সারা দেশ ও দুনিয়া জেনেছে, ঢাকায় স্কুলগামী শিশুদের প্রায় ৭৭ ভাগ পর্নোগ্রাফি দেখে। আর তা দেখে নিয়মিত। পর্নোগ্রাফি দেখার ফলাফল কী? নানা রকম যৌনতাই তো। যারা নিয়মিত দেখে, তারা এর ফলাফলের দিকে না ঝুঁকেই দিনের পর দিন কেবল দেখে যায়? তা কেউ স্বীকার করবেন? এ ছাড়া পর্নোগ্রাফি নিজেই তো এক বিকৃত যৌনলিপ্ততা।
২০১৬-এর পহেলা অক্টোবর মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ শিশু পরিস্থিতি, সংবাদপত্র বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ অভিমত উপস্থাপন করে। তারা জরিপ করেছেন ঢাকার ৫০০ স্কুলগামী শিক্ষার্থীর ওপর। এতে এ চিত্র উঠে আসে। যা দেশের সমস্ত মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার করা হয়। কিন্তু ২০১৬ সালের পরে পরিস্থিতি কি ভালো হয়েছে? মোটেও নয়। অধিকতরো খারাপ হচ্ছে, এটাই নানা আলামতে স্পষ্ট। ২০২২ এর ৮ জুন বাংলা ট্টিবিউনে প্রকাশিত হয় একটি প্রতিবেদন। তাতে দেখানো হয় সারা দেশে যেসব শিশু ইন্টারনেট ব্যবহার করে, তাদের ৭৫ শতাংশই পর্নোগ্রাফি দেখে। প্রতিবেদনে স্পষ্টই বলা হয়, শতকরা ৭৫ দশমিক ১ জন শিশু, যাদের মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট কানেকশন আছে, তারা পর্নোগ্রাফি দেখে। শতকরা ২৬ জন মেয়েশিশু বলেছে যে, তারা আত্মীয়দের সঙ্গে পর্নোগ্রাফি দেখছে। শতকরা ১৪ দশমিক ৪ জন মেয়েশিশু দেখেছে অনাত্মীয়দের সঙ্গে।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন শুধু ঢাকার স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে জরিপ করেছিলো। আশা করা হচ্ছিলো, সারা দেশের বাস্তবতা এর চেয়ে আলাদা। কিন্তু এই প্রতিবেদন চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিলো আমাদের সর্বনাশ ঘরে ঘরে পৌছে গেছে। কিন্তু মুশকিল হলো, পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে নিজের গতিতে। আর আমরা উদাসীন হয়ে আছি নিজস্ব অভ্যাসে। আমরা পরিস্থিতিকে বিশ্বাস করতে চাইছি না। মনে করছি, বিশ্বাস না করলেই পরিস্থিতির ভয়াবহতা থেকে বাঁচা যাবে। এটি ঝড়ের বিপরীতে বালুতে মুখ গুঁজে রাখার সবচেয়ে বাজে দৃষ্ঠান্ত। কিন্তু মেয়ে শিশুদের নিয়ে পর্নো দেখেন যে ২৬ ভাগ আত্মীয়, তারা কোন ধরণের মানুষ? আর এসব নিয়ে কথা বললে সামাজিক মাধ্যমে যারা তেড়ে আসেন, তাদের মানসিকতা আসলে কেমন?
ফাতেহ : মোটাদাগে পর্নোগ্রাফির ফলে কী ক্ষতি হচ্ছে বলে মনে করেন?
মুসা আল হাফিজ : পর্নো হচ্ছে সেই দস্যু, যে আপনার যৌন জীবনের সুস্থতাকে ছিনিয়ে নেয়। সে আপনার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় আপনার জীবনের গুরুত্বকে। নিজের চোখে নিজের জীবন হয়ে উঠে মলিন। সে ব্যক্তিগত জীবনকে বিষিয়ে দেয়। যৌনতা সম্পর্কে অবাস্তব ও অশ্লীল কল্পনায় আপনার মনকে করে অন্ধকার। ব্যাহত করে দৈনন্দিন জীবন ও কাজ-কর্মকে। দায়িত্বকে এড়ানো এবং ব্যক্তিগত কাজে অবহেলার মাত্রাকে ভয়াবহভাবে বাড়িয়ে দেয়। চিন্তা ও কাজে নেতিবাচকতা বাড়ে।
পর্নো দেখতে থাকলে মানসিকতা ও আচরণ হতে থাকে প্রভাবিত। একবার এতে ঢুকে গেলে তা থেকে সহজ মুক্তি নেই। যতোবার দেখবেন, ততো অধিকমাত্রায় বাধ্য হবেন আরো বেশি দেখতে। এর ফলে পর্নোগ্রাফির মতো যৌনজীবনের প্রতি উদ্বুদ্ধ হয় অনেকেই। যা অসহনীয় এক বিকারের মধ্যে তাকে ডুবিয়ে দেয়। স্নায়ু ও মস্তিষ্কের উপর চাপ পড়ে। মন-মানসিকতা হয়ে উঠে হিংস্র ও উগ্র যৌনচিন্তার লীলাভূমি। ভয়, দুশ্চিন্তা , মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া নৈমিত্যিক ব্যাপার হয়ে উঠে। মেজাজ হারায় ভারসাম্য। রাগ মাথাকে করে রাখে উত্তপ্ত। সমাজ থেকে বিচ্ছিন্নতা ও একাকিত্ব বাড়তে থাকে। পিঠের ব্যথা, চোখের সমস্যা, খাওয়া ও ঘুমের অনিয়ম বাড়ে, পেশাদারিত্বে আসে চরম অস্থিতিশীলতা। অসামাজিক মানুষ হতে থাকে পর্নো এডিক্টেড। নিজের প্রতি জন্ম নেয় বিরক্তি, ঘৃণা। বিষন্নতা হয় নিত্যসঙ্গী।শরীর হতে থাকে বিধ্বস্ত। মস্তিষ্কে পড়ে প্রভাব। বিকৃত যৌনাচারের প্রবণতা বাড়ে। ইভটিজিংয়ের পরিমাণ বাড়ে, ধর্ষণ-আসক্তি বাড়ে। স্বমেহন, সমকাম ইত্যাদির প্রতি ঝুঁকে পড়ে অনেকেই। নারীদের প্রতি বিকৃত মানসিকতা জন্ম নেয়। সুস্থভাবে সে একজন নারীর প্রতি তাকাতেও পারে না। এমনকি নিজের স্বজন-পরিজনের প্রতিও। নেশা জাতীয় দ্রব্যগুলো সেবনের সময় মস্তিষ্কে অধিক পরিমানে ডোপামিন নির্গত হয়। ফলে এইসব ডোপামিন মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড প্যাথওয়েতে আঘাত হানে। এ কারণেই নেশাখোরেরা মাতাল হয়ে উন্মাদের মত আচরণ করে। আশ্চর্যের বিষয় হল, পর্নগ্রাফীও ঠিক সেরকম আচরণটিও করে থাকে পর্ন এডিক্টদের উপর। এক সময় এডিক্টেডরা মস্তিষ্কের সুস্থতা হারায়। সে উন্মাদ হয়ে যেতে পারে। কারণ মাদকদ্রব্য ব্যবহারকারী বা পর্নগ্রাফি এডিক্ট ব্যক্তি যে মাত্রায় মাদকদ্রব্য সেবন করে বা পর্ন দেখে, তাদের মস্তিষ্কে এই প্যাথওয়েগুলো তত বেশি উৎপন্ন হয়। এ ছাড়া পর্নো আসক্তির ফলে এইচআইভি, মলাশয়ের ক্যান্সার, হারপিস, গণোরিয়া, সিলিফিস, ক্ল্যামিডিয়া, গলার ক্যান্সার, হেপাটাইটিস এর মতো ভয়ঙ্কর রোগের আশঙ্কা বাড়তে থাকে। নিজের ক্যারিয়ার হয় ধ্বংস। স্বাভাবিক জীবন থেকে নির্বাসিত হতে থাকে পর্নো এডিক্টেড। একসময় জীবন ধারণ অসম্ভব হয়ে পড়ে কারো কারো। অনেকেই করে আত্মহত্যা।
বৈবাহিক জীবনের প্রধান এক শত্রুর নাম পর্নো এডিকশন। সংসারে অশান্তি ও দাম্পত্য কলহের আগুনকে সে জ্বালিয়ে দেয়, বাড়িয়ে দেয়। সংসার-সম্পর্ক হয় ভঙ্গুর। পরিবার ভাঙছে , ভয়াবহ এর মাত্রা। শান্তি হচ্ছে নির্বাসিত। এই যে সমাজে ধর্ষণের প্রবণতা বেড়েই চলছে, পরকীয়া , নারীকে পণ্য হিসেবে চিত্রায়ন, ভোগ্যবস্তু হিসেবে তাকে দেখা, পাপাসক্তির তুমুল উল্লস্ফন, এর মধ্যে পর্নোর বিস্তার বিপুলাংশে দায়ী। । ধর্ষণ, শিশুদের উপর যৌন অনাচার, বলাৎকার ইত্যাদির পরিমান এতো বেড়েছে, যা আমাদের শঙ্কিত করে তোলে। এইসব অপরাধির প্রায় প্রত্যেকেই পর্নো আসক্ত। পর্নো আসক্ত মানেই ধর্ষক নয়। কিন্তু এ পথে যেই পা বাড়ায়, তার পরবর্তী গন্তব্য হয় যৌনঅনাচার, ধর্ষণ। বৃহত্তর আত্মঘাত।
ফাতেহ : এ পরিস্থিতিতে করণীয় কী ?
মুসা আল হাফিজ : আচ্ছা, শিশুরা যে পর্নোগ্রাফি দেখছে, কীভাবে দেখছে? জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে সিম নিবন্ধন করতে হয়। তারা তো নিজের নামে সিম উঠাতে পারে না। অভিভাবকের সিম দিয়েই মোবাইল চালায়। অভিভাবকরা তাদের হাতে তুলে দিয়েছেন সর্বাধুনিক মোবাইল। কিন্তু তারা কী করছে, কীভাবে তা ব্যবহার করছে, খেয়াল রাখছেন কি? তারা শিশুদের দিচ্ছেন দামি মুঠোফোন, ট্যাব ইত্যাদি। সেগুলোতে ইন্টারনেট সংযোগও দিচ্ছেন। কিন্তু এর পরের দায়িত্ব তো আরো বেড়ে যায়। সেটা কি পালন করছেন?
একদিকে পর্নোগ্রাফির বিষয়যুক্ত বস্তু শিশুদের কাছে সহজলভ্য হয়ে গেছে, অপরদিকে এ বিষয়ক কথা বলাকেও অপমানজনক মনে করেন অনেকেই। রাখঢাক প্রবণতা চরমে আছে। কিন্তু এটা কী সমাধান? অভিভাবকদের থেকে সে বুঝবে এর কী ক্ষতি, থাকবে মমতাপূর্ণ নজরদারির মধ্যে । সুস্থ যৌনতার শিক্ষা ও বিধি তাদের জানতে হবে । জানাতে হবে। শিশুদের সুরুচিবোধের বিনির্মাণ অভিভাবকের প্রাথমিক দায়িত্ব। তার ভবিষ্যত জীবন হুমকির মুখে পড়বে যে মন্দ অভ্যাসে, সেই অভ্যাসকে মোকাবেলা করতে হবে তাদেরকেই। পর্নোগ্রাফি কেবল তাদের চরিত্রকে বিনষ্ট করবে না, ধ্বংস করবে তাদের দৈহিক সুস্থতাকেও। জন্ম দেবে বহুমাত্রিক সর্বনাশ।
আমাদের শিশুরা কি স্বাভাবিক বিকাশের পরিবেশ পাচ্ছে? খেলাধুলা, অন্য শিশুদের সাথে স্বাভাবিক ও সুস্থ সম্পর্কের পরিবেশ, বিনোদনের সুযোগ, নৈতিক শিক্ষা ও অনুশীলন কি তাদের জন্য প্রশস্ত? চার দেয়ালের বন্দি জীবন কি নগরজীবনের বাস্তবতা নয়? কিন্তু বন্ধুদের মধ্যে থাকাও এর নিশ্চিত সমাধান নয়। কারণ বন্ধুদের মধ্যে কেউ একজন হয়তো পর্নোগ্রাফি দেখল। তখন সে অন্য বন্ধুদেরও সেটা দেখায়। এভাবেই জিনিসটা ছড়িয়ে পড়ে। ফলে সবাইকেই দায়িত্ব নিতে হবে। আপনার পরিবারে এর জায়গা থাকলে আরেক পরিবার এর দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। আপনার সন্তানের কারণে আক্রান্ত হচ্ছে অন্যের সন্তান। ফলে সন্তনি কাদের সাথে মিশছে, সেটাও খেয়াল রাখার বিষয়। গ্রামেও শিশুরা এখন আশঙ্কাজনক মাত্রায় ডিভাইসমুখি হয়ে যাচ্ছে। যা হাতের নাগালেই নিয়ে আসছে অশ্লীল উপাদানকে। সন্তানের মুখে হঠাৎই কোনও খারাপ শব্দ শুনলে তা কোথা থেকে শিখলো তা জানতে চান। কৌশলে প্রতিবিধান করুন। তাদের সাথে অন্তত কেউ এতটাই সহজ হয়ে মিশুন, যাতে বাইরে থেকে কিছু শুনে এলে বা বন্ধুদের থেকে কিছু জানলে তা সে জানাতে পারে আপনাদের। মোবাইল বা ল্যাপটপ ব্যবহারের সময় গোপনীয়তা যাতে অবলম্বন করতে না পারে, তা নিশ্চিত করুন। তবে তাকে অবিশ্বাস করছেন তা বুঝতে দেবেন না। প্রয়োজনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সহায়তা নিন।
উন্মুক্ত একটা সমাজ তৈরী করার কথা বলা হয়েছে খুব। ব্যক্তিগত স্বাধীনতার প্রচারও হয়েছে। কিন্তু সেই মাত্রায় নৈতিক দায় ও শুভবোধের কথা ধর্মীয় মূল্যবোধের কথা বলা হয়নি। অনেকের কাছে পর্নোগ্রাফির চেয়ে বড় ট্যাবু হয়ে আছে ধর্ম। অথচ ধর্মীয় মূল্যবোধই হচ্ছে এর প্রতিবিধানের সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার।ধর্মের শুভবার্তা দিয়ে সাজাতে হবে শিশুমানস।ইমাম-উলামা-মাশায়েখ ও ধর্মীয় নেতাদের নৈতিক প্রচারণা ও প্রশিক্ষণকে আরো জোরালো করা ও সেখানে সামাজিক ও রাষ্ট্রিয় পৃষ্ঠপোষকতা নিশ্চিত করতে হবে।পরিবারের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহে ধর্মীয় শিক্ষা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অনুশীলনকে বাড়াতে হবে। ‘সাইবার ইথিকস’ নিয়ে সচেতনতা গঠন করতে হবে।
ফাতেহ: রাষ্ট্র কী করবে?
মুসা আল হাফিজ: পর্নোগ্রাফী পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হোক। ১৮ বছরের নিচে কেউ ফোনসেট ব্যবহার করতে পারবে না এমন আইন করা যেতে পারে কিংবা অন্তত এর উপর অভিভাবক ও শিক্ষককদের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা হোক। সাইবার ফরেনসিক ল্যাব গঠন করা যেতে পারে। সন্দেহভাজন ‘আইপি বা সার্ভার অ্যাকটিভিটি’ পর্যবেক্ষণ ও ব্লক করা , সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে শিশু পর্নোগ্রাফি, পিডোফেলিয়া বিষয়ে গবেষণা ও পরিসংখ্যান প্রস্তুতকরা, শিশু পর্নোগ্রাফি রোধে বিশেষ টিম গঠন এবং এ ধরনের টিমে শিক্ষক , ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ও মনোচিকিৎসক অন্তর্ভূক্তিকরণ, এ ধরনের ল্যাবে সাইবার অপরাধের ‘ট্রেন্ড অ্যানালাইসিস’ করা সহজ হবে।গণমাধ্যমকেও দায়িত্বশীল হতে হবে। টিভি সম্প্রচার, বিজ্ঞাপন ও সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করে শিশুদেরকে সতর্ক করতে হবে। মাঝে মধ্যে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা তল্লাশি চালাতে পারেন। যেমনটি করা হচ্ছে মাদকদ্রব্য তল্লাশির ক্ষেত্রে। তাতে করে নৈতিক শৃঙ্খলার কিছুটা হলেও উন্নতি হবে বলে মনে হয়। পর্নোগ্রাফির সহজপ্রাপ্যতা বন্ধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে পর্নোগ্রাফির সঙ্গে সম্পর্কিত শব্দের তালিকা করে সেগুলো ব্লক করে দেওয়ার ব্যাপারে সরকার উদ্যোগ নিতে পারে। এর ফলে শিশুরা এসব শব্দ লিখে সার্চ করলেও কিছু পাবে না। পর্নোগ্রাফিযুক্ত সাইটগুলো বন্ধ করার পাশাপাশি এর ওপর নিয়মিত মনিটরিংয়ের উদ্যোগও সরকারের তরফ থেকে নিতে হবে। শিশুরা কেবল পর্নোগ্রাফির ভোক্তা নয়, তারা পন্যও হচ্ছে পর্নোগ্রাফির। শিশুদের নিয়ে তৈরী হচ্ছে অগণিত পর্নোভিডিও, পর্নোকন্টেন্ট। এটা অনেকের কাছে রীতিমত ব্যবসা। পর্নো ইন্ড্রাস্টি তৈরী হয়েছে ইতোমধ্যে। যেখানে কোটি কোটি টাকার আয় দেখছে নিকৃষ্ট কিছু মানুষ। তারা এর ব্যবসায় যুক্ত। তাদের ব্যাপারে সত্যিকার পদক্ষেপ নিতে হবে। শক্তিশালী পর্নোগ্রাফি বাণিজ্যচক্রকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। পর্নোগ্রাফী নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২-এর ৮/৩ ধারায় বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি ইন্টারনেট, ওয়েবসাইট, মোবাইল ফোন বা অন্য কোন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফী সরবরাহ করলে সে অপরাধী হিসাবে গণ্য হবে। উক্ত অপরাধের জন্য তাকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদন্ড এবং দুই লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হবে’। কিন্তু এ আইনের বিষয়ে যেমন ব্যাপক জনসচেতনতা নেই। আবার এ আইনের প্রয়োগ কি হচ্ছে সেভাবে? কম্পিউটার ও মোবাইল ফোন সার্ভিসিং-এর দোকানের নামে যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেমোরি কার্ডে পর্নোগ্রাফী লোড দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কি নেওয়া হচ্ছে ব্যবস্থা? মোবাইল কোম্পানীগুলোও যেন এসবকে কোনোভাবে প্ররোচিত করতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
ফাতেহ : আপনি একটি জরিপের কথা বলেছিলেন। সেটা কী সম্পন্ন হয়েছে ?
মুসা আল হাফিজ : কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কিছু শিক্ষার্থী তাদের সহপাঠী,বন্ধু-বান্ধবদের উপর অনুসন্ধান চালিয়েছেন। যারা বিভিন্ন স্কুলে পড়াশোনা করেন বা করেছেন। নামকরা দশটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের অনেকের নানা অভিজ্ঞতা তাদের গোচরে আসে। কয়েক বছর ধরে তারা কাজটি করছেন। তারা বিভিন্ন অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করেছেন। তাদের অভিজ্ঞতাগুলো মূল্যবান। সেখানে তাজা ও রোমহর্ষক নানা চিত্র রয়েছে। যা তারা নিকট থেকেই অবলোকন করেছেন। তবে সেগুলো অগুছালো। গবেষণার মানদণ্ডে সুশৃঙ্খল নয়। সেগুলোকে অনুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে। পদ্ধতিগতভাবে বিন্যস্ত করতে হবে। এর উপর আরো কাজ করার আছে।
ফাতেহ : শাহবাগী ধারার অনেকেই প্রচার করছেন আপনি স্কুল শিক্ষা থেকে শিশু ও অভিভাবকদের নিরুত্সাহিত করতে চান। কী বলবেন?
মুসা আল হাফিজ : এটি হাস্যকর। তারা যদি আমার বিরুদ্ধে কিছু বলতে চান, তাহলে আরেকটু যৌক্তিক কিছু বলা উচিত। যা কিছুটা হলেও বিশ্বাসযোগ্য হবে। শিক্ষা নিয়ে, অশিক্ষা দূরিকরণে সচেতনতা নিয়ে আমার যতো কাজ, তাদের অনেকের তা নেই। ধর্মীয় শিক্ষার নামে স্কুল শিক্ষার প্রতি বাধা দেওয়া ইউরোপের অন্ধকার যুগের পাদ্রিতন্ত্রের কাণ্ড, ইসলামের নামে যা চলার সুযোগ নেই আদৌ।
জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের সাধনা আমার অন্যতম লক্ষ্য, অন্যতম অঙ্গীকার। একটি শিশুও যেন শিক্ষা বঞ্চিত না থাকে, সেই চেতনা ও দায়িত্ববোধ সমাজে ছড়াতে হবে। ইসলাম এমন সমাজ চায় না, অজ্ঞতা ও নিরক্ষরতা যেখানে থাকবে।
শিক্ষা সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি যারা জানেন, তারা জানেন, দ্বীনী শিক্ষার নামে দুনিয়াবি শিক্ষাকে উপেক্ষা করতে বলে না ইসলাম। সবাইকে আলেম হতে হবে, এমন কথা কোনো আলেম বলবেন না, ইসলামও বলেনি। আলেম হওয়া ফরজে কেফায়া। সমাজের তরফে কেউ বা কেউ কেউ দক্ষ আলেম হলেই সমাজের দায় পূরণ হয়ে যায়। তবে মুসলিম হিসেবে সবাইকে ইসলামের ফরজ জ্ঞান অর্জন করতে হবে। এর তালিকা তেমন দীর্ঘ নয়। স্কুলেও তা নিশ্চিত করা সম্ভব, যদি নিশ্চিত করা হয়।
স্কুল- কলেজে জীবন ও জগতকে জানার জ্ঞানকে ধর্মের নামে বাঁধা দেওয়া এমন এক অন্যায়, যাকে প্রতিরোধ করা উচিত। কিন্তু শিক্ষার কোনো ক্ষেত্রেই নৈতিকতার অবক্ষয় দেখা দেবে, এটা তো চলতে পারে না। শিক্ষা ও নৈতিকতা পরস্পরে সহোদর। শিক্ষা আছে, নৈতিকতা নেই, এর মানে শিক্ষা নেই। এর মানে সংস্কৃতি নেই। এর মানে মানবীয় উন্নয়ন নেই। নৈতিকতা না থাকলে মনুষত্ব থাকে না। মনুষত্য না থাকলে শিক্ষার নামে যা থাকে, তা কেবল শিক্ষিত অনাচারির সংখ্যা বাড়াবে। ফলে অন্য যে কোন সেক্টরের চেয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিক অবক্ষয়ের মোকাবেলায় সোচ্চারতা ও সক্রিয়তা অনেক অনেক জরুরী।
ফাতেহ : কিন্তু আপনি বিভিন্ন মাদরাসায় সংগঠিত অনাচার নিয়ে কথা বলছেন না কেন?
মুসা আল হাফিজ : মাদরাসা ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু মাদরাসায় যারা পড়েন, পড়ান, তারা এই সমাজেরই কিছু মানুষ। সমাজ যখন নৈতিক অবক্ষয়ে থৈ থৈ করছে, তখন এর প্রভাব মাদরাসায় পড়বে না, তা মনে করার কারণ নেই। কিন্তু অন্য যে কোনো প্রতিষ্ঠানের চেয়ে মাদরাসায় সংগঠিত অনৈতেকতার গুরুত্ব অনেক বেশি। কারণ মানুষ এখান থেকে উন্নত নৈতিকতা লাভ করবে, এর দিশা অনুসন্ধান করবে। ফলে মাদরাসায় সংগঠিত যে কোনো অনাচারকে অধিকতরো দৃঢ়তার সাথে প্রত্যাখান করতে হবে। শাস্তিবিধান করতে হবে। তবে অনেক সময় বিভিন্ন মাদরাসা ও ব্যক্তিত্ব মিডিয়া ট্টায়ালের সম্মুখীন হন। সেটা বিবেচনায় রেখেও কদাচারের যে কোনো ঘটনাকে দেখতে হবে সর্বোচ্চ কঠোরতার সাথে। এখানে কোনো টলারেন্স চলতে পারে না। বিশেষত কওমি মাদরাসা ও সমকামিতাকে অনেকেই যখন সমঅর্থী করে তুলতে চাইছেন , আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় এ নিয়ে নিউজ হয়েছে, দেশী মিডিয়ায় বিভিন্ন মাদরাসা এ কারণে কিছুদিন পরপরই খবরে আসছে, তখন এ পরিস্থিতি কী দাবি করে? এর দাবি হলো কওমি মাদরাসার দায়িত্বশীলবৃন্দ এর সুষ্ঠ প্রতিবিধান করবেন। সেটা অস্বীকার বা এড়িয়ে যাওয়া কোনো সুষ্ঠ সমাধান নয়। এটা অনেক আগ থেকে আমরা বলে আসছি। প্রকৃত তদন্তের মাধ্যমে এর প্রকৃত পরিমাণ সম্পর্কে ধারণা নেওয়া এবং কারণ সমূহ চিহ্নিত করা, এর প্রতিবিধান নিশ্চিত করা এমন এক জরুরী কাজ, যা এড়ানোর সুযোগ নেই। আমি তো মনে করি যারা এ অপরাধে জড়িত, তাদের জন্য শরয়ী শাস্তির প্রস্তাব করা উচিত।অপরাধ প্রমাণিত হলে অন্তত তাদেরকে আইনের হাতে তুলে দেওয়া উচিত মাদরাসার পক্ষ থেকে।
ফাতেহ : লেখক হিসেবে পর্নোগ্রাফি নিয়ে আপনার পরিকল্পিত কাজ কী?
মুসা আল হাফিজ : কিশোরদের উপযোগী একটি গ্রন্থ, যার রচনায় হাত দিচ্ছি অচিরেই । কিন্তু বই লেখেই এ কাজকে বেশি দূরে নেওয়া যাবে না। দরকার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বহুমাত্রিক প্রয়াস ও আন্দোলন। সেটাকে সংগঠিত করা জরুরী। সে চেষ্টায় নিজেকে নিয়োজিত রাখবো । ইন শা আল্লাহ।